প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০২-ডিসেম্বর, ২০২২

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো ঘানার নাসেরাত সদস্যাবৃন্দ


“অন্য মুসলমানদের মাঝে কোনো খিলাফত নেই, কেবল আহমদী মুসলমানদের মাঝে খিলাফত আছে, আর মানুষজন প্রতি দিন আমাদের সাথে এসে যোগদান করছেন।” — হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)


২৭ নভেম্বর ২০২২, ঘানার নাসেরাতুল আহমদীয়ার (৭-১৫ বছর বয়সী আহমদী বালিকাদের অঙ্গ-সংগঠন) সদস্যাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর নাসেরাত সদস্যাগণ আক্রায় অবস্থিত এমটিএ ওয়াহাব আদম স্টুডিও থেকে এ সভায় ভার্চুয়ালি (অনলাইনে) সংযুক্ত হন।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর নাসেরাতুল আহমদীয়ার সদস্যবৃন্দ তাদের ধর্মবিশ্বাস ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে হুযূর আকদাসের নিকট প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
নাসেরাত সদস্যাদের একজন হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞাসা করেন সন্তানেরা কীভাবে তাদের পিতামাতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“তোমাদের পিতা-মাতারা সব সময় তোমাদের মঙ্গল চান। তারা তোমাদের জন্য কোন অমঙ্গল চান না। সুতরাং, যখনই তারা তোমাদেরকে কোনো পরামর্শ দেন বা কোনো কিছু করতে বলেন, তা তোমাদেরই কল্যাণের জন্য। সুতরাং, তোমাদের তাদেরকে মান্য করা উচিত। যদি তারা তোমাদেরকে স্কুলে যেতে এবং ভালোভাবে পড়াশোনা করতে এবং ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে বলেন তবে তা তোমাদেরই উন্নতির জন্য। যখন তোমরা বাড়ি ফেরো, তখন যদি তারা তোমাদেরকে বলেন যে, তোমরা প্রথমে তোমাদের হোমওয়ার্ক শেষ করো, তাহলে সেটা তোমাদেরই কল্যাণের জন্য। যদি তারা তোমাদেরকে বলেন তোমরা নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখ, তাহলে এতে তোমরাই লাভবান হবে; কেননা, এভাবেই তোমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবে। যদি তারা তোমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করতে বলেন তবে তা তোমাদেরই আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য। সুতরাং, এভাবে তুমি আল্লাহ্‌ তা’লার নৈকট্য লাভ করবে। সব সময় চিন্তা করবে যে, তোমাদের পিতা-মাতা সেই মানুষ যারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, যারা তোমাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তোমাদের বিষয়ে যত্নশীল, এবং যারা তোমাদের মঙ্গল কামনা করেন। সুতরাং, সর্বদা তাদের মেনে চলবে।”


আরেকজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন যে, পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা, সূরা আল-ফাতেহার অনেকগুলি নাম থাকার কারণ কী।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তরে বলেন:
“যেহেতু এটি সেই সূরা যার মধ্যে পুরো পবিত্র কুরআনের সারাংশ এবং মূলভাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এ কারণেই এর বিভিন্ন নাম রয়েছে আর এটিই সেই মৌলিক সূরা যা তোমাকে আল্লাহ্‌ তা’লার প্রশংসা করতে এবং তাঁর নিকট আশ্রয় চাইতে বলে। এরপর এতে আল্লাহ্‌ তা’লার আরও অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। [সূরা ফাতেহাকে] ‘আশ-শিফা’ (আরোগ্য দানকারী) বলা হয়েছে; কেননা, এটি তোমার আধ্যাত্মিক ব্যাধিসমূহ দূর করে। সূরা ফাতেহায় তুমি পাঠ করো, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র যিনি জগতসমূহের প্রভু-প্রতিপালক, তিনি সকল কিছুর প্রয়োজনসমূহ পূরণকারী এবং স্থায়িত্ব দানকারী, আর তিনি পরম করুণাময়, বারবার দয়াকারী’, ‍আর … এমনি আরও অনেক বিষয় এর মাঝে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুতরাং, এটির বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে তার কারণ এই যে, এটি সেই সূরা যার মাঝে সেই সকল বিষয়াদি রয়েছে, যার বিস্তারিত বিবরণ পবিত্র কুরআনের অন্যান্য অংশে বর্ণিত হয়েছে।”
এক নাসেরাত সদস্যা জিজ্ঞাসা করেন মেকআপ লাগানো, নেলপালিশ লাগানো, চুলের বিনুনি করা এবং পরচুলা ব্যবহার করা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“ইসলাম বলে যে, তুমি মেকআপ করতে পারো। তবে সব সময় স্মরণ রাখবে যে, একজন মুসলমানের আরো কিছু দায়িত্ব রয়েছে; তোমাকে তোমার দৈনিক নামায পড়তে হবে। যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমার এমন চিন্তা করা উচিত নয় যে, তুমি মেকআপ করে এসেছো, আর তাই তুমি ওযু করবে না। তোমার অযু করে নামায পড়া উচিত, আর সেই সময়ে তোমার মেকআপ সম্পর্কে তোমার পরোয়া করা উচিত নয়। যদি তুমি কেবলমাত্র তোমার মেকাপের চিন্তা করো এবং নামায ছেড়ে দাও, বা সেই সকল দাবি পূরণ না করো, যা নামাযের জন্য আবশ্যক, তাহলে তখন তুমি পাপ করছো, তুমি ভুল করছো। অন্যথায়, মেকআপ করার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। তুমি নেইলপলিশও ব্যবহার করতে পারো। এটা তোমার নখকে ঢেকে ফেলে, এমনভাবে যে, নখ এবং নেইলপলিশের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকে না। সুতরাং, তখন নেইলপলিশ লাগিয়েই তুমি ওযু করতে পারো। এতে কোন সমস্যা নেই। আর আফ্রিকার মহিলারা যেভাবে চুলে বিনুনি করে থাকেন, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর পরচুলা ব্যবহারেও কোন সমস্যা নেই। সুতরাং, ইসলাম এ সব কিছুরই অনুমতি দেয়, এই শর্তে যে, সেগুলো যেন তোমাকে তোমার প্রতিদিনের নামায বা আল্লাহ্‌ তা’লার ইবাদত করা থেকে বিরত বা বাধাগ্রস্ত না করে।”


