শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১৯-নভেম্বর, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১৯শে নভেম্বর, ২০২১ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় সাম্প্রতিক ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)’র ধারাবাহিক স্মৃতিচারণে তাঁর অনুপম জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) প্রথমে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)’র একটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন যাতে তিনি (রা.) সাহাবীদের পূর্বাবস্থা ও ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁদের মাঝে সৃষ্ট বৈপ্লবিক পরিবর্তনের উল্লেখ করেছেন। তিনি (রা.) হযরত উমর (রা.)’র উল্লেখ করে বলেন, ইসলামগ্রহণের পূর্বে তিনি ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর চরম শত্রু ছিলেন। একদিন তিনি মহানবী (সা.)-কে হত্যা করার সংকল্প নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন; পথিমধ্যে একজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি মুসলমান হয়ে গিয়েছে, তাই তিনি প্রথমে তাদেরকে শায়েস্তা করতে তাদের বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে ঘটনাচক্রে তাঁর কুরআন শোনার সৌভাগ্য হয় এবং ইসলামের সত্যতা তাঁর সামনে প্রতিভাত হয়। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে মহানবী (সা.)-এর কাছে ছুটে যান। মহানবী (সা.) যেহেতু তখনও তাঁর পরিবর্তিত মনোভাব জানতেন না, তাই প্রশ্ন করেন- উমর, আর কত বিরোধিতা করবে? উমর (রা.) উত্তর দেন, আমি তো আপনাকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে বের হয়েছিলাম, কিন্তু এখন নিজেই এর শিকারে পরিণত হয়েছি! মুসলেহ্ মওউদ (রা.) আরও উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে সাহাবীরা ইসলামগ্রহণের পূর্বে মদ্যপান, পরস্পর লড়াই-বিবাদসহ বিভিন্ন পাপে নিমজ্জিত ছিলেন, তাঁরাই মহানবী (সা.)-কে মান্য করার পর ধর্মের খাতিরে উদ্যম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধু নিজেরাই উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হননি, বরং অন্যদের জন্যও উচ্চ মর্যাদা অর্জনের মাধ্যম হয়েছেন। আজ আমরাও যদি সেরূপ করতে পারি, তবে সাহাবীদের অনুরূপ হতে পারি।

হযরত উমর (রা.)’র খোদাভীরুতা সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন; ফুরাত নদীর তীরে যদি বায়তুল মালের একটি ছাগলও মারা যায়, তবে তিনি আশংকা করেন যে, আল্লাহ্ তাঁর কাছ থেকে সেটির হিসাব নিবেন। নিজ দায়িত্বের প্রতি তিনি এতটাই সচেতন ছিলেন যে, একবার এক সাহাবী তাঁকে নিরালায় আপন মনে একথা বলতে শোনেন- বাহ্ উমর, তুমি আমীরুল মু’মিনীন হয়েছ! আল্লাহ্‌র কসম! তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় কর, নতুবা তিনি অবশ্যই তোমাকে শাস্তি দিবেন! তাঁর হাতের আঙটিতে আরবীতে একথা খোদাই করা ছিল-“কাফা বিলমওতি ওয়া’ইযান ইয়া উমর” অর্থাৎ, হে উমর! উপদেশদাতা হিসেবে মৃত্যুই যথেষ্ট! একজন সাহাবী বর্ণনা করেন, তিনি শেষের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন, সেখান থেকেই হযরত উমর (রা.)-কে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শোনেন; উমর (রা.) সূরা ইউসূফের এই আয়াত পড়ছিলেন,

إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ

অর্থাৎ, আমি আমার সব দুঃখ-কষ্ট শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সমীপেই উপস্থাপন করি।

