খিলাফত ও বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার

মাওলানা সালেহ্ আহমদ মুরব্বী সিলসিলাহ্

“তোমাদের মাঝে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা নিযুক্ত করবেন যেরূপে তিনি তাদের পূর্ববতীগণকে খলীফা নিযু্‌ক্ত করেছিলেন এবং নিশ্চয় তিনি তাদের সেই দ্বীনকে সুদৃঢ় করবেন যাকে তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং নিশ্চয় তিনি তাদের ভয় ভীতির অবস্থার পর তা তাদের জন্যে শান্তিতে পরিবর্তন করে দিবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং কোন বস্তুকে আমার সাথে শরীক করবে না। এরপর যারা অস্বীকার করবে তারা দুষকৃতিপরায়ণ বলে সাব্যস্ত হবে।” (সূরা নূরঃ ৫৬)

আমি সূরা নূরের যে আয়াতটি তুলে ধরেছি এতে আল্লাহ্ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদীয়াকে খিলাফত প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। খোদা তা’আলা দুই প্রকারে শক্তি ও মহিমা প্রকাশ করে থাকেন। প্রথমতঃ নবীগনের দ্বারা তাঁর শক্তির এক হস্ত প্রদর্শন করেন। দ্বিতীয়তঃ অপর হস্ত এরূপ সময় প্রদর্শন করেন যখন নবীর মৃত্যুর পর বিপদাবলী উপস্থিত হয় এবং নবীর বিরুদ্ধবাদীরা মনে করতে শুরু করে যে, নবীর কাজ বিফলে গেছে। আল্লাহ্‌র নবীর দ্বারা গঠিত জামা’ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন কি নবীর জামাতের লোকজনও উৎকন্ঠিত হযে পড়ে, তাদের কটীদেশ ভেঙ্গে যায় এবং কোন কোন দুর্ভাগা মূর্তাদ হয়ে যায়। এমন সময়ে খোদা তা’আলা দ্বিতীয় বার আপন মহাশক্তির প্রকাশ করেন এবং পতনোম্মুখ জামা’তকে রক্ষা করেন। উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ্ তা’আলা এ বিষয়েরই অঙ্গীকার উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সাথে করেছেন। আল্লাহ্‌র অঙ্গীকারগুলি হলঃ ঈমান ও আমলে সালেহ থাকলে (১)আমি তোমাদেরকে খিলাফত প্রদান করবো, (২) আমি তোমাদের দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবো, এবং (৩) তোমাদের ভয়-ভীতির অবসান ঘটিয়ে তোমাদের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে দেব।

ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, খোদা তা’আলা তাঁর এই অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন। একটু স্মরণ করুন সে সময়কে, যখন আঁ হযরত (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন, সাহাবারা শোকে উন্মাদের ন্যায় হয়ে পড়েছিলেন। আর হযরত উমর (রাঃ) খোলা তরবারি হাতে নিয়ে বলছিলেন, যে-ই বলবে আঁ হুযূর (সাঃ) মারা গেছেন, আমি তার শিরোচ্ছেদ করব। এমন সময় আল্লাহ্ তা’আলা এক দুর্বল বৃদ্ধ হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মাধ্যমে তাঁর দ্বিতীয় মহাশক্তির বিকাশ ঘটালেন। সাহাবারা দেখতেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী এই দূর্বল বৃদ্ধ কথায় কথায় কেঁদে ফেলতেন। কিন্তু যখন খোদা তা’আলা তাঁকে খেলাফতের মসনদে বসালেন তখন এই দুর্বল বৃদ্ধ এক শক্তিশালী ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হলেন। বহু লোক তখন মূর্তাদ হয়ে গিয়েছিল। মদীনার উপর আক্রমণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছিল। হযরত উসামার নেতৃত্বে গঠিত ইসলামী সেনাদলকে হযরত আবু বকর (রাঃ) রওয়ানা হওয়ার আদেশ দিলেন। সাহাবারা বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! মদীনা আক্রান্ত হতে যাচ্ছে এ সময়ে এই ইসলামী সেনাদল বাহিরে না পাঠালে ভাল হয়। সাহাবাদের সেই অনুরোধের উত্তরে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তিটি মনে রাখার মতো। তিনি খোদার দেয়া প্রতিশ্রুতির সাহসে বলিয়ান হয়ে বললেন, “খোদার কসম! মদীনার অলিতে গলিতে যদি মুসলমান নারী ও শিশুদের মরদেহও বন্য-পশুরা টেনে-হেচড়িয়ে ফিরে তবুও আমি [রসূল করীম (সাঃ)-এর রেখে যাওয়া] এ সিদ্ধান্ত বদলাবো না”। এই মনোবল, এই নেতৃত্ব এই সাহস ও ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার এই প্রেরণা একমাত্র খোদার নেয়ামত খেলাফতের জন্যেই তিনি অর্জন করেছিলেন। আর এভাবে খেলাফতের মাধ্যমেই ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ও ভয়ভীতির অবসান ঘটাতে খোদার যে অঙ্গীকার তা, অত্যন্ত জোরালোভাবে পূর্ণতা লাভ করে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর আল্লাহ্‌ তা’আলা খোলাফায়ে রাশেদীন দ্বারা ইসলামের প্রচারকে বিস্তৃতি দান করেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের ইসলাম প্রচার ও প্রসারতা দানের প্রেরণার ফলে বিশাল পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য পদানত হলো এবং পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রান্তসীমা এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরীয় ও আটলান্টিক উপকুল ভাগ পর্যন্ত ইসলাম মানুষের হৃদয় জয় করলো। পবিত্র কুরআনের ওয়াদানুযায়ী ইসলামের প্রচার, প্রসার ও সু-প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মহান নিদর্শন জগৎ প্রত্যক্ষ করলো। ইসলামের পতাকা মধ্য গগনে পত পত করে উড়তে লাগলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুসলমানদের। খেলাফতের রজ্জুকে তারা ছেড়ে দেয়। হযরত রসূল করীম (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসলামী জগতে রাজতন্ত্র ও পরে অন্ধকারের যুগ জেঁকে বসে। এই অন্ধকার যুগের পর এক প্রতিশ্রুত প্রভাতও ছিল আর এই সুসংবাদও ছিল ‘সুম্মা তাকুনু খেলাফাতুন আলা মিনহাযিন নবুওয়াত’ অর্থাৎ এরপর নবুওয়তের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেই ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত’-এর যুগে খেলাফতের সবচেয়ে বড় কল্যাণ ইসলামের পুণরায় বিজয় লাভ করার দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখবার অপেক্ষায় ছিল। আল্লাহ্‌তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে দেয়া সুসংবাদ অনুযায়ী তাঁর খাদেম ও সেবক ও খলীফাতুল্লাহ্ হযরত ইমাম মাহ্‌দী ও মসীহ্ মাওউদ (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন। যার কাজ হলো সমগ্র বিশ্ববাসীকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে একত্রিত করা। কিন্তু খোদার বাণী ‘পরিতাপ বান্দাদের জন্য যখনই তাদের কাছে কোন রসূল এসেছে তারা তার সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে’ অনুযায়ী তার (আঃ) বিরোধিতা শুরু হলো। বিরোধিতার সেই চরম মূহূর্তে তিনি ঘোষণা দিলেন,

আমি দৃঢ়তা ও সংকল্পের সাথে বলছি যে আমি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং খোদার কৃপায় এ ময়দানে আমারই জয় হবে। আমি অন্তর্দৃষ্টির শক্তি দ্বারা সমগ্র পৃথিবীকে আমার পদতলে দেখছি। সে সময় অতি নিকটে যখন আমি একটি মহান বিজয় লাভ করবো। কেননা আমার মুখের কথার সমর্থনে আরো একজন বলে যাচ্ছেন। কখনও মনে করো না যে খোদা তা’আলা তোমাদেরকে বিনষ্ট করবেন। তোমরা খোদার স্বহস্তে রোপিত এক বীজ বিশেষ যা পৃথিবীতে বপন করা হয়েছে। খোদা তা’আলা বলেছেন এই বীজ বর্ধিত হবে, পুস্প প্রদান করবে, এর শাখা প্রশাখা চারিদিকে প্রসারিত হবে এবং এটি মহামহীরূহে পরিণত হবে।

