জ্ঞানতাপস নূরুদ্দীন (রাঃ)


আহমদ তারেক মুবাশ্বের, ওয়াকফে যিন্দেগী, লন্ডন।

আমরা জানি, হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) ছিলেন একাধারে কুরআনে হাফিয, প্রখ্যাত হেকীম, ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা আলেম, সুবক্তা, কুরআনের সুগভীর তফসীরকারক এবং একজন নিষ্ঠাবান খোদাপ্রেমিক বান্দা। জ্ঞানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ আজন্মের। বাল্যকাল থেকে আরম্ভ করে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জ্ঞানের পিছু ছুটেছেন। এক কথায় বলা চলে তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বা ক্ষণ জ্ঞানান্বেষণে পিপাসার্ত ছিলেন।

হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন (রা) একটি ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৮৪১ সালে পাঞ্জাবের শাহপুর জেলার ভেরা নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। সাত ভাই এবং দুবোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন। কুরআনের প্রতি এ পরিবারের ভালবাসা ছিল অকৃত্রিম। তাঁর পুণ্যবতী পরম শ্রদ্ধেয়া মায়ের নাম নূরবখ্‌ত সাহেবা। তিনি ভেরার পার্শ্ববর্তী গ্রামের আওয়ান বংশীয় সম্ভ্রান্ত ও বিদুষী মহিলা ছিলেন। তিনি গ্রামের ছোটছোট শিশুদেরকে পাঞ্জাবী ভাষায় কুরআনের অনুবাদ এবং ইসলামী ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা দিতেন। ছোট ছেলে নূরুদ্দীনও একইভাবে তাঁর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন। পরবর্তীতে নূরুদ্দীন (রাঃ) প্রায়ই বলতেন, মাতৃগর্ভে থাকাকালে তাঁর মা’কে তিনি কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনেছেন আর মায়ের দুধের সাথে তিনি পবিত্র কুরআনের অমৃত সুধা পান করেছেন। তিনি তাঁর প্রথম শিক্ষিকাও ছিলেন। মা তাঁদের সবার জন্যই তাক্বওয়া এবং খোদা ভীতির এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আর পাঞ্জাবী ভাষায় তাদের মানসপটে শ্বাশ্বত সত্যের বীজ বপন করেছেন শিশুকালেই। তাঁর পিতাও কুরআনের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। জীবনের প্রারম্ভেই পুস্তক পাঠের প্রতি নূরুদ্দীন (রাঃ)-এর অনুরাগ জন্মাতে থাকে এবং তিনি বই-পুস্তক সংগ্রহ আরম্ভ করেন।

হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) মূলত পিতা-মাতা এবং শিক্ষানুরাগী পরিবারের উৎসাহেই জ্ঞান আহরণে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি (রাঃ) বলেছেন, আমার পিতা আমাদের ব্যাপারে এত উচ্চাকাঙক্ষা রাখতেন যে, আজ তিনি বেঁচে থাকলে আমাকে জ্ঞানের সন্ধানে সুদূর আমেরিকা পাঠাতেন।

আল্লাহ্‌ তাআলার একান্ত অনুগ্রহে নূরুদ্দীন (রাঃ) তাঁর জীবনে প্রভূত খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি তাঁর সকল শিক্ষককেই গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতেন। আমরা আগেই বলেছি, তিনি একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী পারিবারিক পরিবেশে জীবন-যাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর বড় ভাই মৌলভী সুলতান আহমদও একজন সুপন্ডিত আলেম ছিলেন। তিনি ছোট ভাইয়ের সুশিক্ষার প্রতিও যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন।

