শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত আবু বকর (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৪-ফেব্রুয়ারি, ২০২২

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় সাম্প্রতিক ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত আবু বকর (রা.)’র ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের ধারা অব্যাহত রাখেন রাখেন।
তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বিভিন্ন যুদ্ধাভিযানে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)’র ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তন্মধ্যে প্রথম হল, বনু কুরায়যার যুদ্ধ। ইতিহাসবিদ ওয়াকদীর বর্ণনা অনুসারে এই যুদ্ধে বনু তাইম গোত্র থেকে হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ্ (রা.) অংশ নেন। হাদীস পাঠে জানা যায়, মহানবী (সা.) বনু কুরায়যার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় হযরত আবু বকর ও উমর (রা.) নিবেদন করেন, মহানবী (সা.) যদি বাহ্যিকভাবে সুন্দর পোশাক পরেন, তাহলে কাফিররা ইসলাম গ্রহণে বেশি আগ্রহী হবে; তারা তাঁকে (সা.) হযরত সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)’র উপহার দেয়া সুন্দর পোশাক পরতে অনুরোধ করেন। মহানবী (সা.) তাঁদের পরামর্শ গ্রহণপূর্বক তা পরিধান করেন এবং বলেন, তারা দু’জন যদি একমত হয়ে তাঁকে কোন পরামর্শ দেন, তবে তিনি তা অবশ্যই গ্রহণ করবেন। আল্লাহ্ তাদের দু’জনের উপমা জিব্রাঈল ও মীকাঈল (আ.)-এর অনুরূপ বলে মহানবী (সা.)-কে জানিয়েছেন। তিনি (সা.) বলেন, হযরত উমর (রা.)’র উপমা জিব্রাঈল ফিরিশ্তার মত, কারণ প্রত্যেক উম্মত তার মাধ্যমেই শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে; নবীদের মধ্যে উমরের উপমা হযরত নূহ (আ.)-এর সদৃশ, যার মাধ্যমে কাফির ও শত্রুরা সব ধ্বংস হয়েছে। আর আবু বকর (রা.)’র উপমা মীকাঈল ফিরিশ্তার মত, যিনি বিশ্ববাসীর ক্ষমালাভের জন্য দোয়া করেছেন; নবীদের মধ্যে তাঁর উপমা হযরত ইব্রাহীম (আ.) সদৃশ, যিনি কাফিরদের জন্যও আল্লাহ্‌র কাছে দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি (সা.) আরও বলেন, তাঁরা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় তাঁদের পরামর্শও সাধারণত ভিন্ন হয়ে থাকে; তাই যখন তাঁরা কোন বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তিনি (সা.) তা অবশ্যই গ্রহণ করেন। হুযূর (আই.) বনু কুরায়যার যুদ্ধে হযরত সা’দ ও কা’ব বিন আমরের দক্ষ তিরন্দাজির ঘটনাও উল্লেখ করেন। কা’ব (রা.) বর্ণনা করেন, সেদিন রাতের খাবারে সবাই খেজুর খেয়েছিলেন; মহানবী (সা.), হযরত আবু বকর ও উমর (রা.) একত্রে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। হযরত সা’দ বিন মু’আয (রা.) যখন বনু কুরায়যার আমন্ত্রণে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা রায় প্রদান করেন, তখন মহানবী (সা.) তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আল্লাহ্‌র নির্দেশ সম্মত রায় দিয়েছ।’ হযরত সা’দ (আ.) আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ্, যদি তুমি কুরাইশদের সাথে মহানবী (সা.)-এর আরও কোন যুদ্ধ অদৃষ্টে রেখে থাক, তবে আমাকে সেই যুদ্ধের জন্য জীবিত রাখ; আর তা না হলে আমাকে মৃত্যু দাও।’ ফলে তার প্রায় সেরে যাওয়া ক্ষত ছিড়ে যায় এবং তা থেকে হঠাৎ প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মহানবী (সা.), হযরত আবু বকর ও উমর (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাকে দেখতে তার তাঁবুতে যান। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন সা’দ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন, তখন আবু বকর ও উমর (রা.) দু’জনই খুব কাঁদছিলেন, যা দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল। এটি শুনে তার আল্লাহ্‌র পবিত্র বাণী রুহামাউ বায়নাহুম মনে পড়ছিল, অর্থাৎ মু’মিনরা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসা রাখে।