একদিকে হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আঃ)-এর এইরূপ ঘোষণা অপর দিকে খৃষ্টানদের দাবী আমরা আফ্রিকা থেকে উঠবো এবং অচিরেই মক্কায় যিশু খৃষ্টের পতাকা উত্তোলন করব। খৃষ্ট সমাজ, আর্য সমাজ, হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্য বিরুদ্ববাদীদের সম্মিলিত শক্তি তাঁর উপর চড়াও হলো। সূরা নূরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি কুরআনের ঐশী আলো দ্বারা বিরুদ্ধবাদীদের নিস্তব্ধ করে দিলেন। কী আর্য সমাজ ও হিন্দু ও খৃষ্টান! সবাই কুরআনের নূরের সামনে পরাস্ত হলো। খৃষ্টীয় জগতে ভূকম্পন শুরু হলো সকলের পায়ের নীচের মাটি সরে গেল। ইসলামের নিভু নিভু প্রদীপ এর পর ‘নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে’ এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতার কারণে দ্বীপ্তিমান সূর্যে রূপান্তরিত হলো। তিনি অসংখ্য চিঠি পত্র, ওয়াজ নসীহত, ৮৮টি পুস্তক (আরবী ফার্সি ও উর্দু ভাষায়) রচনা এবং মুবাল্লেগদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের নব আন্দোলনের সূচনা করলেন। তাঁর কর্ম সম্পাদন করে তিনি ইন্তেকাল করলেন। তাঁর মৃত্যুতে বিরুদ্ধবাদীগণ তাঁর সম্বন্ধে বহু লেখালেখি করল। একজন কট্টর বিরুদ্ধবাদী লিখলো,

“তিনি এক অতি মহান নেতা ছিলেন, তাঁর লেখা ও কথার মধ্যে যাদু ছিল। তাঁর মস্তিষ্ক ছিল বিষ্ময়। তাঁর দৃষ্টি ছিল প্রলয়স্বরূপ এবং কন্ঠস্বর কিয়ামত সদৃশ। তাঁর অঙ্গুলি সংকেতে বিপ্লব উপস্থিত হতো। তাঁর দু’টি মুষ্টি বিজলীর ব্যাটারীর মত ছিল। তিনি ত্রিশ বছর যাবত ধর্ম জগতে ভূমিকম্প ও তুফানের ন্যায় বিরাজমান ছিলেন। তিনি প্রলয়বিষাণ হয়ে নিদ্রিতগণকে জাগ্রত করতেন। ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলায় তিনি একজন বিজয়ী জেনারেলের কর্তব্য সম্পাদন করেছেন।”

তাঁর ইন্তেকালের পর আল্লাহ্‌ তা’আলা ‘সুম্মা তাকুনূ খেলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়ত’ অনুযায়ী হযরত হেকীম মাওলানা নূরুদ্দীন (রাঃ)-কে খলীফা রূপে দাঁড় করালেন। তাঁর খেলাফতের অবস্থাও হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর সময়কার মতো ছিল। তার জন্যও খোদার অভয় বাণী ছিল,

নিশ্চয় তিনি তাদের ভয়-ভীতির অবস্থার পর তা তাদের জন্য শান্তিতে পরিণত করে দিবেন।

খোদা তা’আলা মু’মিনদের হৃদয়কে একত্রিত করে দিলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন,

“খোদার প্রত্যাদিষ্টের এই অঙ্গীকার রয়েছে, খোদা তা’আলা তাঁর এই জামা’তকে কখনও নষ্ট করবেন না। তাঁর মহিমা ও শক্তি চিন্তারও অতীত, তাঁর দৃষ্টি অসীম। তোমরা বয়আতের হক তো আদায় কর!”

আল্লাহ্ তা’আলার কৃপায় হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আওয়ালের যুগে খেলাফতের কল্যাণ দ্বারা ইসলাম দূর প্রাচ্যে, ইউরোপ ও আমেরিকার বুকে আরও সু-প্রতিষ্ঠিত হলো। বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের এক নব দিগন্তের সূচনা হলো।