লাহোরে তাঁর বড় ভাইয়ের একটি ছাপাখানা ছিল। এ কারণে মাঝে মধ্যেই তাঁকে লাহোর যেতে হতো। যখন তাঁর বয়স বারো’র কাছাকাছি একবার তিনি বড় ভাইয়ের সাথে লাহোর যান আর সেখানে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং হেকীম গোলাম দস্তগীর তাঁর সফল চিকিৎসা করেন। হেকীম সাহেবের ভদ্রতা ও সুখ্যাতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে নূরুদ্দীন (রাঃ) চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়নে উৎসাহিত হন। কিন্তু তাঁর ভাই তাঁকে ফার্সী পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেন এবং তাঁর জন্য একজন প্রখ্যাত ফার্সী শিক্ষক মুন্সী মোহাম্মদ কাসিম কাশ্মিরীকে নিযুক্ত করেন। শিক্ষকের স্নেহ, শ্রম ও দক্ষ পাঠদান কৌশলের কারণে অল্পসময়েই নূরুদ্দীন ফার্সী ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন।

ভেরা ফিরে আসার পর মিয়াঁ শরফুদ্দীনের কাছে তিনি ফার্সী শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। অল্প কিছুকালের মধ্যে ভাই মৌলভী সুলতান আহমদও লাহোর থেকে ভেরা ফিরে আসেন এবং স্বয়ং তাঁকে আরবী ভাষা শিক্ষাদান আরম্ভ করেন। তিনি শিখানোর জন্য খুবই সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এটা জ্ঞানচর্চার প্রতি তাঁর অনুরাগ ও মনোযোগ উভয়ই উত্তরোত্তর বাড়াতে থাকে। ফলে যে ভাষা সাধারণত কঠিন মনে হতো তা আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) প্রভূত উন্নতি করেন।

১৮৩৯ সনে মহারাজা রণজিত সিং-এর মৃত্যূর পর, পাঞ্জাব যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুঃশাসন, স্বৈরাচার, মারামারি-কাটাকাটি এবং নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, মাত্র কয়েক বছর মধ্যে বৃটিশরা তা থেকে পাঞ্জাবকে মুক্ত করেছে। জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি অধঃপতনের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। সাধারণ মুসলমান, এমনকি আলেমদের মাঝেও খুব কম সংখ্যকই পবিত্র কুরআনের অর্থ জানতো। পবিত্র কুরআন পাঠ করাকে উৎসাহিত করা হতো না। ঠিক এ সময়ে এক শুভ লগ্নে নূরুদ্দীনের (রাঃ) হৃদয়ে পবিত্র কুরআন পাঠের প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মে। ১৮৫৭ সনে কোল্‌কাতার এক পুস্তক বিক্রেতা ভেরা আসেন এবং কয়েকদিন নূরুদ্দীনের (রাঃ) পিতার আতিথ্য গ্রহণ করেন। তিনি নূরুদ্দীন’কে (রাঃ) কুরআনের অনুবাদ শিখতে উৎসাহিত করেন এবং তাঁকে পবিত্র কুরআনের প্রধান পাঁচটি অধ্যায়ের আরবী থেকে উর্দূতে অনুদিত কপি উপহার দেন। নূরুদ্দীন (রাঃ) এ উপহার সাদরে গ্রহণ করেন।

অল্পকিছুদিন পর বোম্বের একজন সওদাগর তাঁকে ‘তাক্‌ভিয়াতুল ঈমান’ এবং ‘মাশারিকুল আনোয়ার’ নামে দুটো উর্দূ বই পড়ার পরামর্শ দেন। এগুলো ছিল পবিত্র কুরআনের অংশ বিশেষের তফসীর। তিনি এ দু’টো খুব ভালভাবে পড়েন আর এভাবে প্রবিত্র কুরআনের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ জন্মে। কুরআনের জ্ঞান অর্জনই তাঁর জীবনের প্রধান বাসনা ছিল যা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

