সালানা জলসা যুক্তরাজ্য ২০১৭ এবং আমাদের দ্বায়িত্ব

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২১-জুলাই, ২০১৭

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২১শে জুলাই, ২০১৭ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ্‌ মসজিদ থেকে “সালানা জলসা যুক্তরাজ্য ২০১৭ এবং আমাদের দ্বায়িত্ব”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর,

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, আগামী শুক্রবার থেকে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসা শুরু হতে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথিরা আগমন করেছেনও, আর জলসা যতই এগিয়ে আসবে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে থাকবে। জলসায় অংশগ্রহণের জন্য আজকাল বহিঃর্বিশ্ব থেকে কেবল আহমদীরাই নন, বরং অনেক অ-আহমদী ও অমুসলিম ব্যক্তিও এসে থাকেন, যুক্তরাজ্যেরও এরূপ অনেক অতিথি থাকেন যারা অ-আহমদী বা অমুসলিম; বিভিন্ন দেশের ও রাষ্ট্রের সরকারী প্রতিনিধিও থাকেন, প্রেস ও মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও থাকেন। আগত এসব অ-আহমদী অতিথিবৃন্দ অত্যন্ত গভীর দৃষ্টিতে আমাদের সব কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করেন এবং সাধারণত খুবই প্রভাবান্বিত হন। তারা জলসার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ যা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় তা দেখে খুবই প্রভাবান্বিত হন, তারা আহমদীয়াত সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হন। অতএব, এই দিনগুলোতে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকল স্বেচ্ছাসেবীই এক নীরব তবলীগের কারণ হয়ে থাকেন। জলসার দিনগুলোতে আল্লাহ্ তা’লা ব্যাপকভাবে আহমদীয়াত ও ইসলাম প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। জলসার বক্তৃতাবলীর মাধ্যমে একদিকে যেমন আহমদীরা আধ্যাত্মিকভাবে উপকৃত হয় ও হওয়ার চেষ্টায় রত থাকে, অন্যদিকে অ-আহমদীরা এগুলোর মাধ্যমে জ্ঞানগত ও বিশ্বাসগতভাবে ইসলাম ও আহমদীয়াতকে জানার সুযোগ পায়, একইসাথে যখন তারা জলসার পরিবেশ দেখে এবং আহমদী স্বেচ্ছাসেবীদের সেবারত দেখে, ইসলামের সঠিক, শান্তিপূর্ণ ও অনিন্দ্য-সুন্দর শিক্ষামালা জানতে পারে এবং আহমদীদের মাধ্যমে এর ব্যবহারিক প্রদর্শন অবলোকন করে- তখন তারা খুবই প্রভাবান্বিত হয়। আর এটি তবলীগের অনেক বড় একটি মাধ্যম। এভাবে জলসার প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মী তবলীগের ক্ষেত্রে অনেক বড় এক ভূমিকা পালন করে থাকেন। হুযুর (আই.) প্রত্যেক কর্মকর্তাকেও স্মরণ করান যে নিজ অধীনস্ত ও কর্মীদেরকেই কেবল কাজ করাবেন বা করার উপদেশ দেবেন এমনটি নয়, বরং নিজেও বিনয়ের সাথে একজন কর্মীর মত কাজ করার চেষ্টা করবেন। নিজের সহকারী ও অধীনস্তদের এবং অতিথিদের সাথে নম্র ও সহযোগিতামূলক আচরণ করবেন। আপনাদের চেহারায় যেন বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ থাকে, ভাষার নম্রতা ও উন্নত আচরণ প্রদর্শিত হয়।

হুযুর (আই.) বলেন, সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে আতিথেয়তা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এর মানে কেবল খাবার খাওয়ানো, পানি পান করানো বা বড়জোর থাকার ব্যবস্থা করাই নয়, বরং জলসা সালানার প্রত্যেকটি বিভাগের কাজই আতিথেয়তার অন্তর্ভুক্ত। জলসায় যারাই আসেন তারা সকলেই অতিথি, আর তার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিজ বিভাগের ও সম্ভাব্য উপায়-উপকরণ দ্বারা চেষ্টা করা সকল বিভাগের সকল কর্মীর জন্য আবশ্যক।