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়েও হযরত আবু বকর (রা.)’র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। মহানবী (সা.) সাহাবীদের সাথে নিয়ে কা’বা প্রদক্ষিণ করার স্বপ্ন দেখার কারণে ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলকদ মাসে ১৪শ’ সাহাবীকে সাথে নিয়ে উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে যখন জানতে পারেন, মক্কার কাফিররা যেকোন মূল্যে তাঁকে (সা.) বাধা দিতে বদ্ধপরিকর, তখন তিনি (সা.) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। হযরত আবু বকর (রা.)’র অভিমত ছিল, তারা যেহেতু উমরা করতে এসেছেন, তাই আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই; তবে যদি তাদেরকে বায়তুল্লাহ্ শরীফে যেতে বাধা দেয়া হয়, তবে তারা যুদ্ধ করবেন। হুদাইবিয়াতে যখন দু’পক্ষের মধ্যে সন্ধিচুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখন এক পর্যায়ে কাফির নেতা উরওয়া বিন মাসঊদ মহানবী (সা.)-এর সাথে কঠোর ভাষায় কথা বলে বা কিছুটা ধৃষ্টতাপূর্ণ ব্যবহার করে। তখন হযরত আবু বকর (রা.) এগিয়ে এসে তাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন। উরওয়া রাগতস্বরে তাঁর পরিচয় জানতে চায়। যখন তাকে বলা হয়- ইনি হযরত আবু বকর (রা.), তখন সে বলে, যদি তার প্রতি হযরত আবু বকর (রা.)’র এক বিরাট অনুগ্রহ না থাকতো, যার প্রতিদান দেয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি, তবে সে অবশ্যই এই তিরস্কারের উত্তর দিতো। হযরত আবু বকর (রা.) একবার তার ওপর নির্ধারিত রক্তপণ প্রদান করে তার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
হুদাইবিয়া সন্ধির চুক্তিপত্র রচনার সময় মুসলমানদের জন্য বাহ্যত অপমানজনক শর্তাবলীর কারণে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এক পর্যায়ে হযরত উমর (রা.) আর সহ্য করতে না পেরে মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেন, আপনি কি আল্লাহ্‌র সত্য নবী নন? আমরা কি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও শত্রুরা মিথ্যার অনুসারী নয়? তবে আমরা কেন আমাদের ধর্মের জন্য অপমানজনক এসব শর্ত মেনে নিচ্ছি? মহানবী (সা.) তাকে বলেছিলেন, তিনি (সা.) আল্লাহ্‌র রসূল, তাই তিনি কখনোই আল্লাহ্‌র নির্দেশ অমান্য করতে পারেন না; অর্থাৎ এসব শর্ত ঐশী ইঙ্গিতেই তিনি মেনে নিচ্ছেন। হযরত উমর (রা.) যেহেতু একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, তাই তিনি গিয়ে হযরত আবু বকর (রা.)’র কাছেও পুনরায় এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেন; তখন আবু বকর (রা.)ও তাঁকে প্রায় হুবহু একই উত্তর দেন। পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.) নিজের ভুল বুঝতে পারেন যে, এভাবে মহানবী (সা.)-এর সাথে কথা বলাটা তার উচিত হয়নি; তাই প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তিনি অনেক সদকা-খয়রাত, নফল ইবাদত প্রভৃতি পালন করেন, যেন আল্লাহ্ তাঁর পাপ ক্ষমা করে দেন। উল্লেখ্য, হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তিতে মুসলমানদের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রা.)ও অন্যতম। তিনি সবসময় বলতেন, ইসলামের সবচেয়ে বড় বিজয় ছিল এই হুদাইবিয়ার সন্ধি।
নাজ্‌দ্‌ ও ওয়াদিউল কুরা অঞ্চলে বসবাসকারী একটি গোত্র বনু ফাযারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের তোড়জোড় করছিল, যার প্রেক্ষিতে মহানবী (সা.) সাহাবীদের একটি সেনাদল তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য প্রেরণ করেন। মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফের বর্ণনামতে, এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। বনু ফাযারা মুসলমানদের দেখে পালিয়ে যায়, তাদের কিছুসংখ্যক বন্দিও হয়।
৭ম হিজরীর মহররম মাসে খায়বারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খায়বার অনেক খেজুরবাগানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল; এখানে ইহুদীদের অনেক দুর্গও ছিল, আর আরবে এটি তাদের কেন্দ্রস্বরূপ ছিল। দশদিনের অধিক সময় ধরে তাদের দুর্গগুলো অবরোধ করে রাখা হয়। এই যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) তীব্র মাথাব্যথার কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে পারছিলেন না। তিনি (সা.) কাতীবা দুর্গ জয় করার জন্য হযরত আবু বকর (রা.)’র হাতে নেতৃত্বভার তুলে দেন, কিন্তু দিনব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পরও তিনি সফল হননি; পরের দিন হযরত উমর (রা.)-কে নেতৃত্ব দিলে তিনিও যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। অবশেষে মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)’র হাতে নেতৃত্বভার অর্পণ করেন এবং তিনি তা জয় করেন। ইতিহাসবিদ ওয়াকদীর মতে এই যুদ্ধে মহানবী (সা.) হযরত হুবাব বিন মুনযের (রা.)’র পরামর্শে ইহুদীদের খেজুরগাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন; পরে হযরত আবু বকর (রা.)’র পরামর্শে তিনি (সা.) একাজ বন্ধ করিয়ে দেন। হুযূর (আই.) বলেন, খেজুরগাছ কেটে ফেলার নির্দেশ সংক্রান্ত অংশটি সঠিক বলে মনে হয় না। এ-ও বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-কে খায়বারের ফসল থেকে প্রায় ৩৭৫ মণ খেজুর ও অন্যান্য শস্য দিয়েছিলেন।