১৮৫৮ সনে ১৭ বছর বয়সে তিনি রাওয়ালপিন্ডির একটি সাধারণ স্কুলে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৌলভী সেকান্দর আলী সাহেব তাঁর শিক্ষার অগ্রগতিতে এত সন্তুষ্ট ছিলেন যে, তিনি তাঁকে প্রাত্যহিক কতক ক্লাস থেকে ছুটি দেন। এভাবে অবশিষ্ট সময় তিনি ব্যক্তিগত শিক্ষকের সহায়তায় অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা লাভের জন্য ব্যয় করতেন। চার বছরের কোর্স সমাপনান্তে তিনি অনেক বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। ডিপ্লোমা পরীক্ষায় তিনি এত ভাল ফলাফল করেন যে, মাত্র একুশ বছর বয়সে ভেরা শহরের কয়েক মাইল দূরে ঝিলাম নদীর তীরবর্তী পীন্ডদাদন খান স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।

নূরুদ্দিনের (রাঃ) জীবন খোদার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়েছে যা পরীক্ষিত। শিক্ষকতা পেশা পরিত্যাগ করে তিনি আবারো জ্ঞানের সন্ধানে আত্মনিয়োগ করেন। কিছুদিন প�� তাঁর এক সহপাঠী উচ্চশিক্ষার সন্ধানে তাঁকে রামপুর যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি তাঁর এই পরিকল্পনার কথা যখন পিতাকে জানালেন, পিতা তাঁকে সানন্দে অনুমতি দিয়ে বলেন, ‘জ্���ান অর্জনের জন্য তুমি এত দূরে চলে যাও যেখানে তোমার কাছে আমাদের খবরা-খবর পৌঁছা সম্ভব হবে না’ কিন্তু তোমার মাকে এ কথা বলবে না পাছে দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার সংবাদে তিনি মর্মাহত হন আর তোমাকে নিরুৎসাহিত করে বসেন।

সাতাশ বছর বয়সে অরো দুজন জ্ঞান অন্বেষীর সাথে নূরুদ্দীন (রাঃ) লাহোর থেকে রামপুরের উদ্দেশ্যে পদব্রজে যাত্রা করেন।

চিকিৎসা শাস্ত্রে দক্ষতা লাভের জন্য নূরুদ্দীন (রাঃ) লঁক্ষ্ণৌতে পৌঁছে প্রখ্যাত হেকীম আলী হুসেন সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক কথার পর হেকীম সাহেব তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি চিকিৎসা শাস্ত্রে কতটা দক্ষতা অর্জন করতে চাও? তিনি বললেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হেকীমের সমকক্ষ হতে চাই। হেকীম সাহেব মুচ্‌কি হেসে বললেন, তুমি কোন এক লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছবে।

হেকীম সাহেব তাঁকে একটি বিষয়ে পাঠদান আরম্ভ করলেন। কিন্তু তিনি দিনে একটি পাঠে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি সম্পূরক পাঠের ব্যবস্থা করতে চাইলেন। কিন্তু তেমন সন্তোষজনক কিছু ঘটেনি। পরবর্তীতে তিনি ফিরিঙ্গী মহল্লার মৌলভী ফযলউদ্দিনের কাছেও পাঠ নিয়েছিলেন।

মৌলভী নূরুদ্দীনের (রাঃ) কঠোর পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ মেধার কারণে হেকীম সাহেবের তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রশিক্ষণ দ্রুত উন্নতি করতে থাকে। শিক্ষক নিয়মিত পরীক্ষা নিতেন আর তাঁকে সর্বদা অগ্রগামী পেতেন আর অচিরেই তাঁর মতামতকে সম্মান করত তাঁর ওপর নির্ভর করা আরম্ভ করলেন। সম্ভাবনাময় ছাত্র নিজ অধ্যয়নকে কেবল রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তাঁর (রাঃ) জ্ঞান পিপাসা ছিলো চিরপ্রখর ও আজন্মের।

