প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৫-নভেম্বর, ২০২২

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো সুইডেনের আতফাল সদস্যবৃন্দ


“আল্লাহ্ তা’লা মুসলমানদেরকে ইবাদতের সর্বোত্তম পন্থা শিক্ষা দিয়েছেন।”
— হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)
২০ নভেম্বর ২০২২, সুইডেনের মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার (৭-১৫ বছর বয়সী আহমদী বালকদের অঙ্গ-সংগঠন) সদস্যদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর আতফাল সদস্যগণ সুইডেনের গোথেনবার্গে অবস্থিত বায়তুন নাসর মসজিদ থেকে সভায় ভার্চুয়ালি (অনলাইনে) সংযুক্ত হন।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার সদস্যবৃন্দ তাদের ধর্মবিশ্বাস ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে হুযূর আকদাসের নিকট প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
একজন তিফল হুযূর আকদাসের কাছে জানতে চান হিন্দু এবং খ্রিস্টানরা যেখানে স্থির বসে থেকে তাদের ইবাদত করে থাকেন, সেখানে মুসলমানগণ নামাযের সময়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমা অবলম্বন করার কারণ কী।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তরে বলেন:
“আল্লাহ্‌ তা’লা মুসলমানদেরকে ইবাদতের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা যেন প্রথমে দণ্ডায়মান হই এবং আমাদের হাতগুলো আমাদের সামনে ভাঁজ করে রাখি। যখনই তুমি সম্মানিত এবং প্রভাবশালী কোন ব্যক্তির সামনে যাও, তখন দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকো … যখন তুমি কোন কিছু তার কাছ থেকে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো তখন তোমার অভ্যন্তরীণ অবস্থা পরিবর্তিত হয় এবং তুমি তার সামনে অবনত হও, আর এটাই সেই অবস্থা যা রুকুর ভঙ্গিমায় প্রতিফলিত হয়। এরপর যখন তুমি তোমার আকাঙ্ক্ষিত বিষয় পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠো, তখন তুমি আবার দাঁড়িয়ে যাও। যখন কোন কিছু চাইতে গিয়ে তোমার উদ্বেগ খুবই বেড়ে যায় তখন তুমি অস্থির হয়ে নিজ দেহকে আবার সোজা করো এবং তোমার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করো। যখন তোমার উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি পায়, তখন তুমি হঠাৎ আল্লাহ্‌ তা’লার সামনে সিজদায় পড়ে যাও এবং অশ্রু বিসর্জন দিতে শুরু করো। তুমি উঠে বস এবং আবার সিজদায় পড়ে যাও। এরপর তুমি দাঁড়িয়ে পড়ো এবং তারপর আবারো বসে থাকা অবস্থায় তোমার দোয়া করে থাকো; আর এভাবে শেষ পর্যন্ত তোমার নামায শেষ হয়। সুতরাং, এই হল সেই সকল ভঙ্গিমা নামাযের মধ্যে যেগুলো অবলম্বনের কথা আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদেরকে শিখিয়েছেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“যখন ছোট্ট শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোন কিছু খুব বেশি চায়, তখন তারা এর ওপর খুব জিদ করে এবং কান্নাকাটি করে আর এমন করতে করতে, কখনও বসে আর আবার দাঁড়িয়ে যায়। … সুতরাং, বিভিন্ন ভঙ্গিমা অবলম্বন করা একটি প্রকৃতিসম্মত বিষয়। ফরয নামাযের সময়ে, আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, আমরা যখন আল্লাহ্‌র সামনে যাই তখন আমাদের বিভিন্ন ভঙ্গিমা অবলম্বন করা উচিত এবং আমাদের হৃদয়ের যথাযথ অনুরূপ অবস্থা অবলম্বন করা উচিত। তিনি এমনকি আমাদেরকে দোয়াতে ব্যবহার্য শব্দগুলোও শিখিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে নামাযের সময়ে ব্যাকুল চিত্তে তাঁর ইবাদতের আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং, যদি আমরা এসব অনুসরণ করি, তবে আল্লাহ্‌ আমাদের দোয়া কবুল করবেন। সুতরাং, আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি পরিপূর্ণ। এটি ইবাদতের সেই পদ্ধতি নয় যেখানে তুমি কেবল বসে বিশ্রামের অবস্থায় থাকো। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা প্রকৃতিসম্মত এবং আমাদের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ্‌ তা’লার চেয়ে বড় কোনো সত্তা নেই। সুতরাং, যখন আমরা আল্লাহ্‌র কাছে যাই তখন আমাদের যথাযথ ভঙ্গিমা অবলম্বন করা উচিত।”
একজন বালক হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন, ঐ সমস্ত মানুষ যারা প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-এর ওপর ঈমান আনে নি, তাদেরকে খোদা তা’লা ক্ষমা করতে পারেন কিনা।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“কেউ ক্ষমা লাভ করবেন কিনা এটি একেবারেই পরিপূর্ণভাবে খোদা তা’লার এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ্‌ তা’লা বলেছেন যে, তোমাদের উচিত তাঁর প্রেরিত নবীগণের ওপর ঈমান আনা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, শেষ যুগে মসীহ্‌ এবং মাহ্‌দী আবির্ভূত হবেন। আমরা বলি যে, মুসলমানদের মধ্য থেকেই তাঁর আবির্ভূত হওয়ার ছিল। সুতরাং, প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) আবির্ভূত হয়েছেন এবং আমরা তাঁকে গ্রহণ করেছি। … প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) বলেছেন যে, মানুষের বিচারের বিষয়ে আল্লাহ্‌ তা’লা কী করবেন তা পরকালের বিষয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন কাকে শাস্তি দিবেন এবং কাকে পুরস্কার দিবেন, আর কেউ সৎকর্ম করেছে কিনা, এবং তাদের সৎকর্ম খোদা তা’লার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কিনা। আর কোন ব্যক্তি যিনি শাস্তি লাভের যোগ্য, তাকে তিনি কীভাবে শাস্তি দিবেন, এটাও তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। যারা ইহজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অবিচার করে তাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’লা এই জীবনেই শাস্তি দিয়ে থাকেন, আর পরকালেও তারা তাঁর শাস্তির মুখোমুখি হবেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“কেবলমাত্র কোন নবীকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে কোন জাতিকে ধ্বংস করা হয় না। তাদের তখন শাস্তি দেওয়া হয় যখন তারা নিষ্ঠুরতা অবলম্বনে সীমালংঘন করে। আজকে, মানুষ মনে করে যে, মুসলমান দেশগুলোর অবস্থা ভালো। তাদের তেল সম্পদ রয়েছে, আর মুসলমানগণ অত্যন্ত ধনাঢ্য দেশ শাসন করে থাকে আর এমন ব্যক্তিবর্গ রয়েছে যারা অত্যন্ত ধনী। কিন্তু, এটি প্রকৃত বাস্তবতা নয়। প্রকৃতপক্ষে, তারা অত্যন্ত ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। এটি মুসলমানদের জন্য সত্য, এবং অন্যদের জন্যও। যদি কেউ নবীদের অস্বীকার করে, আর এরপর আরও অগ্রসর হয়ে তাদেরকে নিয়ে বিদ্রুপ করতে শুরু করে, আর তাদের ওপর যারা ঈমান আনে তাদের ওপর অন্যায়-অবিচার করতে থাকে, কেবল তখন আল্লাহ্‌ তা’লা এমন মানুষকে শাস্তি দান করেন, আর এমন মানুষ ইহকাল এবং পরকালে নিশ্চিতভাবে শাস্তি পাবে।”
তাঁর উত্তরে আরো অগ্রসর হয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“যারা কোন নবীকে অস্বীকার করেন, তাদের বিষয়ে আল্লাহ্‌ কেমন আচরণ করবেন এ প্রসঙ্গে (বলা যেতে পারে যে), আল্লাহ্‌ তা’লা তাদের ভালো কাজের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং তাদের অপকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দান করবেন। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই কোন প্রকার জাহান্নামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে, হয় ইহকালে অথবা পরকালে। কেউ কেউ ইহকালেই এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, আর অন্যরা পরকালে এর মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু, এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উক্তি যে, এমন একদিন আসবে যখন জাহান্নাম শূন্য হয়ে যাবে এবং সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
হুযূর আকদাস আরো বলেন যে, আহমদী মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত, আমরা প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.)-কে মান্য করে কতটুকু লাভবান হয়েছি; আর ব্যক্তি হিসেবে আমাদের উন্নতির চেষ্টা করা উচিত। অন্যথায় যদি এর ফলস্বরূপ আমাদের কর্ম সংশোধিত না হয়, তবে প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-কে মান্য করে আমরা মোটেই লাভবান হতে পারলাম না।

