আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে খিলাফতের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজনীয়তা

কৃষিবিদ মোহাম্মদ ফজলে-ই-ইলাহী

নবী রসূলের তিরোধানের অব্যবহিত পর সেই রসূলেরই পবিত্র অনুসারী যিনি ধর্মীয় বিধি বিধান মতে খোদার ইশারা ইঙ্গিতে চলমান ধর্ম সংরক্ষণের নিমিত্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন, ধর্মীয় পরিভাষায় তাঁকেই বলা হয় খলীফা। এখানে প্রজন্ম হলো সেই খলীফারই আনুগত্যে থাকা স্বামী-স্ত্রী যুগলের সন্তান সন্ততি।

খলীফা হলো খোদাপ্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত ও তাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছার আলোকোজ্জ্বল এক পথ এবং আত্মার উৎকর্ষ সাধনের একমাত্র উপায় ও অবলম্বন। তবে জগৎ মোহে মুহ্যমান দুরাচারগণ এ সত্য উদঘাটনে বরাবরই ব্যর্থ। কারণ তারা অসাধু, তাই দুনিয়ার নরক তাদের গ্রাস করে ফেলেছে। ফলেই তারা খোদার অনুকম্পা হতে বঞ্চিত। আর তাদের ব্যাপারে খোদাতাআলার সিদ্ধান্ত হলো,

“তাহাদের হৃদয়ে ব্যাধি ছিল অতঃপর আল্লাহ্‌ তাহাদের ব্যাধিকে আরও বাড়াইয়া দিলেন”।

(সূরা আল বাকারাঃ ১১)

অতএব পারলৌকিক জীবনে হতাশাই হবে এদের প্রাপ্য। কিন্তু তাকওয়াসিক্ত ব্যক্তিগণ এই সত্য রহস্য উদ্ঘাটনে কখনও বিফল হন না। বলতে কী, বর্তমান যুগের আহ্‌মদীগণ আজ সেই সত্যটিই আবিষ্কার করেছেন। আর সেই সুবাদেই আমরা আহ্‌মদীরা যুগ খলীফার দলভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কিন্তু এতেই আমাদের আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকা উচিত হবে না। সাথে সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এই পবিত্র পথের পথিক হিসাবে গড়ে তোলা উচিত হবে। যে পুণ্যপথ প্রাপ্ত হয়ে আমি আত্মতৃপ্ত অথচ তা থেকে আমার সন্তানগণ বঞ্চিত থাকবে তা কখনও কোন মাতাপিতার কাম্য হতে পারে না। কেউ যদি তেমনটি ভাবেন তবে তিনি অর্বাচীন বরং এর চেয়ে তার মরে যাওয়াই ভাল ছিল। সাদী বলেছেন,

“তোমার মৃত্যুর দিন তোমার পরিণয়ের দিবস হইবে যদি পুণ্য ও নেকীর সাথে তোমার পরিণাম হয়।”

