শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০১-মার্চ, ২০১৯

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১লা মার্চ, ২০১৯ইং লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ মসজিদে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় তিনি হযরত খওলী বিন আবী খওলী (রা.), হযরত রাফে বিন আল্ মুয়াল্লা (রা.), হযরত যুশ্-শিমালাইন উমায়ের বিন আবদে আমর (রা.), হযরত রাফে বিন ইয়াযিদ (রা.), হযরত যাকওয়ান বিন আবদে কায়েস (রা.), হযরত খাওয়াদ বিন জুবায়ের আনসারী (রা.), হযরত রবীআ বিন আকসাম (রা.), হযরত রিফাআ বিন আমর আল্ জাহনী (রা.), হযরত যায়েদ বিন ওয়াদিয়্যা (রা.), হযরত রবী রাফে আনসারী (রা.), হযরত যায়েদ বিন মুযায়েন (রা.), হযরত আইয়ায বিন যুহায়ের (রা.), হযরত রিফাআ বিন আমর (রা.), হযরত যিয়াদ বিন আমর (রা.), হযরত সালেম বিন উমায়ের বিন সাবেত (রা.), হযরত সুরাকা বিন কা’ব (রা.), হযরত সায়েব বিন মাযউন (রা.), হযরত আসেম বিন কায়েস (রা.), হযরত তুফায়ল বিন মালেক খানসা (রা.), হযরত তুফায়ল বিন নু’মান (রা.), হযরত যাহাক বিন আবদে আমর (রা.), হযরত যাহাক বিন হারসা (রা.), হযরত খাল্লাদ বিন সুহাইদ (রা.), হযরত অওস বিন খওলী (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।

হযরত খওলী বিন আবী খওলী (রা.); তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধেই মহানবী (সা.)-এর সহযোদ্ধা ছিলেন। তার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি তার পুত্রের সাথে বদরের যুদ্ধে অংশ নেন, ইবনে ইসহাকের মতে তিনি নিজ ভাই মালেক বিন আবি খওলীর সাথে বদরের যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মৃত্যুবরণ করেন।

দ্বিতীয় সাহাবী হলেন, হযরত রাফে বিন আল্ মুয়াল্লা (রা.), তিনি আনসারদের খাযরাজ গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শহীদ হন, ইকরামা বিন আবু জাহল তাকে শহীদ করে।

পরবর্তী সাহাবী হযরত যুশ্-শিমালাইন উমায়ের বিন আবদে আমর (রা.); যুশ্‌-শিমালাইন আসলে তার উপাধি ছিল, কারণ তিনি বামহাত দিয়েই অধিকাংশ কাজ করতেন। আরেকটি বর্ণনানুসারে তিনি দু’হাত দিয়েই কাজ করতে পারতেন, তাই তাকে যুল্ ইয়াদাইন নামেও ডাকা হতো। মহানবী (সা.) ইয়াযিদ বিন হারেসের সাথে তার ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন, তারা উভয়ই বদরের যুদ্ধে শহীদ হন; শাহাদতের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর।

পরবর্তী সাহাবী হলেন, হযরত রাফে বিন ইয়াযিদ (রা.), তিনি আনসারদের অওস গোত্রের সদস্য ছিলেন। তিনি হযরত সা’দ বিন মু’আযের ভাগ্নে ছিলেন। তার দু’জন পুত্র ছিল- উসায়েদ ও আব্দুর রহমান। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন।

আরেকজন সাহাবী হলেন, হযরত যাকওয়ান বিন আবদে কায়েস (রা.), তিনি খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু যুরাইকের লোক ছিলেন। তিনি আকাবার প্রথম ও দ্বিতীয়- উভয় বয়আতেই অংশ নেন। আর তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, তিনি আনসারী মুহাজির ছিলেন; অর্থাৎ বয়আতের পর মদীনা থেকে মহানবী (সা.)-এর কাছে মক্কায় হিজরত করেন, পরে আবার মদীনায় হিজরত করেন। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন ও উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।

