শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৩-নভেম্বর, ২০১৮

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ২৩শে নভেম্বর, ২০১৮ইং লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ মসজিদে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত সীনান বিন আবি সীনান (রা.), হযরত মেহজা’ (রা.), হযরত আমের বিন মুখাল্লাদ (রা.), হযরত হাতেব বিন আমর বিন আবদে শামস্ (রা.), হযরত আবু খুযায়মা বিন অওস (রা.), হযরত তামীম মওলা খেরাশ (রা.), হযরত মুনযের বিন কুদামা (রা.), হযরত হারেস বিন হাতেব (রা.), হযরত সা’লেবাহ্ বিন যায়েদ (রা.), হযরত উকবাহ্ বিন ওয়াহাব (রা.), হযরত হাবীব বিন আসওয়াদ (রা.), হযরত উসায়মাহ্ আনসারী (রা.), হযরত রা’ফে বিন হারেস (রা.), হযরত রুখায়লাহ্ বিন সা’লাবাহ্ আনসারী (রা.), হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ বিন রিয়াব (রা.), হযরত সাবেত বিন আকরাম বিন সা’লাবাহ্ (রা.), হযরত সালমাহ্ বিন সালামাহ্ (রা.), হযরত জাবর বিন আতীক (রা.), হযরত সাবেত বিন সা’লাবা (রা.), হযরত সুহায়েল বিন ওয়াহাব (রা.), হযরত তোফায়েল বিন হারেস (রা.), হযরত আবু সালীত উসাইরাহ্ বিন আমর (রা.), হযরত সা’লাবাহ্ বিন হাতেব আনসারী (রা.), হযরত সা’দ বিন ঊসমান বিন খালদা আনসারী (রা.), হযরত আ’মের বিন উমাইয়াহ্ (রা.), হযরত আমর বিন আবী সারাহ্, হযরত আসমাহ্ বিন হুসায়েন (রা.), হযরত খলীফা বিন আদী (রা.), হযরত মা’আয় বিন মায়েস (রা.), হযরত সা’দ বিন যায়েদ আল্ আশহালী (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।

হুযূর (আই.) তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর বলেন, আজ থেকে আমি পুনরায় মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের স্মৃতিচারণ শুরু করব। প্রথমে যে সাহাবীর স্মৃতিচারণ করব তার নাম, হযরত সিনান বিন আবি সিনান (রা.), তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সহযোদ্ধা ছিলেন। ঐতিহাসিক ওয়াকদির মতে তিনি বয়আতে রিযওয়ানে অংশ নেওয়া প্রথম সাহাবী। তিনি যখন বয়আত নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন তখন মহানবী (সা.) প্রশ্ন করেন, কোন কথার ভিত্তিতে তুমি বয়আত নিচ্ছ? তখন হযরত সিনান (রা.) বলেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার মনে যে কথা আছে তার ওপর ভিত্তি করে আমি বয়আত করতে চাই”। মহানবী (সা.) বলেন, “আমার মনে কী আছে?” মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সাহচর্যের গভীর প্রভাব ছিলো সাহাবীদের ওপর। তাই হযরত সিনান (রা.) বলেন, “হয় বিজয়ী হওয়া নতুবা শহীদ হওয়া”। তখন অন্যরাও বলতে থাকেন, আমরাও এ কথার ভিত্তিতে বয়আত করছি। তুলায়হার মিথ্যা নবুয়তের দাবীর বিষয়ে তিনিই প্রথম মহানবী (সা.)-কে চিঠি লিখে অবগত করেছিলেন।

দ্বিতীয় সাহাবী হলেন, ইয়েমেন নিবাসী হযরত মেহজা (রা.), তাঁর পিতার নাম ছিল সালেহ, তিনি হযরত উমর (রা.)-এর মুক্তকৃত দাস ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি-ই ছিলেন প্রথম শহীদ। বন্দী অবস্থায় তাকে হযরত উমর (রা.)-এর নিয়ে আসা হলে তিনি অনুগ্রহবশে তাকে মুক্ত করে দেন। তিনি মুহাজীরদের মধ্যে শীর্ষ সাঁড়িতে ছিলেন। বদরের প্রান্তরে আমর বিন হাযরমীর তীরের আঘাতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হলেন, হযরত আমের বিন মুখাল্লাদ (রা.), তিনি খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু মালেক বিন নাজ্জারের সদস্য ছিলেন। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন।

