আহমদীয়াতের বিরোধিতা: সত্যতার এক অসাধারণ নিদর্শন

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৭-এপ্রিল, ২০১৭

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ৭ই এপ্রিল, ২০১৭ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “আহমদীয়াতের বিরোধিতা: সত্যতার এক অসাধারণ নিদর্শন”- বিষয়ে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বিরোধিতা সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছে যখন তিনি রীতিমতভাবে জামাত প্রতিষ্ঠাও করেন নি বা বয়আত গ্রহণও শুরু করেন নি। তখন থেকে শুরু আজ পর্যন্ত মুসলমান ও অমুসলমানরা তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে, আজকাল তো মুসলমানরাই বেশি বিরোধিতা করছে। যেখানেই মানুষ আহমদীয়াতের প্রতি মনোযোগী হয় সেখানেই তারা রীতিমত পরিকল্পনা করে আহমদীয়াতের বিরোধিতায় উঠে-পড়ে লাগে। কিছু রাজনৈতিক নেতা, আলেম-উলামা, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি বিচারকরাও একজোট হয়ে কাজ করে। আজকাল আলজেরিয়াতে এই অবস্থাই বিদ্যমান। কিন্তু সেখানকার আহমদীরা সত্যের উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। হুযুর (আই.) বলেন, আলজেরিয়ার এসব নিষ্পাপ ও নির্যাতিত আহমদীদের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত, একইসাথে পাকিস্তানের আহমদীদের জন্যও আমাদের বিশেষভাবে দোয়া করা উচিত কারণ সেখানেও কূট-পরিকল্পনার সাথে আহমদীয়াতের বিরোধিতা ও অত্যাচার করা হচ্ছে। হুযুর (আই.) বলেন, তাদের এসব কর্মকান্ড সত্ত্বেও জামাত আজ পৃথিবীর ২০৯টি দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। কারণ তারা সত্য মসীহ্ ও মাহদীর জামাতের সাথে এরূপ করছে। মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীন অবস্থা বা তাদের পারস্পরি সম্পর্কের অবস্থা দেখে বিচক্ষণ লোকদের সেই ব্যক্তির সন্ধান করা উচিত ছিল যাকে এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তা’লা উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সংশোধনের জন্য প্রেরণের সুসংবাদ দিয়ে রেখেছেন এবং মহানবী (সা.)-ও যার আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-ও একথা লিখেছেন যে, ‘নিশ্চিতভাবে স্মরণ রেখো- খোদার প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি নিজ প্রতিশ্রুতি অনুসারে পৃথিবীতে এক সতর্ককারী পাঠিয়েছেন, বিশ্ববাসী তাকে গ্রহণ করে নি, কিন্তু খোদা তাকে গ্রহণ করবেন এবং অত্যন্ত প্রবল আক্রমণসমূহ দ্বারা তার সত্যতা প্রকাশ করে দেবেন। ….আমি তোমাদের সত্য সত্যই বলছি, আমি খোদা তা’লার প্রতিশ্রুতি অনুসারে মসীহ্ মওউদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি…. তোমরা চাইলে মান বা অস্বীকার কর, তোমরা অস্বীকার করলেও কিছু যায়-আসে না, কারণ খোদা তা’লা যা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অবশ্যই পূর্ণতা পাবে… যারা আমার বিরোধিতা করে, তারা আমার নয় বরং খোদা তা’লা বিরোধিতা করে।’

হুযুর (আই.) বলেন, জামাতের বিরুদ্ধবাদীরা আগেও কখনো জামাতের ক্ষতি করতে পারে নি, ভবিষ্যতেও পারবে না। যেভাবে অতীতেও মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর শত্রুরা লাঞ্ছিত হয়েছে, এখনও তাই হবে। এরা যদি একস্থানে আহমদীয়াতকে রোধ করার চেষ্টা করে তবে আল্লাহ্ তা’লা শতস্থানে তবলীগের পথ উন্মুক্ত করে দেন। আলজেরিয়াতেও এমনটি হচ্ছে; তারা প্রচার মাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় জামাতের বিরুদ্ধে লিখছে ও প্রচার করছে, আর এর ফলে অসংখ্য মানুষের দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তারা আহমদীয়াতের খোঁজ-খবর নিচ্ছে। অতএব বিরোধিতা সত্ত্বেও মানুষের আহমদীয়াত গ্রহণ এর সত্যতার এক অসাধারণ নিদর্শন।