এরপর হুযূর (আই.) হযরত খাওয়াদ বিন জুবায়ের আনসারী (রা.)-এর স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বনু সা’লাবার সদস্য ছিলেন; তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জুবায়েরের ভাই ছিলেন, যাকে মহানবী (সা.) উহুদের যুদ্ধে গিরিপথের পাহারার জন্য নিযুক্ত দলের নেতা বানিয়েছিলেন। ৪০ হিজরিতে ৭৪ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর সাথে বদরের যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হন, পথিমধ্যে এক পাথরের সাথে হোঁচট খাওয়ায় আহত হন ফলে মহানবী (সা.) তাকে মদীনায় ফেরত পাঠান; কিন্তু মহানবী (সা.) তাকে যুদ্ধলদ্ধ সম্পদের ভাগ দিয়েছেন আর তাকে বদরী সাহাবীদের মধ্যেও গণ্য করেছেন। তিনি অন্যান্য যুদ্ধেও মহানবী (সা.)-এর সহযোদ্ধা ছিলেন। হযরত খাওয়াদ বর্ণনা করেন, একবার তিনি অসুস্থ হলে মহানবী (সা.) তাকে দেখতে যান। পরবর্তীতে যখন তিনি সুস্থ হন, তখন মহানবী (সা.) তাকে বলেন, হে খাওয়াদ, তুমি পুরো সুস্থ হয়ে গিয়েছ; তাই আল্লাহ্‌র সাথে যে ওয়াদা করেছ তা পূর্ণ কর। খাওয়াদ বলেন, আমি তো আল্লাহ্‌র সাথে কোন ওয়াদা করি নি! মহানবী (সা.) বলেন, এমন কোন রোগী নেই যে তার অসুস্থতার সময় আল্লাহ্র কাছে কোন মানত বা অঙ্গীকার করে না যে সে সুস্থ হলে এটা করবে বা ওটা করবে। তাই আল্লাহ্‌র সাথে যে অঙ্গীকার করেছ, তা পূর্ণ কর। হুযূর (আই.) বলেন, এটি এমন এক বিষয়, যা আমাদের সবার মনে রাখা প্রয়োজন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত রবীআ বিন আকসাম (রা.)। তিনি মুহাজির সাহাবী ছিলেন। বদরে অংশগ্রহণের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর, এছাড়া উহুদ, খন্দক, খায়বার প্রভৃতি যুদ্ধেও অংশ নেন; খায়বারের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। হারেস নামক এক ইহুদী তাকে শহীদ করে, সে সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর।

পরবর্তী সাহাবী হযরত রিফাআ বিন আমর আল্ জাহনী (রা.), তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি আনসারদের বনু নাজ্জার গোত্রের মিত্র ছিলেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত যায়েদ বিন ওয়াদিয়্যা (রা.), তিনি আনসারদের খাযরাজ গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি আকাবার বয়আত, বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন ও উহুদের যুদ্ধে শাহাদতের মর্যাদা লাভ করেন।

পরের সাহাবী হযরত রবী বিন রাফে আনসারী (রা.); তিনি বনু আজলান গোত্রের লোক ছিলেন, বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত যায়েদ বিন মুযায়েন (রা.), তার পিতার নাম মুযায়েন বিন কায়েস। তিনি খাযরাজ গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। হিজরতের পর মহানবী (সা.) হযরত মিসতাহ বিন উসাসার সাথে তার ভ্রাতৃসম্পর্ক স্থাপন করেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত আইয়ায বিন যুহায়ের (রা.)। তিনি ফাহর গোত্রের লোক ছিলেন, আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় বারের হিজরতে অংশ নেন, পরবর্তীতে মদীনায় হিজরত করেন। তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নেন। হযরত উসমান (রা.)’র খিলাফতকালে ৩০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত রিফাআ বিন আমর (রা.)। তিনি খাযরাজের বনু অওফ শাখার লোক ছিলেন, আকাবার দ্বিতীয় বয়আতের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন ও উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত যিয়াদ বিন আমর (রা.), তাকে ইবনে বিশর নামেও ডাকা হতো। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ নেন। তার ভাই হযরত যামরাও বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত সালেম বিন উমায়ের বিন সাবেত (রা.), আনসারদের বনু আমর বিন অওফের লোক ছিলেন। তিনি আকাবার প্রথম বয়আতে অংশ নেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নিয়েছেন। তাবূকের যুদ্ধের সময় যেসব দরিদ্র সাহাবী নিজের বাহন না থাকায় মহানবী (সা.)-এর কাছে বাহন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন যেন তারা যুদ্ধে যেতে পারেন, আর মহানবী (সা.) সে ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে ফেরত যান, হযরত সালেমও তাদের একজন ছিলেন। স্বয়ং আল্লাহ্ তা’লা কুরআন শরীফে তাদের নিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে অন্যান্য অলস ও মুনাফিকদের থেকে তাদের পৃথক করেছেন। সেই দরিদ্র সাহাবীদের নেতা ছিলেন হযরত আবু মূসা (রা.); তিনি বলেন, আমরা মহানবী (সা.)-এর কাছে উট বা ঘোড়া চাইনি, আমাদের আসলে পায়ে দেওয়ার মত জুতাও ছিল না, তাই আমরা মহানবী (সা.)-এর কাছে একজোড়া করে জুতা চেয়েছিলাম, তা পেলে আমরা দৌড়ে দৌড়ে আমাদের ভাইদের সাথে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতাম। চরম দারিদ্রতা সত্ত্বেও এই ছিল তাদের ধর্মসেবার বাসনা ও স্পৃহা!