তাঁর ইন্তেকালের পর হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদকে যুবা বয়সে খোদা তা’আলা খেলাফতের মসনদে বসালেন। দুনিয়া বললো, একেতো ছোট্ট বালক আর বিশ্বকে খেলাফতের কল্যাণে আশিস মন্ডিত করা (!) তদুপরি বিশ্বব্যাপী ইসলামের জয়ের আকাঙ্খাও! এই জামা’ততো শেষ হয়েই যাবে। শয়তানী শক্তি একের পর এক আক্রমণ করতে লাগলো, যাতে করে খোদার হস্তে রোপিত এই বৃক্ষের মূল উৎপাটিত হয়ে যায়। কিন্তু খোদা তা’আলা তো এই জেনারেলের পিছনে দন্ডায়মান। খোদার ফেরশ্‌তারা তার সাহায্যে একত্রিত। দেখতে দেখতে ঐ সকল ফুঁৎকার যা খোদার প্রদীপ খিলাফতকে নিভাতে ঝড়ো গতিতে বইতে শুরু করেছিল নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি ঘোষণা দিলেন,

আমাদের জামাতের উন্নতির যুগ খোদা তা’আলার ফজলে নিকটবর্তী। সেদিন দূরে নয়, যেদিন দলে দলে লোক এই জামাতে প্রবেশ করবে। সেদিন নিকটে যখন গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর আহ্‌মদী হয়ে যাবে। দেখ আমি একজন মানুষ এবং আমার পরে যে আসবে সেও মানুষই হবে যার যুগে এই বিজয় সম্পাদিত হবে।

একদিকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে রত খেলাফতে আহ্‌মদীয়া সমগ্র বিশ্বে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্-র বাণী দ্বারা অংশীবাদিত্ব ও ত্রিত্ববাদের মায়াজাল থেকে মুক্ত করে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পতাকা তলে একত্রিত করছে। আর অপরদিকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের আন্দোলন ও খিলাফতকে নিস্তব্ধ করার জন্য ১৯৩৪ সনে এ আওয়াজ উচ্চারিত হলো যে, কাদিয়ানের প্রতিটি ইট খসিয়ে নেব, এবং সারা পৃথিবীতে একজনও আহ্‌মদী থাকবে না। খোদা তা’আলা যিনি ‘খায়রুল মাকেরীন’ তিনিও পরিকল্পনা করলেন যে, বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিটি ফুঁৎকারের বদলে হাজার হাজার নেক প্রকৃতির লোকদের মুহাম্মদীয় পতাকা তলে একত্রিত করবেন। খলীফা যার কাজ সমগ্র বিশ্বে ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, বজ্রনিনাদে তিনি ঘোষণা দিলেন,

এখন খোদা তা’আলার ডঙ্কা পূর্ণদমে বাজতে প্রস্তুত। হ্যাঁ তোমাদিগকে! হ্যাঁ তোমাদিগকে! হ্যাঁ তোমাদিগকেই খোদা তা’আলা আবার তাঁর ডঙ্কা বাজানোর দায়িত্ব অর্পন করেছেন। হে ঐশী রাজত্বের বংশী বাদকগণ! হে ঐশী রাজত্বের বংশী বাদকগণ! হে ঐশী রাজত্বের বংশী বাদকগণ, এই ডঙ্কায় আবার এত জোরে আঘাত হান, যেন দুনিয়ার কর্ন বিদীর্ন হয়ে যায়। আর একবার নিজেদের রক্ত এই শিংঙ্গায় ভরে দাও যেন আরশের স্তম্ভগুলি নড়ে উঠে এবং ফিরিশতাগণও কেঁপে উঠে, যাতে করে তোমাদের বেদনাত্মক চিৎকারে এবং তোমাদের নারায়ে তকবীর এবং নারায়ে শাহাদাতে তাওহীদের কারণে আল্লাহ্তাআলা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। খোদা তা’আলার বাদশাহত যেন এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। সোজা চলে এসো, আর খোদার সৈন্য দলে ভর্তি হয়ে যাও। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাজত্ব আজ মসীহ কেড়ে নিয়েছে, তোমরা মসীহ্‌র থেকে সেই রাজত্ব উদ্ধার করে মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সামনে পেশ করবে। এবং মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খোদার সামনে পেশ করবেন।