এক শিশু হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময়ে আহমদী মুসলমানগণ কেন নামায পড়ে থাকেন।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আমরা এটি এজন্য করে থাকি যে, আমাদের পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে একটি পরিবর্তন আসে; আর তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন যে, এর ফলস্বরূপ আমাদের অন্তরে খোদার এক ভয় জাগ্রত হওয়া উচিত এবং আমাদের দোয়া করা উচিত। কেননা, কেয়ামতের দিনেও পুরো ব্যবস্থাপনা এলোমেলো হয়ে যাবে, আর এ জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমাদের দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদেরকে এর ক্ষতিসমূহ থেকে রক্ষা করেন। মানুষের ওপরও সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গর্ভবতী মহিলাদের এর ফলে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, আমাদের দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সকল ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন এবং এর মাঝে যা কল্যাণ রয়েছে তা আমাদেরকে দান করেন। যখনই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার পরিবর্তন দেখা দেয়, তখনই তার ফলস্বরূপ আমাদের হৃদয়ে খোদার এক ভয় সৃষ্টি হওয়া উচিত। যখন বৃষ্টি হয় এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আর বজ্রপাত ও বিদ্যুত চমক দেখা যায়, মহানবী (সা.) এমন অবস্থায় আল্লাহ্‌ তা’লার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতেন, যেন তিনি মানুষকে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করেন। সুতরাং, যখনই স্বাভাবিক অবস্থার মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা দেয়, তখনই আমাদেরও নিজেদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয়কে ধারণ করে দোয়া করা উচিত।”