পরবর্তী সাহাবী হযরত সুরাকা বিন কা’ব (রা.)। তিনি বনু নাজ্জার গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নিয়েছেন। তিনি আমীর মুয়াবিয়ার যুগে মৃত্যুবরণ করেন, তবে অপর একটি সূত্রমতে তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত সায়েব বিন মাযউন (রা.), তিনি হযরত উসমান বিন মাযউনের ভাই ছিলেন। তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী প্রথম দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মহানবী (সা.)-এর নবুওয়তের পূর্বে তাঁর (সা.) সাথে ব্যবসায় অংশ নেয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন হযরত সায়েব (রা.), আর তিনি মহানবী (সা.)-এর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উন্নত নৈতিকতার সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত আসেম বিন কায়েস (রা.)। তিনি আনসারদের বনু সা’লাবা বিন আমরের লোক ছিলেন, বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত তুফায়ল বিন মালেক বিন খানসা (রা.), খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু উবায়েদ বিন আদীর লোক ছিলেন। তিনি আকাবার প্রথম বয়আত, বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত তুফায়ল বিন নু’মান (রা.), তার মা খানসা বিনতে রিয়াব হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্র ফুফু ছিলেন। তিনি আনসারদের খাযরাজ গোত্রের সদস্য ছিলেন। তিনি আকাবার বয়আত, বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে অংশ নেন। উহুদের যুদ্ধে তার দেহে ১৩টি আঘাত লাগে। খন্দকের যুদ্ধে ওয়াহশী বিন হারব, যে হযরত হামযারও হন্তারক ছিল, তাকে শহীদ করে। পরবর্তীতে ওয়াহশী ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করে।

পরবর্তী সাহাবী হযরত যাহাক বিন আবদে আমর (রা.), তিনি বনু দীনার বিন নাজ্জার গোত্রের লোক ছিলেন। তার পিতার নাম আবদে আমর, মাতার নাম সুমাইরা বিনতে কায়েস। তিনি ও তার ভাই হযরত নু’মান বিন আবদে আমর (রা.) একসাথে বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। হযরত নু’মান উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। তার আরেক ভাই উতবা বিন আবদে আমর (রা.) বি’রে মউনার ঘটনায় শহীদ হন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত যাহাক বিন হারসা (রা.), তিনি খাযরাজ গোত্রের লোক ছিলেন; পিতার নাম ছিল হারসা ও মাতার নাম হিন্দ বিনতে মালেক। হযরত যাহাক আকাবার বয়আত ও বদরের যুদ্ধে অংশ নেন।

