শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত আবু বকর (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৮-জানুয়ারি, ২০২২

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ২৮শে জানুয়ারি, ২০২২ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় সাম্প্রতিক ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত আবু বকর (রা.)’র ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের ধারা অব্যাহত রাখেন রাখেন। খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কতিপয় নিষ্ঠাবান আহমদীর স্মৃতিচারণ করেন ও নামাযান্তে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ান।
তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, আজও হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)’র স্মৃতিচারণ অব্যাহত থাকবে। এরপর তিনি আরও কয়েকটি যুদ্ধাভিযানের উল্লেখ করেন যেগুলোতে হযরত আবু বকর (রা.) অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রথমে উল্লেখ করেন হামরাউল আসাদ যুদ্ধাভিযানের কথা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) উহুদ প্রান্তর থেকে ফেরেন শনিবার; রবিবার ফজরের আযান দিয়ে হযরত বেলাল তাঁর (সা.) জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন আব্দুল্লাহ্ বিন আমর বিন অওফ মুযনী এসে তাঁর (সা.) খোঁজ করেন। মহানবী (সা.) এলে তিনি জানান, মালাল নামক স্থানটি অতিক্রম করার সময় তিনি আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীদের বলাবলি করতে শুনেছেন- তারা উহুদ প্রান্তরে মুসলমানদের বাগে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে, যা মোটেও ঠিক হয়নি; তাদের এখনই পুনরায় মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করে তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করা দরকার। তবে সাফওয়ান বিন উমাইয়ার অভিমত ছিল, এখন পুনরায় আক্রমণ করতে গেলে মুসলমানরা তাদের উল্টো পরাজিত করবে, তাই তাদের মক্কা ফিরে যাওয়াই শ্রেয়। মহানবী (সা.) এই বৃত্তান্ত শুনে আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-কে ডেকে পাঠান; তাঁরা অবিলম্বে শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবনে যাবার পরামর্শ দেন। ফজরের নামাযান্তে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হযরত বেলাল (রা.) মুসলমানদেরকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার ঘোষণা দেন; এ-ও বলা হয়, এই অভিযানে কেবল তারা-ই যাবেন, যারা উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মহানবী (সা.) তাঁর পতাকা হযরত আলী (রা.)’র হাতে তুলে দেন, কতক বর্ণনামতে তা আবু বকর (রা.)-কে দিয়েছিলেন। মদীনা থেকে ৮ মাইল দূরের হামরাউল আসাদ নামক স্থানে মুসলমানরা পৌঁছলে কাফিররা তা জানতে পারে এবং মুসলমানদের দৃঢ়তা দেখে ভীত হয়ে তারা ত্বরিৎ মক্কা অভিমুখে চম্পট দেয়।
ইহুদীদের বনূ নযীর গোত্রের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে জানা যায়, মহানবী (সা.) বনূ আমর গোত্রের দু’জন নিহত ব্যক্তির রক্তপণ আদায় করতে জনাদশেক সাহাবীকে সাথে নিয়ে তাদের কাছে যান; সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর, উমর, আলী (রা.) প্রমুখ ছিলেন। মহানবী (সা.) রক্তপণের কথা বললে তারা বলে, ‘প্রথমে আপনি খাওয়া-দাওয়া সেরে নিন, তারপর এর সমাধা করছি।’ মহানবী (সা.) একটি দেয়ালের পাশে বসেন। ইতোমধ্যে ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করে যে, তাদের কেউ একজন ছাদে উঠে ওপর থেকে একটি বড় পাথর ফেলে মহানবী (সা.)-কে হত্যা করবে। ইহুদী নেতা আমর বিন জাহাশ এই অপকর্মের দায়িত্ব নেয়; তবে সালাম বিন মিশকাম নামক আরেকজন এর বিরোধিতা করে বলে- এটি ঠিক হবে না, কারণ এটি স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা। তবুও পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে সেই ব্যক্তি যখন ছাদে ওঠে, তখন আল্লাহ্ তা’লা মহানবী (সা.)-কে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে এলহাম-মারফৎ অবগত করেন এবং ঐশী নির্দেশানুসারে তিনি (সা.) কাউকে কিছু না বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে আসেন। মদীনা ফিরেই তিনি (সা.) মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রা.)’র মাধ্যমে বনূ নযীরকে সংবাদ পাঠান- তাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য দশদিনের মধ্যে তাদের মদীনা ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইহুদীরা এতে অস্বীকৃতি জানায়, ফলে মুসলমানরা তাদের দুর্গ অবরোধ করেন। এসময় মুসলমানদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন হযরত আলী (রা.); কতক বর্ণনামতে নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। অবশেষে বনূ নযীর শাস্তি মেনে নিতে সম্মত হয় এবং যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া সব অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে মদীনা ছেড়ে চলে যায়। তাদের অবশিষ্ট সম্পত্তি মহানবী (সা.) আনসারদের অনুমতি নিয়ে মুহাজিরদের মধ্যে বন্টন করে দেন; এতে হযরত আবু বকর (রা.) আনসারদের সাধুবাদ জানিয়ে তাদের জন্য দোয়া করেন।
৪র্থ হিজরীতে বদরুল্ মও’ইদ যুদ্ধাভিযান সংঘটিত হয়। উহুদের যুদ্ধ শেষে ফিরে যাবার সময় আবু সুফিয়ান মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিল, পরের বছর বদরুস্ সাফরায় আবার তারা যুদ্ধ করতে আসবে; মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হযরত উমর (রা.) তাতে সম্মতি দেন। সময় যত ঘনিয়ে আসে, আবু সুফিয়ানের ভয় তত বাড়তে থাকে যে, যুদ্ধে গেলে তাদের কপালে দুঃখ আছে। তাই সে উড়ো খবর ছড়িয়ে দেয়- তারা অনেক বড় সেনাদল নিয়ে আসছে, যেন এই ভয়ে মুসলমানরা না আসে। ওদিকে হযরত আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.) গিয়ে মহানবী (সা.)-এর কাছে নিবেদন করেন, তাঁদের এতে যাওয়া উচিত। এরূপ বর্ণনাও রয়েছে, সাধারণ মুসলমানরা এ ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন ছিলেন; কিন্তু মহানবী (সা.) অত্যন্ত জোরালো ভাষণ প্রদান করেন এবং বলেন, দরকার হলে তিনি একাই সেখানে যাবেন। সাহাবীরা তৎক্ষণাৎ জোরেশোরে প্রস্তুতি নেন এবং মহানবী (সা.) দেড় হাজার সাহাবীকে সাথে নিয়ে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। ওদিকে আবু সুফিয়ানও দু’হাজার সৈন্য নিয়ে বের হয়েছিল; কিন্তু সে যখন জানতে পারে, মুসলমানরা ইতোমধ্যেই হাজির- তখন ভয় পেয়ে ফিরে যায়। বদরে নিয়মিত অনুষ্ঠিত মেলায় মুসলমানরা ব্যবসা করে অনেক মুনাফা লাভ করেন এবং ৮দিন অবস্থান শেষে ফিরে আসেন।