সেই নেকী ও পুণ্য কী?তা হলো পার্থিব মোহ হতে নিজেকে মুক্ত রাখা আর পিছনে রেখে যাওয়া প্রজন্মকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে যাওয়া। ওপার জীবনে অবস্থান করে আমরা যদি আমাদের সন্তানদের দোয়াই না পেলাম তবে আমাদের এপার জীবনের সার্থকতা কোথায়? যদি দেখি আমাদের জীবনের পরিণামের দিন আমাদের সন্তানগণ সংসার সম্ভোগে আসক্ত হয়ে নির্লজ্জ জীবন জোয়ারে ভাসছে তবে তা হবে আমাদের জন্য অতি বেদনা ও কষ্টের কথা। জীবিত অবস্থায় কোন মাতা-পিতা কী কখনও চাইবেন, তার ছেলের মাথাটি অবিবেচক কোন কাঠুরিয়ার কুড়ালের নীচে পেতে দিক? কখনও নহে। সুতরাং এ ভয়াবহতার কথা পূর্ব থেকে ভেবেই পিতামাতাগণ তাদের আওলাদের জাগতিক দুষ্ট প্রভাব পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষার চেষ্টা করে যাওয়া উচিত। আর এ কাজের পূর্ণ সফলতার মোক্ষম উপায়ই হলো জামাতে আহ্‌মদীয়ার যুগ খলীফার ছত্রছায়ায় নিজ সন্তানদের বিলিয়ে দেয়া। আমরা আহ্‌মদীগণ আজ কতই না সৌভাগ্যবান। আমরা আমাদের খোদার পক্ষ থেকে সে সুযোগ প্রাপ্ত হয়েছি। খোদার মনোনীত মা’মুর ও তাঁর নেযামের নাগাল পেয়েছি। পৃথিবীর বহুজন বহুদিন ধরে বহু চেষ্টা করে যে সুযোগ পায়নি আমরা তা পেয়েছি। আমরা যদি আমাদের জীবনে প্রাপ্ত এ পবিত্র সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারি তবে আমাদের পরিণাম দিবস ধিকৃত ও নিন্দিত হবে। একি ভাবা যায়? আমরা যদি আমাদের জীবনকে নন্দিত ও প্রশংশিত করতে চাই তবে অর্থ কিংবা প্রতিপত্তি নয়, সম্পদ কিংবা সম্ভার নয় বরং সন্তানদের পুণ্য তালীমে পরিপূর্ণ করে যুগ খলীফার হাতে তাদের সোপর্দ করে যাওয়াই হবে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। যেমনটি করেছেন হযরত গোলাম মর্তুজা ও তাঁর মহীয়সী স্ত্রী চেরাগ বিবি সাহেবা, হযরত উম্মুল মু’মিনীন নুসরাত জাঁহা বেগম সাহেবা, যেমনটি করেছেন হযরত স্যার জাফরুল্লাহ্‌ খান চৌধুরীর মহীয়সী মাতা ও বিজ্ঞ বৈজ্ঞানিক ড. আব্দুস সালামের পিতা ও মাতাগণ। তাঁরা আমাদের উৎকৃষ্টতম নজীর ও আদর্শমন্ডিত উপমা। তাঁদের চেষ্টার ফলাফল উচ্চতর কোন’ বলয়ে যে উপনীত হয়েছে তা আমাদের চিন্তাচেতনায় পরিমাপ করার বাইরে। তথাপি সেই তাঁদেরই কর্ম প্রচেষ্টাকে ধ্বজা ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর তাঁদের আদর্শ ছকেই আমাদের সন্তানদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাহলে অবশ্যই তারা পথ পাবে, পুণ্য পাবে এবং খোদার আদুরে দুলালে পরিণত হবে। এর বাইরে আমাদের আর কোন ভাবনা ভাবার অবকাশ নেই, উচিতও নয়। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে তাদের এ কাঠামোতে ফেলে যেতে পারি তবেই আমরা হবো সার্থক পিতামাতা। এবং তা হবে সন্তানদের জন্য অনন্ত পাওয়া। একথা এখানে না বললেই নয়, এ সুযোগ ও সৌভাগ্য পৃথিবীর আর করোরই নেই। কেবলই আছে তা এই আহ্‌মদীয়া জামাতের প্রতিটি নিরীহ সদস্যের। তাই আমরা ধন্য। আমরা তাই ধনবান।

এ ব্যাপারে করণীয়ঃ

এরজন্য আমাদের প্রত্যেককে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়। সাথে ক্রন্দনরত দোয়া ও আল্লাহ্‌র সাহায্য কামনাই হবে আমাদের প্রধান কাজ। সন্তানদের প্রারম্ভ জীবনেই নেক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা, নিত্যদিন কুরআন তেলাওয়াত সহ রীতিমত পাঁচওয়াক্ত নামায আদায়ে অনুরাগী করা, জামাতি পুস্তকাদি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে যোগদানে অভ্যস্ত করা, সৎ কথা বলা ও পরোপকারে আকৃষ্ট করা, মাতাপিতার ভালবাসায় অনুরাগী করা, খিলাফতের প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুরক্ত রাখা, ঝগড়া বিবাদ ও কুৎসা রটনা থেকে বিরত রাখা, ছোটদেরকে স্নেহ ও বড়দের পূজনীয় হওয়ার শিক্ষা দেয়া, প্রতিবেশীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখা ও সহপাঠীদের প্রতি সহমর্মি হওয়া। নিজ পাঠ্যাভ্যাসে নিমগ্ন থাকা, অল্পে তুষ্ট রাখা ও গর্ব সর্বৈব পরিহার করা, বিনয়, নম্রতা ও সাধু স্বভাবের জীবন যাপনে খেয়ালী করে তোলা। বড়, মহৎ ও আদর্শবানদের জীবন নিয়ে আলোচনা করা এবং যাবতীয় নিন্দনীয় কাজ থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করা, বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব ও কুসঙ্গ থেকে বিরত রাখাও হবে পিতামাতার বিশেষ করণীয় কাজ। এর সাথে দোয়া হবে,

