সালানা জলসা যুক্তরাজ্য – ২০১৮

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৩-আগস্ট, ২০১৮

হাদীকাতুল মাহ্‌দী, এলটন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ৩রা আগস্ট, ২০১৮ইং যুক্তরাজ্য জামাতের জলসাগাহ্ হাদীকাতুল মাহ্দী, এলটন থেকে জলসায় অংশগ্রহণকারী সকলকে তাদের দায়িত্বাবলী স্মরণ করিয়ে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর (আই.) তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর বলেন, আল্লাহ্‌র ফযলে আমরা আজ আমরা আরও একটি জলসায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ্। অনেকে প্রথমবার জলসায় অংশ নিচ্ছেন, অনেকেই বহু বছর থেকে জলসায় অংশ নিচ্ছেন। তাই সবার জলসার এই তিনদিনে জলসার আধ্যাত্মিক পরিবেশ থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত, জলসার অনুষ্ঠানসমূহ গভীর মনোযোগের সাথে শোনা উচিত; তবেই গিয়ে তারা জলসা থেকে উপকৃত হতে পারবে এবং মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জলসার উদ্দেশ্য পূর্ণকারী হবে।

হুযূর বলেন, সবাই জানেন জলসার যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রায় পুরোটাই, বিশেষভাবে জলসার তিনদিনের কাজ সম্পূর্ণটাই, স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। তাই কিছু কিছু কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যেতে পারে, কিন্তু এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি সকল অংশগ্রহণকারী মিলে ঠিক করতে হবে ও দূর করতে হবে। একদিকে কর্মীদের যেমন এগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে, অন্যদিকে অতিথিদেরও এগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে এবং কর্মীর প্রয়োজন হলে নিজেদেরকে সেবার জন্য উপস্থাপন করতে হবে। একতা আমাদের মাঝে তখনই সৃষ্টি হতে পারে যখন আমরা একে-অপরকে দায়িত্ব পালনে সাহায্য ও সহযোগিতা করব। তাই এই মৌলিক বিষয়টি আমাদের কর্মী ও অতিথি- উভয়েরই স্মরণ রাখা উচিত। আমাদের জলসার তখনই অনন্য হবে যখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধিকার ও দায়িত্ব সর্বোত্তমভাবে বুঝবে ও পালন করবে। হুযূর বলেন, তাই আজ আমি উভয়কেই কিছু কথা বলে সেদিকে মনোযোগ আকর্ষণ করব। কর্মীদেরকে আমি গত খুতবায় কোন উপদেশ দেই নি, কিন্তু রবিবার জলসার পরিদর্শনের সময় তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে আমি তাদেরকে উপদেশ প্রদান করেছি। আল্লাহ্‌র কৃপায় এখানকার কর্মীরা দীর্ঘসময় ধরে এসব কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্বাবলী যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে এখন যথেষ্ট প্রশিক্ষিত হয়ে গিয়েছে। কর্মীদের জন্য সর্বপ্রথম উপদেশ হল, তারা সেসব মানুষের সেবার জন্য নিজেদের উপস্থাপন করেছে, যারা আল্লাহ্‌র নির্দেশে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কর্তৃক চালুকৃত জলসায় নিজেদের আধ্যাত্মিক, চারিত্রিক ও জ্ঞানগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এসেছে। তাই তাদের দায়িত্ব হল, অতিথিদের আচরণ যেমন-ই হোক, তারা যেন সর্বোত্তম আচরণ করে। কোন অতিথি যদি রূঢ় আচরণ করেও বসে, তবুও তারা যেন তেমন আচরণ না করে। এক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ আমাদের সামনে রয়েছে, যা আল্লাহ্ তা’লা কুরআন শরীফে উল্লেখ করে একদিকে মহানবী (সা.)-এর উন্নততম চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন, অন্যদিকে অতিথিদেরও উপদেশ দিয়েছেন যেন আতিথেয়তার অধিকার ডিঙিয়ে অন্যায় সুযোগ না নেয়। আবার এক অতিথি রাতে রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বিছানা নোংরা করে চলে গেলে তিনি (সা.) স্বয়ং তা পরিষ্কার করেছেন। আমাদের জলসায় যারা আসেন তারা তো সবাই উন্নত চরিত্রের অধিকারীই হয়ে থাকেন; তবে যদি মানবীয় দুর্বলতার কারণে কোন উচ্চবাচ্য হয়েও যায়, তবে তা সহ্য করা উচিত। একথা ঠিক, আহমদীরা কর্মীই হোক বা অতিথি, তাদের সর্বদা উন্নত চরিত্র প্রদর্শন করতে হবে; কিন্তু কর্মীরা, যারা স্বেচ্ছায় অতিথিদের সেবার জন্য নিজেদের উপস্থাপন করেছে, তাদের অধিক উন্নত চরিত্র প্রদর্শন করতে হবে। আর এটি কোন সাময়িক বিষয় নয়, বরং এটি সবসময় স্মরণ রাখা আবশ্যক। এটি নিরব তবলীগের কাজ করে থাকে।

