প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২২-নভেম্বর, ২০২২

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করলো সুইজারল্যান্ডের আনসার


“খিলাফত রাজতন্ত্রে পরিণত হবে না”– হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)
১৩ নভেম্বর ২০২২, মজলিস আনসারুল্লাহ্ (চল্লিশোর্ধ্ব আহমদীয়া মুসলিম পুরুষদের অঙ্গ-সংগঠন) সুইজারল্যান্ডের সদস্যবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) এক ভার্চুয়াল অনলাইন সভায় মিলিত হন।

হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর আনসারুল্লাহ্ সদস্যবৃন্দ সুইজারল্যান্ডের উইগোল্টিঙ্গেন-এ অবস্থিত নূর মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর মজলিস আনসারুল্লাহ্‌র সদস্যগণ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
অংশগ্রহণকারীদের একজন উল্লেখ করেন যে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত দ্রুত বিস্তার লাভ করছে এবং তিনি হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞাসা করেন কোন দেশটি সর্বপ্রথম আহমদী মুসলিম দেশ হবে এবং কীভাবে সেই দেশটি শাসিত হবে।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“এটি খোদা তা’লার অনুগ্রহ আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করছে। খোদা তা’লাই ভালো জানেন কোন দেশ সর্বপ্রথম প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-কে গ্রহণ করবে। যদি সেটি কোন ক্ষুদ্র দেশও হয়, আমরা নিশ্চয় আকাঙ্ক্ষা করি যে, কোনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে যোগদান করুক। আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদের মুবাল্লিগদেরকে (ধর্মপ্রচারক) এবং ঐ সকল মানুষকে, যারা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বাণীকে বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তাদেরকে শান্তিপূর্ণ পয়গাম ছড়িয়ে দেওয়ার তৌফিক দান করুন এবং মানুষের হৃদয়কে এর সত্যের প্রতি উন্মোচন করুন যেন তারা প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-কে গ্রহণ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পতাকাতলে সমবেত হন। আমি সত্যিই জানি না সেটি কোন দেশ হবে এবং তা কখন সংঘটিত হবে। কেবল আল্লাহ্‌ই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।”
সেই দেশ কীভাবে শাসিত হবে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“তাদের শাসনব্যবস্থা পূর্বের ন্যায় চলমান থাকবে। খিলাফত একটি রাজতন্ত্রে পরিণত হবে না এবং এটি খিলাফতে রাশেদার যুগের ন্যায় একটি শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে না। খিলাফত পৃথক থাকবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। পবিত্র কুরআনও এদিকেই ইশারা করে। পবিত্র কুরআনের সূরা হুজুরাতে আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন যে, যখন দুইটি মুসলিম পক্ষ একে অপরের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয় তখন তোমাদের উচিত তাদের মধ্যে ন্যায়বিচারের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং তারপর সেই দুই সরকার যাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলো, তাদের কোন প্রকার প্রতিশোধপরায়ণতা বা অবিচারের আশ্রয় নেওয়া উচিত হবে না। সুতরাং, এর অর্থ এই যে, অসংখ্য মুসলিম সরকার বিদ্যমান থাকবে এবং প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ বিষয়াদি দেখাশোনা করবে। যখন এমন ব্যবস্থাপনার প্রশ্ন আসবে যা ইসলামের সাথে সম্পর্ক রাখে এবং যেখানে ইসলামী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন থাকে এবং [খিলাফতের প্রতি] আনুগত্যের প্রশ্ন থাকে, অথবা ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা সংক্রান্ত বিষয়াদিতে, ঐ সকল দেশ সমকালীন খলীফার কাছে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”

আরেকজন প্রশ্নকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞাসা করেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ কীভাবে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং একটি বিশ্বযুদ্ধের পরে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বাণী কীভাবে বিস্তার লাভ করবে, এ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী?
