রমযান: আল্লাহ্‌র প্রকৃত বান্দা হওয়ার ও দোয়া কবুলের সুযোগ

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৮-এপ্রিল, ২০২২

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ৮ই এপ্রিল, ২০২২ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় “রমযান: আল্লাহ্‌র প্রকৃত বান্দা হওয়ার ও দোয়া কবুলের সুযোগ”-এ বিষয়ে আলোচনা করেন ও নামাযান্তে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের নিয়ে নতুন ওয়েবসাইট www.313companions.org উদ্বোধন করেন।।
তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করেন যে, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌ‌ۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِ‌ۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِى وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِى لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ অর্থাৎ, ‘যখন আমার বান্দা আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, তখন (তুমি বল) নিশ্চয় আমি নিকটেই আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমাকে ডাকে। অতএব, তাদেরও উচিত (তারা) যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় ও আমার প্রতি ঈমান আনে, যেন তারা হিদায়াত লাভ করে।’ (সূরা আল্ বাকারা: ১৮৭)।
হুযূর (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আমরা এখন রমযান মাস অতিবাহিত করছি। এই মাস দোয়া গৃহীত হওয়ার মাস, আল্লাহ্ তা’লা বিশেষভাবে এই মাসে দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ এই মাসে মানুষ সবকিছু আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির খাতিরে করে থাকে, এমনকি নিজের পানাহারও আল্লাহ্‌র নির্দেশানুসারে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভেতর করে। এজন্য মহানবী (সা.) আল্লাহ্ তা’লার বরাতে বলেছেন, এই মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, দোযখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় ও শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। যদি আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে তাঁর নৈকট্য অর্জনের এরকম সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার পরও আমরা এর দ্বারা উপকৃত হতে না পারি, তবে তা আমাদের দুর্ভাগ্য। রমযান মাসে তো পাপীরা বিভিন্ন রকম অপকর্মও করে থাকে; সবার শয়তান শিকলাবদ্ধ হলে তারা অপকর্ম কীভাবে করে? তাই বুঝা যাচ্ছে, এই সুসংবাদ সেসব মু’মিন ব্যক্তির জন্য, যারা আল্লাহ্কে পাবার ও আধ্যাত্মিকতায় উন্নতি লাভের চেষ্টায় রমযানকে সর্বাত্মকভাবে পালন করে। আর আল্লাহ্ এ-ও বলেছেন, রোযাদারের প্রতিদান আল্লাহ্ স্বয়ং হয়ে থাকেন; এটি কতবড় সুসংবাদ! তাই আমাদের রমযানের কল্যাণরাজি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। আমরা যেন সেই লোকদের দলভুক্ত না হই যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন, তাদের অভুক্ত-পিপাসার্ত থাকা তাঁর কাছে গৃহীত হবে না।
হুযূর (আই.) বলেন, খুতবার প্রারম্ভে তিলাওয়াতকৃত আয়াতটি রোযার নির্দেশ সম্বলিত আয়াতগুলোর মধ্যবর্র্তী একটি আয়াত। এই আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা কাদের দোয়া গৃহীত হয় তা বলে দিয়েছেন; যারা রহমান খোদার বান্দা হতে চায়, শয়তানের কবল থেকে মুক্তি পেতে চায়, প্রেমিকের মত ব্যাকুল হয়ে আল্লাহ্কে সন্ধান করে; আল্লাহ্ তা’লা মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে জানিয়েছেন- তিনি এমন ব্যক্তিদের নিকটেই আছেন। কাজেই, এই আয়াত অনুসারে প্রথম শর্ত হল তাঁর বান্দা হওয়া আর যথাথভাবে বান্দা হওয়ার কর্তব্য পালন করা। এরূপ হলে আল্লাহ্ বান্দার ডাক শোনেন, তার শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করে দেন; আর শুধু রমযান মাসেই না, বরং যদি সে সারা বছরই এসব শিক্ষা পালন করে, তবে তিনিও সর্বদা এভাবে তাকে সাহায্য করবেন ও তার দোয়া কবুল করবেন। অতএব, তারা সৌভাগ্যবান যারা এই রমযানকে নিজেদের দোয়া কবুল করানোর স্থায়ী মাধ্যমে পরিণত করে।