খেলাফতের এই ডাকে হাজার হাজার হৃদয় ‘লাব্বায়েক লাব্বায়েক’ বলে এগিয়ে এল এবং তওহীদের পতাকা হাতে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ)-এর গোলামগণ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। ১৯৫৩ সন এলো। আবারো খোদার প্রদীপকে মেটানোর চেষ্টা করা হলো। কিন্তু খোদা তা’আলা তাও বানচাল করে দিলেন। তাঁর ৫২ বছর ব্যাপী খেলাফতের এই যুগটির প্রতিটি মূহূর্ত বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের জন্য নিবেদিত ছিল। বিশদ বিবরণ এখানে অসম্ভব, তাই বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের এক ঝলকই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের দ্বিতীয় খেলাফতের এই যুগে ১০০টিরও অধিক শিক্ষামূলক, আধ্যাত্মিক ও তরবিয়তী তাহরীক এই মহান খলীফা করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম ওয়াকেফীন তাহরীকে জাদীদ, ওয়াকফে জদীদ, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন – খুদ্দামুল আহ্‌মদীয়া, আতফালুল আহ্‌মদীয়া, আনসারুল্লাহ্, লাজনা ইমাইল্লাহ্। এগুলোর সুদূর প্রসারী ফল আজ জামা’ত পাচ্ছে ও আগামীতেও পেতে থাকবে। ইনশাআল্লাহ। এ মহান খিলাফত কালে উপমহাদেশের বাইরে তিনশ এগারোটি মসজিদ নির্মিত হয়। বিদেশে ৪২টি নতুন তবলীগি কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ১৬টি ভাষায় পূর্ণাঙ্গ কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ হয়, ২৪টি দেশে ৭৪টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ৪০টি পত্রপত্রিকা ইসলাম প্রচার ও তরবিয়তের জন্য চালু হয়। এই মহান খলীফা ইসলামের সপক্ষে ২২৫টি বই রচনা করেন। ১৬৪ জন ওয়াকেফীন-এ-জিন্দেগী দ্বারা বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। ১০ হাজার পৃষ্ঠাব্যাপী কুরআন মজীদের এক অনন্য তফসীরও লিখেন। খেলাফতের এই যুগে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের ফলে ত্রিত্ববাদের কেন্দ্রস্থল ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় আল্লাহু আকবার আওয়াজ উচ্চারিত হতে শুরু করে। স্পেনে মুসলমানদের হারানো গৌরবকে ফিরিয়ে আনার জন্য তবলীগি কেন্দ্র স্থাপন করেন। আফ্রিকায় যেখানে ক্রুশের পতাকা উড়ছিল ইসলামী ঝান্ডা উড্ডীন হওয়ার জন্য মুবাল্লেগদের সেখানে প্রেরণ করলেন। যারা স্বল্প সময়ে ক্রশকে চূর্ণ বিচূর্ণ করতে শুরু করলো। বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের ব্যাপকতর এ ইতিহাস বর্ণনা এই স্বল্প পরিসরে অসম্ভব হবে। তবে দু’টি উদ্ধৃতি দ্বারা খেলাফতের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের যে গতিকে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীগণ অনুধাবন করেছে তা তুলে ধরছি। হেগ নগরীতে মসজিদ উদ্বোধনের সময় ইউরোপের পত্রিকাগুলোতে এ খবর ছাপা হয়ঃ

এই মসজিদটি কায়রো বা করাচীর নয় বরং হেগ নগরীর। ইসলাম ইউরোপের উপর দু’বার আক্রমণ চালায়। প্রথম বার খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে যখন তারা স্পেনের শাসক ছিল। দ্বিতীয়বার তুর্কীগণ ১৬শ শতাব্দীতে ইউরোপের উপর আক্রমণ চালায় এবং ওয়ারশো পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কিন্তু উভয় বারই আমরা স্বীয় বাহুবলে মুসলমানদের সাথে মোকাবেলা করে ইউরোপ হতে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার যে আক্রমণ ইউরোপের উপর করা হয়েছে তা আধ্যাত্মিক এবং তা মানব হৃদয়ের উপর আক্রমণ, জাগতিক আক্রমণ নয়। বর্তমানে খৃষ্ট ধর্মের মধ্যে কি এতখানি আধ্যাত্মিক শক্তি আছে যদ্বারা তারা এর মোকাবেলা করতে পারে?

