প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৪-ডিসেম্বর, ২০২২

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ ইতালির লাজনা ও নাসেরাত



১৮ ডিসেম্বর ২০২২, নাসেরাতুল আহমদীয়া (আহমদীয়া মুসলিম নারী শিশু অঙ্গ-সংগঠন) এবং লাজনা ইমাইল্লাহ (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) ইতালির সদস্যাবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর নাসেরাত ও লাজনা সদস্যাবৃন্দ ইতালির বুলোনিয়ার নিকটবর্তী সান পিয়েত্রো ইন কাসালে-তে অবস্থিত বায়তুত তাওহীদ মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর উপস্থিত সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
একজন অংশগ্রহণকারী মেয়ে হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে সে তার শিক্ষককে উত্তর প্রদান করতে পারে যিনি হিজাব নিয়ে জানতে চেয়েছেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“শালীন খ্রিস্টান নারীগণও শালীনতাকে গুরুত্ব প্রদান করেন। তোমার শিক্ষককে তোমার বলা উচিত যে, হিজাব শালীনতার একটি লক্ষণ। ক্যাথলিক দেশ ইতালির খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীরাও তাদের মাথা আবৃত করে থাকে। পূর্বে তারা সকলে এটি করে থাকতো, আর এখনো অধিকাংশ সন্ন্যাসীনী এটি করেন। তারা হিজাব পরিধান করে এবং ঢিলেঢালা ও লম্বা কোট পরিধান করে থাকে যা শালীনতার লক্ষণ। হযরত মরিয়ম (আ.) শালীন ছিলেন এবং তিনি হিজাব ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতেন। তোমার শিক্ষককে বলো যে, তুমি হযরত মরিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাঁর জন্য তোমার হৃদয়ে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং, আমরা যা করছি তা হযরত মরিয়ম (আ.)-এর জীবনধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, আর তাই আমরাও হিজাব পরিধান করি।”

অপর একজন প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করেন যখন মিথ্যা ও অন্যায়ভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র চরিত্রকে অবমাননা করা হয়, তখন আহমদী শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত, আর যখন তাদের শিক্ষক মহানবী (সা.) সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেন, তখন তাদের কী করা উচিত।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“এমন সময়ে তারা যা বলে থাকে তা খণ্ডন করা এবং তারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে যা বলছে তা ভুল – এ কথা তাদেরকে বলার মাধ্যমে তোমার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা উচিত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর মহান চরিত্রের সত্যতা সম্পর্কে তাদেরকে তোমার অবহিত করা উচিত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমি এই সম্পর্কে অনেক কিছু তুলে ধরেছি, আর তাই তোমার উচিত সেগুলো উপস্থাপন করা। বস্তুত মহানবী (সা.) এর মর্যাদা সাহাবীদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল … প্রাচ্যবিদগণ নিজেদের মত করে ইতিহাস রচনা করার সময় মহানবী (সা.) সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা সংযোজন করেছে … মহানবী (সা.)-এর জীবন ও চরিত্র সম্পর্কে তোমার বক্তৃতা প্রস্তুত করো এবং তোমার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের কাছে তা উপস্থাপনের জন্য সুযোগ চাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের ক্যাম্পাসে সেমিনার আয়োজন করা এবং তাদের নিকট ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। অথবা তুমি তোমার সতীর্থ নারী সহপাঠীদের এমন সেমিনারে আমন্ত্রণ জানাতে পারো এবং তাদের সামনে ইসলামের প্রকৃত চিত্র ও এর প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে পারো, আর তাদেরকে অবহিত করতে পারো কীভাবে এটি ইতিহাসের বিকৃত রূপ থেকে ভিন্ন।”

অপর একজন অংশগ্রহণকারী বলেন যে, এমন আহমদী মুসলমান রয়েছেন যারা পবিত্র কুরআন পাঠ করে থাকেন, কিন্তু খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন কিংবা অমার্জিতভাবে কথা বলে থাকেন। তিনি প্রশ্ন করেন, এমন আচরণ রোধ করতে কী করা যেতে পারে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“যদি তারা তাদের নৈতিক অবস্থার সংশোধন না করে, তাহলে তাদের আহমদী মুসলামান হয়ে কী লাভ? মসীহ্ মওউদ (আ.) এ সম্পর্কে বলেন যে, ‘তোমরা যদি আমার হাতে বয়আত করো তাহলে তোমাদের আল্লাহ্ তা’লার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে এবং একে অপরের দেখাশোনা করতে হবে। যদি তোমরা একে অপরের প্রতি যত্নশীল না হও, তাহলে আহমদী মুসলমান হয়ে কী লাভ?’ মসীহ্ মওউদ (আ.) এমনকি এও বলেছেন যে, ‘যদি তোমরা পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শন ও একে অপরের অনুভূতি প্রতি খেয়াল রাখতে ব্যর্থ হও এবং পরস্পরের সেবা না করো তাহলে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বার্ষিক জলসায় যোগদানেরই বা কী অর্থ?’ এমনকি, কিছু আহমদীর প্রতি অসন্তুষ্টির কারণে মসীহ্ মওউদ (আ.) তার জীবদ্দশায় এক বছর জলসা সালানা বাতিল করেছিলেন। সুতরাং, যেসকল মানুষ আপনি যা বলেছেন তা করে থাকে, তারা সম্পূর্ণ ভুল করছেন। তাদেরকে বলা উচিত যে, তাদের আচরণ অসঙ্গত। একজন আহমদী মুসলমানের এমন ব্যবহার করা উচিত নয়। এরপর তাদের বিষয়টি আল্লাহ্ তা’লার হাতেই সমর্পিত।”
একটি মেয়ে হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন কীভাবে তারা তাদের হৃদয়ে পবিত্র কুরআন এবং আল্লাহ্ তা’লার ইবাদতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারেন।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“সর্বদা আমাদের ওপর আল্লাহ্ তা’লার অজস্র অনুগ্রহরাজি স্মরণ রাখার চেষ্টা করবে। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের ওপর আশিস বর্ষণ করেছেন, তিনি আমাদেরকে জীবন দান করেছেন এবং তাঁর করুণার অংশ হিসেবে তিনি আমাদের ওপর অনেক অনুগ্রহ করেছেন। যখন আমরা তাঁর কাছে কোনো কিছুর জন্য প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তরও প্রদান করে থাকেন। তিনি আমাদেরকে এমন মহান এক গ্রন্থ — পবিত্র কুরআন — দান করেছেন, যার মাঝে সকল কিছু নিহিত রয়েছে আর এর পাঠ আমাদের জন্য আশিস ও সৌভাগ্যের উৎস। সুতরাং, আমাদেরকে এর অনুবাদও পড়তে হবে, যেন আমরা এর অর্থ বুঝতে পারি এবং আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারি। যতই তোমার বয়স বাড়বে, ততই তোমাকে এর অনুবাদ এবং তফসীর আরও পড়তে হবে যেন এর প্রতি তোমার ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, নিয়মিত নামাযে আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করো যেন তিনি তোমার হৃদয়ে তাঁর ভালোবাসা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করেন। যখন তোমার মাঝে আল্লাহ্ তা’লার ভালোবাসা সৃষ্টি হবে তখন তুমি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁর ইবাদতও করবে। তুমি যখন সিজদায় যাবে, তখন তুমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে পারবে।”