মসজিদে আফিয়্যাত, ফিলডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র-এর শুভ উদ্ভোধন

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১৯-অক্টোবর, ২০১৮

মসজিদে আফিয়্যাত, ফিলডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১৯শে অক্টোবর, ২০১৮ যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে নবনির্মিত বায়তুল আফিয়াত মসজিদ থেকে মসজিদের শুভ উদ্ভোধন করে খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর (আই.) তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর বলেন, إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآَتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ (সূরা আত্ তাওবা: ১৮) অর্থাৎ, কেবল সে ব্যক্তিই আল্লাহ্‌র মসজিদসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে – যে আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ছাড়া কাউকে ভয় করে না, অতএব অচিরেই এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এরপর হুযূর (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে এই শহরে প্রথম মসজিদ নির্মাণের তৌফিক দিয়েছেন এবং আজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্। জাগতিক লোকেরা তাদের ভবন ইত্যাদি উদ্বোধনের সময় বিভিন্ন আয়োজন এবং আনন্দ উদযাপন করে থাকে কিন্তু আমরা মসজিদ উদ্বোধনের সময় সর্বদা খোদার সন্তুষ্টি অর্জনকে দৃষ্টিতে রাখি, কেননা মসজিদ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র ঘর। আর আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর নির্দেশাবলী পালন করা আবশ্যক। তাঁর নির্দেশাবলীর মাঝে অন্যতম নির্দেশ হল, যথাযথভাবে খোদার ইবাদত করা। মসজিদ কোনভাবেই লোক দেখানোর জন্য নয় বরং নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা আর খোদার সন্তুষ্টির জন্য নির্মাণ আবশ্যক। আর মসজিদ নির্মাণের জন্য যে আর্থিক কুরবানী করা হয় তাও যেন খোদার সন্তুষ্টির জন্য হয়, কোনভাবেই লোক দেখানো যেন এর লক্ষ বা উদ্দেশ্য না হয়।

হুযূর (আই.) বলেন, খুতবার শুরুতে আমি যে আয়াত পাঠ করেছি তা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মসজিদ নির্মাণকারীদের অন্যতম দায়িত্ব হল, মসজিদ আবাদ রাখার ক্ষেত্রে সদা যত্নবান থাকা। নামায কায়েম করার ক্ষেত্রে সদা তৎপর থাকা। খোদার নির্দেশ অনুসারে যথাযথভাবে ইবাদত করা। শুধুমাত্র লোক দেখানো বা লৌকিকতার বশে নামায পড়ার মাধ্যমে নামায কায়েম হতে পারে না। নামায কায়েম করার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা দৃষ্টিগোচর রেখে, খোদাভীতির চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে আর খোদার প্রতি পুরো মনোযোগ নিবদ্ধ করে ইবাদত করলে পরেই সত্যিকার অর্থে নামায কায়েম করা সম্ভব।

হুযূর (আই.) বলেন, বাস্তবে আমরা কি দেখি! প্রথমত নামায পড়ার প্রতিই মানুষের মনোযোগ নেই। আর পড়লেও তা শুধুমাত্র লোকাচার হিসেবেই পড়ে, নামাযের প্রতি তাদের কোন মনোযোগই নেই। আমাদেরকে আত্মবিশ্লেষণ করে দেখতে হবে, আমরা কি সত্যিকার অর্থেই খোদার প্রাপ্য অধিকার প্রদান করে নামায পড়ছি? যদি না পড়ে থাকি তাহলে এদিকে মনোযোগ নিবব্ধ করা একান্ত আবশ্যক।

এরপর রয়েছে যাকাত প্রদানের বিষয়টি। আল্লাহ্‌র প্রাপ্য অধিকার প্রদানের পাশাপাশি বান্দার প্রাপ্য প্রদানের নিমিত্তে যাকাত দেওয়া বা আর্থিক কুরবানী করা মু’মিনের জন্য একান্ত আবশ্যক।

এরপর আল্লাহ্ বলেছেন, মু’মিনরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। তাদের হৃদয়ে সদা এই ভয় থাকে যে, আমাদের কর্মের কারণে কোথাও আবার খোদা তা’লা অসন্তুষ্ট না হন আর তাঁর ভালোবাসা ও স্নেহ থেকে যেন আমরা আবার বঞ্চিত না হয়ে যাই। আর যারা সত্যিকার অর্থেই খোদাকে ভয় করে তার সফলকাম হয়।