আর একটি মন্তব্য আফ্রিকা সম্বন্ধে দেখুনঃ

“আফ্রিকাতে বিশেষ করে ঘানার উপকূলবর্তী এলাকায় আহ্‌মদীয়া মতবাদ দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করছে। শীঘ্র ঘানার সকল অধিবাসীদের খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আশা নিরাশায় পর্যবসিত হবে। এই বিপদ চিন্তাতীত রূপে বড়। যেহেতু শিক্ষিত যুবকদের একটি উল্ল্যেখযোগ্য দল আহ্‌মদীয়াতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই নিশ্চয় এটা খৃষ্ট ধর্মের জন্য এক প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। ঠিক করে এটা বলা যায় না, ক্রুশ অথবা হেলাল কে আফ্রিকাকে শাসন করবে!”

আর আজ, এই ফয়সালা হয়ে গিয়েছে যে আফ্রিকা হেলাল অর্থাৎ ইসলাম শাসন করবে। এরূপই হওয়ার কথা ছিল। কেননা খেলাফতের মাধ্যমে ‘লে ইউযহেরাহু আলাদদ্বীনে কুল্লেহি’-এর দৃশ্য পৃথিবীর অবলোকন করার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও তরবিয়তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় হযরত মির্যা নাসের আহমদ (রাহেঃ)-এর স্কন্ধে।

তাঁর খেলাফতের ১৭ বছর কালে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার ও প্রসার যেভাবে ঘটেছে তার বর্ণনার জন্য এক যুগের প্রয়োজন। এই খিলাফত কালে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারকে বাধা দেওয়ার জন্য বহু বাধাবিপত্তি আসে যার মধ্যে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে আহ্‌মদীদেরকে ‘নট মুসলিম’ আখ্যা দেওয়া অন্যতম। বলা হলো, আহ্‌মদীদেরকে পথের ভিখারী করে ভিক্ষার পাত্র ধরিয়ে দিবে। কিন্তু খোদার অমোঘ বিধান, ঘটনা হলো ‘আল্লাহ্‌র দল অবশ্যই বিজয় লাভ করবে’ এর পূর্ণতা আবার বিশ্ববাসী অবলোকন করলো। কোথায় সেই ভুট্টো? কোথায় তার দাবী? আজ আহ্‌মদীয়াত বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে আগের চাইতেও দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে লাগলো। তাঁর খিলাফত কালে প্রায় তিন শত মুবাল্লেগ বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হয়ে লক্ষ লক্ষ লোককে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসে। তিনি সাত বার ইউরোপ ও আফ্রিকাতে তবলীগি সফর করেন। তাঁর খিলাফত কালে পঞ্চাশেরও অধিক ভাষায় কুরআনের পূর্ণাঙ্গীন অনুবাদ ও ছাপাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নূসরত জাহাঁ রিজার্ভ ফান্ডের অধীনে বিশেষ করে আফ্রিকাতে শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ওয়াকেফীন ডাক্তার ও শিক্ষক প্রেরিত হয়। তাঁর আমলে ডেনমার্ক-এর কোপেনহেগেন-এ প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় এবং স্পেন হতে মুসলমানদের বিতাড়িত হওয়ার সাতশঁ বছর পর সেখানে প্রথম মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর রাখা হয়। তাঁর খিলাফত কালে ৩৭০টির মতো নতুন মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯৭৮ সালে ত্রিত্ববাদের প্রাণ কেন্দ্র ইংল্যান্ড এ ‘কসরে সলিব কনফারেন্স’ (ক্রশ ধ্বংস হওয়া বিষয়ক সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এবং সমগ্র ইউরোপ ও আমেরিকায় এই কনফারেন্সের বহু চর্চা হয়। এভাবে দাজ্জালী ফেৎনা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় একত্রিত করার মহান কাজ সম্পাদিত হয়।