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তর দিতে গিয়ে বলেন:
“বর্তমানে আমরা যা দেখছি তা একটি যুদ্ধের সূচনা। রাশিয়া একটি শহর ছেড়ে দিয়েছে বলে এটি মনে করা ভুল হবে যে, রাশিয়া পরাভূত হয়েছে। এমনকি ইউক্রেনও এমন ধারণা করা থেকে আমাদেরকে সতর্ক করেছে এবং বলেছে যে, এটি কেবল সাময়িক একটি বিষয়। এটি এমনকি রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি কৌশলগত চালও হতে পারে। সুতরাং, এমন মনে করা যে, রাশিয়া অন্যান্য জায়গা থেকেও সৈন্য প্রত্যাহার করবে, এমনটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এবং ব্লকসমূহ গঠিত হবে – বরং ইতিমধ্যেই গঠিত হচ্ছে; ইরান এবং রাশিয়া তাদের মিত্রতাকে শক্তিশালী করছে, চীন এবং রাশিয়াও তাদের সম্পর্ককে জোরদার করছে। সুতরাং, ব্লকসমূহ গঠিত হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সমস্যাও প্রজ্বলিত হয়েছে এবং অনুরূপভাবে, তাইওয়ান নিয়ে টানাপোড়েনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যেভাবে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে, তা ক্রমশ আরো বেশি বিপদজনক হয়ে উঠছে। সুতরাং, এ কথা বলা যে, একটি শহর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে আর তাই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং যুদ্ধ শেষ হয়ে যেতে পারে এবং মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হতে পারে, এমনটি সঠিক নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটি দৃশ্যমান হচ্ছে যে, এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে আর কেবল আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন এই প্রক্রিয়ায় কত বছর লাগবে।”
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“যখন আমরা ইতোমধ্যে সংঘটিত দুটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকাই, তখন দেখি যে, এমনটি হয়নি যে, সংঘাতের প্রথম দিন থেকেই বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছু ব্লক গঠিত হয়েছে এবং তারপর যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় সেগুলো রূপান্তরিত হয়েছে। জার্মানি এবং রাশিয়া এক অবস্থায় ছিল এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তা পরিবর্তিত হয়। সুতরাং, এর অনুরূপ পরিস্থিতি আবারো ঘটতে পারে। আমি বারবার সতর্ক করে আসছি এবং যদি তারা সতর্ক না হয় এবং খোদার দিকে প্রত্যাবর্তন না করে এবং মানুষ যদি তাদের সম্বিৎ ফিরে না পায় তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকবে। আল্লাহ্‌ তা’লা পবিত্র কুরআন উল্লেখ করেছেন যে, সতর্কবাণীমুলক ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ এড়ানো সম্ভব যদি মানুষ ডাকে সাড়া দেয়। যদি মানুষ তাদের পথ পরিবর্তন করে, আর খোদার দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাদের মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে মানবসেবায় নিয়োজিত হয় এবং আল্লাহ্‌ তা’লার আদেশ-নিষেধ অনুসরণ করে, তবে তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে। তখন নিশ্চিতভাবে তাদের এমন এক অনুভূতি সৃষ্টি হবে যে, এ কারণেই তাদেরকে রক্ষা করা হয়েছে। ইউনুস (আ.)-এর জাতিকে একারণেই রক্ষা করা হয়েছিল যে, তারা অনুতপ্ত হয়ে আকুতি-মিনতি সহকারে ক্রন্দন করেছিল।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“সুতরাং, এটি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের দায়িত্ব হবে যে, আমরা যেন ইসলামের প্রকৃত শান্তিপূর্ণ বাণী প্রচারে আমাদের প্রয়াসকে জোরদার করি। আমাদের মানুষকে বলা উচিত যে, ক্ষমা চাওয়ার কারণে তাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করা হয়েছে, আর এর মাধ্যমে তারা তাদের দায়িত্বসমূহের একটি, অর্থাৎ, ক্ষমা চাওয়ার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে। কিন্তু, যদি তারা সত্যি সত্যিই নিজেদেরকে দীর্ঘ মেয়াদে রক্ষা করতে চান, তবে তাদেরকে যুগ-ইমামের দিকে ধাবিত হতে হবে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গ্রহণ করে খোদা তা’লার সাথে একটি জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, আর সেটিই তাদেরকে প্রকৃত মুক্তি দান করবে। অন্যথায়, তারা বারংবার নিজেদেরকে এই একই পরিস্থিতির মধ্যে পাবে এবং বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধ চলতেই থাকবে। সুতরাং, সেটি হবে ইসলামের বাণী প্রচারের সময়। নতুবা মনে হচ্ছে যে, তারা যদি সংশোধিত না হয় তবে এই বর্তমান যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে। সেটি এক বছরের মধ্যে ঘটবে নাকি কয়েক বছরে, তা কেবল আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।”
একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন আহমদী মুসলমানদেরকে বিশ্বজনীন মহামারীর পূর্বের ন্যায় কীভাবে আবার সমবেত করা সম্ভব।