আরেকজন সাহাবী হলেন, হযরত হাতেব বিন আমর বিন আবদে কায়স আবদে শামস (রা.)। হযরত সুহায়ল বিন আমর, সালিদ ও যিকরান তার ভাই ছিলেন। দারে আরকামের যুগের পূর্বেই হযরত আবু বকর (রা.)-এর তবলীগে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দু’বার আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন, এক বর্ণনানুসারে প্রথম দফার হিজরতে তিনিই সর্বপ্রথম আবিসিনিয়ায় গমন করেন। বদরের যুদ্ধে তিনি তার ভাই সালিদ বিন আমরের সাথে ছিলেন। মহানবী (সা.)-এর সাথে হযরত সাওদা বিনতে যামআর বিবাহে তিনি ওলী ছিলেন।

আরেকজন সাহাবী ছিলেন হযরত আবু হুযায়মা বিন অওস (রা.), হযরত মাসউদ বিন অওসের ভাই। তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধেই মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নিয়েছিলেন। হযরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত তামীম (রা.), তিনি হযরত খিরাশের মুক্তকৃত দাস ছিলেন। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত মুনযের বিন কুদামা (রা.)। তিনি বনু গানাম গোত্রভুক্ত ছিলেন, বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত হারেস বিন হাতেব (রা.), তাঁর মায়ের নাম ছিল, আমামাহ্ বিনতে সামেত। আনসারদের অওস গোত্রের সদস্য ছিলেন। বদরের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মহানবী (সা.) রওয়াহা নামক স্থানে পৌঁছে তাকে ও হযরত আবু লুবাবাকে যথাক্রমে বনু আমের গোত্রের আমীর ও মদীনার শাসক নিযুক্ত করে ফেরত পাঠান। তাদের যুদ্ধে যাবার সংকল্প যেহেতু দৃঢ় ছিল তাই মহানবী (সা.) তাদের উভয়কেই বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বলে গণ্য করেছেন। হযরত হারেস খায়বারের যুদ্ধে শহীদ হন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সালাবাহ্ বিন যায়েদ (রা.), খাযরাজ গোত্রভুক্ত ছিলেন। বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হযরত সাবেত বিন আলজিয-এর পিতা ছিলেন। আলজিয হযরত সালাবাহ্’র উপাধি ছিল, তার দৃঢ়চিত্ততা, দৃঢ় সংকল্প আর সৎসাহসের জন্য তাকে এই উপাধি দেয়া হয়েছিল।

আরেকজন সাহাবী হযরত উকবা বিন ওয়াহাব (রা.), বদর-উহুদসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথী ছিলেন।