ইসলামের প্রথমদিকের সেবক, ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গকারী ও তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি হযরত উমর (রা.) কীভাবে খেয়াল রাখতেন, সে সংক্রান্ত কিছু ঘটনা হুযূর (আই.) উল্লেখ করেন। একবার উমর (রা.) বিদেশ থেকে আসা উন্নতমানের কিছু ওড়না মদীনার নারীদের মাঝে বিতরণ করছিলেন। শেষ ওড়নাটি অত্যন্ত দামী ও উন্নত মানের হওয়ায় কেউ একজন সেটি মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্রী ও উমর (রা.)’র স্ত্রী হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলীকে দেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু উমর (রা.) তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, উম্মে সালীত এটির অধিক দাবীদার; তিনি সেই আনসার নারী যিনি উহুদের যুদ্ধের দিন নিরলসভাবে মুসলিম বাহিনীর সেবা করেছেন। একবার মদীনার বাজারে একজন পুরনো সাহাবী খুফাফ বিন ইমা গিফারীর মেয়ে হযরত উমর (রা.)’র সাথে সাক্ষাৎ করে নিজের বিধবা হওয়ার ও তার এতীম সন্তানদের অসহায়ত্বের কথা বললে তিনি (রা.) উট ভর্তি রসদ, টাকা-পয়সা ও জামা-কাপড় তাকে দান করেন। কেউ একজন বলে, হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনি তাকে অনেক বেশি দিয়ে দিলেন! হযরত উমর (রা.) এতে খুবই অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে তিরস্কার করেন এবং ইসলামের সেবায় সেই নারীর বাবা ও ভাইয়ের বলীষ্ঠ ভূমিকার কথা স্মরণ করান।

হযরত উমর (রা.) কীভাবে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসহায় নারী-পুরুষদের খোঁজ-খবর রাখতেন সে সংক্রান্ত কিছু বর্ণনাও হুযূর (আই.) উদ্ধৃত করেন। হযরত তালহা (রা.) রাতের অন্ধকারে হযরত উমর (রা.)-কে গোপনে কয়েকটি বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে পরদিন একটি বাড়িতে খোঁজ নিতে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে এক অন্ধ বৃদ্ধা রয়েছেন, উমর (রা.) গোপনে তার সেবা-শুশ্রুষা করতেন। অসহায় মানুষদের কষ্টের কথা জেনে তিনি কীভাবে বিচলিত হয়ে পড়তেন এবং তৎক্ষণাৎ স্বয়ং তার সমাধান করতেন, সে সংক্রান্ত একাধিক ঘটনা হুযূর ইতোপূর্বেও খুতবায় উল্লেখ করেছেন। আজও কয়েকটি ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেন; যেমন দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জন্য রেশন নির্ধারণ করার ঘটনা, মরুভূমিতে এক নারীর তার এতীম শিশুদের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে খালি হাঁড়ি চুলোয় চড়িয়ে রাখার ঘটনা প্রভৃতি। সেই ঘটনায় হযরত উমর (রা.) এতটাই বিচলিত ছিলেন যে, নিজেই সেই ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য খাদ্যদ্রব্য বয়ে নিয়ে যান, রান্না করেন, তাদেরকে খাবার খাওয়ান এবং ততক্ষণ পর্যন্ত দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন, যতক্ষণ না তারা প্রশান্তচিত্তে ঘুমিয়ে পড়ে। আরেকবার তিনি (রা.) রাতের বেলা বাইরে গিয়ে এক বৃদ্ধাকে নিজ মেয়েকে দুধে পানি মেশাতে বলতে শোনেন, কিন্তু সেই মেয়েটি বিশ্বস্ততার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে খলীফার আদেশ অমান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। হযরত উমর (রা.) সেই মেয়ের ঈমান এবং যুগ-খলীফার প্রতি বিশ্বস্ততার মান দেখে এতটাই সন্তুষ্ট হন যে, নিজ পুত্র আসেমের সাথে তার বিয়ে দেন; তার গর্ভে আসেমের এক কন্যা সন্তান জন্ম নেন যিনি উমর বিন আব্দুল আযীযের মা ছিলেন।