হেকীম আলী হুসেনের তত্ত্বাবধানে দুবছরের কিছু বেশি সময় অতিবাহিত করার পর হেকীম সাহেব রীতি মোতাবেক তাঁকে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। এরপর নূরুদ্দীন (রাঃ) তাঁর কাছে বিদায় চান। হাকিম সাহেব তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে নূরুদ্দীন (রাঃ) বলেন। তাঁর আরবী ভাষা ও হাদীসের উপর পড়াশোনা অব্যাহত রাখার আকাঙক্ষা রয়েছে। হেকীম সাহেব তাঁকে মিরাঠে হাফিজ আহমদ আলীর কাছে এরপর দিল্লীতে মৌলভী নজির হোসেনের কাছে অধ্যয়নের উপদেশ প্রদান করেন।

জ্ঞানার্জনের জন্য নূরুদ্দীন (রাঃ) ভূপালের বিখ্যাত জ্ঞানী ও বিদগ্ধ পন্ডিত মুন্সী জামালউদ্দীন এর স্মরণাপন্ন হন। নূরুদ্দীন (রাঃ) বলেন, আতিথেয়তার পর মুন্সী সাহেব আমার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমি বললাম, আমি পাঞ্জাবের অধিবাসী আর ভূপালে এসেছি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে। আমার মনে হলো, তিনি ভেবেছেন আমি একজন ধনী ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যে বিপদের সম্মুখীন। আর আমার জ্ঞান অন্বেষণ একটি অজুহাত মাত্র। তিনি আমাকে বললেন, আমি যদি তার আতিথ্য গ্রহণ করি তিনি আমার জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করবেন। তিনি আমার থাকার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ করলেন আর লাইব্রেরীয়ানকে নির্দেশ দিলেন আমাকে যেন বই পড়ার অবাধ সুযোগ দেয়া হয়। আর এভাবে নূরুদ্দীন সে লাইব্রেরী থেকে আকন্ঠ তাঁর জ্ঞানের পিপাসা নিবারণ করেছেন।

এছাড়া মৌলভী নূরুদ্দীন, মৌলভী আব্দুল কাইউম সাহেবের কাছে বুখারী এবং হেদায়া অধ্যয়ন করেছেন। ভূপালের মুফতি তাঁকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চল্লিশটি হাদীস সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

একবার মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) বোম্বেতে মৌলভী এনায়েতুল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করেন আর তাঁকে হযরত শাহ্‌ ওয়ালিউল্লাহ্‌র লিখিত ‘ফাউযুল কবীর’ নামক পুস্তিকার একটি কপি সংগ্রহ করে দেয়ার অনুরোধ জানান। এটা পড়তে ও সংগ্রহে রাখতে তিনি আগ্রহী ছিলেন। পরদিন তাঁকে বলা হলো পুস্তকটি পঞ্চাশ টাকায় পাওয়া যাবে। তিনি সাথে সাথে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট দিয়ে বইটি নিয়ে উঠে পড়েন যেন তার আর তর সইছিল না।

জ্ঞানার্জনের জন্য মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) চষে বেড়িয়েছেন গোটা ভারতবর্ষ। পরিশেষে জ্ঞান পিপাসা নিবারণের জন্য তিনি আরব মুলুকেও গিয়েছেন। মুম্বাই থেকে মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) জেদ্দাগামী জাহাজে চড়লেন। জাহাজে তিনি তাঁর নিজ এলাকার পাঁচজন হজ্জযাত্রী পেয়েছিলেন। তারা নূরুদ্দীনের (রাঃ) দেখাশুনা এবং সকল প্রকার আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করলেন। জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত স্থলপথে সফরের বাহন ছিল উট। তিনি শুনেছিলেন, কা’বা শরীফ প্রথম দর্শনে যে দোয়া করা হয় তা সবসময় গৃহীত হয়। তাই মক্কা আসার সময় একটি উঁচু স্থান হতে যখন প্রথম কা’বা শরীফ দেখেন তখন তিনি দোয়া করেনঃ “প্রভু! আমি সর্বদা তোমার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাই আমি তোমার কাছে যখনই তোমার রহমতের জন্য মিনতি করি তুমি আমার দোয়া গ্রহণ করো”। কাবা শরীফ প্রথম দর্শনে করা সব দোয়াই কবুল হবে- এ সাধারণ বিশ্বাসটি কার মাধ্যমে প্রচলন লাভ করেছে সে বিষয়ে অবশ্য তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের আলোকে তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর সে দিনের দোয়া গৃহীত হয়েছিলো।