রাবওয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদে-আকসা তাঁর খিলাফত কালে নির্মিত হয়। অডিও ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের কাজ তাঁর যুগেই শুরু হয়।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্ সালেস (রাহেঃ)-এর ইন্তেকালের পর হযরত মির্যা তাহের আহমদ (রাহেঃ) খেলাফতের মসনদে আসীন হোন। আহ্‌মদীয়াতের প্রসার ও বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের সফলতা দেখে ‘নারেবুলহাবি’ অর্থাৎ আবু লাহাবের আগুন প্রচন্ডভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়। ‘আল কুফরো মিল্লাতে ওয়াহেদা’ হয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের দ্বার রুদ্ধসহ আহ্‌মদীয়াতকে মিটিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হয়। ঘোষণা দেওয়া হলো পৃথিবী হতে এ ক্যান্সারকে উৎপাটিত করে দেওয়া হবে। পাকিস্তানে প্রচলিত হলো জেনারেল জিয়াউল হকের কুখ্যাত ২৯৫ (গ) ধারা। যার মাধ্যমে প্রত্যেক আহ্‌মদীর উপর কালেমা, নামায ও কুরআন পাঠের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হলো। খিলাফত হতে ডাক এলো,

আজ যখন কালেমার উপর এই নাপাক হামলা করা হয়েছে, তখন আমি ইসলামী জাহানকে সম্বোধন করে বলছি, আজ প্যালেষ্টাইনের প্রশ্ন নয়, জেরুযালেমের প্রশ্ন নয়, মক্কা মুকাররমার প্রশ্ন নয়, আজ ঐ এক অদ্বিতীয় খোদার ইজ্জত ও প্রতাপের প্রশ্ন, যার নামের দরুন এই মাটির শহরগুলি মর্যাদা লাভ করেছিল। আজ তাঁর একত্বের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। আজ মক্কা মদীনার প্রশ্ন নয়, আজ আমাদের প্রভূ ও মওলা মক্কা মদীনার বাদশাহের মান মর্যাদার প্রশ্ন………..সুতরাং প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের গর্ভ হতে আজ যে অপবিত্র আন্দোলনের জন্ম হয়েছে, তার জন্য সে এই পৃথিবীতেও দায়ী থাকবে এবং কিয়ামতের দিনও দায়ী থাকবে, অতঃপর পৃথিবীর কোন শক্তি তাকে রক্ষা করতে পারবে না। কেননা আজ সে খোদার ইজ্জত ও প্রতাপের উপর আক্রমণ করেছে। আজ সে মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ)-এর নামের উপর আক্রমণ করেছে। আহ্‌মদীরা প্রস্তুত আছে। তারা কলেমার হেফাজতের জন্য নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা এ হতে এক ইঞ্চিও পিছু হটবে না।

বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও বিশ্ববাসীকে সত্য চিনে নিতে তিনি (রাহেঃ) মুবাহালার চ্যালেঞ্জ দিলেন। দেখতে দেখতে বিরুদ্ধবাদীদের হোতা জিয়াউল হক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সূর্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হয়ে উঠলো। তিনি আহ্‌মদীদের সম্বোধন করে বললেন,

“দৃঢ় সংকল্প, দৃঢ় বিশ্বাস ও পরম আনন্দের সাথে অগ্রসর হও, তবলীগের যে জ্যোতি আমার মাওলা আমার অন্তরে জ্বেলেছেন এবং আজ সহস্র সহস্র অন্তরে যে শিখা প্রজ্জলিত তা নিভতে দিবেন না, তা নিভতে দিবেন না। আপনাদেরকে এক অদ্বিতীয় খোদার কসম, একে নিভতে দিবেন না। এই পবিত্র আমানতের হেফাজত করুন। আমি মহা মহিম খোদার নামের শপথ করে বলছি যদি আপনারা এই আমানতের বিশ্বস্ত বাহক হয়ে যান তাহলে খোদা তা’আলা একে কখনও নিভতে দিবেন না। এর শিখা উন্নত ও উচ্চতর হতে থাকবে এবং সমগ্র ভু-পৃষ্ঠ ঘিরে ফেলবে। সমস্ত অন্ধকারকে আলোকমালায় পরিবর্তিত করে দিবে।”

খেলাফতের এই ডাকে আহ্‌মদীরা লাব্বায়েক বলে দৌড়ে এগিয়ে এলো এবং খেলাফতের ১১ বছরেই প্রভাত অবিস্মরণীয় বিজয়ের দিনে রূপান্তরিত হলো।

