প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১৪-জানুয়ারি, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ ভারতের ছাত্রীবৃন্দ


৮ জানুয়ারি ২০২৩, লাজনা ইমাইল্লাহ (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) ভারতের শিক্ষার্থীদের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা সদস্যাবৃন্দ ভারতের কাদিয়ান থেকে অনলাইনে সভায় সংযুক্ত হন।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর উপস্থিত সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।

অংশগ্রহণকারী মেয়েদের একজন হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন, যদি ভারতের কোনো রাষ্ট্রীয় আইন বা কোনো প্রতিষ্ঠান পড়াশোনার সময়ে তাদের ইসলামী হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করতে প্রয়াসী হয় তবে তাদের কী করা উচিত।

হুযূর আকদাস বলেন যে, হিজাব পরিধান করার ক্ষেত্রে তাদেরকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। যদি বাধা দেওয়া হয় তাহলে আহমদী নারী ও মেয়েদের উচিত তাদের ধর্ম পালনের ও শিক্ষা অর্জনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“[হিজাব পরিধান করার জন্য] নিজেদের আইনগত লড়াইও করুন যে, আমাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ কেন করা হচ্ছে, যেখানে আমাদের ওড়না পরার অধিকার রয়েছে। আগামীকাল যদি কেউ বলে যে, শিখরা তাদের পাগড়ি বা অন্যান্য বিশেষ পরিধেয় পরতে পারবে না, তাহলে তো সেটি অন্যায় হবে। এর বিরুদ্ধে আপনাদের আওয়াজ ওঠানো উচিত, ‘আহমদীয়া মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন’-এর লেখালেখি করা উচিত, পত্রপত্রিকায়ও লেখা উচিত যে, কেন এমন হলো। আর, কারো ক্ষেত্রে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এখানে জাগতিকতার ওপর ধর্মকে প্রাধান্য দিবেন, [মহানবী (সা.)-এর হাদীস] ‘লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ’ এর ওপর আমল করবেন, নাকি পার্থিব স্বার্থে নিজেকে পৃথিবীর সম্মুখে মেলে ধরবেন। নিজেরাই এই বিষয়টি ভাবনা-চিন্তা করে নিন। … যাহোক, কমপক্ষে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা উচিত, আর যদি [এর অনুমতিও] না থাকে তাহলে পরীক্ষা না দিয়ে আইনগত লড়াই করুন।”

অপর একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবী জুড়ে কেন এত অসহায়ত্ব এবং কেন আল্লাহ্ তা’লা কষ্ট দূরীভূত করেন না।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্ তা’লার এক প্রাকৃতিক নিয়ম পৃথিবীতে বলবৎ রয়েছে। আল্লাহ্ তা’লা কোথাও এটি লেখেন নি যে, যখন কেউ এই প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করবে, তখনও আমি তাকে রক্ষা করবো। যখন যুদ্ধ বাঁধে, বোমা বর্ষণ করা হয়, নিরীহ মানুষও নিহত হয়, নিষ্পাপ শিশুরাও মৃত্যুবরণ করে থাকে। … এখানে মানুষের কোনো ভুলের কারণেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়, আর মানুষ নিহত হয়।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, মহানবী (সা.) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও মুসলমানরা কষ্ট ভোগ করেছেন, যদিও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল।

উক্ত বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“সাধারণভাবে, প্রকৃতির নিয়মে আমরা দেখি যে, আল্লাহ্ তা’লা বলে দিয়েছেন যে, যদি তোমরা এই কাজ করো তবে এই ক্ষতি তোমাদের হবে। কেউ কোন কাজ করবেন আর, তার পরিণতি হতে রক্ষা পাবেন বলে আশা করবেন, এটা হতে পারে না।”

শিশুরা কেন জন্মগত রোগ ও অক্ষমতা-সহ জন্মায় এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে, হুযূর আকদাস বলেন যে, কখনো কখনো পিতা মাতার কোন কৃতকর্মের বা দুর্বলতার দরুণ শিশুরা অসুস্থতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। সুতরাং, এটিও প্রকৃতির নিয়মের অংশ যা পৃথিবীতে বলবৎ রয়েছে।

যাহোক, হুযূর আকদাস বলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের বিশ্বাস এই জীবনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং [আমরা বিশ্বাস করি যে], যারা দুনিয়াতে কষ্ট ভোগ করে তাদেরকে পরকালে এ বিষয়টি পুষিয়ে দেওয়া হবে।

হুযূর আকদাস তাকে এ সম্পর্কে দ্বিতীয় খলীফাতুল মসীহ্ (রা.)-এর দুটো বই পড়ার পরামর্শ প্রদান করেন যা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে: ইংরেজি বই Ten Proofs of the Existence of God এবং উর্দূ বই হাস্তি বারি তা’লা।

একজন লাজনা সদস্যা হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন, একজন আহমদী মুসলমানের কী করা উচিত যখন তার ধর্মীয় আইন এবং দেশের আইনের মাঝে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করা হয়।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“দেশের আইনসমূহ, যা সরাসরি শরীয়তের নিদের্শের পরিপন্থী নয়, আমাদেরকে অবশ্যই তা মান্য করা উচিত। যদি কোনো দেশের আইন আমাদেরকে শরীয়তের নির্দেশের অনুসরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে, যেমনটি পাকিস্তানে হয়ে থাকে, সেখানে আহমদী মুসলমানদেরকে কলেমা পড়তে বাধা দেয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে আমরা বলি যে, আমরা সেই দেশের সকল আইন মানবো, কেবল সেগুলো ব্যতিরেকে যেগুলো সরাসরি আমাদেরকে আমাদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর আমল করতে বাধা প্রদান করে। সুতরাং, আইন যাই বলুক না কেন, আমরা কখনো কলেমা থেকে বিচ্যুত হতে পারি না। একইভাবে, পাকিস্তানে আইন আমাদেরকে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা, সালাম প্রদান করা কিংবা কোনো ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা হতে বাধা প্রদান করে। যাহোক, এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি এটি আমাদের ধর্মীয় অধিকার এবং আমরা আমাদের বিশ্বাসের ওপর আমল করে থাকি। অন্যথায়, আমরা সেই দেশের অন্যান্য সকল আইন মান্য করি এবং দেশের প্রতি অনুগত থাকি। এমনকি আমরা সেই দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য আমাদের জীবনও উৎসর্গ করে থাকি এবং আহমদী মুসলমান হিসেবে আমরা যে দেশেই বসবাস করি না কেন, আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে আমরা তা করে থাকি।”