ওয়াক্‌ফে জাদীদের ৬৪তম বর্ষের ঘোষণা ও আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৮-জানুয়ারি, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিলবিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান খলীফা ও আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ৮ই জানুয়ারি, ২০২১ ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় ওয়াক্‌ফে জাদীদের ৬৪তম বর্ষের ঘোষণা প্রদান করেন এবং আর্থিক কুরবানী সম্বলিত নিষ্ঠাবান আহমদীদের বিভিন্ন ঘটনার আলোকে আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব ও আশিসরাজি তুলে ধরেন।
তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) সূরা বাকারার ২৪৬ নাম্বার আয়াত পাঠ করেন,

مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

এর বঙ্গানুবাদ হল: ‘আর কে আছে যে আল্লাহ্‌কে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, যেন তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন? আর আল্লাহ্ (কখনও সম্পদ) কমিয়েও দেন এবং (কখনও) বাড়িয়েও দেন। আর তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।’

এই আয়াতে আল্লাহ্ তা’লাকে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ মোটেও এরূপ নয় যে, আল্লাহ্ তা’লার মানুষের অর্থের প্রয়োজন এবং তিনি নিজের চাহিদা পূরণার্থে ঋণ চাইছেন। ঋণ বলতে আমরা সাধারণতঃ লেন-দেনের ক্ষেত্রে কারও কাছ থেকে ধার নেয়া বুঝে থাকি; কিন্তু এর আভিধানিক অর্থ ভালো বা মন্দ প্রতিদানও বটে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আয়াতটির অর্থ দাঁড়াবে- ‘আর কে আছে যে আল্লাহ্ তা’লার পথে ব্যয় করবে যেন তিনি তাকে এর সর্বোত্তম প্রতিদান দান করেন?’ অতএব যেখানেই আল্লাহ্ তা’লার জন্য ব্যয় করার বা তাঁকে দান করার প্রসঙ্গ আসে, সেটি এই অর্থেই আসে- যারা এরূপ করে, আল্লাহ্ তাদেরকে এর সর্বোত্তম প্রতিদান দান করেন। অর্থাৎ যদি আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে ব্যয় করে থাকে, তবে যেন তা আল্লাহ্ তা’লাকেই দিচ্ছে, আর তিনি এর উত্তম প্রতিদান দেবেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কুরবানী ও আর্থিক কুরবানীর উল্লেখ করা হয়েছে; আল্লাহ্ তা’লার ধর্মের খাতিরে ও তাঁর সৃষ্ট জীবের সেবায় ব্যয় করাকে স্বয়ং আল্লাহ্ তা’লার জন্য ব্যয় করার নামান্তর বলে গণ্য করা হয়েছে। আর যা আল্লাহ্ তা’লার জন্য ব্যয় করা হয়, তা বিফল বা বিনষ্ট হয় না। বরং এটি এমন এক ঋণ, যা আল্লাহ্ তা’লা কয়েকগুণ বাড়িয়ে ফেরত দেন। কাজেই, কেউ যেন এটা মনে না করে যে, আল্লাহ্ তা’লা কারও ঋণের মুখাপেক্ষী। তিনি তো স্বয়ং ‘রব’, সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক; তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি যখন নিজের জন্য ‘ঋণ’ শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন এর অর্থ দাঁড়ায়- ‘আমার পথে ব্যয় কর এবং আমার অগণিত পুরস্কাররাজির ভাগীদার হও!’ ‘করযায়ে হাসানা’ শব্দটির মধ্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে, এই ব্যয় স্বেচ্ছায় ও সানন্দে হতে হবে, তবে গিয়ে তা আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় বলে পরিগণিত হবে।