নাগরিক অধিকারের প্রতি হযরত উমর (রা.)’র গভীর দৃষ্টি ছিল। তিনি খুবই সতর্ক থাকতেন যেন নাগরিক হিসেবে কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। হযরত উমর (রা.) একদিকে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে যেমন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিতেন, তেমনিভাবে ব্যবসায়ীদের যেন লোকসান না হয় সেজন্য কৃত্রিম দরপতনকেও প্রতিহত করতেন। একবার যখন মদীনার বাজারে বাইরে থেকে আসা এক ব্যক্তি এতটা কম মূল্যে খেজুর বিক্রি করছিল, যে মূল্যে বিক্রি করলে অন্য ব্যবসায়ীদের লোকসান হতো- তখন উমর (রা.) তাকে ধমক দেন ও এরূপ করতে বারণ করেন। একবার এক ব্যক্তি হযরত উমর (রা.)’র কাছে এসে নিজের এক মেয়ের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে যে, অজ্ঞতার যুগে তাকে জীবন্ত কবরস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন সে তাকে উদ্ধার করে। মুসলমান হবার পর সেই মেয়ে এমন কোন অপরাধ করেছিল যার ফলে তার জন্য দণ্ড নির্ধারণ করা হয়; মেয়েটি তখন আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু এবারও বাবার কারণে বেঁচে যায়; এরপর সে তওবা করে। মেয়েটির বাবা প্রশ্ন করে, এখন যেহেতু এই মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসছে, সে কি পাত্রপক্ষকে তার অতীতের সব ঘটনা খুলে বলবে? হযরত উমর (রা.) তাকে কঠোরভাবে বারণ করে বলেন, আল্লাহ্ তা’লা তার যে অপরাধকে ঢেকে দিয়েছেন তা তুমি প্রকাশ করতে চাও? আল্লাহ্‌র কসম! তুমি যদি সেসব কথা কাউকে বল, তবে আমি পুরো শহরবাসীর সামনে তোমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেব!

মহানবী (সা.)-এর সাহাবী ও সাধারণ জনগণের প্রাণ রক্ষার বিষয়ে উমর (রা.) কতটা ব্যাকুল ছিলেন তা সিরিয়ার আমওয়াস নামক স্থানে ছড়িয়ে পড়া প্লেগের ঘটনা থেকে জানা যায়। হযরত উমর (রা.) সিরিয়া যাওয়ার সংকল্প করেছিলেন, ইতোমধ্যে সেখানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তিনি বিভিন্নজনের সাথে পরামর্শ করে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিরিয়ায় মুসলিম-বাহিনীর সেনাপতি আবু উবায়দাহ্ (রা.) তাঁর এরূপ সিদ্ধান্তে প্রশ্ন করেন, আল্লাহ্‌র নির্ধারিত ভাগ্য থেকে কি পালানো সম্ভব? হযরত উমর (রা.) তার কথায় দুঃখ পান ও বলেন, এটি পলায়ন নয়, বরং একটি ভাগ্যকে এড়িয়ে আল্লাহ্ তা’লারই নির্ধারিত অপর এক ভাগ্যের দিকে গমন। পরবর্তীতে আব্দুর রহমান বিন অওফ (রা.) এসে হযরত উমর (রা.)’র সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে মহানবী (সা.)-এর হাদীসও বর্ণনা করেন যাতে তিনি (সা.) বলেছেন, মহামারী কবলিত এলাকা থেকে যেন কেউ বাইরে না যায় আর বাইরে থেকেও কেউ যেন কবলিত এলাকায় প্রবেশ না করে। আবু উবায়দাহ্ (রা.)সহ বাকি মুসলিম যোদ্ধারা হাদীসের নির্দেশ অনুসারে সেখানেই থেকে যান। হযরত উমর (রা.) তাদেরকে রক্ষার জন্যও যথাসাধ্য চেষ্টা করেন এবং উন্নত আবহাওয়ার জন্য অবস্থান পরিবর্তন করতেও নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও সেই প্লেগের মহামারীতে অনেক সাহাবী শাহাদতবরণ করেন।

