শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত আলী বিন আবু তালিব (রা.) | নববর্ষ ২০২১-এ বিশ্ববাসীর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০১-জানুয়ারি, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১লা জানুয়ারী, ২০২১ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবাতেও হুযূর হযরত আলী (রা.)’র স্মৃতিচারণ অব্যাহত রাখেন। খুতবার শেষদিকে হুযূর প্রথম দিন এবং প্রথম জুমুআ উপলক্ষ্যে দোয়ার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন এবং বিশ্ববাসীর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেন।
তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) হযরত আলী (রা.)’র শাহাদতের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে এ মর্মে প্রথমে তাঁর শাহাদতের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)’র একটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন। হযরত আলী (রা.) ও আমীর মুয়াবিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই খারেজীদের দল গোপনে শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে একই দিনে হত্যা করবে। তাদের লক্ষ্যস্থল ছিলেন হযরত আলী, আমীর মুয়াবিয়া ও আমর বিন আস (আ.)। খারেজীদের মধ্যে থেকে তিনজন অর্থাৎ আব্দুর রহমান বিন মুলজাম মুরাদী, বুরাক বিন আব্দুল্লাহ্ তামীমী ও আমর বিন বুকায়র তামীমি- এরা তিনজনই মক্কায় একত্রিত হয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, তারা সেই তিনজন বুযূর্গকে অবশ্যই হত্যা করবে, তাদেরকে হত্যা করতে গিয়ে প্রয়োজনে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেবে। ইবনে মুলজাম হযরত আলীর ওপর, বুরাক হযরত মুয়াবিয়ার ওপর এবং আমর বিন বুকায়র হযরত আমর বিন আস (রা.)’র ওপর আক্রমণ করার সংকল্প ব্যক্ত করে। তারা একই দিন একযোগে তাদের ওপর আক্রমণ করে বটে, কিন্তু সবার আক্রমণ সফল হয় নি। মুয়াবিয়ার ওপর বুরাক তরবারির আঘাত হানলেও তা লক্ষ্যভেদ করতে পারে নি, তিনি সামান্য আহত হন কেবল। বুরাককে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে তাকে হত্যা করা হয়। আমর বিন আস (রা.) সেদিন অসুস্থতার কারণে ফজরের নামাযে যান নি, যে ব্যক্তি নামায পড়াতে এসেছিলেন তাকেই আমর বিন বুকায়র ভুলবশতঃ হত্যা করে; এরপর সে-ও ধরা পড়ে এবং তাকেও হত্যা করা হয়। এরা দু’জন বিফল হলেও ইবনে মুলজাম হযরত আলী (রা.)-কে শহীদ করতে সমর্থ হয়; সে ফজরের নামাযের সময় তাঁর ওপর আক্রমণ করে এবং সেটি ছিল ২৭শে রমযান জুমুআর দিন। ইবনে মুলজাম কূফায় গিয়ে সমমনা খারেজীদের সাথে সাক্ষাৎ করলেও সে কাউকে তার দুরভিসন্ধি সম্পর্কে কিছু বলে নি। সে অত্যন্ত সংগোপনে দুই-একজনকে নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানায়, যাদের সাহায্য তার প্রয়োজন ছিল। ইবনে মুলজাম শাবীব বিন বাজারাহ্ আশজায়ী নামক এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে হযরত আলী (রা.)’র ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে ফজরের সময় যায়। আক্রান্ত হওয়ার দিন প্রত্যূষে ইমাম হাসান (রা.) যখন হযরত আলী (রা.)’র কাছে আসেন, তখন ভোররাতে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা তাকে শোনান। স্বপ্নে তিনি দেখেন, মহানবী (সা.) এসেছেন আর তিনি (রা.) তাঁর কাছে বলছেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল (সা.)! আমি আপনার উম্মতের পক্ষ থেকে বক্রতা এবং চরম বিরোধিতার সম্মুখিন!’ তিনি (সা.) আলীকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে তুমি আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া কর।’ তখন আলী (রা.) দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ্! এদের পরিবর্তে তুমি আমাকে তা দান কর, যা এদের চেয়ে উত্তম; আর এদেরকে আমার বদলে সেই ব্যক্তি দাও, যে আমার চেয়ে নিকৃষ্ট!’ ইতোমধ্যে মুয়াযযিন ইবনে নাব্বাহ এসে ডাকলে হযরত আলী (রা.) নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন; তার সামনে ইবনে নাব্বাহ ও পেছনে হযরত হাসান (রা.) ছিলেন। হযরত আলী (রা.) অভ্যাসানুসারে সবাইকে নামাযের জন্য ডাকতে ডাকতে এগোচ্ছিলেন, কয়েক পা যেতেই ওঁৎ পেতে থাকা ইবনে মুলজাম ও শাবীব তাঁর ওপর আক্রমণ করে। ইবনে মুলজাম উচ্চস্বরে তাঁকে বলে, ‘হে আলী! হুকুম চলবে আল্লাহ্‌র, তোমার নয়!’ এই বলে তারা দু’জনই তরবারি চালায়; শাবীবের তরবারি হযরত আলী (রা.)’র গায়ে না লাগলেও ইবনে মুলজামের তরবারি তাঁর নাক, কপাল হয়ে মাথায় আঘাত হানে। হযরত আলী (রা.) বলেছিলেন, ঘাতক যেন পালাতে না পারে। তবুও শাবীব পালিয়ে যায় এবং ইবনে মুলজাম ধরা পড়ে। হযরত আলী (রা.) আততায়ীর সাথে নম্র ব্যবহার করতে বলেন, তাকে উত্তম খাবার ও আরামদায়ক বিছানা দিতে বলেন। তিনি ওসীয়্যত করেন, যদি তিনি মারা যান তাহলে যেন ইবনে মুলজামকে কিসাস বা প্রতিশোধ স্বরূপ হত্যা করা হয়, কিন্তু এটি করতে গিয়ে তার পেটে বা লজ্জাস্থানে যেন আঘাত করা না হয় বা তার লাশের অবমাননা করা না হয়; আর যদি হযরত আলী (রা.) বেঁচে থাকেন তবে তিনি স্বয়ং তাকে হত্যা করবেন বা ক্ষমা করে দিবেন।
আমর (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি আহত হযরত আলী (রা.)-কে দেখতে গিয়ে বলেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, আমাকে আপনার ক্ষত দেখতে দিন!’ ক্ষত দেখে আমর মন্তব্য করেন যে, আঘাত তেমন গুরুতর নয়; কিন্তু হযরত আলী (রা.) যেহেতু নিজের সম্পর্কে কৃত পরম সত্যবাদী মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী জানতেন, তাই তিনি বলেন, ‘তোমাদের সাথে আমার বিচ্ছেদের সময় উপস্থিত!’ একথা শুনে তাঁর কন্যা উম্মে কুলসুম ডুকরে কেঁদে ওঠেন; হযরত আলী (রা.) তাকে বলেন, ‘শান্ত হও, আমি যা দেখছি তা যদি দেখতে পেতে, তাহলে কাঁদতে না!’ আমর জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি কী দেখছেন?’ হযরত আলী (রা.) বলেন, আমি দেখি “ফিরিশ্তা ও নবীদের প্রতিনিধি দল! আর মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন; তিনি বলছেন, ‘হে আলী, আনন্দিত হও! কেননা যেখানে তুমি যাচ্ছ, তা সেই স্থান থেকে উত্তম, যেখানে তুমি এখন আছ’।”
হযরত আলী (রা.) মৃত্যুশয্যায় নিজের পুত্র ইমাম হাসান (রা.)’র মাধ্যমে তাঁর ওসীয়্যতনামা লেখান। ওসীয়্যতে হযরত আলী (রা.) বারবার তাক্বওয়া অবলম্বনের বিষয়টি উম্মতে মুসলিমা ও নিজ পরিবারবর্গকে স্মরণ করান, শরীয়তের প্রতিটি নির্দেশ পালন এবং দরিদ্র, প্রতিবেশি ও অধীনস্তসহ সমগ্র মানবজাতির প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের কথা স্মরণ করান; তিনি এ-ও স্মরণ করান যে, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করিয়ে দেয়া নফল রোযা ও ইবাদত থেকেও বহুগুণে উত্তম। তিনি একাধিকবার পুণ্যকর্মের নির্দেশ প্রদান এবং মন্দকর্ম থেকে বাধা প্রদানের বিষয়টি স্মরণ করান এবং বলেন, যদি এটি না করা হয় তবে মন্দ লোকদের হাতে নেতৃত্ব চলে যাবে। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পারস্পরিক বিভেদ ও বিদ্বেষ পরিত্যাগ করতে বলেন; সবশেষে তিনি তাদেরকে আল্লাহ্ তা’লার হাতে অর্পণ করে তাদের জন্য দোয়া করেন। বর্ণিত আছে, ওসীয়্যত লেখানোর পর তিনি সবাইকে সালাম দেন এবং এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ ছাড়া আর কোন কথা বলেন নি। হযরত আলী (রা.) ৪০ হিজরীতে শাহাদতবরণ করেন; তার বয়স নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে, তবে অধিকাংশের মতে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। হযরত হাসান ও হুসাইন এবং আব্দুল্লাহ্ বিন জাফর (রা.) তাঁর মরদেহ গোসল করান ও কাফন পরান, এরপর ইমাম হাসান (রা.) তার জানাযা পড়ান এবং সেহেরির সময়ে গিয়ে তার দাফন সম্পন্ন হয়। হযরত আলী (রা.)’র দাফনের স্থানটি গোপন রাখা হয়েছিল, কারণ খারেজীদের পক্ষ থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করে লাশের অমর্যাদা হওয়ার আশংকা ছিল। একারণে হযরত আলী (রা.)’র সমাধি কোথায়, তা অজ্ঞাত। আজকাল কতিপয় শিয়া যে নাজাফে অবস্থিত মাশহাদকে হযরত আলী (রা.)’র সমাধি আখ্যা দেয়- তার কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। বরং সেটি হযরত মুগীরা বিন শো’বাহ্ (রা.)’র সমাধি। হযরত আলী (রা.) বিভিন্ন সময়ে মোট আটটি বিবাহ করেন এবং তার ১৪জন পুত্র ও ১৯জন কন্যা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি মাত্র সাতশ’ দিরহাম রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর আত্মা সেই রাতে কবয করা হয়েছিল যে রাতে হযরত ঈসা (আ.)-এর আত্মাকে উত্থীত করা হয়েছিল অর্থাৎ, ২৭শে রমযান। কোন কোন বর্ণনায় তাঁর শাহাদতের তারিখ বলা হয়েছে, ৪০ হিজরীর ১৭ই রমযান। আর তিনি চার বছর সাড়ে আট মাস খিলাফতের আসনে সমাসীন ছিলেন।
হযরত আলী (রা.)’র অনন্য মর্যাদা সম্পর্কে হাদীসে বিভিন্ন বিবরণ বিদ্যমান। মহানবী (সা.) স্বয়ং বলেন, ‘আনা মদীনাতুল ইলমে ওয়া আলীয়্যুন বাবুহা’ অর্থাৎ ‘আমি জ্ঞানের শহর, আর আলী হল তার দরজা।’ ইসলামের কঠিন সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁকেই মহানবী (সা.) ইসলামের পতাকা বহনের দায়িত্ব প্রদান করতেন এবং হযরত আলী (রা.)ও অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে ইসলামের পক্ষে লড়াই করতেন। এত্থেকে সাব্যস্ত হয়, মহানবী (সা.)-এর যুগে আলেমরা নির্ভিক ও বীর হতেন, ভীরু হতেন না। হযরত আলী (রা.) স্বয়ং বলতেন, এক যুগে ক্ষুধার তাড়নায় তাঁকে পেটে পাথর বেঁধে রাখতে হতো, আর পরবর্তী যুগে আল্লাহ্ তাঁকে এত প্রাচুর্য দান করেন যে, তিনি একাই চার হাজার বা চল্লিশ হাজার দিনার যাকাত প্রদান করতেন। হযরত আলী (রা.)’র আঙটিতে ‘আল্লাহুল মালিক’ শব্দদ্বয় খোদাই করা ছিল, অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’লাই সর্বাধিপতি। মহানবী (সা.) তাঁকে নিজের ভাই ও সাথী হিসেবে সম্বোধন করতেন। তিনি (সা.) একবার বলেছিলেন, ‘জান্নাত তিন ব্যক্তির সাথে মিলিত হওয়ার জন্য উন্মুখ, আর তারা হল- আলী, আম্মার ও সালমান।’ স্বয়ং মহানবী (সা.) হযরত আলীকে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে এক অসাধারণ গুণ দান করেছেন, তা হল জগদ্বিমুখতা। তিনি (সা.) এ-ও বলেছিলেন, যারা আলীর প্রতি ভালোবাসা রাখে, তারা জান্নাতে তার প্রতিবেশি হবে। মহানবী (সা.) এ-ও বলেছিলেন, জান্নাতের যেই ধাপে তিনি (সা.) স্বয়ং থাকবেন, সেই একই ধাপে হযরত ফাতেমা এবং আলীও থাকবেন। হযরত আলী ‘আশারায়ে মুবাশশারা’-রও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি যেসব কাজ আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টির খাতিরে করতেন এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ধর্মানুভূতি ও আকর্ষণ থেকে ব্যক্তিগত আবেগ ও ক্রোধকে পৃথক রাখতেন, সে বিষয়ে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) ও মুসলেহ্ মওউদ (রা.)