মক্কায় তিনি মখদুম নামক একজন বর্ষিয়ান ধার্মিক ব্যক্তির বাড়ীতে অবস্থান করেন এবং তিনজন অসাধারণ জ্ঞানী’র কাছে হাদীস শিক্ষা আরম্ভ করেন। তিনি শেখ মুহাম্মদ খাজরাজির কাছ থেকে ‘আবূ দাউদ’, সাঈদ হুসেনের কাছে ‘মুসলিম’ এবং মৌলভী রহমতুল্লাহ্‌র কাছে ‘মুয়াত্তা’ অধ্যয়ন করেন। এ তিন জনের মধ্য থেকে তিনি সাঈদ হুসেনের কাছে সবচেয়ে দীর্ঘসময় অধ্যয়ন করেন।

মদীনায় বসবাসকারী একজন তুর্কী ব্যক্তির একটি বিশাল গ্রন্থাগার ছিল। তিনি কোনভাবে মৌলভী নূরুদ্দীনের (রাঃ) প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁর ভক্ত হয়ে যান। কুরআনের প্রতি মৌলভী নূরুদ্দীনের (রাঃ) ভালবাসায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে তাঁর পছন্দের যে কোন বই ধার নিয়ে পড়ার প্রস্তাব দেন। নূরুদ্দীন তাঁকে এমন কিছু বই দিতে বলেন যা কুরআন শরীফে, ‘নাসেখ-মনসূখ’ সম্পর্কিত বিষয়ে তাঁর জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। তিনি তাঁকে এমন একটি বই এনে দেন যাতে প্রায় ছয়শত আয়াত রহিত হওয়ার স্বপক্ষে দৃঢ়মত ব্যক্ত করা হয়। এতে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। তাঁর বন্ধু তখন তাঁকে ‘এত্‌কান’ নামী একটি বই দেন সেটি পড়ে তিনি জানতে পারেন, কেবল উনিশটি আয়াত রহিত হয়েছে। তিনি এতে খুব আনন্দিত হন এবং মুম্বাইতে ক্রয়কৃত শাহ্‌ ওয়ালিউল্লাহ্‌র ‘ফাওযুল কবীর’ পাঠ করার কথা ভাবেন। তখন তিনি আবিষ্কার করলেন যে, শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ্‌’র মতে পবিত্র কুরআনের কেবলমাত্র পাঁচটি আয়াত রহিত হয়েছে। তাঁর মন আনন্দে ভরে গেল। এ গবেষণার ফলে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, নাসেখ-মনসুখের বিষয়টি নিছক ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ও বোধ-বুদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। পরবর্তীতে তিনি পুরো ব্যাপারটির সমাধান খুঁজে পেয়েছেন এবং নিশ্চিত হয়েছেন যে, কুরআন শরীফের একটি আয়াতও মনসুখ বা রহিত হয়নি।

মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) বইয়ের বিশাল ভান্ডার নিয়ে আরব ভূখন্ড থেকে বোম্বেতে ফিরে আসেন। তিনি বই বোঝাই বাক্সগুলো পরিববহন মাশুল পরিশোধ করার শর্তে বুঝে নিবেন বলে লাহোরের উদ্দেশ্যে বুকপোষ্ট করেন। বোম্বেতেই তিনি যখন জানতে পারলেন, তাঁর চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষকও দিল্লীতে অবস্থান করছেন তখন তিনি দিল্লীতে যাত্রা-বিরতি করেন। তিনি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তাঁর প্রিয় শিক্ষকের সাথে দেখা করতে গেলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি হেজাজ থেকে কি এনেছ? তিনি তাঁর সংগৃহীত কিছু বইয়ের নাম বললেন। তাঁর শিক্ষক বললেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে আস।