“রব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াযিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আইউনিন ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা”

হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে আমাদের চক্ষুর স্নিগ্ধতা দান কর আর আমাদেরকে মুত্তাকীগণের ইমাম (নেতা) বানাও।

(সূরা ফুরকানঃ ৭৫)

অন্য আর এক দোয়া,

“রাব্বি হাবলী মিনাস্‌ সালেহীন”

হে আমার প্রভু-প্রতিপালক তুমি আমাকে পুণ্যবান পুত্র দান কর।”

(সূরা আস্‌ সাফফাতঃ ১০১)

অন্যত্র আল্লাহ্‌ তা’আলার শিক্ষা হলো

“রব্বি ইন্নী লিমা আনযালতা ইলাইয়্যা মিন খয়রীন ফাক্বারী”

অর্থাৎ হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি যে কোন কল্যাণ আমার প্রতি অবতীর্ণ কর। আমি অবশ্যই এর ভিখারী।

(সূরা আল কাসাসঃ ২৫)

এসব দোয়াগুলি সাথে করেই আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যেন আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সমর্থ হই। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আমাদের সহায়।

হযরত মুসলেহ্‌ মাওউদ (রাঃ) তাঁর জামাতের খাদেমদের লক্ষ্য করে বলেছেন,

“আপনি কী এমন পরিশ্রমী যে দৈনিক ১৩-১৪ ঘন্টা কাজ করতে পারেন, পাহাড় পর্যন্ত কাটতে উদ্যত হন, মহল্লার গলি ঝাড়ু দিতেও কুন্ঠা বোধ করেন না।”

আমাদের প্রিয় ইমামের এই যে মহান শিক্ষা এর প্রতিও সন্তানদের আকৃষ্ট করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের নিজ জীবনকে এরই আলোতে পারিচালনায় অভ্যস্থ করে তুলতে হবে। তবেই যুগের খলীফা জামাতের কর্ণধার তাঁর কাংখিত সদস্যদল পেতে সমর্থ হবেন। তবেই জামা’ত সর্বক্ষেত্রে সর্বকাজে পরিপূর্ণতা অর্জনে সফলকাম হবে।

হযরত রসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, “মাতার পদতলেই সন্তানের বেহেশ্‌ত”। তাই বলে যে পিতামাতা নিজেই অপবিত্রতায় নিমজ্জিত তবে সন্তান কিভাবে তার পদতলে বেহেশ্‌তের সন্ধান পাবে? কদাচ নয়। প্রথমে মাতাপিতাকেই বেহেশ্‌তের সিঁড়িতে পা রাখতে হবে, তবেই সন্তান তার পায়ের নিচে বেহেশ্‌তের খোঁজ পাবে। প্রথমে আদর্শের চরম নজির হিসেবে নিজেদের সাব্যস্ত করতে হবে। এরপর নিজের নসিহত দ্বারা সন্তানদের সেই পুণ্যময় পথে পরিচালনা করার আহ্বান জানাতে হবে। তবেই আমরা আমাদের চেষ্টায় ও কাজে সফলতা লাভে সমর্থ হবো।

হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বর্তমান যুগের মানুষকে খোদা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য নূহের কিশতিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং আমৃত্যু তিনি সবাইকে এই কিশ্‌তিতে আরোহণের আহ্বান জানিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন আর তিনি জীবিত নেই। তিনি তাঁর কিশতির কর্ণধার হিসাবে তাঁর খলীফাদের রেখে গেছেন। তাঁরা হলেন আমাদের আত্মার আত্মীয়, কল্যাণ-ছায়া, শান্তির ভান্ডার, ধর্মের গুরু ও পবিত্রতা অর্জনের জ্বলন্ত সূর্য। সুতরাং যারা সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ও তাঁর প্রেরিত জনের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান, তার ভালসায় সিক্ত হতে চান এবং যারা পরকালে নিজ আত্মার মুক্তি কামনায় একান্ত প্রত্যাশী তাদের এখানই উচিত হবে সেই মহান খলীফার ডাকে লাব্বায়েক বলা। আমরা আহ্‌মদীগণ আল্লাহ্‌ তা’আলার অনুগ্রহে সেই ডাকে ‘লাব্বায়েক’ বলে নিজেকে সেই পথে পরিচালিত করছি এবং পবিত্রতম জীবন যাপনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন বাকী কাজ হলো স্বীয় প্রজন্মকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে সেই ডাকে দৃঢ়তার সাথে অনুরক্ত করা ও উৎসর্গীত করে যাওয়া। তাতে আমরা যদি সফল না হই তবে পরাজয়ের বোঝা অবশ্যই আমাদের পরপারের জীবনকে ক্লিষ্ট করবে, মর্মাহত করবে। আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কুরআন-এ বলেন,

“ওয়াত্তাকু ইয়াওমান তুরজাউনা ফীহি ইলাল্লাহ্‌”

এবং তোমরা সেই দিবসকে ভয় করো যেদিন আল্লাহ্‌র দিকে তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

(সূরা আল বাকারাঃ ২৮২)

এখানে খোদা তা’আলা সেই পরাজয় দিবসের প্রতিই ঈঙ্গিত করেছেন। যদি তা-ই হয় তবে দীর্ঘদিন সততার কঠিন সাধনা ও অ-আহ্‌মদীদের ব্যঙ্গ কটূক্তি এবং নির্যাতন তাড়নায় জীবন যাপন করে লাভ কি হলো? মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্দেশ হলো,

“তোমরা নিজেরাও ঐশী আযাব থেকে বাঁচ। সাথে নিজ সন্তানদেরও তা থেকে রক্ষা কর।”

এখন এই দ্বিবিধ দায়িত্বই আমাদের স্কন্ধে বর্তায়। তাই আসু্ন আমরা নিজেকেও খোদার ক্রোধ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। সাথে সাথে প্রিয় প্রজন্মকেও আযাবান্নার থেকে বাঁচাই। সাথে এই দোয়াও জারি রাখবো,

“রব্বানা আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতঁ ওয়া হায়্যিলানা মিন আমরিনা রাশাদা। রব্বিশ্‌ রাহলি ছাদরি ওয়া ইয়াস্‌সিরলি আমরি।”

হে আমর রব্ব! তোমার তরফ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর এবং আমাদের কাজে আমাদের জন্য সফলতার পথ বের করে দাও। হে আমার রব্ব! আমার বক্ষকে খুলে দাও এবং আমার কাজকে আমার জন্য সহজ সাধ্য করে দাও।”

সন্তানসন্ততি মূলত খোদা তা’আলারই ধন। তিনি সাময়িক সংরক্ষণের জন্য তা মানুষ নামী পিতামাতার কোলে দিয়ে থাকেন। আবার যখন তিনি ইচ্ছা করেন তখনই তাকে তিনি তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে যান। এরই নাম মানব জীবন। এক্ষেত্রে পিতামাতার দায়িত্ব হলো খোদাপ্রদত্ত সেই ধনকে আদর্শের আলোয় খোদা প্রেমাসক্তিতে গড়ে তোলা এবং নিজের চির বিদায় লগ্নে ইসলামী শিক্ষায় তাদের পুষ্ট করে পুন খোদার হাতেই সঁপে দিয়ে যাওয়া। এটাই হলো পিতামাতার জীবনের সফলতা এবং সার্থকতা। এই অবস্থায়ই মানুষের শেষ পরিণাম দিবস হবে পরিনয় দিবস তুল্য যা সেখসাদী তাঁর কবিতায় বুঝাবার চেষ্টা করেছেন।