-এর একাধিক উদ্ধৃতিও হুযূর (আই.) তুলে ধরেন। হুযূর বলেন, হযরত আলী (রা.)’র স্মৃতিচারণ পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকবে।
খুতবার শেষদিকে হুযূর নববর্ষের প্রথম দিন এবং প্রথম জুমুআ উপলক্ষ্যে দোয়ার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এই বছরটি যেন জামাতের জন্য, সমগ্র বিশ্বের জন্য এবং বিশ্ব-মানবতার জন্য কল্যাণকর হয়; আমরা নিজেরাও যেন পূর্বের চেয়ে অধিক আল্লাহ্ তা’লার প্রতি বিনত হই, তাঁর ইবাদতের দায়িত্ব পালনে সমর্থ হই এবং পৃথিবীবাসীও যেন নিজেদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য অনুধাবনে সক্ষম হয় ও একে অপরের অধিকার প্রদানে মনোযোগী হয়। হুযূর বলেন, বিগত প্রায় একটি বছর ধরে পৃথিবী ভয়ংকর মহামারীর শিকার, যার ভয়াবহতা কম-বেশি বিশ্বের সর্বত্র বিদ্যমান;, কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে পৃথিবীবাসীর এদিকে লক্ষ্যই নেই! হুযূর বলেন, মহামারী-পরবর্তী সম্ভাব্য সংকট নিরসনের জন্য বিশ্ব-নেতৃবৃন্দের কাছে তিনি যে পত্র দিয়েছিলেন, তার উত্তরেও নেতারা বাহ্যিকতাপূর্ণ কথাই বলেছেন এবং প্রকৃত সমাধানের দিকে কারও দৃষ্টি নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিই মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পুনরায় স্নায়ুযুদ্ধ এমনকি বিশ্বযুদ্ধও শুরু হতে পারে। পৃথিবীবাসী সেই পরিণতিতে পৌঁছানোর পূর্বেই তাদেরকে সতর্ক করার ও বুঝানোর দায়িত্ব আহমদীদের। আমাদের প্রকৃত আনন্দ, তা সে নববর্ষেরই হোক কিংবা ঈদেরই হোক, তখন অর্জিত হবে- যখন আমরা সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহ্ তা’লার একত্ববাদের পতাকা উড্ডীন করতে সমর্থ হব, যে পতাকা নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন। আমাদের প্রকৃত আনন্দ তখন হবে, যখন মানবজাতি মানবিকতা বুঝতে সমর্থ হবে, পারস্পরিক ঘৃণা যখন ভালোবাসায় বদলে যাবে।
হুযূর দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা দ্রুত আমাদের সেই আনন্দ লাভের ব্যবস্থাও করে দিন; মুসলিম উম্মাহকেও আল্লাহ্ সুবুদ্ধি দিন যেন তারা মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মান্যকারী হয়; পৃথিবীবাসীকেও সুবুদ্ধি দিন যেন তারা আল্লাহ্ ও তাঁর বান্দাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদানকারী হয়। আল্লাহ্ তা’লা প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক আহমদীকে স্বীয় নিরাপত্তা-বেষ্টনীর মাঝে রাখুন; নতুন বছরটি প্রত্যেক আহমদীর জন্য বরং প্রতিটি মানুষের জন্য ঐশী কৃপা ও কল্যাণরাজির বছর হয়ে আসুক। বিগত বছরের ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে নিয়ে যেন আমরা এবছর আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি ও পুরস্কাররাজি অর্জন করতে পারি এবং আমরা যেন প্রকৃত মুমিন হতে পারি- আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে এই দোয়া করারও তৌফিক দান করুন। হুযূর (আই.) পাকিস্তান ও আলজেরিয়াতে বসবাসকারী নির্যাতিত ও নিরীহ আহমদীদের মুক্তির জন্যও দোয়ার আবেদন জানান।