হুযূর (আই.) বলেন, আমাদের সৌভাগ্য হল, আমরা যুগের ইমাম ও মহানবী (সা.) এর খাঁটি প্রেমিক হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে মান্য করতে পেরেছি; তিনি আমাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের ও দোয়া কবুল করানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) একস্থানে বলেন, আল্লাহ্ তা’লা তাঁর সৃষ্টজীবের কল্যাণের জন্য একটিই পথ খুলে দিয়েছেন, তা হল দোয়া। যখন কেউ আহাজারি ও ক্রন্দন সহকারে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে, আল্লাহ্ তাকে পবিত্রতার চাদরে আবৃত করেন এবং স্বীয় মর্যাদা তার সামনে এমনভাবে প্রকাশ করে দেন যে, সে বৃথা ও অসঙ্গত কার্যকলাপ থেকে বহু দূরে পালিয়ে যায়। তিনি (আ.) দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কেমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া উচিত, এর জন্য আবশ্যক শর্তাবলী কী, আল্লাহ্‌র প্রকৃত বান্দা হওয়ার জন্য আবশ্যক শর্ত কী- এগুলো বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কর্ম সম্পাদন না করে শুধু দোয়া করে, সে প্রকারান্তরে আল্লাহ্‌র পরীক্ষা নিতে চায়। দোয়া করার পূর্বে নিজের যাবতীয় চেষ্টা প্রথমে কাজে লাগানো আবশ্যক; ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম দোয়ার এটিই তাৎপর্য। তাই মানুষ যেন নিজের কর্মের প্রতি দৃষ্টি দেয়, কারণ আল্লাহ্ তা’লা তাতে এমন কোন উপকরণ সৃষ্টি করে দেন যা সংশোধনের মাধ্যম হয়। কেউ কেউ বলে, ‘দোয়া করলে আর উপকরণের কী প্রয়োজন?’ সেই মূর্খরা জানে না, দোয়া স্বয়ং একটি উপকরণ, যা অন্যান্য উপকরণ সৃষ্টির কারণ হয়। অতএব, দোয়া করার আগে নিজ কর্মকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির অধীন বানানোর ও দৃঢ়-অবিচল ঈমানের অধিকারী হবার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তাঁর পথে চলার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে, তাদেরকে তিনি তাঁর পথ প্রদর্শন করেন – وَٱلَّذِينَ جَـٰهَدُواْ فِينَا لَنَہۡدِيَنَّہُمۡ سُبُلَنَا‌ অর্থাৎ, যারা আমাদেরকে পাবার জন্য চেষ্টা করে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে আমাদের পথ দেখিয়ে দেই। অতএব, এই রমযান হল সেই জিহাদের মাস; এমাসে আমরা যেন আল্লাহ্‌র বান্দাদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত জন্য বিশেষভাবে জিহাদ তথা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করি। হুযূর (আই.) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বিভিন্ন উদ্ধৃতির আলোকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, এটি কীভাবে হতে পারে- যে ব্যক্তি অলসতায় দিন পার করছে, সে-ও সেই ব্যক্তির মত আল্লাহ্‌র কৃপাবারি লাভ করবে, যে নিজের যাবতীয় বুদ্ধি, শক্তি ও নিষ্ঠার সাথে প্রাণান্ত চেষ্টা করে? وَٱلَّذِينَ جَـٰهَدُواْ فِينَا لَنَہۡدِيَنَّہُمۡ سُبُلَنَا আয়াতে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তিনি (আ.) বলেন, অনেকেই এই অনুযোগ করে, ‘আমরা অনেক দোয়া করেছি, কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয় নি।’ যারা এমনটি বলে- তারাই ভুল বলে, আল্লাহ্ ভুল বলেন নি! মানুষ যেটাকে নিজের বিবেচনায় ‘অনেক’ মনে করছে, হয়তো আল্লাহ্ তা’লার দৃষ্টিতে তাতে কোন ঘাটতি বা ত্রুটি রয়ে গিয়েছে। আবার যেভাবে আল্লাহ্ তা’লা শর্ত দিয়েছেন, সেভাবে নিজের যাবতীয় বুদ্ধি, শক্তি ও নিষ্ঠার সাথে যথাযথ চেষ্টা হয়তো করে নি। আল্লাহ্ তা’লা যে বলেছেন- فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِى -অর্থাৎ, তাদেরও আমার নির্দেশ মান্য করা উচিত- আমরা কি আল্লাহ্‌র নির্দেশ পরিপূর্ণভাবে পালন করেছি? যদি না করে থাকি, তবে আমাদের অভিযোগ করা অনুচিত। দোয়া গৃহীত হওয়ার জন্য প্রথমে নিজ অবস্থায় বা নিজ জীবনে পবিত্র পরিবর্তন এনে খোদার দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত, জিহাদ করা উচিত; আল্লাহ্ তো এতটা দয়ালু যে তিনি বান্দার জন্য সেই জিহাদ সহজ করে দেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বান্দা এক পা এগোলে আল্লাহ্ দু’পা এগিয়ে আসেন, বান্দা হেঁটে আসলে তিনি দৌড়ে আসেন।
হুযূর (আই.) বলেন, এটা হলে চলবে না যে, রমযানে আমরা পুণ্যকর্ম করার ওয়াদা করব, আংশিকভাবে তা পালনও করব, কিন্তু রমযান শেষে তা ভুলে গিয়ে আবার জাগতিকতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ব এবং বলব, ‘রমযানে অনেক দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হয় নি’। স্মরণ রাখা উচিত, আল্লাহ্‌র কাছে কোনকিছু গোপন নয়; তিনি জানেন- মানুষ কখন নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার অঙ্গীকার করছে আর কখন তা ভঙ্গ করছে। এমন হলে আল্লাহ্ তার সাথে যেমন ইচ্ছা করতে পারেন। অবশ্য কখনও এমন মানুষদেরও কিছু দোয়া আল্লাহ্ কবুল করে নেন, যেন তারা বুঝতে পারে- আল্লাহ্ দোয়া কবুল করেন, এবং তারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিনত থাকে। বান্দা ফিরে এলে আল্লাহ্ তো এতটা খুশি হন, যেভাবে কোন মা তার হারানো সন্তানকে খুঁজে পেলে খুশি হয় বা মরুভূমিতে কোন পর্যটক তার রসদ বোঝাই হারানো উট খুঁজে পেলে আনন্দিত হন। বস্তুতঃ আমরাই আল্লাহ্‌র পানে যাবার ক্ষেত্রে আলস্য দেখাই, আবার তা সত্ত্বেও দোয়া কবুল না হওয়ার অভিযোগ করি! তাই আমাদের এই দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, পার্থিব জীবনে যেভাবে প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি প্রতিক্রিয়া থাকে, ধর্মের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রযোজ্য; ইতিবাচক কাজের ফলাফল ইতিবাচক ও নেতিবাচক কাজের পরিণাম নেতিবাচক হয়। পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ্ বলেছেন, যারা তাঁর পথে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে তাদেরকে তিনি পথ দেখান, আর যারা বক্রতা অবলম্বন করে তিনি তাদের হৃদয় বক্র করে দেন। তিনি (আ.) বলেন, মানুষের মনের ওপর কয়েক রকম অবস্থা এসে থাকে। সৌভাগ্যবানদের আল্লাহ্ সাহায্য করেন এবং পুণ্য ও পবিত্রতা অর্জনের সামর্থ্য দান করেন, ফলে একসময় তারা এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হন যখন তাদের সব সন্তুষ্টি খোদার সন্তুষ্টি মোতাবেক হয়ে যায় এবং এরপর তারা আর পাপে লিপ্ত হন না। কিন্তু এই নিয়ামত অনেক দীর্ঘ সময় ও সাধনার পর লাভ হয়। তিনি (আ.) বলেন, মানুষ সর্বদা একই অবস্থায় থাকে না, আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রেও উত্থান-পতন আসতে থাকে। কিন্তু সৌভাগ্যবানরা দুর্বলতার অবস্থা থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন, তওবা-এস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র দরবারে বিনত হন ও নিজেদের দুর্বল অবস্থার জন্য লজ্জিত হয়ে ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করেন, নতুন উদ্যমে আল্লাহ্‌র পথে অগ্রসর হন। তখন