৫ম হিজরীর শা’বান মাসে বনূ মুস্তালিক-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা মুরায়সির যুদ্ধ নামেও পরিচিত। খুযা’আ গোত্রের একটি শাখা বনূ মুস্তালিক মদীনা থেকে ৯৬ মাইল দূরবর্তী স্থান ফারো থেকে এক দিনের দূরত্বে বসবাস করতো; মহানবী (সা.) যখন জানতে পারেন, তারা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করার পাঁয়তারা করছে, তখন তিনি (সা.) সাতশ’ সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মহানবী (সা.) মুহাজিরদের পতাকা হযরত আবু বকর (রা.)’র হাতে এবং আনসারদের পতাকা সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)’র হাতে তুলে দেন। এই যুদ্ধাভিযান থেকে ফেরার পথেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.)’র ওপর জঘন্য মিথ্যা অপবাদ রটনা বা ইফ্ক্-এর ঘটনা ঘটে। হুযূর (আই.) বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা.)’র বরাতে বর্ণিত এই ঘটনাটি সবিস্তারে তুলে ধরেন। মহানবী (সা.) লটারীর ভিত্তিতে এই অভিযানে হযরত আয়েশা (রা.)-কে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরতি পথে একদিন হযরত আয়েশা (রা.) তাঁর হারিয়ে যাওয়া গলার হার খুঁজতে গিয়ে দলছুট হয়ে পড়েন; তাঁর হাওদা উটের পিঠে চাপিয়ে কাফেলা এগিয়ে যায়। হার খুঁজে হযরত আয়েশা (রা.) ফিরে এসে কাউকে না পেয়ে ভয় পান; তিনি সেখানে বসে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় হযরত সাফওয়ান বিন মুয়াত্তাল (রা.) সেখানে এসে পৌঁছান, যিনি দেখতে এসেছিলেন- কেউ কিছু ফেলে গেল কি-না। তিনি দূর থেকে উচ্চস্বরে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়েন, হযরত আয়েশা (রা.) এই শব্দ শুনে জেগে ওঠেন। এরপর সাফওয়ান হযরত আয়েশা (রা.)-কে নিজের উটে চড়িয়ে এবং নিজে পায়ে হেঁটে মূল কাফেলার কাছে ফিরে আসেন; এই দৃশ্য দেখে মুনাফিকরা ইফকের এই জঘন্য অপবাদ রটিয়ে দেয়, যাদের মূলে ছিল মুনাফিক-নেতা আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই বিন সলূল। মদীনায় ফিরে হযরত আয়েশা (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর এই এক মাস ধরে যেসব রটনা রটতে থাকে এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। তবে তিনি কিছুটা আশ্চর্য ছিলেন, কারণ মহানবী (সা.) তাঁর ততটা খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন না। অতঃপর একদিন তিনি উম্মে মিসতাহ্‌র কাছ থেকে এই অপবাদের বিষয়ে জানতে পারেন। সব শুনে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাবার বাড়ি যান ও মায়ের কাছে সব জানতে চান; তাঁর মা তাকে শান্ত হতে বলেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, মায়ের কাছে সব শোনার পর তাঁর এমন কান্না শুরু হয় যা কোনভাবেই থামছিল না। পরদিন মহানবী (সা.) হযরত আয়েশা (রা.)’র ব্যাপারে হযরত আলী (রা.) ও উসামা বিন যায়েদ (রা.)’র সাথে পরামর্শ করেন; কারণ এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোন ওহী অবতীর্ণ হচ্ছিল না। হযরত উসামা (রা.), হযরত আয়েশা (রা.)’র পবিত্রতার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন; তবে হযরত আলী (রা.) সন্দেহমুক্ত থাকার জন্য প্রকারান্তরে তালাকের ইঙ্গিত দেন; অবশ্য তিনি এই পরামর্শও দেন- আয়েশার দাসী বারীরার কাছ থেকে আয়েশা (রা.)’র ব্যাপারে খোঁজ নেয়া যেতে পারে। মহানবী (সা.) বারীরাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, হযরত আয়েশা (রা.)’র সর্বোচ্চ ত্রুটি হল তিনি একটু ঘুমকাতুরে, এর বাইরে তাঁর মাঝে আর কোন দোষ নেই। মহানবী (সা.) নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও হযরত আয়েশা ও সাফওয়ানের পবিত্রতার সাক্ষ্যই দেন এবং সাহাবীদের কাছে দুঃখ করে বলেন, ‘এসব অপবাদ রটাচ্ছে যে- তাকে সামলাবে কে?’ এটি নিয়ে আরেক বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়; হযরত সা’দ বিন মু’আয (রা.) সোচ্চার কণ্ঠে সেই মুনাফিককে হত্যা করার ঘোষণা দেন, কিন্তু গোত্রীয় অহংকার থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)। মহানবী (সা.) অনেক কষ্টে তাদের নিরস্ত করেন ও নীরব হয়ে যান। অবশেষে মহানবী (সা.) হযরত আয়েশা (রা.)’র কাছে গিয়ে বলেন, তিনি (সা.) এরূপ এরূপ শুনেছেন; যদি এটি অপবাদ হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্ অবশ্যই তাঁকে এত্থেকে দায়মুক্ত করবেন, আর যদি তাঁর কোন ভুল হয়েও গিয়ে থাকে তবে তিনি (রা.) যেন আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একথা শুনে তাঁর অশ্রু একেবারে বন্ধ হয়ে যায়; তিনি নিজের পিতা-মাতাকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তর দিতে বললে তারা অপারগতা জানান। তখন তিনি নিজেই বলেন, সবাই এসব মিথ্যা এত দীর্ঘ সময় ধরে শুনেছে যে, তিনি অপবাদ স্বীকার করুন বা অস্বীকার করুন- কেউ-ই তাঁর কথা বিশ্বাস করবে না। তাই তিনি সূরা ইউসুফে উল্লিখিত হযরত ইয়াকুবের বাণীর পুনরুল্লেখ করেন- ধৈর্য ধরাই শ্রেয়, আর আপনারা যা বলছেন সে বিষয়ে আল্লাহ্ই সর্বোত্তম সাহায্য-প্রার্থনার স্থল! তখনই মহানবী (সা.)-এর প্রতি সূরা নূরের ১২নং আয়াত নাযিল হয়, যাতে হযরত আয়েশা (রা.)-কে আল্লাহ্ তা’লা দায়মুক্ত করেন। তখন আবু বকর (রা.) ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, তিনি মিসতাহ্‌কে আর কোন সাহায্য করবেন না। তখন আল্লাহ্ সূরা নূরের ২৩নং আয়াত অবতীর্ণ করেন, যার প্রেক্ষিতে আবু বকর (রা.) সেই সংকল্প পরিত্যাগ করেন।
৫ম হিজরীর শওয়াল মাসে আহযাবের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা পরিখার যুদ্ধ নামেও সুপরিচিত। খায়বারে নির্বাসিত বনূ নযীর গোত্রের ইহুদীদের উস্কানিতে মক্কার কুরাইশ, ইহুদী ও আরবের বিভিন্ন গোত্র সম্মিলিতভাবে প্রায় দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। মহানবী (সা.) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন এবং হযরত সালমান ফার্সী (রা.)’র পরামর্শক্রমে পরিখা খনন করে প্রতিরোধ গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৩ হাজার মুসলমান মিলে ছয়দিনে প্রায় ছয় হাজার গজ পরিখা খনন করেন, যাতে স্বয়ং মহানবী (সা.) কঠোর পরিশ্রম করেন; হযরত আবু বকর (রা.) সারাক্ষণ মহানবী (সা.)-এর নিরাপত্তার খাতিরে তাঁর পাশেই ছিলেন আর একইসাথে কাজও করছিলেন। একদিন মহানবী (সা.) ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.) তাঁকে পাহারা দেন। শত্রুবাহিনী যখন মদীনা অবরোধ করে, তখন হযরত আবু বকর (রা.) মুসলিম বাহিনীর একাংশের নেতৃত্বও দেন; পরবর্তীতে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার নাম মসজিদে সিদ্দীক। হুযূর (আই.) বলেন, স্মৃতিচারণের এই ধারা আগামীতেও চলবে, ইনশাআল্লাহ্।
খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত তিনজন নিষ্ঠাবান আহমদীর গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন, তারা হলেন; যথাক্রমে মোকাররম মুখতার আহমদ সাহেবের সহধর্মিণী মোকাররমা মোবারকা বেগম সাহেবা, মোকাররম মীর আব্দুল ওয়াহীদ সাহেব ও মোকাররম সৈয়্যদ ওয়াকার আহমদ খান সাহেব। হুযূর (আই.) তাদের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন ও তাদের রূহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন আর তাদের বংশধরদের জন্য দোয়া করেন।