এখানে সন্তানদের প্রতি নসীহত হলো এইঃ

খোদা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় উক্ত করেছেন, “সৃষ্টির কেউই অন্য কারোর বোঝা বহন করবে না।” নিজের আমল নামার জন্য নিজেকেই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং সাধু হও এবং নির্মল জীবন যাপনে সদা তৎপর থাক। পৃথিবীর সব রকম কদাচার হতে নিজেকে মুক্ত রেখে খোদার প্রিয়ভাজন হওয়ার চেষ্টা কর। হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বলেছেন,

তোমরা দুনিয়ার অভিসম্পাতকে ভয় করো না কারণ এটা দেখতে দেখতে ধুম্রের ন্যায় বিলীন হইয়া যায় পরন্তু তোমরা আকাশে অভিসম্পাতকে ভয় কর কারণ এটা যার ওপর নিপতিত হয় তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই বিনষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং প্রত্যেক প্রভাত যেন সাক্ষ্য দেয়, তুমি রাত্রিকাল তাকওয়ার সাথে কাটাচ্ছ এবং প্রত্যেক সন্ধ্যা যেন সাক্ষ্য দেয়, তুমি ভীতির সাথে দিবস যাপন করেছ।

জীবনে এমনটি প্রমাণ করাই হবে প্রতিটি আহ্‌মদী সন্তানের কাজ।

ওয়াকেফে নও পিতামাতার প্রতিঃ

যারা বিগত দিনে সেই সন্তানদের ওয়াকফে নও হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের বেলায় এই দায়িত্ব আরো অধিক এবং আরো কঠিন। আপনারা অধিকতর সতর্ক থাকুন এবং পুণ্যের সব পথ চিহ্নিত করে চলুন যেন নিয়্যতের বিন্দুমাত্র পদস্খলন না হয়। সন্তানদের সেভাবে বুঝাতে থাকুন এবং যুগ খলীফার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলুন। তাদের সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখুন। তাদের মনমানসিকতায় এমন বীজ প্রোথিত করে দিন যেন যুগ খলীফার আহ্বান কানে আসা মাত্র তারা নিজে সে ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকে। ইসলামে খেদমতের আজ তাদের বড়ই প্রয়োজন। এ মহৎ ও মাহান দায়িত্ব তাদের অবশ্যই পালন করতে হবে। হে ওয়াকফে নও এর পিতামাতাগণ! আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন সেই সন্তানদের আল্লাহ্‌র ডাকে আল্লাহ্‌র রাস্তায় বিদায় দিতে আপনাদের হৃদয় কখনও যেন কেঁপে না উঠে। প্রাণ কখনও কেঁদে না উঠে। মন কখনও কুন্ঠাবোধ না করে।

হে আমাদের খোদা! আমরা বড়ই অবুঝ, আমাদের হৃদয় বড়ই অপরিপক্ক ও দুর্বল, আমরা নাচার, বুদ্ধিমত্তাহীন, কিন্তু তুমি আমাদের একমাত্র অবলম্বন ও শক্তির আধার, বার বার ক্ষমা করাই তোমার বৈশিষ্ট্য। আমাদের পদে পদে ভুল করাকে তুমি বারংবার ক্ষমা করো। তুমি আমাদের গ্রহণ করো ও আমাদের সন্তানদের তুমি তোমার পথে রেখে লালন করো ও তোমার কোলে স্থান দিও। আমাদের মৃত্যুর পর যেন তোমার দেয়া সন্তানগণ কোন অবস্থাতেই বিপথগামী না হয়। সুতরাং তুমি পুণ্যপথে তাদের হেফাযতে রেখো, কারণ তুমিই তাদের চিরদিনের অভিভাবক (আমীন)।

পাক্ষিক আহমদী – ৩১শে জানুয়ারী ২০০৭

প্রাপ্ত সুত্র: কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, লন্ডন, ইউকে