নূরুদ্দীন (রাঃ) বললেন, আপনার আদেশ শিরোধার্য কিন্তু ইতোমধ্যে সেগুলো লাহোরের উদ্দেশ্যে পোষ্ট করা হয়ে গেছে। যদি আপনি নির্দেশ দেন তাহলে লাহোর পৌঁছে আমি তা আপনার কাছে পাঠাবো। শিক্ষক বললেন, আমিও লাহোর দেখতে চাই তাই চল আজই একত্রে আমরা লাহোরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।

তিনি সানন্দে তাঁর সাথে লাহোর গেলেন এবং লাহোর ঘুরে ���েখ��লেন। মহানুভব শিক্ষক উল্লেখিত বইগুলো নিজে ডাক মাশুল পরিশোধ করে গ্রহণ করলেন এবং তাঁর প্রিয় প্রাক্তন ছাত্রের হাতে এ বলে হস্তান্তর করলেন, “আমি এজন্য এ ব্যবস্থা নিলাম যেন এ বইগুলো তোমার হাতে আসার ক্ষেত্রে আমারও একটা অংশ থাকে”। জ্ঞান পিপাসু প্রিয় ছাত্রের প্রতি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের এমন উদারতা আজ বিস্ময়কর বৈ কিছু নয়।

সবাই জানি তিনি ছিলেন জম্মুর রাজ চিকিৎসক। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি এ গুরুদায়িত্ব পালন আরম্ভ করেন এবং ১৫ বছর তিনি রাজার প্রধান চিকিৎসকের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর সততা, খোদাভীতি এবং উন্নত নৈতিক গুণাবলীর কারণে সৎ স্বভাবের মানুষ সহসাই তাঁর বন্ধুতে পরিণত হতো। তিনি রাজ চিকিৎসক হবার সুবাদে রাজ্যের একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন বটে। কিন্তু তাঁর অনুপম গুণাবলী তাঁকে কর্মচারীর সীমাতিক্রম করে রাজ দরবারে শ্রদ্ধাভাজনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল। রাজা স্বয়ং এবং তার বন্ধু-বান্ধব তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। রাজা এবং তাঁর পারিষদবর্গ ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কাছ থেকে কুরআন শিখেছেন। তাঁর কুরআনের দরসে বসেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা আর নূরুদ্দীন (রাঃ)-এর জ্ঞান ভান্ডার থেকে নিজেদেরকে আলোকিত করেছেন।

হযরত মৌলভী হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) একবার একটি রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানের যাত্রায় অসুস্থ্যতাহেতু পালকীতে ভ্রমণ করেন আর সে সময়ের সদ্ব্যবহার করে যাত্রাপথে এক মাসের এ সফরে নূরুদ্দীন (রাঃ) প্রায় অর্ধেক কুরআন করীম মুখস্ত করে ফেলেন। একবার আরম্ভ করার পর যতক্ষণ পুরো কুরআন মুখস্ত হয়নি তিনি হিফয অব্যহত রাখেন। এভাবে মৌলভী, হেকীম, হাজী নূরুদ্দীন (রাঃ) হাফিয হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) মুসলমানদের শিক্ষার জন্য স্যার সাইয়্যেদ আহমদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান এবং উদার হস্তে তাঁদের সাহায্য করেন। স্যার সাইয়্যেদ আহমদও তাঁকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর সহযোগিতাকে মূল্যায়ন করতেন। স্যার সাইয়্যেদ আহমদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, যখন একজন নিরক্ষর ব্যক্তি পড়া লেখায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি শিক্ষিত হিসেবে পরিচিতি পান, যখন তিনি জ্ঞানানুসন্ধানে আরও এগিয়ে যান তখন তাঁকে দার্শনিক বলা হয়, আর যখন তিনি নৈতিক গুণাবলী ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে রপ্ত করেন তিনি সূফী হন। কিন্তু একজন সূফী যখন উন্নতি করেন তিনি কী হন? স্যার সাইয়্যেদ আহমদ লিখে পাঠান যে, তিনি নূরুদ্দীন হন।