হুযূর আকদাস এ বিষয়টি তুলে ধরেন যে, ইতোমধ্যেই আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বেশ কয়েকটি বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে যেখানে বড় সংখ্যায় মানুষ সমবেত হয়েছে, আর তাই মানুষের উপলব্ধি করা উচিত যে, তাদের পুনরায় মসজিদসমূহে সমবেত হওয়ার জন্য আসা শুরু করা উচিত। হুযূর আকদাস জলসা সালানা যুক্তরাজ্য এবং তাঁর নিজের সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের উদাহরণ পেশ করেন; যেখানে, যথাযথ কোভিড বিধিমালা প্রতিপালন করেও মানুষজন বড় সংখ্যায় সমবেত হয়েছেন। তিনি আর উল্লেখ করেন যে, বিশ্বজুড়ে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিভিন্ন শাখার জন্য তাদের কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের ক্ষেত্রে এগুলোকে দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে রেখে কাজ করা উচিত।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“মজলিস আনসারুল্লাহ্‌র দায়িত্ব তাদের পরিবারগুলোকে অবহিত করা যে, তাদের এখন মসজিদে যাওয়া উচিত। মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া এবং লাজনা ইমাইল্লাহ্‌রও এটি দায়িত্ব। সুতরাং, যদি আনসারুল্লাহ্‌ সদস্যগণ, যারা পরিবারে জ্যেষ্ঠস্থানীয়, তাদের পরিবারগুলোকে বলে এবং নিজেরাও মসজিদে যায় তবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। শেষ পর্যন্ত এটি নির্ভর করে আপনারা কতটুকু প্রয়াস চালাবেন তার ওপর।”
একজন অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেন যে, কিছু মানুষ রয়েছেন যারা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন, কিন্তু, এতে যোগদান করেন না। আর তাই, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে আরো বেশি মানুষকে যোগদান করানোর জন্য তাদেরকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আল্লাহ্‌ তা’লা কোথাও আপনাকে বলেন নি যে, যখনই আপনি কারো নিকট ধর্ম প্রচার করবেন তখনই তারা নিশ্চিতভাবে আপনার প্রচারিত ধর্ম-বিশ্বাস গ্রহণ করবেন। আল্লাহ্‌ তা’লা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আদেশ দিয়েছেন যে, ‘তোমার কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা মানুষের কাছে প্রচার করো।’ সুতরাং, তিনি আদেশ দিয়েছেন আমরা যেন বাণী পৌঁছে দিই। আল্লাহ্‌ তা’লা বলেছেন যে, আপনার দায়িত্ব মানুষকে পথ প্রদর্শন করা নয়, আপনার দায়িত্ব কেবল পয়গাম পৌঁছে দেওয়া, আর এরপর মানুষের সঠিক পথ লাভ করাটা আল্লাহ্‌র হাতে। সুতরাং, আপনার উচিত শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া এবং দোয়া করা। যে আবেগের সাথে আপনারা এই বাণীর প্রচার করেন, বা ধর্মীয় সাহিত্য বিতরণ করেন, বা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন; সেই একই আবেগের সাথে আপনাদের ঐ সকল মানুষের জন্য দোয়া করা উচিত যাদের সাথে আপনারা যোগাযোগ স্থাপন করে থাকেন। যদি আপনারা একই আবেগের সাথে দোয়ায় রত এবং আল্লাহ্‌ তা’লার সামনে সিজদাবনত থাকেন এবং নফল নামাজ আদায় করতে থাকেন তাহলে আল্লাহ্‌ তা’লা আপনাদের প্রয়াসকে আশিসমণ্ডিত করে দিবেন।”
মজলিস আনসারুল্লাহর একজন সদস্য হুযূর আকদাসের নিকট জানতে চান, পরিবেশ রক্ষা এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাসের জন্য তারা কী করতে পারেন।
হুযূর আকদাস উল্লেখ করেন যে, তিনি ইতোমধ্যেই আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের শিশু ও নারীদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে, তাদের আরও বেশি গাছ লাগানো উচিত এবং ছোট ছোট যাত্রার জন্য গাড়ি ব্যবহার করা উচিত নয় এবং তাদের হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
সরকারসমূহ যে ভূমিকা রাখতে পারে তার সম্পর্কে আরও বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“এটি সরকারের কাজ যে, তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করবে এবং তাদের শিল্প-কারখানাসমূহ এমনভাবে পরিচালনা করবে যাতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পায়। চীন এখন বলছে যে, ইউরোপ এবং আমেরিকা গত পঞ্চাশ বা ষাট বছর ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। সুতরাং, চীন প্রথমে তাদের সমান অবস্থায় আসবে এবং এরপর তারা কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুতরাং, এভাবে প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।”
হুযূর আকদাস বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টির রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। আর তিনি এই উদাহরণ উপস্থাপন করেন যে, কীভাবে পাকিস্তান পাশ্চাত্যজগত ও ইউরোপকে দোষারোপ করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যা সেই দেশটিতে ভারী বন্যার কারণ হয়েছে। অথচ, হুযূর আকদাস বলেন যে, পাকিস্তান নিজেই নিজের বনাঞ্চল কেটে নিশ্চিত করেছে, আর তাই তাদেরও এর দায় নিতে হবে।”
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“এক প্রকারের স্বার্থপরতা এখানে শেকড় গেড়ে বসেছে। যেখানে শিল্পোন্নয়ন সংঘটিত হচ্ছে, উদাহরণস্বরূপ ভারতবর্ষে, সেখানে ভারত বলছে যে, তারা কেন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে, আর চীনও এ রকম কথা বলছে এবং অন্যান্য দেশগুলোও, যেগুলো উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, তারাও এ রকম কথা বলছে। যেহেতু পাশ্চাত্য জগত উন্নত হয়ে একটি শ্রেয় অবস্থানে পৌঁছে গেছে, তাই এখন তারা অন্যদেরকে বলছে তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য; অথচ তারা নিজেরাও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার কোন নেতিবাচক দিক মোকাবেলা করতে অস্বীকার করছে। তারা চায় নিজেরা উন্নত থেকে যেতে … সুতরাং, পুরো বিষয়টির বড় গভীর রাজনীতিকীকরণ সংঘটিত হয়েছে।”
হুযূর আকদাস আরও জোর দেন যে, যুদ্ধসমূহ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখছে।