শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত উসমান বিন আফ্‌ফান (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১২-মার্চ, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১২ই মার্চ, ২০২১ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবাতে হযরত উসমান বিন আফ্‌ফান (রা.)-এর শাহাদতের অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনাবলী বর্ণনা করেন।

তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, হযরত উসমান (রা.)’র স্মৃতিচারণ চলছে। হযরত উসমান (রা.) তাঁর শাহাদতের প্রায় বছরখানেক পূর্বে শেষবার যখন হজ্জ করেন, ততদিনে বিশৃঙ্খলাকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে আরম্ভ করেছিল। আমীর মুয়াবিয়াহ্ (রা.) এ বিষয়টি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। হজ্জ থেকে ফেরার পথে আমীর মুয়াবিয়াহ্ও হযরত উসমান (রা.)’র সাথে মদীনায় আসেন; কিছুদিন মদীনায় অবস্থানের পর ফিরে যাবার সময় তিনি খলীফার সাথে একান্ত সাক্ষাতে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করে কিছু পরামর্শ নিবেদন করেন। তার প্রথম পরামর্শ ছিল, খলীফা যেন তার সাথে সিরিয়ায় চলে যান, কারণ সেখানে কোন বিশৃঙ্খলার নামগন্ধও নেই; মদীনায় থাকলে হঠাৎ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে যা সামলানো হয়তো সম্ভবপর হয়ে উঠবে না। হযরত উসমান (রা.) উত্তরে বলেন, যদি তার দেহ খণ্ড-বিখণ্ডও করে ফেলা হয়, তবুও তিনি মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর ছেড়ে কোথাও যাবেন না। আমীর মুয়াবিয়াহ্ তখন খলীফার সুরক্ষার্থে একদল সিরিয় সৈন্য মদীনায় প্রেরণ করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু উসমান (রা.) সেটিও এজন্য নাকচ করে দেন যে, এর ফলে বাইতুল মালের ওপর অযথা চাপ পড়বে এবং মদীনাবাসীর অবাধ চলাফেরাতেও কিছুটা বাঁধার সৃষ্টি হবে। আমীর মুয়াবিয়াহ্‌র তৃতীয় প্রস্তাব ছিল, যেহেতু বিদ্রোহীরা ভাবতে পারে যে, আরও সাহাবীরা আছেন, তাই উসমানকে হত্যা করলেও অন্য কেউ দায়িত্ব সামলে নিতে পারবেন, এজন্য সাহাবীদেরকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হোক। উত্তরে হযরত উসমান (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যাদেরকে একত্রিত করেছেন, আমি কীভাবে তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিতে পারি? তখন আমীর মুয়াবিয়াহ্ কেঁদে ফেলেন ও বলেন, তাহলে অন্ততঃ এই ঘোষণাটি করে দিন যে, যদি আপনার কিছু হয়, তবে মুয়াবিয়াহ্ আপনার ‘কিসাস’ বা প্রতিশোধ করবে। তখন হযরত উসমান (রা.) বলেন, তিনি এটি করতেও অপারগ; কারণ মুয়াবিয়াহ্ কঠোর প্রকৃতির মানুষ তাই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তিনি মুসলমানদের প্রতি কঠোরতা করতে পারেন। তখন মুয়াবিয়াহ্ (রা.) কান্নাভেজা চোখে তাঁর কাছ থেকে এই বলে বিদায় নেন যে, ‘সম্ভবতঃ আপনার সাথে এটিই আমার শেষ সাক্ষাৎ।’ বাইরে এসে তিনি সাহাবীদের বলেন, ‘আপনাদেরকে কেন্দ্র করেই ইসলাম, হযরত উসমান (রা.) এখন একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছেন আর নৈরাজ্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে, আপনারা তাঁর দেখাশোনা করুন’- একথা বলে মুয়াবিয়াহ্ সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