মৌলভী হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা মহান পুরুষ। ধন্য তাঁর পিতা-মাতা যাদের ঔরসে এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি যেখানেই থেকেছেন আর যে অবস্থাতেই দিন কাটিয়েছেন সর্বদা মহানবী (সাঃ)-এর অনুপম শিক্ষার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন আর সেই মোতাবেক জ্ঞানার্জনের জন্য দেশ বিদেশ ঘুরেছেন। কখনো বাহন পেয়েছেন আবার কখনো বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছেন পদব্রজে। সত্যানুরাগী নূরুদ্দীন (রাঃ) সর্বাগ্রে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলকে প্রাধান্য দিতেন। মানব সৃষ্ট কদাচার যেমন তাঁর মনে কোন রেখাপাত করতে পারেনি সেভাবেই কুরআন হাদীসের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যও সর্বজনস্বীকৃত বিষয়ের বিপরীতে অবস্থান নিতে তিনি দ্বিধান্বিত হননি। এ ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) আপন আলয় থেকে নিয়ে সুদূর মক্কা-মদিনায় কিন্তু সর্বদাই সততার বলে বলীয়ান নূরুদ্দীন তার মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত বীরত্বের সাথে।

মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ) সম্পর্কে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর একটি উদ্ধৃতি পেশ করছি। তিনি (আঃ) তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু সম্পর্কে একস্থানে লিখেনঃ-

‘‘সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌র যিনি একান্ত প্রয়োজনের মুহূর্তে আমাকে এ বন্ধু দান করেছেন। আমি দোয়া করি, আল্লাহ্‌ তাঁর বয়স, স্বাস্থ্য এবং সম্মানকে বৃদ্ধি করুন। আল্লাহ্‌ আমার কথার সাক্ষী যে আমি তাঁর কথায় আসাধারণ মহিমা দেখি। আর কুরআনের রহস্যাবলী উম্মোচন এবং এর অর্থ ও ভাবের গভীরে অবগাহনের ক্ষেত্রে তাঁকে প্রথম সারীর মানুষ হিসেবে সম্মান করি। আমি তাঁকে দুটো বড় পাহাড়ের ন্যায় মনে করি। এর একটি পান্ডিত্যের অপরটি প্রজ্ঞার। এগুলো মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আছে আমি জানিনা সে দু’এর কোনটি বেশি উজ্জ্বল। তিনি উজ্জ্বল নূরের একটি বাগান। হে আমার প্রভু! তুমি আকাশ থেকে তাঁর ওপর রহমত নাযেল কর এবং শত্রুর দুষ্কৃতি থেকে তুমি তাঁকে রক্ষা কর! তিনি যেখানে থাকুন না কেন তার সঙ্গী থেকো। তাঁর উপর ইহ ও পরকালে রহমত বর্ষণ করো। হে একান্ত দয়ালু খোদা, আমীন।”

হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ)-এর মৃত্যুতে তৎকালীন খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ, পত্র-পত্রিকায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে অনেক লেখা ছাপেন। তন্মধ্যে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেবের একটি লেখা উপস্থান করছিঃ

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ যিনি স্বয়ং একজন প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ ছিলেন একই সাথে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ও ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রীও ছিলেন। তিনি তাঁর কলামে ‘বিদায় নূরুদ্দীন’ শিরোনামে লিখেনঃ