এই এগারো বছরে ৯১টি দেশের স্থলে ১৮৭টি দেশে আহ্‌মদীয়াত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই এগারো বছরে পাকিস্তানের বাইরে ৫,৬১৭টি জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকা ইউরোপ ও আমেরিকায় ৫২৫টি ইসলামী কেন্দ্রের সংযোজন হয়েছে। ৮১১জন মুবাল্লেগ বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এবং রাশিয়াতে রেডিও দ্বারা ইসলাম প্রচারের কাজ চলছে। কয়েদীদের মাঝে তবলীগের ফলে ৪২২জন কয়েদী প্রকৃত ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাঁর যুগে সাতশঁ বছর পর স্পেনে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। অনুরূপভাবে কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও জার্মানিতে বড় বড় মসজিদ নির্মিত হয়। ১০০টি ভাষায় কুরআনের পূর্ণাঙ্গীন অনুবাদের কাজ হাতে নেওয়া হয়। ইসমাঈলি কুরবানীকে সামনে রেখে তিনি (রাহেঃ) ওয়াকেফীন নও স্কীম চালু করেন। এসকল ওয়াকেফীনে নওদের ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলার পর বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধিত হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ্তাআলা খেলাফতের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের ফলশ্রুতিতে ১৯৯৩ সনে দুই লাখ চার হাজার তিনশ আট জন বয়’আত করেন। ১৯৯৪ সনে চার লক্ষ আঠারো হাজার দুইশ ছয়জন এবং ১৯৯৫ সনে আট লক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার দুই শত চুরানব্বই জন। সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও বসনীয়ার ব্যাপারে আহ্‌মদীয়া জামা’ত যে অভূতপূর্ব খেদমত করে তা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। Satellite – এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের বৃহত্তম পরিকল্পনা তাঁর (রাহেঃ) খিলাফত কালে গ্রহণ করা হয়। খোদা তা’আলা নিজ ফজলে শত্রুদের ইসলাম প্রচারের রাস্তা বন্ধ করার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে আকাশের পথও খুলে দিয়েছেন, MTA (মুসলিম টেলিভিশন আহ্‌মদীয়া) দ্বারা বিশ্বব্যাপী এক নতুন আন্দোলনের জোয়ার বইছে।

তার ইন্তেকালের পর হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই:) খেলাফতের মসনদে অধিষ্ঠিত হন। তার দ্বারা বিশ্বে ইসলাম প্রচার বেগবান হয়ে বিজয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তার আহ্বান,

আহ্‌মদীরা দোয়া কর! দোয়া কর! দোয়া কর!

আমাদের বিশ্বাস, সারা বিশ্বের আহ্‌মদীদের এ দোয়া বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয়কে আরো ত্বরান্বিত করবে। ২০০৮ সনে আমরা খেলাফতের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছি। আর এজন্য গত বছর থেকে দোয়া, রোযা ও আর্থিক কুরবানী দ্বারা খেলাফতের মাধ্যমে কল্যাণমন্ডিত হবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছি। খেলাফতের কল্যাণ ও ইসলামকে জয়যুক্ত করার সংগ্রামের এও এক বিশাল চলমান ইতিহাস।

সুতরাং খিলাফত ও বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের প্রতিটি মূহূর্তের পাতায় পাতায় রচিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় যাত্রার ইতিহাস। এ ইতিহাস অন্ধকার রাতে ওঠে ইসলামের বিজয়ের জন্য কান্নার ইতিহাস। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রেমে সব কিছু ত্যাগ করার ইতিহাস। অসাধারণ ত্যাগ ও তিতিক্ষার ইতিহাস। এসবই আল্লাহ্‌র কুদরতের অভূতপূর্ব নিদর্শন।

সুতরাং হে আহ্‌মদীগণ আপনারা আনন্দিত হন যে আপনারাই! হ্যাঁ আপনাদের দ্বারাই বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয়ের দৃশ্য পৃথিবীবাসী অবলোকন করবে। কিন্তু শর্ত হলো খেলাফতের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরুন, এর মধ্যেই আমাদের জীবন। খেলাফতের আহবানে সাড়া দিন তাহলেই খোদা ও তাঁর রসূলের রাজত্ব এ পৃথিবীতে কায়েম হবে। আল্লাহ্ করুন, খেলাফতের আনুগত্যেই যেন আমাদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়, আমীন!

পাক্ষিক আহ্‌মদী - ৩১শে মে ২০০৭