বনু কিলাব গোত্র নাজ্‌দ্‌-এ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হচ্ছে- এই সংবাদের প্রেক্ষিতে ৭ম হিজরীর শাবান মাসে মহানবী (সা.) তাদেরকে দমন করার জন্য হযরত আবু বকর (রা.)’র নেতৃত্বে একটি মুসলিম বাহিনী সেখানে প্রেরণ করেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের মিত্র বনু বকর গোত্র যখন মুসলমানদের মিত্র খুযাআ’ গোত্রের ওপর আক্রমণ করে, তখন কুরাইশরা তাদেরকে অস্ত্র ও বাহন দিয়ে সাহায্য করেছিল। এরপর আবু সুফিয়ান অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে মদীনায় ছুটে যায় ও হুদাইবিয়ার সন্ধি নবায়ন করার চেষ্টা করে; কিন্তু মহানবী (সা.) তার কথার কোন উত্তরই দেননি। তখন সে হযরত আবু বকর (রা.)’র কাছে যায়, কিন্তু তিনিও এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সে তখন হযরত উমর (রা.)’র কাছেও যায়; তিনি উল্টো বলেন, তিনি কুরাইশদের সাথে যুদ্ধের জন্য মুখিয়ে আছেন।
৮ম হিজরীর রমযান মাসে মক্কা-বিজয় সংঘটিত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) এই অভিযান সম্পর্কে যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখেন। তিনি যখন সাহাবীদের মাঝে মক্কা অভিযানের ঘোষণা দেন, তখন এই দোয়া করেন- কুরাইশদের গোয়েন্দারা যেন ততক্ষণ এ বিষয়ে কিছু জানতে না পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মুসলিম বাহিনী তাদের একদম কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই অভিযানের কারণ ছিল কুরাইশদের পক্ষ থেকে হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি লঙ্ঘন। মহানবী (সা.) আশেপাশের অঞ্চলে সংবাদ পাঠিয়ে দেন, মুসলমানরা যেন রমযান মাসে মদীনায় একত্রিত হয়। যথাসময়ে মদীনায় আগত গোত্রগুলোর মধ্যে বনু আসলাম, বনু গিফার, বনু মুযায়না, বনু আশজাআ ও বনু জুহায়না উল্লেখ্য। এক বর্ণনামতে, মহানবী (সা.) মক্কা অভিযানের ব্যাপারে হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)’র সাথে পরামর্শ করেছিলেন। হযরত আবু বকর (রা.)’র অভিমত ছিল, কুরাইশরা তো আমাদের স্বজাতি, উপরন্তু তাদের সাথে সন্ধিচুক্তি রয়েছে, তাদের সাথে যুদ্ধ করা কি ঠিক হবে? মহানবী (সা.) বলেছিলেন, যুদ্ধ স্বজাতির সাথে নয়, বরং চুক্তি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে হচ্ছে। আর হযরত উমর (রা.) বলেছিলেন, তিনি প্রতিদিন আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেন যেন সেই দিন আসে, যেদিন তারা মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। মহানবী (সা.) দু’জনের অভিমত শুনে বলেছিলেন, হযরত আবু বকর (রা.) অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির, কিন্তু ন্যায্য কথা বেশি উচ্চারিত হয় উমরের মুখ দিয়ে। অতঃপর মহানবী (সা.) দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। মদীনায় অনেক মুনাফিক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মহানবী (সা.)-এর দোয়ার ফলে মক্কার কাফিররা তাদের যাত্রার কোন খবরই পায়নি। এটি সরাসরি আল্লাহ্ তা’লার ঐশী হস্তক্ষেপ ছিল। মুসলিম বাহিনী যখন মক্কা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী মাররুয্ যাহরান নামক স্থানে পৌঁছে যায়, তখন তারা টের পায়। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে মুসলমানগণ তাদের শিবিরে দশ হাজার জায়গায় আগুন প্রজ্জ্বলিত করে, যেন দূর থেকে এই বাহিনীকে একটি বিশাল বাহিনী বলে মনে হয়। ইতোমধ্যে কুরাইশরা আবু সুফিয়ানকে মহানবী (সা.)-এর সাথে আলোচনা করার ও নিরাপত্তা প্রার্থনার জন্য পাঠায়; তার সাথে হাকীম বিন হিদম ও বুদায়ল বিন ওয়ারকাও আসে। তারা দূর থেকে অন্ধকারে মুসলিম বাহিনীকে দেখে ভীত হয়ে পড়ে। তখন হযরত আব্বাস (রা.) সেখানে আসেন এবং তাদের সাথে কথা বলেন। হযরত আব্বাস (রা.) আবু সুফিয়ানকে নিরাপত্তা দেন এবং তার অনুরোধে তাদেরকে মহানবী (সা.)-এর সাথে দেখা করতে নিয়ে যান। তারা তিনজনই সেখানে ইসলাম গ্রহণ করে। হুযূর (আই.) বলেন, এই স্মৃতিচারণের ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ্।