পরবর্তী সাহাবী হযরত খাল্লাদ বিন সুহাইদ (রা.), আনসারদের খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু হারেসের লোক ছিলেন। তার এক পুত্র সায়েব মহানবী (সা.)-এর সেবক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন, হযরত উমর (রা.) সেই পুত্রকে ইয়েমেনের আমীরও নিযুক্ত করেছিলেন। হযরত খাল্লাদ আকাবার বয়আতসহ বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে অংশ নেন। বনু কুরায়যার যুদ্ধে তিনি দুর্গের দেয়ালের পাশে আরও দু’জন মুসলমানের সাথে দাঁড়ানো ছিলেন, তখন এক ইহুদী নারী ওপর থেকে পাথর ফেলে তাকে শহীদ করে দেয়। মহানবী (সা.) বলেন, খাল্লাদ দু’জন শহীদের সমান পুণ্য লাভ করবে, এর কারণ হল সে আহলে কিতাবের হাতে শহীদ হয়েছে।

সবশেষে যে সাহাবীর স্মৃতিচারণ করা হয়েছে তিনি হলেন, হযরত অওস বিন খওলী (রা.); তার মাতা জামিলা বিনতে উবাই ছিলেন মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ্ বিন উবাইয়ের বোন। হযরত অওস বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নিয়েছেন। তিনি কামেল বলে গণ্য হতেন, অজ্ঞতার যুগে ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে কামেল তাদেরকে বলা হতো যারা আরবী লিখতে জানত, আর সেই সাথে দক্ষ সাঁতারু ও দক্ষ তীরন্দাজ হতো। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানদের পানির তীব্র সংকট ছিল; কাফিররা সবগুলো কূপ নিজেদের দখলে রেখেছিল আর মুসলমানদের জন্য কেবল একটি কূপ ছিল, তা-ও আবার শুকনো ছিল। মহানবী (সা.)-এর সমীপে একথা জানানো হলে তিনি একজন সাহাবীকে ডেকে নিজের তূণ থেকে একটি তীর বের দেন এবং কূপ থেকে এক বালতি পানি আনতে বলেন, সেই পানি দিয়ে তিনি (সা.) ওযু করেন ও কুলি করে পানি বালতিতে ফেলেন। এরপর তিনি সেই সাহাবীকে গিয়ে সেই বালতির পানি কূপে ঢেলে দিতে বলেন ও তীরটি সেই পানিতে গেঁথে দিতে বলেন। সেই সাহাবী বলেন, এমনটি করার পর তিনি কোনোমতে কূপ থেকে উঠে আসেন, কারণ সাথে সাথেই কূপ থেকে হুশ-হুশ করে পানি উঠতে শুরু করে। কূপ উপচে পানি বেরিয়ে আসে এবং সেই চরম গরমের দিনে পিপাসার্ত সব সাহাবীই পানি দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করেন। সেখানে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ্ বিন উবাইও ছিল, যে হযরত অওসের মামা ছিল। অওস তাকে তিরস্কার করে বলেন, এত বড় নিদর্শন দেখার পর তো আপনার অবশ্যই ঈমান আনা উচিত। আব্দুল্লাহ্ জবাব দেয়, এমন ঘটনা আমি অনেক দেখেছি! পরবর্তীতে যখন মহানবী (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন, এমন ঘটনা তুমি আর কবে দেখেছ? তখন আব্দুল্লাহ্ বেমালুম অস্বীকার করে বসে যে, সে এমন কোন কথা বলেনি। হযরত অওস সেই সৌভাগ্যবান সাহাবী, যিনি মহানবী (সা.)-এর পবিত্র মৃতদেহের গোসল ও দাফনের কাজে আনসারদের পক্ষ থেকে অংশ নেন, তিনি রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর লাশ সমাহিত করার জন্য কবরেও নেমেছিলেন। হযরত অওস বর্ণনা করেন, একবার মহানবী (সা.) তাকে বলেন, ‘হে অওস! যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে দীনতা ও বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন; আর যে অহংকার করে, তাকে আল্লাহ্ লাঞ্ছিত করেন।’

হুযূর (আই.) বলেন, এটি এমন এক শিক্ষা যা আমাদের সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত। হযরত উসমান (রা.)’র খিলাফতকালে মদীনায় হযরত অওস মৃত্যুবরণ করেন।

হুযূর (আই.) দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা এসব মহান সাহাবীর পদমর্যাদা ক্রমাগত উন্নত করতে থাকুন। (আমীন)