আরেকজন সাহাবী হলেন, হযরত হাবীব বিন আসওয়াদ বিন সা’দ (রা.), আনসারদের গোত্র বনু হারামের মুক্তকৃত দাস ছিলেন। তিনি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন। আরেকজন সাহাবী হযরত হুসায়মা আনসারী (রা.)। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; আমীর মুয়াবিয়ার যুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত রা’ফে বিন হারেস (রা.), আনসারদের বনু নাজ্জার গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি বদর, উহুদ ও খন্দকসহ সকল যুদ্ধে অংশ নেন, হযরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত রুখায়লা বিন সালাবাহ্ (রা.), তার পিতা ছিলেন সালাবাহ্ বিন খালেদ। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। সিফফিনের যুদ্ধে তিনি হযরত আলী (রা.)-এর সাথে ছিলেন। আরেকজন সাহাবী হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ বিন রিয়াব (রা.)। তিনি ছিলেন সেই ছয়জন আনসারের একজন যারা সর্বপ্রথম মক্কায় গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। আকাবার প্রথম বয়আতের সময় তিনিই প্রথম বয়আত করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সাবেত বিন আকরাম বিন সালাবাহ্ (রা.), বদরসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সহযোদ্ধা ছিলেন। মূতার যুদ্ধে হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন রওয়াহার মৃত্যুর পর হযরত সাবেত বিন আকরাম মুসলমানদের পতাকা হাতে তুলে নেন এবং বলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা নিজেদের মধ্য হতে কাউকে নেতা মনোনীত করে নাও। তখন সবাই তাকে নেতার আসনে বসাতে চাইলেও তিনি অস্বীকৃতি জানান, এরপর সবাই হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে নেতা নিযুক্ত করেন। সীরাত ইবনে হিশামে বর্ণিত হয়েছে, মূতার যুদ্ধে শত্রুদের সংখ্যা, যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম মুসলমানদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এটি দেখে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন সাবেত বিন আকরাম তাকে স্মরণ করান, বদরের যুদ্ধেও কাফিরদের সংখ্যা এবং যুদ্ধাস্ত্র মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, তবুও আল্লাহ্ মুসলমানদের জয়ী করেছেন; এবারও তা-ই হবে। হযরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মুরতাদদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেন। পথিমধ্যে তুলায়হার ভাই সালামার হাতে সাবেত বিন আকরাম (রা.) শাহাদত বরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সালেমা বিন সালামা (রা.), আনসারদের বনু আশহালের লোক ছিলেন। মদীনায় মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাবের সংবাদ পৌঁছলে অনতিবিলম্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন ছিলেন তিনি। বদরসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সহযোদ্ধা হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। হযরত উমর (রা.) তাকে ইয়ামামার শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। হযরত সালেমার বাল্যকালে একবার এক ইহুদী আলেম এসে তার বংশের লোকদেরকে পরকাল, পুনরুত্থান, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে বলতে থাকে। এক পর্যায়ে সেই আলেম মক্কা ও ইয়েমেনের দিকে ইশারা করে বলে, এখান থেকে একজন নবী আবির্ভূত হবেন। অতঃপর যখন তারা মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাবের সংবাদ পান তখন তাঁকে গ্রহণ করেন, কিন্তু সেই ইহুদী আলেম তখনও জীবিত থাকা সত্ত্বেও হঠকারিতা বশে তাঁকে গ্রহণ করে নি। হযরত সালেমা ৩৪ হিজরিতে, মতান্তরে ৪৫ হিজরিতে ৭৪ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত জাবর বিন আতিক (রা.), বদরসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। ৬১ হিজরিতে ইয়াযিদের যুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সাবেত বিন সালাবা (রা.), তিনি ছিলেন সালাবাহ্ বিন যায়েদের পুত্র। তিনি আকাবার দ্বিতীয় বয়আতের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বদর, উহুদ, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নিয়েছিলেন। তায়েফের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। বদরের যুদ্ধে তিনি তাঁর পিতার সাথে অংশ নিয়েছিলেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সুহায়ল বিন ওয়াহাব (রা.), কুরাইশের বনু ফাহর গোত্রের লোক ছিলেন। প্রাথমিক যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন, অতঃপর আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। পরে মক্কায় ফিরে আসেন ও মদীনায় হিজরত করেন। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধেই তিনি অংশ নিয়েছিলেন। তার এক ভাই সাফফান বদরের যুদ্ধে তার সাথে অংশ নেন, অপর ভাই সাহল বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের পক্ষে ছিলেন ও মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। সাহল ইসলাম গ্রহণ করলেও মক্কায় গিয়ে তা প্রকাশ করার সাহস পান নি, তাই কাফিররা তাকে নিজেদের লোক ভেবে যুদ্ধের জন্য নিয়ে আসে। মহানবী (সা.) পুরো ঘটনা অবহিত তাকে মুক্ত করে দেন। ৯ম হিজরিতে তাবূকের যুদ্ধ থেকে ফেরার পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন এবং মহানবী (সা.) মসজিদে নববীতে তার জানাযা পড়ান।