আল্লাহ্‌র কৃপা উদ্বেল হয় এবং ছুটে এসে বান্দাকে পবিত্রতা ও পুণ্যের সামর্থ্য দান করে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে তাদের দ্বারা আর এমন ভুল সম্পাদিত-ই হয় না যা খোদা তা’লার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে। কিন্তু এর জন্য অধ্যবসায়ের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়া আবশ্যক, সাময়িক চেষ্টা-প্রচেষ্টায় তা অর্জিত হতে পারে না। সূরা ফাতেহায় ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম দোয়া এজন্যই শেখানো হয়েছে। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, জাগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মানুষকে আগে চেষ্টা করতে হয়, একই কথা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পার্থিব বিষয়াদি অর্জনের জন্য মানুষ যেখানে চরম পর্যায়ের চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে, সেখানে আল্লাহ্ তা’লাকে পাবার জন্য কেন প্রাণান্ত চেষ্টা করবে না? একথা কেন মনে করবে যে, সামান্য চেষ্টাতেই তারা আল্লাহ্কে পেয়ে যাবে বা তাদের দোয়া কবুল হয়ে যাবে? প্রকৃতির বিধান এখানেও প্রযোজ্য। এই বিষয়টি তিনি (আ.) বিভিন্ন জাগতিক উদাহরণ দিয়েও বুঝিয়েছেন। হুযূর (আই.) বলেন, এটা সেসব মানুষের প্রশ্নের উত্তর যারা বলে- ‘আমরা অনেক দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হয় নি’। ভাবটা এমন যে, আমাদের যখন খুশি, যখন প্রয়োজন আমরা আল্লাহ্‌র কাছে চাইব, আর তিনি (নাউযুবিল্লাহ্) তা কবুল করতে বাধ্য! এটি আল্লাহ্ তা’লার বানানো প্রকৃতির বিধানের পরিপন্থী। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, অনেক মানুষ দোয়াকে একটি সাধারণ বিষয় মনে করে, নামাযে বা অন্য সময় যে দোয়া মুখে আসে তা মন্ত্রের মত পড়ে নেয়, কিন্তু এটি আসলে কোন দোয়া-ই না। দোয়া এক প্রকার মৃত্যু; যেভাবে মৃত্যুর সময় মানুষ বিচলিত ও উৎকণ্ঠিত থাকে, দোয়ার মাঝেও সেই অবস্থা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কাজ হয় না। আর পাপ থেকে মুক্তিলাভের দোয়া হল সবচেয়ে বড় ও জরুরী দোয়া; যদি এই দোয়া কবুল হয় আর মানুষ খোদার দৃষ্টিতে পবিত্র সাব্যস্ত হয়, তখন আল্লাহ্ স্বয়ং তার অভিভাবক হয়ে যান, তার অন্যান্য চাহিদা আপনাআপনিই পূরণ হয়ে যায়। এটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক রহস্য; যতক্ষণ এটি অর্জিত না হয়, মানুষ এটি বুঝতে পারে না।
হুযূর (আই.) দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা আমাদের এই বিষয়গুলো অনুধাবন করার ও পালন করার তৌফিক দান করুন, এই রমযানকে আমাদের জন্য তাঁর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন, তাঁর নির্দেশাবলী পালন ও তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যম বানান; আমরা যেন দোয়া গৃহীত হওয়ার নিদর্শন দেখতে পাই এবং এই অবস্থা সর্বদা আমাদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত থাকে, রমযানেও এবং রমযানের পরও আমরা যেন আল্লাহ্‌র বিশেষ আবদ্ বা বান্দা হবার কর্তব্য পালনকারী হই। পৃথিবীবাসীর জন্যও হুযূর (আই.) দোয়া করতে বলেন, যেন তারা তাদের স্রষ্টাকে চিনতে সক্ষম হয়।
নামাযের পর হুযূর (আই.) এমটিএর একটি নতুন ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধনের ঘোষণাও প্রদান করেন। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের স্মৃতিচারণ করে প্রদত্ত হুযূরের জুমুআর খুতবাগুলো নিয়ে এই সাইট প্রস্তুত করা হয়েছে; তাছাড়া প্রত্যেক সাহাবীর পৃথক প্রোফাইল আকারেও তথ্য সন্নিবেশিত আছে ও অন্যান্য ফিচারও রয়েছে। ওয়েব অ্যাড্রেস হল, www.313companions.org।