প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১৬-ডিসেম্বর, ২০২২

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ বেলজিয়ামের লাজনা ও নাসেরাত



“আমি জানতাম যে, আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, তাই আমার দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজন ছিল না” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)
১১ ডিসেম্বর ২০২২, বেলজিয়ামের নাসেরাতুল আহমদীয়া (৭-১৫ বছর বয়সী আহমদীয়া মুসলিম কিশোরীদের অঙ্গ-সংগঠন) ও লাজনা ইমাইল্লাহ্র (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) ছাত্রী সদস্যাবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা ও নাসেরাত সদস্যাবৃন্দ ব্রাসেল্স-এর উকল-এ অবস্থিত বায়তুল মুজীব মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হয়ে কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর অংশগ্রহণকারীগণ হুযূর আকদাসের কাছে তাদের ধর্মবিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
একজন লাজনা সদস্যা উল্লেখ করেন যে, তিনি এমটিএতে ‘ফোর ডেইস উইদাউট আ শেপহার্ড’ প্রামাণ্যচিত্রটি দেখেন, যেটিতে পাকিস্তানে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আহমদী মুসলমানদের উপর নিপীড়নের অংশ হিসেবে কীভাবে হুযূর আকদাসকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করার হয় তা তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন যে, ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও কারাবাসে হুযূর আকদাসকে পুরোপুরি শান্ত দেখাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করেন কীভাবে হুযূর আকদাস উক্ত কঠিন পরিস্থিতি এভাবে মোকাবেলা করার শক্তি লাভ করেছিলেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্ তা’লাই শক্তি প্রদান করেছিলেন। আমি জানতাম যে, আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, তাই আমার দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। যখন মানুষ আল্লাহ্ তা’লার জন্য কিছু করে, তখন তা আল্লাহ্‌র হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। অতএব, আল্লাহ্ তা’লাই আমাকে শক্তি দিয়েছিলেন এবং আমাদের মুক্ত করিয়েছিলেন। কারাবাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের কোন চেষ্টা করতে হয় নি।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন মহানবী (সা.) এর উক্তি, ‘এটি খুবই সম্ভব যে, দারিদ্র্য অবিশ্বাসের দিকে অগ্রসর করে’ – দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে।
উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আমাদের সর্বদা আল্লাহ্ তা’লার কাছে প্রার্থনা করা উচিত যে, যদি তিনি কখনো তোমাকে সম্পদশালী করেন, তিনি যেন নিশ্চিত করেন যে, তোমার মাঝে কৃতজ্ঞতা বজায় থাকে, আর সম্পদের অধিকারীর হওয়ার সাথে সাথে তোমার ওপর অর্পিত যে সকল দায়িত্ব এসে পরে সেগুলো যেন তুমি পূরণ করতে পারো; আর সম্পদ যেন তুমি কেবল নিজের জন্যই ব্যবহার না করো, বরং গরীবের সাহায্যার্থেও তা ব্যয় করা হয়। আবার, যদি তোমাকে কখনো দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে হয় এবং অন্যের কাছে কিছু চাইতে হয়, তখন তা অর্জনের জন্য কখনোই তোমার বিশ্বাসকে জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। সর্বদা তোমার বিশ্বাসকে রক্ষা করবে। যদি কেউ তোমাকে বলে ইসলাম পরিত্যাগ করা কিংবা কোনো পাপকর্ম করার জন্য অর্থ দিবে, সেসময় তা অনুসরণ করা একজন ব্যক্তিকে অবিশ্বাসী করে তুলবে। সুতরাং, সর্বদা আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করো যেন তিনি তোমাকে দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করেন এবং তুমি যেন কখনো এমন কোনো কাজ না করো যা তোমাকে অবিশ্বাসের দিকে অগ্রসর করে।”

একজন নাসেরাত সদস্যা হুযূর আকদাসের নিকট থেকে জানতে চান কেন মুসলমানরা নামাযের শেষ পর্যায়ে ডানে ও বামে ঘুরে সালাম প্রদান করে।
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আমরা এমনটি করি; কারণ, যখন আমরা আল্লাহ্ তা’লার সম্মুখ হতে বিদায় গ্রহণ করি, কেবল নামায শেষের বার্তা হিসেবে তা বলি না; বরং, আমাদের ডান ও বামের মানুষদের প্রতি শান্তির বার্তাও দিই। আমরা তাদের উপর শান্তি বর্ষণ করি। এটি আমাদের মধ্যে এই অনুভূতি সৃষ্টি করে যে, আমাদের অবশ্যই নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে বসবাস করতে হবে এবং আমাদের পরিবেশকে শান্তি দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে এবং পরস্পরের মাঝে অবশ্যই আর কখনো ঝগড়া করা যাবে না। আমাদের পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হওয়া উচিত হবে না।”

একজন লাজনা সদস্যা হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কেন আফ্রিকা ও অন্যান্য গরীব দেশসমূহে শিশুরা ক্ষুধার্ত থাকে যেখানে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন তিনি ভরণপোষণকারী।
উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মানুষ এ জীবনে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ [প্রকৃতির নিয়মের অংশ হিসেবে] খরা হয়ে থাকে এবং এর প্রভাব মানুষের জীবনের ওপর পড়ে। কখনো কখনো মানুষ নিজেরাই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অসমর্থ হয়ে পড়ে, আর অন্যান্য সময় দেখা যায়, সরকার অসৎ এবং জনগণের কথা চিন্তা না করেই দেশের সম্পদ গ্রাস করে ফেলে। যদি আফ্রিকায় মানুষ মারা যায়, তাহলে এটিও দেখতে হবে সেসব সরকার জণগণের অধিকার প্রদান করছে না। দ্বিতীয়ত, পৃথিবী এখন এক বৈশ্বিক পল্লীতে পরিণত হয়েছে। আমরা যে পরিমাণ খাবার অপচয় করি, উদাহরণস্বরূপ ইউরোপে যেখানে বিপুল পরিমাণ খাবার অপচয় করা হয়, তা যদি কোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আফ্রিকায় বিতরণ করা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষুধার চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে খাদ্য প্রদান করেছেন, কিন্তু এটি আমাদের অব্যবস্থাপনা, যার কারণে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে নারী, শিশু ও বয়স্করা ক্ষুধার্ত থাকে। কিন্তু, এর জন্য খোদাকে দায়ী করা যাবে না। আজো পৃথিবীতে যা খাদ্য উৎপন্ন হয়, তা সকল মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।”