হুযূর (আই.) বলেন, মসজিদ নির্মাণ করার পর আমাদের দায়িত্ব কোনভাবেই শেষ হয়ে যায় না বরং আমাদের দায়িত্ব আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। বলা হয় যে, এই শহর অর্থাৎ ফিলাডেলফিয়াতে ৪৭টির মত নামায সেন্টার রয়েছে কিন্তু কোন মসজিদ ছিল না। এখন আপনারা মসজিদ নির্মাণের সৌভাগ্য লাভ করেছেন, এটি শুধু এজন্য নয় যে, আমরা একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করেছি বরং ইসলামের সত্যিকার ও শান্তিপ্রিয় শিক্ষা কি তা যেন মানুষ জানতে পারে এই মসজিদ থেকে-এটিই আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই মসজিদ নির্মাণের ফলে আমাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আরো বেশি নিবদ্ধ হবে। মানুষ ইসলাম ও আহমদীয়াত সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী হবে। কাজেই, এই মসজিদকে কেন্দ্র করে আমাদের তবলীগি কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে হবে।

হুযূর (আই.) বলেন, এই মসজিদ নির্মাণে ৮১লক্ষ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। এত অর্থ খরচের উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন আমরা এই মসজিদকে আবাদ করবো আর দূর-দূরান্তে বসবাসকারী আহমদীরাও এই মসজিদে এসে নামায পড়বে। এছাড়া যারা এর নিকটে বসবাস করেন তারা যেন নিয়মিত পাঁচবেলার নামায এই মসজিদে এসে পড়েন এবং আবাদ রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, “যদি কোন এলাকায় ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা ও প্রকৃত বাণী পৌঁছাতে চাও তাহলে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করো। এখন আমাদের জামাতের অনেক মসজিদের প্রয়োজন। মসজিদ খোদার গৃহ হয়ে থাকে। যে গ্রামে বা শহরে আমাদের জামাতের মসজিদ নির্মাণ করা হবে, মনে করবে সেখানে জামাতের ভিত্তি রচিত হয়ে গেছে। যদি এমন কোন গ্রাম বা শহর যেখানে মুসলমানের সংখ্যা কম বা একেবারেই নেই সেখানে যদি ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে চাও তাহলে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা প্রয়োজন তাহলে খোদা স্বয়ং মুসলমানদের সেখানে টেনে আনবেন। কিন্তু শর্ত হল, মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও আন্তরিক সংকল্প থাকা চাই। আর শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’লার খাতিরেই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।” হুযূর (আই.) বলেন, প্রবৃত্তির তাড়না, লৌকিকতা বা কোন অনিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যেন না করা হয়, তবেই আল্লাহ্ এতে বরকত দিবেন।

খুতবার শেষ দিকে হুযূর (আই.) মসজিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন। ২০০৭ সনে মসজিদের জন্য এখানে ৪ একর জমি ক্রয় করা হয় এবং ২০১৩ সনে এখানে মসজিদ নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় এই মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে। ৩ তলা ভবনের এই মসজিদের মোট আয়তন ২১হাজার ৪শ বর্গফুট। এরমধ্যে ৫ হাজার বর্গফুট হল, নামাযের স্থান। মোট ৭শ মুসল্লী এতে নামায পড়তে পারবে। বেসমেন্টও আছে; রান্নাঘর, মুরব্বী কোয়ার্টার ছাড়াও বিভিন্ন অফিস ও ৬ হাজার বর্গফুটের একটি প্রশস্ত মাল্টিপারপাস হল রয়েছে এই মসজিদ কমপ্লেক্সে- যাতে কমপক্ষে ৭শ জন মানুষের বসার সংকুলান হবে। ৮৬টি গাড়ি পার্কিং এর সুবিধাও রয়েছে এর পার্কিং প্লটে। এই মসজিদ নির্মাণে যারা আর্থিক কুরবানী করেছেন আল্লাহ্ তাদের ধন-সম্পদ ও জনবলে প্রভূত বরকত দিন।

হুযূর (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লা আপনাদেরকে এই মসজিদ নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের সর্বাত্মক শক্তি দান করুন। আর এই মসজিদ অত্রাঞ্চলে ইসলামের সত্যিকার বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে মাইলফলক প্রমাণিত হবে- আমি এই দোয়াই করি।