আরেকজন সাহাবী হযরত তুফায়েল বিন হারেস (রা.)। তিনি বদর, উহুদসহ সকল যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে অংশ নেন। ৩২ হিজরিতে ৭০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আরেকজন সাহাবী ছিলেন খাযরাজ গোত্রভুক্ত হযরত আবু সালিদ উসায়রা বিন আমর (রা.), তিনি বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সাথে ছিলেন। তার পিতা আবু খারজা আমর বিন কায়সও সাহাবী ছিলেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত সালাবাহ্ বিন হাতেব আনসারী (রা.), বদরসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তিনি মহানবী (সা.)-কে বলেন, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন যাতে আল্লাহ্ আমাকে সম্পদশালী বানিয়ে দেন, কিন্তু মহানবী (সা.) স্বল্পে তুষ্ট থাকার প্রতি তার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তবুও তিনি বারংবার মহানবী (সা.)-এর কাছে এই আবেদন নিয়ে আসতে থাকলে তিনি (সা.) দোয়া তার জন্য করেন যার ফলে তার গুটিকয়েক ছাগল সংখ্যায় বেড়ে বিশাল ছাগপালে পরিণত হয়। কিন্তু এর পরিণতি শুভ হয় নি, তিনি ব্যস্ততার কারণে ধীরে ধীরে মসজিদে আসা কমিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে যাকাত দিতেও অস্বীকৃতি জানান। ফলে মহানবী (সা.) তার কাছ থেকে পরে আর কোনদিন যাকাত নেন নি, এমনকি হযরত আবু বকর, হযরত উমর এবং হযরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে তারাও তার কাছ থেকে যাকাত নেন নি। হযরত উসমান (রা.)-এর যুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এ প্রসঙ্গে হুযূর (আই.) বলেন, একজন বদরী সাহাবীর কাছ থেকে এমন আচরণ অনাকাক্সিক্ষত, আর বাস্তবে এমনটি হয়ও নি। ইবনে হাজর আসকালানী এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন, সালাবাহ্ নামের যে সাহাবী বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। আসকালানী প্রমাণ করেন যে, যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারী ব্যক্তির নাম ছিল, সালাবা বিন আবি হাতেব, অথচ বদরী সাহাবীর ব্যাপারে সবাই একমত যে, তার নাম ছিল সালাবা বিন হাতেব (রা.)। কাজেই দু’জন মোটেই এক ব্যক্তি ছিলেন না। একজন বদরী সাহাবী কুরআনী শিক্ষা পরিপন্থী এরূপ আচরণ করবেন তা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

আরেকজন সাহাবী হযরত সা’দ বিন উসমান বিন খালদা আনসারী (রা.), তিনি বদরসহ অন্যান্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

আরেকজন সাহাবী হযরত আমের বিন উমাইয়া (রা.), তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। আরেকজন সাহাবী ছিলেন আমর বিন আবি সারাহ (রা.), হযরত উসমান (রা.)-এর যুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর হুযূর (আই.) আরও যেসব বদরী সাহাবীর স্মৃতিচারণ করেন তারা হলেন, হযরত ইসমা বিন হুসায়ম (রা.), হযরত খলীফা বিন আদি (রা.), হযরত হুলায়ফা বিন আদি বিন আমর বিন মালেক (রা.), হযরত মুআয বিন মাআস (রা.) ও হযরত সা’দ বিন যায়েদ আল্ আশহালী (রা.)।

খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) দোয়া করে বলেন, আল্লাহ্ তা’লা এসব সাহাবীর পদমর্যাদা উত্তরোত্তর উন্নত করতে থাকুন এবং আমাদেরকেও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে বেশি বেশি সৎকাজ করার আর ত্যাগ স্বীকারের এবং নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে পবিত্র জীবন যাপনের তৌফিক দান করুন, আমীন।