পরিতাপের বিষয়, আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাআতের প্রধান এবং অমর সুনিশ্চিত রোগ নির্ণয়কারী হেকীম মৌলভী নূরুদ্দীন (রাঃ)-এর মৃত্যুতে আমি সবার শেষে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর মাঝে ব্যাপক পান্ডিত্য এবং সত্যিকারের পুণ্য ও তাকওয়ার সমাহার ঘটেছে। তিনি আমাদের মাঝে আর নেই। ঈমানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছেন আর শাশ্বত নৈতিক শিক্ষায় গভীর বুৎপত্তি অর্জন করেছেন যার সাথে ধর্মীয় শিক্ষা ও সাহিত্যের জ্ঞানের মিশ্রণ ঘটেছে; তা নূরুদ্দীনের চিন্তা-ভাবনাকে এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যেথায় তা মানব আবেগ অনুভূতির রহস্যকে অনুধাবন ও উম্মোচন করতে পারে। সে কারণে তাঁর গুটিকতক অর্থবহ শব্দের সামনে বিরোধীদের সকল উচ্চাঙ্গের চিন্তাভাবনা মুখ থুব্‌ড়ে পড়তো। তাঁর পুরো সত্তায় ছিল আশ্চর্যজনক বিরল বিশ্বাস ও ব্যাপক জ্ঞানের সমাহার । তাঁর সার্বজনীন দৃষ্টি প্রজ্ঞাপূর্ণ চৌম্বক শক্তি রাখত। তাঁর দর্শনপূর্ণ গবেষণা ও পরিপূর্ণ তাকওয়ার সমন্বয় তাঁর সামনে স্বর্গের রহস্যকে উম্মোচন করেছে। ঐশী প্রজ্ঞায় তাঁর কামেল বিশ্বাস তাঁর সকল চিন্তাভাবনাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

তাঁর (রাঃ) জীবনের শেষ অংশ আহ্‌মদীয়া জামাআতের সেবায় কেটে গেছে, এ জামাআতের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি অহোরাত্র কঠোর সংগ্রামে অতিবাহিত করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক গুরুর প্রতি যে আত্মনিবেদন ও আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রথম যুগের মুসলমান ছাড়া তার দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া ভার। হযরত ঈসা (আঃ)-কে মৃত আখ্যা দেয়া, যাঁর সম্পর্কে এ ধারণা রয়েছে যে, তিনি চতুর্থ আকাশে বসবাস করছেন, আর মসীহ্‌ ও মাহদীকে একই ব্যক্তি আখ্যা দেয়া, ভারতের মুসলমান আলেমদের জন্য একটি তিক্ত কথা ছিল। এ দৃষ্টিভঙ্গি যে প্রবল বিরোধের সূত্রপাত করে তা সর্বগ্রাসী বিদ্যুৎপাতের মত ছিল। কিন্তু এই ঝড়ের ভয়াবহতা নুরুদ্দীনের (রাঃ) দৃঢ় বিশ্বাসকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে পারেনি।

পরিশেষে শুধু এটুকু লিখে শেষ করতে চাই যে, তপ্ত মরুতে তৃষ্ণার্ত মানুষ যেভাবে পানির জন্য উদগ্রীব হয়ে ছুটোছুটি করে তেমনিভাবে হাজীউল হারামাঈন হযরত মওলানা হাফিয হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ)-ও জ্ঞানের সন্ধানে থেকেছেন সদা উন্মুখ। আর এরই কল্যাণে তিনি এ ধরায় পান্ডিত্য, খোদাভীরুতা, প্রজ্ঞা ও সত্যের প্রতি আ��ুগত্যের এবং মূর্তিমানরূপে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর এ ভালবাসার ধনকে জান্নাতের উচ্চ মোকামে অধিষ্ঠিত করুন এবং তাঁর জ্ঞান ভান্ডারকে তাঁর জন্য সদকায়ে যারিয়া হিসেবে গ্রহণীয়তার মর্যাদা দিন।

আল্লাহ্‌ তাআলা হযরত মৌলভী নূরুদ্দীনের (রাঃ) জ্ঞানভান্ডার থেকে মানুষকে কিয়ামত পর্যন্ত লাভবান করুন এবং তাঁর পুণ্যসমূহের ওপর সবাইকে আমল করার তৌফীক দিন।

পাক্ষিক আহ্‌মদী - ৩১শে মে, ২০০৮ইং