আর একটি মেয়ে, যার বয়স নয় বছর, হুযূর আকদাসের কাছে জানতে চান শিশুদের জন্য আল্লাহ্‌র সাথে একটা দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার সর্বোত্তম উপায় কী।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন যে, সাত থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত তোমাদের প্রতিদিনের নামায পড়ার চেষ্টা করা উচিত। সুতরাং, প্রথম বিষয় এই যে, যদি তুমি আল্লাহ্‌ তা’লার সাথে একটি সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে চাও, তাহলে তোমার প্রতিদিনের নামায পড়া উচিত এবং এর পাশাপাশি পবিত্র কুরআন পাঠ করা উচিত। আর যদি সম্ভব হয়, তোমার পবিত্র কুরআনের অনুবাদ শেখার চেষ্টা করা উচিত; অথবা, অন্তত পবিত্র কুরআনের কিছু অংশের অর্থ যেগুলো তুমি তোমার নামাযে পাঠ করে থাকো। সুতরাং, এভাবে আল্লাহ্ তা’লার সাথে সম্পর্ককে তুমি দৃঢ়তর করতে থাকবে, আর যদি তুমি এমন করতে থাকো, তাহলে তুমি যত বড় হতে থাকবে আল্লাহ্‌ তা’লা সম্পর্কে তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং তাঁর সাথে তোমার সম্পর্কের বন্ধন আরো উন্নত হতে থাকবে।”
সভায় একজন অংশগ্রহণকারী, হুযূর আকদাসের কাছে জানতে চান আহমদী মুসলিম তরুণীদের কোন শাখায় পড়াশোনা করা উচিত এবং কোন ধরনের পেশা অবলম্বনের চেষ্টা করা উচিত।
তাকে পরামর্শ দিতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“তুমি যে বিষয়ই পছন্দ করো না কেন, তুমি তা পড়তে পারো। তুমি ডাক্তার হতে পারো, তুমি শিক্ষক হতে পারো, তুমি আইনে পড়াশোনা করতে পারো, তুমি অন্য কোন বিষয় পড়তে পারো। সুতরাং, তোমার যেটা পছন্দ, তুমি সেই পড়াশোনা করতে পারো, আর এগুলো সবই তোমার জন্য কল্যাণজনক। সব সময় দেখবে যে, তুমি এমন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করো যা তোমার দেশবাসীর, তোমার জাতির জন্য এবং আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের জন্য কল্যাণজনক। যদি তুমি পড়াশোনার পর তোমার স্বজাতির সহায়তা করতে পারো আর যদি তুমি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের সহায়তা করতে পারো, তাহলে ঐ সকল বিষয়ই তোমার জন্য কল্যাণজনক।”
নাসেরাতুল আহমদীয়ার আরেক সদস্যা জানতে চান মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পরে ইসলামের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী ছিল।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের অব্যবহিত পরে এমনটি ঘটে নি। ৩০ বছর খিলাফতে রাশেদা (সঠিক পথপ্রাপ্ত খিলাফত) বিদ্যমান ছিল; আর হযরত উসমান (রা.)-এর যুগে মুসলমানদের মাঝে বিভেদের সূচনা হয়। আর এর কারণ এই ছিল যে, সেই যুগের মুনাফিকরা (কপট) ইসলামের প্রসার চাইতো না। মহানবী (সা.) এই ভবিষ্যদ্বাণীও করে গিয়েছিলেন যে, ‘আমার মৃত্যুর পরে, প্রকৃত খেলাফত – অর্থাৎ, খিলাফতে রাশেদা – কিছুকাল থাকবে, এরপর মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও বিভক্তির উদয় হবে।’ মহানবী (সা.)-এর একটি বর্ণনা রয়েছে যে, এরপর এক দীর্ঘকাল, প্রায় এক হাজার বছর, এই বিভক্তি থাকবে। আর তারপর, প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি পুনরায় মুসলমানদের একতাবদ্ধ করতে সচেষ্ট হবেন। সুতরাং, আমরা আহমদী মুসলমানরা এই কাজই করে চলেছি। আমরা মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আর এটা মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী যে, প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-এর তিরোধানের পর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে; আর সেটাই আমরা বলছি যে, এখন অন্যান্য মুসলমানদের মাঝে কোনো খিলাফত নেই, কেবল আহমদী মুসলমানদের মাঝে এক খিলাফত রয়েছে, আর প্রতিদিন মানুষজন এতে যোগদানের জন্য এগিয়ে আসছে। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে যোগদান করছে। সুতরাং, এভাবে আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর অন্যান্যদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।”
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“সুতরাং, মহানবী (সা.)-এর এটি ভবিষ্যৎবাণী ছিল যে, যখনই মুসলমানদের মাঝে পার্থিব আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হবে, তখনই বিভক্তির উদয় হবে, আর সেটাই আমরা দেখেছি। খিলাফতে রাশেদার ত্রিশ বছরের পর রাজা-বাদশাহ ছিলেন। যদিও একে ‘খিলাফত’ নামে অভিহিত করা হয়, এটি [প্রকৃত] খিলাফত ছিল না। এটি এক ধরনের রাজতন্ত্র ছিল। সুতরাং, রাজা ছিল, আর খিলাফত ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত খিলাফত, অথচ ইসলামে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত খিলাফতের কোন ধারণা নেই। কিন্তু এখন, যেহেতু তুমি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তকে বরণ করে নিয়েছো, প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-এর জামা’তে যোগদান করেছো, আর তুমি সেই মানুষ যে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করেছো। তুমি মহানবী (সা.)-এর আকাঙ্ক্ষাকে গ্রহণ করেছো। সুতরাং, তুমি সৌভাগ্যবতী।”