হুযূর বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারি কোন জিনিস নেই। উত্তম চরিত্র তাকে ইবাদতের ব্যাপারেও তাকে মনোযোগী বানিয়ে দেয়, এক পুণ্য আরও পুণ্য সৃষ্টি করতে থাকে। মহানবী (সা.) বলেছেন, নম্রতা অবলম্বন কর, কারণ যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যদি এই কথাটি সবাই বুঝে নেন, তাহলে সকলেই মঙ্গল ও কল্যাণ লাভকারী হতে পারবেন। কর্মীরা প্রত্যেক অতিথির মন দিয়ে সেবা করে, তবুও যদি কোন অতিথির মনে সংশয় সৃষ্টি হয় তবে কর্মীদের তা দূর করতে হবে। কিন্তু একইসাথে আমি জলসায় অংশগ্রহণকারীদেরও বলব, স্বেচ্ছাসেবীরা আমাদের বেতনভুক্ত চাকর নয়, অনেকেই অনেক বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত, অনেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী; কেবলমাত্র মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অতিথিদের সেবার স্পৃহায় তারা নিজেদের উপস্থাপন করেছে, তাই যদি তাদের কোন ত্রুটি হয়েও যায়, তবে তা উপেক্ষা করুন ও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। আর জলসায় অংশগ্রহণের আসল উদ্দেশ্যকে নিজেদের সামনে রাখুন- কেবল আল্লাহ্ তা’লা, তাঁর রসূল (সা.) ও তাঁর ধর্মের কথা শোনার জন্য এখানে একত্রিত হয়েছেন। যদি এই উদ্দেশ্যকে দৃষ্টিপটে রাখেন, তাহলে কোন রকম অভাব-অভিযোগের চিন্তাই আসবে না। আর যদি কোন বিষয়ে মনে হয়, আতিথেয়তায় ত্রুটি থেকে যাচ্ছে, তবে সেই কর্মীর সাথে কোন উচ্চবাচ্যে না গিয়ে সেই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করুন যেন পরবর্তী বছর তা শুধরে নেয়া যায়।

মহানবী (সা.) বলেছেন, মুমিন অযথা ও বৃথা বিষয় থেকে বিরত থাকে। তাই অংশগ্রহণকারীরা সময় নষ্ট না করে জলসার প্রোগ্রাম মন দিয়ে শুনুন। নিতান্ত অপারগতা ছাড়া জলসাগাহের বাইরে যাওয়া অনুচিত।

হুযূর বলেন, তরবিয়তের প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পাঁচ বেলার নামায। জলসার কারণে আজকাল আমরা জমা নামায পড়ছি। অবশ্যই বাজামাত নামাযে গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত হন। কর্মীরাও যারা নামাযের সময় অবসর থাকে, তারা অবশ্যই নামাযে উপস্থিত হবে; আর যদি ডিউটিতে থাকে তবে ডিউটি শেষে সর্বপ্রথম কাজ হবে নামায পড়া। যদি নামাযের প্রতি আমাদের মনোযোগ না থাকে, তবে আমাদের সব কাজই বৃথা।

হুযূর (আই.) পার্কিং, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও অনেক দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। শেষে দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা সবাইকে জলসা থেকে অনেক বেশি বেশি উপকৃত হওয়ার তৌফিক দান করুন এবং আমি এখন যেসব কথা ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করলাম বা আপনাদের কাছে লিখিতভাবে যেগুলো প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো পালন করার তৌফিক দান করুন। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন, সব কথার উপরে একটি কথা রয়েছে, যা প্রত্যেকের অত্যাবশ্যক দায়িত্ব; আর সেটি হল দোয়া। জলসার সফলতার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ্ তা’লা যেন কেবল ও কেবলমাত্র নিজ কৃপায় জলসাকে সবদিক থেকে কল্যাণমণ্ডিত করেন এবং সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখেন, আর আমরা সবাই সেই কল্যাণ লাভ করতে পারি যার জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। (আমীন)