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) এ বিষয়ে তাঁর নিজের অনুভূতির কথা বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন যা আমাদের জন্য আবশ্যক কর্মপন্থা। তিনি বলেন, আমি সর্বদা একথা খেয়াল করি যে কোন অতিথির যেন কোন রকম কষ্ট না হয়, বরং সর্বদা এই বিষয়ে জোর নির্দেশ প্রদান করে থাকি যে সাধ্যমত যেন অতিথিদের আরামের ব্যবস্থা করা হয়। অতিথিদের মন কাঁচের মত ভঙ্গুর হয়ে থাকে এবং সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। অতএব এ কথাগুলো আমাদের স্মরণ রাখতে হবে এবং নিজেরা কষ্ট স্বীকার করে হলেও অতিথিদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য প্রদানের চেষ্টা করতে হবে। হুযুর (আই.) প্রত্যেক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন যে যদি তাদের নিজেদের চরিত্র আদর্শ হয়, ধৈর্য-নম্রতা-বিনয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে উন্নত মানে অধিষ্ঠিত থাকেন এবং অধীনস্ত কর্মীদের সাথে এভাবে আচরণ করেন, তবে কর্মীরাও এই আদর্শের প্রভাবে অনুরূপ আচরণ করবে, অন্যথায় এর বিপরীতই ঘটবে।

হুযুর (আই.) বলেন, জলসার প্রত্যেক বিভাগই আতিথেয়তার বিভাগ, তা সে বাসস্থান সংক্রান্ত বিভাগই হোক, খাদ্য প্রস্তুত বা পরিবেশকারী বিভাগই হোক, বা যাতায়াত বিভাগই হোক বা পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা হোক, কিংবা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভাগ, বা পথ-প্রদর্শন বিভাগ বা নিরাপত্তা বিভাগ, মোটকথা প্রত্যেকটি বিভাগই নিজ নিজ গন্ডিতে আতিথেয়তার দায়িত্বে নিয়োজিত। এরপর হুযুর (আই.) প্রায় সকল বিভাগকেই তাদের কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিশেষ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। হুযুর (আই.) বলেন, আমি খুব ভালভাবেই জানি যে এরকম একটি অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা কখনোই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে হতে পারে না, কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যেন অতিথিদের সর্বাধিক আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করা যায়। কারণ জলসায় আগত ব্যক্তিবর্গ হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অতিথি।

হুযুর (আই.) জলসার আতিথেয়তা প্রসঙ্গে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর কতিপয় উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন এবং এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনাও উল্লেখ করেন। জলসায় আগত প্রত্যেক অতিথিকে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সমানভাবে সেবা করার, অতিথিদের রূঢ় ভাষা বা কঠোর আচরণকেও সহ্য করে নেয়া, আপন-পর নির্বিশেষে সকল অতিথির সমানভাবে সেবা করা ইত্যাদি বিষয়ও তুলে ধরেন। হুযুর (আই.) মহানবী (সা.)-এর হাদীসের আলোকে আতিথেয়তা যে সর্বোত্তম ঈমানের এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য তা উল্লেখ করেন। জলসার দিনগুলোতে অতিথিদের নামায ইত্যাদি তরবিয়তমূলক বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি প্রদান প্রসঙ্গে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি ঘটনাও উল্লেখ করেন এবং তরবিয়ত বিভাগকে অনুরূপ কাজ করার উপদেশ প্রদান করেন। অতঃপর হুযুর (আই.) দোয়া করেন যে আল্লাহ্ তা’লা যেন প্রত্যেক কর্মীকে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অতিথিদের সর্বোৎকৃষ্টভাবে সেবা করার তৌফিক প্রদান করুন।

খুতবার শেষাংশে হুযুর (আই.) দুটি গায়েবানা জানাযার উল্লেখ করেন। প্রথম জানাযা মোকররম সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ সাহেবের, যিনি ড. মীর মুহাম্মদ ইসমাঈল সাহেব (রা.)-এর পুত্র ছিলেন, গত ১৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। হুযুর (আই.) মরহুমের নাতিদীর্ঘ যিকরে খায়ের করেন এবং তার পদমর্যাদায় উন্নীত হবার ও ক্ষমা লাভের জন্য দোয়া করেন। দ্বিতীয় জানাযা মোকাররমা মাহমুদা বেগম সাহেবার, যিনি চৌধুরী মোহাম্মদ সালিক ভাট্টি সাহেবের স্ত্রী ছিলেন, গত ১৪ জুলাই ৭৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। হুযুর (আই.) মরহুমার যিকরে খায়ের করেন এবং তার পদমর্যাদায় উন্নীত হবার জন্য দোয়া করেন।