আল্লাহ্ তা’লা কিভাবে মানুষকে সত্যের দিকে আকর্ষণ করছেন এবং হেদায়াত দান করছেন সেরকম বেশ কিছু ঘটনা হুযুর (আই.) তুলে ধরেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত এসব ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে আল্লাহ্ স্বয়ং নেক-প্রকৃতির লোকদের আহমদীয়াত গ্রহণের ব্যবস্থা করছেন। আলজেরিয়াতে এক ব্যক্তি হুযুর (আই.) ও মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে প্রথমে স্বপ্নে দেখেন, পরবর্তীতে এমটিএ-তে তাঁদের ছবি দেখে যোগযোগ করেন ও সত্য গ্রহণ করেন। মিসরের এক ব্যক্তি এমটিএ দেখে সত্য গ্রহণ করেন, কিছু বিষয়ে কঠোর দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা’লার আশ্চর্য পরিকল্পনার ফলে তিনি সত্য গ্রহণের সুযোগ পান এবং নিজের ভুল শুধরে নেন। আফ্রিকায় ইসলাম নিয়ে ভীত-শংকিত এক অমুসলিম ভদ্রমহিলাও সত্য ও সঠিক ইসলামী শিক্ষা জানতে পারেন ও আহমদীয়াত গ্রহণ করেন। কোথাও বা আহমদীয়াতের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ-পোষণকারীও আল্লাহ্‌র ফযলে সত্য গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেন। কোথাও এমন হয়েছে যে জামাতের বাহ্যিকভাবে কোন ক্ষতির ফলে জামাতের মোবাল্লেগ দোয়া করেন যেন আল্লাহ্ বয়আতের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেন, আর সাথে সাথেই আশ্চর্যজনকভাবে কোন স্থানে বিপুলসংখ্যক লোক আহমদীয়াত গ্রহণ করেন। কোথাও বা জামাতের বিরুদ্ধবাদী আলেম-উলামাদের উগ্র আচরণের ফলে বা জামাত সম্বন্ধে তাদের মিথ্যাচারের প্রেক্ষিতে মানুষ আহমদীয়াত গ্রহণ করে। মোটকথা এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে জামাতের বিরোধিতা উল্টো জামাতের উন্নতির কারণ হয়েছে এবং আল্লাহ্ তা’লা শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে তাদের মাধ্যমেই আহমদীয়াতের কল্যাণে কাজ করিয়েছেন। মসীহ্ মওউদ (আ.)-ও বলেন, যারা আমাদের বিরোধী, তারাও কোন না কোন ভাবে জামাতের তবলীগ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে। হুযুর (আই.) বলেন, অতএব বিরোধিতা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা নয়, তা আলজেরিয়া বা পাকিস্তানেই হোক বা অন্য কোন মুসলিম দেশেই হোক। বিরুদ্ধবাদী এসব আলেমদের উচিত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর উপদেশের প্রতি দৃষ্টি দেয়া। তিনি (আ.) বলেছেন, যদি তোমরা তওবা না কর তবে তোমরা কখনোই আগমনকারী মসীহ্‌র সন্ধান পাবে না, নিজের মাঝে খোদাভীতি সৃষ্টি কর এবং নিভৃতে এই বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা কর, সবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে পথপ্রদর্শনের জন্য দোয়া কর। যদি নেক নিয়্যতের সাথে এভাবে দোয়া কর তবে তিনি তোমাদের দোয়া শুনবেন ও পথ দেখাবেন। হুযুর (আই.) দোয়া করেন যে আল্লাহ্ তা’লা করুন এরা যেন আল্লাহ্ তা’লার কাছ থেকে পথের দিশা লাভ করার চেষ্টা করে এবং তিনি তাদের হৃদয়কে উন্মোচিত করুন। আমীন।