হযরত উসমান (রা.)’র বীরত্ব ও দৃঢ়চিত্ততা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি একদিন নিজের বাড়ি থেকে উঁকি মেরে অবরোধকারীদের বলেন, ‘হে আমার জাতি, আমাকে হত্যা করো না, কারণ আমি বর্তমান শাসক এবং তোমাদের মুসলমান ভাই! আল্লাহ্‌র কসম! আমি সবসময় আমার সাধ্যমত শান্তি-প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি।.যদি তোমরা আমাকে হত্যা কর, তাহলে জেনে রেখো, তোমরা আর কখনও একত্রিত হয়ে নামায পড়তে পারবে না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিহাদও করতে পারবে না।’ বিদ্রোহীরা অস্বীকৃতি জানালে তিনি আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করেন, হযরত উমর (রা.)’র শাহাদতের পর যখন সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল, তখন কি তারা একযোগে দোয়া করে নি, যেন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়? তারা কি তাহলে মনে করে, আল্লাহ্ তখন তাদের দোয়া কবুল করেন নি, নাকি এখন ইসলাম ধর্মের অবস্থার ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’লা উদাসীন হয়ে গিয়েছেন? তবুও বিদ্রোহীরা হঠকারিতা থেকে বিরত হচ্ছে না দেখে হযরত উসমান (রা.) দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ্, তুমি এদেরকে ভালোভাবে গুণে রাখ এবং তাদের প্রত্যেককে তুমি ধ্বংস করো, তাদের একজনকেও তুমি ছেড়ো না!’ বর্ণনাকারী বলেন, বস্তুতঃ ঠিক তা-ই হয়েছিল! হযরত উসমান (রা.) হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম (রা.)-কে খবর পাঠালে তিনি এসে পরিস্থিতি বিবেচনায় করণীয় জানতে চান; হযরত উসমান (রা.) তাকে লড়াই করতে বারণ করেন। মদীনার আনসারদের নিয়ে হযরত যায়েদ বিন সাবেত আসেন এবং তাদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানান; কিন্তু হযরত উসমান (রা.) নিজের প্রাণ রক্ষায় তাদেরকে লড়াই করার অনুমতি দেন নি। ইয়াওমুদ্দার-এর দিন হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা.) তাঁর কাছে গিয়ে নিবেদন করেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, এখন তো যুদ্ধ করাই বাঞ্ছনীয়!’ হযরত উসমান (রা.) উত্তর দেন, ‘তুমি কি সব মানুষকে এবং আমাকেও হত্যা করতে চাও?’ আবু হুরায়রাহ্ (রা.) আশ্চর্য হয়ে ‘না’ বললে উসমান (রা.) বলেন, ‘যদি তুমি একজনকেও হত্যা করো, তবে ধরে নিতে পার যে সবাই নিহত হতে যাচ্ছে!’ হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যুবায়েরসহ অনেকেই যুদ্ধ করার অনুমতি চান, কিন্তু হযরত উসমান (রা.) আল্লাহ্‌র দোহাই দিয়ে তাদের বলেন, ‘কেউ যেন আমার খাতিরে নিজের বা অন্য কারও রক্ত না ঝরায়!’ হযরত উসমান (রা.) নিজের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা করে বিদ্রোহীদেরকে লড়াই করার কোন সুযোগই দেন নি। আব্দুল্লাহ্ বিন যুবায়ের তার সঙ্গীদের নিয়ে খলীফার বাড়ির দরজায় পাহারা দিতে থাকেন। বিদ্রোহীরা শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে এক ব্যক্তিকে হযরত উসমান (রা.)’র কাছে পাঠায় যে এসে তাকে খিলাফতের দায়িত্ব হতে ইস্তফা দিতে বলে; তারা ভাবছিল, যদি উসমান (রা.) এটি করেন তাহলে মুসলমানরা আর তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করতে পারবে না। কিন্তু হযরত উসমান (রা.) বলেন, ‘আমি তো অজ্ঞতার যুগেও সর্বপ্রকার পাপ এড়িয়ে চলেছি, ইসলাম গ্রহণের পরও কোন বিধি-নিষেধ অমান্য করি নি; তাহলে আমি কোন অপরাধে সেই পদ ছেড়ে দেব যা আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন?’ সেই ব্যক্তি ব্যর্থ মনোরথ হয়ে তার সাথীদের কাছে ফিরে এসে বলে, ‘যদিও উসমানকে হত্যা করা কোনরূপেই বৈধ হবে না, কিন্তু এখন তাঁকে হত্যা করা ছাড়া মুসলমানদের কোপ থেকে বাঁচার আমাদের বিকল্প কোন পথও খোলা নেই। তাঁকে হত্যা করলে পুরো শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়বে আর আমাদেরকে কেউ ধরতে পারবে না।’ সেই ব্যক্তির এই কথা থেকে একদিকে যেমন বিদ্রোহীদের বেকায়দা অবস্থার কথা জানা যায়, সেইসাথে এটিও জানা যায়, উসমান (রা.) তাদেরকে এমন কোন সুযোগই দেন নি যার প্রেক্ষিতে তারা তাঁকে হত্যা করতে পারে। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম (রা.) এসে বিদ্রোহীদের বুঝান, আজ যদি তরবারি খাপ থেকে বের হয়, তবে তা আর খাপে ঢুকবে না, মুসলমানদের মধ্যে খুনোখুনি চলতেই থাকবে। বিদ্রোহীরা তার সদুপদেশ গ্রহণ করার বদলে উল্টো তার আগের ধর্ম নিয়ে তাকে খোঁটা দেয়; তিনি ইহুদী থেকে মহানবী (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। অথচ বিদ্রোহীরা এটা চিন্তা করে দেখল না, এসব বিশৃঙ্খলার মূল হোতা ও তাদের আসল নেতা আব্দুল্লাহ্ বিন সাবা-ও ইহুদীই ছিল, বরং সে ইহুদী-চক্রান্ত থেকেই ইসলামে এই বিভেদ সৃষ্টি করছে! হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম (রা.) নিরাশ হয়ে ফিরে গেলে বিদ্রোহীরা সিদ্ধান্ত নেয়, হযরত উসমান (রা.)’র বাড়ির দরজায় যেহেতু মুসলমান যুবকরা পাহারারত, তাই অন্য কোন পথে ঘরে ঢুকতে হবে। অতঃপর তাদের কয়েকজন উসমান (রা.)’র প্রতিবেশীর দেয়াল টপকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। উল্লেখ্য, হযরত উসমান (রা.) সেই দিনগুলোতে রোযা রাখছিলেন; সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, মহানবী (সা.) তাঁকে বলছেন, ‘উসমান! আজ সন্ধ্যায় আমার সাথে ইফতার করো।’ তাই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, আজই পৃথিবীতে তাঁর শেষ দিন। এজন্য তিনি তাঁর বাড়ির যে কক্ষে অন্যদের গচ্ছিত সম্পদ রাখা ছিল, তার দরজায় দু’জনকে পাহারায় নিযুক্ত করেন যেন হৈ-চৈয়ের মধ্যে কেউ সেগুলো লুট করতে না পারে। দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকা বিদ্রোহীদের দল হযরত উসমান (রা.)-কে কুরআন পাঠরত দেখতে পায়। তাদের সাথে মুহাম্মদ বিন আবু বকরও ছিলেন, যিনি এগিয়ে গিয়ে হযরত উসমান (রা.)’র দাড়ি ধরে খুব জোরে ঝাঁকি দেন; হযরত উসমান (রা.) তাকে বলেন, ‘হে আমার ভাইয়ের ছেলে, আজ তোমার বাবা বেঁচে থাকলে কখনোই এমনটি হতে দিতেন না!’ একথা শুনে তিনি লজ্জা পেয়ে ফিরে যান; কিন্তু আরেকজন একটি লোহার শিক দিয়ে হযরত উসমান (রা.)’র মাথায় আঘাত করে এবং তাঁর সামনে থাকা কুরআনে পদাঘাত করে, কুরআন উড়ে এসে হযরত উসমান (রা.)’র সামনে পড়ে এবং তাঁর মাথা থেকে রক্ত ঝরে কুরআনের সেই আয়াতের ওপর পড়ে যেখানে লেখা ছিল-

فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদের কাছ থেকে তোমার প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন; আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সূরা আল্ বাকারা: ১৩৮)

এরপর ‘সুদান’ নামক এক ব্যক্তি তরবারি দিয়ে তার ওপর আঘাত করে, হযরত উসমান (রা.) নিজের হাত দিয়ে তা ফেরাতে গেলে তার হাত কেটে যায়; হযরত উসমান (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ্‌র কসম, এটা সেই হাত, যা সর্বপ্রথম কুরআন লিখেছিল!’ সেই ব্যক্তি পুনরায় আক্রমণ করতে গেলে হযরত উসমান (রা.)’র স্ত্রী নায়লা সামনে এসে দাঁড়ান; সেই হতভাগা একজন মহীয়সী নারীর ওপর আক্রমণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে নি, তারও হাতের আঙুল কেটে যায়। এরপর সে পুনরায় হযরত উসমান (রা.)-কে আঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করে এবং হিংস্র পশুর মত তার গলা টিপে ধরে; আর হযরত উসমান (রা.)’র পবিত্র আত্মা মহানবী (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে ইফতার করতে জান্নাতে চলে যায়! হযরত উসমান (রা.)-কে ৩৫ বা ৩৬ হিজরীর ১৭ বা ১৮ যুলহজ্জ তারিখে জুমুআর দিন আসরের সময় শহীদ করা হয়, শাহাদতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বা ৮২ বছর। শনিবার রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে হযরত জুবায়ের বিন মুতঈমের ইমামতিতে নায়ার বিন মুকরিম, হাকিম বিন হিযাম ও আবু জাহম বিন হুযায়ফাহ্ তাঁর জানাযা পড়েন ও লাশ দাফন করেন। এ নিয়ে ভিন্ন বর্ণনাও রয়েছে অর্থাৎ বলা হয়, তাঁর জানাযায় ষোলজন শামিল হয়েছিলেন, তবে এই বর্ণনাই অধিক গ্রহণযোগ্য। তাকে জান্নাতুল বাকী সংলগ্ন ‘হাশ্‌শে কাওকাব’ নামক বাগানে সমাহিত করা হয়, আমীর মুয়াবিয়াহ্ (রা.) পরবর্তীতে এর দেওয়াল ভেঙ্গে এটিকে জান্নাতুল বাকীর সাথে যুক্ত করে দেন।

হযরত উসমান (রা.) সম্পর্কে কেউ কেউ বলে, তিনি সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে শংকিত ছিলেন; কিন্তু আমীর মুয়াবিয়াহ্‌র হজ্জ থেকে ফেরার পথের ঘটনা থেকে খুব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, হযরত উসমান (রা.) কখনোই নিজের প্রাণ নিয়ে শংকিত ছিলেন না বা মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না; হলে তিনি তাঁর প্রস্তাবগুলোর কোন একটি অবশ্যই গ্রহণ করতেন। উপরন্তু সাহাবীরা যখন তাঁর সুরক্ষার্থে লড়াই করতে চেয়েছিলেন, তাদেরকে তিনি আল্লাহ্‌র দোহাই দিয়ে নিরস্ত করেছেন। তাঁর শাহাদতের দিনের ঘটনা থেকেও দেখা যায়- মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি পিছপা হন নি, বরং সানন্দে শাহাদতের পেয়ালা পান করেছেন। এসব ঘটনা দেখে কে বলতে পারে- হযরত উসমান (রা.) শংকিত ছিলেন? হযরত উসমান (রা.) সেই সাতজন ব্যক্তির একজন, যারা ইসলামের পূর্বেও কখনও মদ স্পর্শ করেন নি এবং কখনও ব্যভিচার করেন নি; তিনি আশারায়ে মুবাশশারার একজন ছিলেন; তিনি মহানবী (সা.)-এর সেই জামাতা, যাকে স্বয়ং রসূলুল্লাহ্ (সা.) অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন এবং তাঁর লজ্জাশীলতার কারণে তাঁর প্রতি বিশেষ আচরণ করতেন! তাঁর স্মৃতিচারণ সামান্য বাকি রয়েছে, যা হুযূর (আই.) আগামীতে সমাপ্ত করবেন, ইনশাআল্লাহ্।

খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কয়েকজন নিষ্ঠাবান আহমদীর গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন; তারা হলেন যথাক্রমে আইভরি কোস্টের মুবাল্লিগ মৌলভী মুহাম্মদ ইদ্রিস তেরো সাহেব, উগান্ডার আমীর ও মিশনারী ইনচার্জ মুহাম্মদ আলী কারে সাহেবের সহধর্মিনী মোকাররমা আমিনা নাইগা কারে সাহেবা, সিরিয়ার মোকাররম লূয়ি কাযাক সাহেব এবং রাবওয়ার মোকাররম মোহাম্মদ ইব্রাহীম হানিফ সাহেবের সহধর্মিনী মোকাররমা ফারহাত নাসিম সাহেবা। হুযূর (আই.) তাদের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণে তাদের অসাধারণ গুণাবলী ও কর্মময় জীবনের কিছু ঝলক তুলে ধরেন এবং তাদের রূহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে দোয়া করেন। (আমীন)