বর্কতময় জার্মানি সফর ও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার প্রচার

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৮-এপ্রিল, ২০১৭

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২৮শে এপ্রিল, ২০১৭ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ্‌ মসজিদ থেকে “বর্কতময় জার্মানি সফর ও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার প্রচার”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,

যখনই প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধি বা অমুসলমানদের সাথে বসার ও আলোচনা বা প্রশ্নোত্তরের সুযোগ ঘটে তখনই তারা এই প্রশ্নটি করে বসে যে ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বে যে ভীতি ও ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে এর কারণ কী ও এটি দূর করার উপায় কী; আর সাথে সাথে এটিও তারা সরাসরি বা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলার চেষ্টা করে যে হয়তো ইসলামের শিক্ষা এর কারণ। জার্মানিতেও একজন সাংবাদিক সেখানে ক্রমবর্ধমান ইসলাম-ভীতি ও জার্মানদের অন্যায় আচরণের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করে, এমনটি হলে আপনাদের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে? হুযুর (আই.) বলেন, এমন প্রশ্ন তবলীগের পথ খুলে দেয়; কারণ এর ফলে এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সঠিক ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরার এবং এর বিপরীতে নামধারী উলামা ও মুসলমানদের প্রদর্শিত প্রতিক্রিয়া যে ইসলামী শিক্ষাকে না বোঝার ফল তা তুলে ধরার সুযোগ ঘটে। তাদেরকে এটা বলার সুযোগ হয় যে তথাকথিত মুসলমানদের এমন কর্মকান্ড সম্পর্কে মহানবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন এবং পরিস্থিতিতেই প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদীর আগমনেরও সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছেন, আর আমরা তাঁরই মান্যকারী। আর প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.) আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে এক্ষেত্রে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। তিনি (আ.) আমাদের শিখিয়েছেন যে সবধরনের সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী কর্মকান্ড, অন্যায়-অবিচার ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। তিনি বলেছেন যে ধর্মের শিক্ষা শারীরিকভাবেও ও আধ্যাত্মিকভাবেও মানুষের মুক্তির ও কল্যাণের মাধ্যম। ধর্মের শিক্ষা হল আল্লাহ্‌র গুণাবলীকে নিজের মাঝে ধারণ করা, তাঁর রঙে রঙিন হওয়া। যেভাবে তিনি রাব্বুল আলামীন, সমগ্র বিশ্বের সব কিছুর লালন-পালনকারী, এইক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-স্থান-কাল-পাত্র এসবের কোন সীমা নেই। রাব্বুল আলামীন খোদার বান্দা হিসেবে একজন সত্যিকার মুসলমানের জন্য এই গুণ অবলম্বন করা আবশ্যক। এই শিক্ষা যা পবিত্র কুরআনের আলোকে মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাদেরকে শিখিয়েছেন, এটিই বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য আবশ্যক। হুযুর (আই.) বলেন, কতিপয় মুসলমানের কর্মকান্ড যদি ইসলামের নামে বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টির কারণ হয় তবে তা ইসলামের শিক্ষার কারণে নয়, বরং তা থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে হয়েছে- এটি অমুসলিমদের কাছে তুলে ধরার পর এবং সত্যিকার ইসলামী শিক্ষা তাদের কাছে তুলে ধরার পর তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে একথা স্বীকার করে যে ইসলামের শিক্ষা অনিন্দ্য-সুন্দর শিক্ষা। হুযুর (আই.) বলেন, জার্মানির সাম্প্রতিক সফরে বিভিন্ন মসজিদ উদ্বোধন বা মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা যে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন তাতেও এই বিষয়টিই আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

এরপর অগসবার্গ, রনহেইম, মারবার্গ ইত্যাদি স্থানে মসজিদের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হুযুর (আই.)-এর বক্তব্য শুনে আগত অতিথিদের বিভিন্ন অভিব্যক্তির কয়েকটি তুলে ধরেন। তাদের কেউ ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন, কেউবা পূর্বে ইসলাম নিয়ে ভীত ছিলেন যার ইসলাম-ভীতি দূর হয়েছে, কেউ ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করে এখন তা অন্যদের জানানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, কেউ মানবসেবা, প্রতিবেশীর অধিকার আদায়, শান্তি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের গভীর গুরুত্বারোপ জেনে আবেগাপ্লুত হয়েছেন, কেউবা প্রকৃত ইসলাম তথা আহমদীয়াত গ্রহণ করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। হুযুর (আই.) বলেন, আমাদের চেষ্টা যদিও তুচ্ছই হয়ে থাকে, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা স্বয়ং এতে অশেষ বরকত দান করেন এবং অনেক মানুষকে নিজে আমাদের কথা শোনানোর ব্যবস্থা করেন। হুযুর (আই.) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পৃথক পৃথক মিডিয়া কাভারেজ উল্লেখ করার পর সর্বশেষ পরিসংখ্যান হিসেবে উল্লেখ করেন যে প্রচারমাধ্যমগুলোর হিসেবেই মোট ১৩৬টি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি মানুষের কাছে ইসলাম ও আহমদীয়াতের বাণী পৌঁছেছে। হুযুর (আই.) বলেন, আল্লাহ্‌র ফযলে জার্মানির জামা’ত তবলীগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয়, আর তাদের প্রচার বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বিরোধিতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষভাবে পূর্ব জার্মানিতে বিরোধিতা খুব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হুযুর (আই.) বলেন, বিভিন্ন জামা’তে সফরের প্রেক্ষিতে সেসব স্থানে তবলীগের বৃত্তান্ত উল্লেখ করা হলেও যুক্তরাজ্যের কথা সাধারণত বলা হয় না, কিন্তু এখানেও খুব ভাল তবলীগি কর্মকান্ড চলছে এবং যুক্তরাজ্য জামা’ত কর্তৃক সম্প্রতি হযরত মুসলেহ মওউদ (রা:) রচিত Life of Muhammad বইটির ব্যাপক প্রচার এবং শান্তি সম্মেলন বা পিস সিম্পোজিয়াম উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উল্লেখ করেন। পিস সিম্পোজিয়ামের যেই মিডিয়া কাভারেজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে হয়েছে, যার ফলে ৯০ লক্ষ পর্যন্ত মানুষের কাছে জামা’তের বাণী পৌঁছেছে। যেভাবে আন্তর্জাতিকভাবে জামা’তের প্রচার বৃদ্ধি পাচ্ছে, একইসাথে জামা’তের বিরোধিতাও বাড়ছে। হুযুর (আই.) এটিও বলেন, বিরোধিতার ফলে জামা’তের পরিচিতি সেসব স্থানেও ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে আমাদের পক্ষে সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব ছিল না; হুযুর (আই.) এ বিষয়ে আলজেরিয়ায় সাম্প্রতিক বিরোধিতার কথা উল্লেখ করেন এবং আলজেরিয়া, পাকিস্তান সহ বিশ্বের যেই স্থানেই আহমদীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সেসব স্থানের আহমদীদের জন্যও দোয়ার তাহরীক করেন। আল্লাহ্ তা’লা যেন তাদের অবিচলতা দান করেন ও তাদের দুর্দশাজনক অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করেন এবং তাদের সুরক্ষা করেন। আল্লাহুম্মা আমীন।