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) একবার আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক সভায় বলেন, আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী- এমনটি চিন্তা করাও পাপ ও কুফরীর নামান্তর। এস্থলে ঋণ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে, ‘কে আছে যে আল্লাহ্‌কে পুণ্যকর্ম প্রদান করবে যেন তিনি এর প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাকে ফেরত দেন?’ এখানে কেবল টাকা-পয়সার কথাই বলা হয় নি। বান্দার সাথে খোদার যে সম্পর্ক- সেদিকে গভীর দৃষ্টিপাত না করলে এর তাৎপর্য অনুধাবন করা সম্ভব না। আল্লাহ্ তা’লা যেখানে কারও কোন পুণ্য ছাড়াই বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সবার লালন-পালন করছেন, সেখানে কেউ যদি পুণ্য করে- তবে তার প্রতিদান কেমন হবে! বস্তুতঃ এটিই এ আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য এবং আল্লাহ্ তা’লাকে ঋণ প্রদানের প্রকৃত তাৎপর্য।
হুযূর (আই.) বলেন, আহমদীয়া জামাতের সর্বস্তরের সদস্য এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রাখেন যে, আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর পথে অর্থ ব্যয় করার ফলে একদিকে যেমন মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়, অপরদিকে সহস্র সহস্র ক্ষেত্রে এরূপ হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র পথে ব্যয়কৃত অর্থ আল্লাহ্ তা’লা আশ্চর্য উপায়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য আহমদীর মনোবাসনা কেবল এটিই, যেন কোনভাবে আল্লাহ্ তা’লা সন্তুষ্ট হয়ে যান; তারা কখনও এর কোন পার্থিব প্রতিদান লাভের আশায় চাঁদা দেন না; তবুও আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে পৃথিবীতেও এর উৎকৃষ্ট প্রতিদান দান করেন। অনেকে দারিদ্র সত্ত্বেও আল্লাহ্‌র পথে কুরবানী করেন এবং প্রত্যাশা রাখেন যে, অদৃশ্য হতে আল্লাহ্ তাদের প্রয়োজন পূরণ করবেন- আর বাস্তবেও আল্লাহ্ তা’লা তা-ই করেন। কিন্তু শর্ত হল- পুণ্য সংকল্প নিয়ে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যেন কুরবানী করা হয় এবং তাঁর অন্যান্য আদেশ ও সৎকর্মও পালন করা হয়; কেউ শুধুমাত্র আর্থিক কুরবানী করে এই আত্মপ্রসাদ নিবে যে, ‘আমি অনেক কুরবানী করেছি’ আর অন্যান্য পুণ্যকর্মের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাবে- এমনটি হওয়া উচিত নয়।
এরপর হুযূর (আই.) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী আহমদীদের কতিপয় ঘটনা উল্লেখ করেন যারা আল্লাহ্ তা’লার এই বাণী অনুসারে তাঁর কৃপা লাভ করেছেন। গিনি-কোনাকরির মুবাল্লিগ ইনচার্জ সাহেব বর্ণনা করেছেন. গত বছর ওয়াক্ফে জাদীদের নতুন বছর উপলক্ষ্যে হুযূর (আই.)-এর প্রদত্ত খুতবা তিনি জুমুআর সময় পড়ে শোনান। হুযূরের খুতবায় মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি উদ্ধৃতি ছিল যে, মানুষের হৃদয়ে একইসাথে দু’টি জিনিসের ভালোবাসা থাকতে পারে না, হয় সে আল্লাহ্‌কে ভালোবাসবে, নতুবা সম্পদকে ভালোবাসবে; এছাড়া আর্থিক কুরবানী সংক্রান্ত কিছু ঈমানোদ্দীপক ঘটনাও ছিল। নামায শেষে একজন দরিদ্র ও নিষ্ঠাবান আহমদী মূসা কাবা সাহেব এগিয়ে আসেন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তার পকেটে যত টাকা ছিল তা সবই ওয়াক্‌ফে জাদীদ খাতে দিয়ে দেন, অথচ তিনি এর আগেই তার ওয়াদাকৃত ওয়াক্‌ফে জাদীদ এর চাঁদা পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পকেটে যা ছিল সবই বের করে দিয়েছি, এখন আপনিই গুণে নিন; আমি তো আল্লাহ্‌র ভালোবাসা লাভের জন্য দিয়েছি, গুণে দিই নি!’ এমনকি তিনি তার কাছে বাড়িতে যাবার পথ খরচটুকুও রাখেন নি, সানন্দে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরেন। এটা হল আহমদীদের নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার মান, এভাবে তারা মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনেন আর এভাবে নিষ্ঠার সাথে তৎক্ষণাৎ তারা তা পালন করেন। হুযূর বলেন, বিরুদ্ধবাদীরা ঘোষণা দেয়, তারা জামাতের নাম-চিহ্ন মুছে দেবে; কার সাধ্য আছে যে, আল্লাহ্ তা’লার এরূপ নিষ্ঠাবান প্রেমিক ও তাঁর প্রতি এরূপ নিবেদিতদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে?! তাহরীকে জাদীদের নতুন বছরের ঘোষণা দেয়ার সময় হুযূর সিয়েরালিওন সম্পর্কে বলেছিলেন, তারা যদি চায় তবে নিজেদের চাঁদার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে, তারা যথেষ্ট পুরনো ও নিষ্ঠাবান জামাত, সদস্যরাও কুরবানী প্রদান করতে প্রস্তুত; কর্মকর্তাদের আলস্যের কারণে চাঁদা সংগ্রহের পরিমান সন্তোষজনক নয়। মুরব্বী সাহেব যখন হুযূরের এই বাণী জামাতের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন, তখন তাদের মধ্যে এক প্রকার স্পৃহা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং তারা কেবল ওয়াকফে জাদীদের চাঁদাই সম্পূর্ণ পরিশোধ করেন নি, বরং অন্যান্য চাঁদাও বাড়িয়ে পরিশোধ করেন। এমনকি স্কুলের ছাত্ররাও গতর খেটে পাওয়া পারিশ্রমিক চাঁদা হিসেবে প্রদান করেছে। এরা এমন মানুষ- যারা কখনও সামনা-সামনি খলীফাকে দেখেও নি, কিন্তু নিষ্ঠার সাথে খলীফার ডাকে সাড়া দিয়েছে; হৃদয়ে খিলাফতের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা লালন করে! এক ভদ্রমহিলা হুযূরের বাণী শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, কিন্তু তার বাড়িতে কিছুই না থাকায় তিনি অপারগ ছিলেন। হঠাৎ আশাতীতভাবে কোথাও থেকে কিছু অর্থ আসলে তিনি সন্তানদের খাবার-দাবারের কথা চিন্তা না করে সাকুল্য অর্থই চাঁদাস্বরূপ প্রদান করেন। তাকে যখন বাড়িতে খাবারের খরচের জন্য হলেও কিছু রেখে দিতে বলা হয়, তখন তিনি তা নাকচ করে দেন এবং প্রশান্তচিত্তে, সানন্দে তা আল্লাহ্‌র পথে প্রদান করেন। আশ্চর্যজনকভাবে এর একটু পরেই আরও কিছু অর্থ তার কাছে পৌঁছে যায়, অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’লাও তৎক্ষণাৎ তার চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে দেন। তানজানিয়ার জাঞ্জিবার জামাতের একজন সদস্য খায়ের রশিদী সাহেব বেকার থাকার কারণে চাঁদা দিতে পারছিলেন না, তবুও তিনি জামাতের কাছে অনুরোধ করেন যেন তার নাম চাঁদা পরিশোধকারীদের তালিকায় রাখা হয়, তিনি সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই চাঁদা পরিশোধ করে দিবেন। তার সদিচ্ছা ও সংকল্পের কারণে আল্লাহ্ তা’লাও কৃপা করেন এবং তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো একটি চাকরি পেয়ে যান এবং প্রথমেই নিজের ওয়াদা পূরণ করে দেন। আল্লাহ্‌র পথে আর্থিক কুরবানীর ক্ষেত্রে আহমদীরা যে কতটা উন্মুখ- তারও কিছু উদাহরণ হুযূর (আই.) উপস্থাপন করেন। অনেক আহমদী হুযূরের কাছে এজন্য দোয়ার চিঠি লিখে যেন তারা তাদের চাঁদার ওয়াদা পূরণ করতে পারে, এমনকি তাহাজ্জুদের নামাযেও তারা কেঁদে কেঁদে আল্লাহ্ তা’লার দরবারে এই নিবেদনই করে। ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা চাহিদার কথা নয়, বরং আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করার সামর্থ্য লাভের জন্য তারা দোয়া করে! জগতপূজারী মানুষ এদের ঘটনা শুনলে হাসবে যে, ‘এরা আবার কেমন পাগল!’ কিন্তু এটি-ই আহমদীয়াত, যা মানুষের মাঝে জগদ্বিমুখতা সৃষ্টি করে ঐশীপ্রেমে তাদের উদ্বেল বানিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ার এক নিষ্ঠাবান আহমদী রমযান মাসে তাহরীকে জাদীদ ও ওয়াক্ফে জাদীদ এর চাঁদা প্রদানের জন্য প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চারমাইল দূরের পাহাড়ে গিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। ভারতের কালিকাট জামাতে ওয়াক্ফে জাদীদের ইন্সপেক্টর চাঁদা সংগ্রহের জন্য গেলে দশ বছরের এক বালক তার মাটির ব্যাংক নিয়ে আসে; সেটি ভেঙে দেখা যায় তাতে বেশ মোটা অংক জমেছে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, সে নিজের কোন শখের গেম বা খেলনা কেনার জন্য এটি ব্যয় না করে চাঁদাস্বরূপ কেন দিয়ে দিচ্ছে? তখন সে যে উত্তর দেয় তার মর্মার্থ ছিল- আল্লাহ্ তা’লা, আল্লাহ্‌র রসূল (সা.) ও খলীফাগণ তো আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করার নির্দেশ দেন, তাই এটি ওয়াকফে জাদীদের চাঁদাস্বরূপ প্রদান করছি।
হুযূর (আই.) বলেন, এই হল আহমদী জামাতের শিশু-কিশোরদের তরবীয়ত! যে জামাতের শিশু-কিশোরদের এরূপ চিন্তাধারা ও তরবীয়ত হয়েছে- বিরুদ্ধবাদীরা সেই জামাতের কী আর ক্ষতি করবে? বিরুদ্ধবাদীরা যত খুশি চেষ্টা করুক, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা এই জামাত তাঁর ধর্মকে পৃথিবীতে বিস্তার করার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই জামাতকে সাহায্য করে যাচ্ছেন ও যাবেন। বিশ্বের সকল দেশ ও মহাদেশ থেকে প্রাপ্ত এরূপ আরও অজস্র ঘটনার মধ্য থেকে হুযূর (আই.) কতিপয় ঘটনা জামাতের সদস্যদের ঈমান, স্পৃহা ও উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য উপস্থাপন করেন এবং দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা সর্বদা জামাতের সদস্যদের সাথে এরূপ প্রেমময় ব্যবহার করুন এবং তারা সর্বদা নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে কুরবানী করতে থাকুক আর আল্লাহ্ তা’লাও স্বীয় কৃপার দৃশ্যাবলী প্রদর্শন করতে থাকুন। (আমীন)
এরপর হুযূর ওয়াক্‌ফে জাদীদের ৬৩তম বর্ষের সমাপ্তি ও ৬৪তম নববর্ষের ঘোষণা প্রদান করেন এবং গত বছরের বিভিন্ন পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় গত বছর জামাত এই খাতে মোট ১ কোটি ৫ লক্ষ ৩০ হাজার পাউন্ড চাঁদা প্রদান করেছে, যা পূর্বের বছরের তুলনায় ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার পাউন্ড বেশি। চাঁদা প্রদানের ক্ষেত্রে ১ম স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ২য় জার্মানি, ৩য় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান; সেদেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ও বিশ্ববাজারে তাদের মুদ্রামান কমে যাওয়া এই অবনমনের কারণ, সেদেশের আহমদীরা আর্থিক কুরবানীর সাথে প্রাণের কুরবানী ও মানসিক কুরবানীও অব্যাহতভাবে দিয়ে চলেছে। ৪র্থ স্থানে রয়েছে কানাডা, ৫ম আমেরিকা, ৬ষ্ঠ ভারত, ৭ম অস্ট্রেলিয়া, ৮ম মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ, ৯ম ইন্দোনেশিয়া ও ১০ম ঘানা।
মাথাপিছু বেশি চাঁদা প্রদানের দিক থেকে শীর্ষ তিনটি দেশ হল, আমেরিকা, সুইজারল্যণ্ড এবং যুক্তরাজ্য। ওয়াকফে জাদীদ খাতে মোট চাঁদাদাতার সংখ্যা চৌদ্দ লক্ষ বায়ান্ন হাজার। সম্মিলিতভাবে চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে শীর্ষ আফ্রিকান দশটি দেশ হল, ঘানা, মরিশাস, নাইজেরিয়া, বুর্কিনাফাঁসো, তানজানিয়া, সিয়েরালিওন, গাম্বিয়া, কেনিয়া, মালী ও বেনিন। যুক্তরাজ্যের দশটি বড় জা’মাত হল, প্রথম ফার্নহাম, দ্বিতীয় ইসলামাবাদ, তৃতীয় উস্টারপার্ক, চতুর্থ পাটনী, পঞ্চম বার্মিংহাম সাউথ, ষষ্ঠ জিলিংহাম, সপ্তম সাউথ চীম, অষ্টম মসজিদ ফযল, নবম বার্মিংহাম ওয়েস্ট এবং দশম নিউ মল্ডেন। জার্মানির শীর্ষ দশটি জামা’ত হল যথাক্রমে- রোয়েডার মার্ক, নয়েস, নিডা, মাহদীয়াবাদ, মাইনয কোবলেন্য, হ্যানাও, লাঙ্গন, ফ্লোরেনয্ হাইম, বেনয্ হাইম এবং পিনেবার্গ।
পাকিস্তানে শীর্ষ তিনটি জামা’ত হল যথাক্রমে- লাহোর, রাবওয়া এবং করাচী। প্রাপ্তবয়স্কদের চাঁদার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলার অবস্থানগত দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে- ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিণ্ডি, সারগোধা, গুজরাত, গুজরাঁওয়ালা, উমরকোট, হায়দ্রাবাদ, পেশোয়ার, মিরপুর খাস এবং ডেরাগাজী খান। মোট সংগ্রহের দিক থেকে (পাকিস্তানের) শীর্ষ দশটি জামা’ত হল যথাক্রমে- ডিফেন্স লাহোর, ইসলামাবাদ শহর, টাউনশিপ লাহোর, ক্লিফটন করাচী, দারুয্ যিকর লাহোর, গুলশানাবাদ করাচী, সামনাবাদ, আযীযাবাদ করাচী, রাওয়ালপিণ্ডি শহর এবং আল্লামা ইকবাল টাউন লাহোর।
চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে কানাডার এমারতগুলো হল যথাক্রমে- ভন, পিসভিলেজ, ভ্যানকুভার, ব্রাম্পটন ওয়েস্ট, এবং টরন্টো ওয়েস্ট। কানাডার শীর্ষ দশটি জামা’ত হল যথাক্রমে- ব্র্যাডফোর্ড, ডারহাম, মিল্টন ইস্ট, এডমিন্টন ওয়েস্ট, উইন্ডসর, মিল্টন ওয়েস্ট, রিজাইনা, অটোয়া ওয়েস্ট, এড্রি, এবং এবাটস্ফোর্ড। আর আমেরিকার শীর্ষ দশটি জামাত হল যথাক্রমে- মেরিল্যান্ড, লস এঞ্জেলেস, সিয়াটল, সিলিকন ভ্যালী, বোস্টন, অস্টিন, অওশকোশ, সীরাকোচ, রচেস্টার এবং মিনিসোটা।
হুযূর সকল আর্থিক কুরবানীকারীর ধন-সম্পদ ও জনবল বৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতায় উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য দোয়া করেন। এছাড়া তিনি পুনরায় পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পাকিস্তান ও আলজেরিয়ায় বসবাসকারী আহমদীদের নিরাপত্তার জন্য দোয়ার আহ্বান জানান; বিশ্বজুড়ে যেখানেই আল্লাহ্‌র পথে আহমদীরা কারারুদ্ধ রয়েছেন, তাদের দ্রুত মুক্তির জন্য দোয়া অনুরোধ করেন এবং সার্বিকভাবে সমগ্র পৃথিবীর জন্যও দোয়ার আহ্বান করেন যেন আল্লাহ্ তা’লা সমগ্র মানবজাতির প্রতি কৃপা করেন। (আমীন)