হুযুর (আই.) হযরত উমর (রা.)’র দোয়া কবুল হওয়া সংক্রান্ত কিছু ঘটনাও উল্লেখ করেন। তাঁর খিলাফতকালে যখন একবার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ হয় তখন উমর (রা.) লোকজন নিয়ে খোলা মাঠে ইস্তিসকার নামায পড়েন ও হাত তুলে দোয়া করেন; দোয়া করে তিনি নিজ অবস্থান থেকে নড়ার পূর্বেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তাঁর যুগে একবার নীলনদের পানি শুকিয়ে যায়। মিসরের মানুষজন সেখানকার গভর্নর আমর বিন আসের কাছে এসে বলে, পানি বহমান রাখতে একজন কুমারী মেয়েকে নদীতে বিসর্জন দেয়ার একটি প্রাচীন প্রথা রয়েছে, তা না করলে পানি আসবে না। আমর এই প্রস্তাব কঠোরভাবে নাকচ করে বলেন, এসব কদাচার দূর করতেই ইসলাম এসেছে। কিন্তু নদীতে যেহেতু পানি আসছিল না, তাই তিনি সব জানিয়ে খলীফার কাছে চিঠি পাঠান। উমর (রা.) প্রত্যুত্তরে একটি চিঠি ও একটি চিরকূট পাঠান এবং চিরকূটটি নদীতে নিক্ষেপ করতে বলেন। চিরকূটে লেখা ছিল, হে নদী, যদি তুমি নিজে থেকে বহমান হয়ে থাক তবে প্রবাহিত হয়ো না; কিন্তু যদি তুমি আল্লাহ্‌র নির্দেশে বহমান হয়ে থাক তবে আমি অদ্বিতীয় আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি- তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন। এর পরদিনই নদীতে ষোল হাত উঁচু পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধরত অবস্থায় মুসলিম বাহিনীর নেতা সারিয়া বিন যুনায়েমের খলীফা উমর (রা.)’র নির্দেশ ‘হে সারিয়া, পাহাড়ে আশ্রয় নাও’ শোনার ঘটনাও সুবিদিত। হযরত উমর (রা.)’র টুপির কল্যাণে রোমান সম্রাটের তীব্র মাথাব্যথা সেরে যাওয়া এবং আরোগ্য লাভের পর সম্রাট কর্তৃক একজন বন্দি সাহাবীকে সসম্মানে মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনাও হুযূর (আই.) উল্লেখ করেন।

হযরত উমর (রা.) আল্লাহ্ তা’লার সমীপে যে বিনীত দোয়াগুলো করতেন, হাদীসের বরাতে তার কয়েকটি হুযূর (আই.) উল্লেখ করেন। তাঁর একটি দোয়া ছিল- “আল্লাহুম্মা তাওয়াফ্ফানী মা’আল আবরারে ওয়ালা তুখাল্লিফ্‌নি ফিল আশরারে ওয়াকিনি আযাবান্নারি ওয়া আলহিকনী বিলআখইয়ারে” অর্থাৎ, হে আল্লাহ্, আমাকে পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যু দাও, পাপীদের সাথে রেখে দিও না, জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাকে রক্ষা কর এবং আমাকে পুণ্যবানদের সাথে মিলিত কর। তাঁর শাহাদতের ঘটনার কিছুদিন পূর্বেই তিনি দোয়া করেছিলেন যে, তাঁর অনেক বয়স হয়েছে এবং তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন, আল্লাহ্ যেন তাঁকে তাঁর পুণ্য অটুট রেখে মৃত্যু দেন। এই ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই তাঁর ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে আর তিনি শাহাদতবরণ করেন। মদীনায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় তিনি প্রতিদিন এশার নামাযের পর বাড়ি ফিরে সারারাত জেগে নফল পড়তে আরম্ভ করেন। একদিন সেহেরীর সময় আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) তাঁকে এই দোয়া করতে শোনেন- হে আল্লাহ্, তুমি আমার যুগে উম্মতে মুহাম্মদীয়াকে ধ্বংস হতে দিও না!

হযরত উমর (রা.) এমন ব্যক্তি ছিলেন যে, সারা জীবনে কখনোই পুণ্য করার কোন সুযোগ হাতছাড়া করেননি, অথচ তাঁর বিনয় ও খোদাভীরুতার মান এমন ছিল যে, মৃত্যুর সময় তিনি অশ্রুসজল চোখে শুধু বলছিলেন, আমি কোন পুরস্কারের যোগ্য নই, আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করলেই আমি ধন্য! হুযূর (আই.) বলেন, তাঁর স্মৃতিচারণ সামান্য অবশিষ্ট রয়েছে যা আগামীতে বর্ণনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ্।