নামায: সকল সফলতা ও মুক্তির চাবিকাঠি

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৯-সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ মসজিদ থেকে “নামায: সকল সফলতা ও মুক্তির চাবিকাঠি”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর,

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লার ফযলে আজ থেকে মজলিস আনসারুল্লাহ্ যুক্তরাজ্যের বার্ষিক ইজতেমা শুরু হতে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আমি একটি পরম গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়ের প্রতি মজলিস আনসারুল্লাহ্‌র মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই, আর তা হল নামায। নামায তো প্রত্যেক মুমিনের জন্যই ফরয, কিন্তু চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুত্ব রাখে। কারণ তাদের বিশেষভাবে এই অনুভূতি থাকা দরকার যে ‘আমার বয়স যত বাড়ছে ততই আমার মৃত্যু নিকটে আসছে, তাই আমার আল্লাহ্ তা’লার ইবাদত ও নামাযের প্রতি অধিক মনোযোগ নিবদ্ধ হওয়া দরকার’। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক সেই ব্যক্তির, যে পরকালে বিশ্বাস রাখে, তার এই চিন্তা হওয়া উচিত যে সে যেন নিজের সাধ্যমত আল্লাহ্‌র হক ও বান্দার হক আদায় করছে কি-না।

হুযুর (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লা যেখানই নামাযের ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, সেখানেই এটি স্মরণ করিয়েছেন যে নামায যেন নিয়মিত পড়া হয়, সময়মত পড়া হয় এবং বাজামাত পড়া হয়- নামায কায়েম করার এটিই তাৎপর্য। কিন্তু দেখা যায় আনসার হওয়া সত্ত্বেও অনেকেরই বাজামাত নামাযের প্রতি সেরূপ মনোযোগ থাকে না যেমনটি থাকার কথা। তাই মজলিস আনসারুল্লাহ্‌র উচিত এবং প্রত্যেক নাসেরের এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত যে তাদের প্রত্যেক সদস্য যেন বাজামাত নামাযে অভ্যস্ত হয়। অসুস্থতা না থাকলে প্রত্যেকের উচিত মসজিদে গিয়ে বাজামাত নামায পড়া, মসজিদ নিকটে না হলে নামায সেন্টারে গিয়ে বাজামাত নামায পড়া, এটিও যদি সম্ভবপর না হয়, তবে বাড়িতে পরিবারের সব সদস্য মিলে বাজামাত নামায পড়া। এর ফলে শিশু ও তরুণরাও বাজামাত নামাযের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। মজলিস আনসারুল্লাহ্‌ তখন প্রকৃত অর্থে মজলিস আনসারুল্লাহ্‌ হতে পারবে যখন আল্লাহ্‌র ধর্মকে প্রতিষ্ঠার ও তা নিজে পালন করার এবং অন্যদেরকে পালন করানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে। যদি মানবসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য তথা আল্লাহ্‌র ইবাদত পালনের, বা তাদের তত্ত্বাবধানে যারা আছে তাদেরকে সেটি পালন করানোর বা পালন করানোর জন্য চেষ্টা করার ও নিজের আদর্শ স্থাপন করার দায়িত্বটি পালন না করেন- তবে তারা কেবল নামে আনসারুল্লাহ্ বা আল্লাহ্‌র সাহায্যকারী। এই যুগ তো আর তীর-তলোয়ারের যুদ্ধের যুগ না যে সেই যুদ্ধে তারা আল্লাহ্‌র পক্ষে লড়বে, বরং যেভাবে মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছেন, এ যুগে আমাদের অস্ত্র হল দোয়া যা আমাদের বিজয়ী করবে; তাই এ যুগে ‘আনসারুল্লাহ্’ হওয়ার জন্য এই অস্ত্র সঠিকভাবে ধারণ ও ব্যবহার করতে হবে, আর এর মাধ্যমেই আমরা বয়আতের অঙ্গীকারও সঠিকভাবে পালনকারী হতে পারব, অন্য কোনভাবে না। তাই প্রত্যেক আনসারের এ বিষয়ে আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে যে নামায কায়েম করার দায়িত্ব সে কতটা পালন করছে।

হুযুর (আই.) দোয়া করেন যে আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সকলকে প্রকৃত তওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হবার, নিজেদের নামাযের হেফাযত করার এবং স্বাদময় নামায পড়ার তৌফিক দান করুন, আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কিছুকে যেন নিজেদের উপাস্য না বানাই বরং আল্লাহ্ তা’লাকেই নিজেদের প্রকৃত উপাস্য বানাতে পারি- সেই তৌফিক দান করুন। আমীন।