হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর শিক্ষা

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৯-এপ্রিল, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২৯শে এপ্রিল, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর শিক্ষা”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর দাবী এবং জামাতের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর এই অনবরত এই অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে যে, তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা নাকি মহানবী (সা.)-কে খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস করে না।

এটি আমাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। আমরা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর শিক্ষার আলোকেই মহানবী (সা.)-এর খতমে নবুয়তের বিশ্বাস রাখি। আর আমরা তাঁর যে সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করি এর ধারে কাছেও আমাদের বিরুদ্ধবাদীরা পৌঁছতে পারে না। বাস্তবে নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং নিজেদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা ও ভক্তি রয়েছে এক্ষেত্রে নামধারী এসব আলেম-ওলামা পৌঁছতে পারে না।

হুযূর বলেন, আজ প্রচার মাধ্যম এবং যাতায়াতের সুব্যবস্থার কারণে আমাদের বিরোধিতা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব বিরোধিতা যেভাবে অতীতেও জামাতের কোন ক্ষতি করতে পারে নি আর ভবিষ্যতেও পারবে না। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে মানুষ ছিল নাস্তিক, ধর্মবিমুখ এবং খ্রিস্টান সেসব দেশে গিয়ে আহমদীরা ইসলাম প্রচার করেছে, মসজিদ নির্মাণ করেছে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছে, এখন সেসব স্থানেও এই বিরোধিরা যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে আহমদীয়াতের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি গ্লাসগোতে একজন আহমদীকে শহীদ করা হয়েছে। এবং একে কেন্দ্র করে এখানেও বিরোধিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে এখানকার প্রসাশন ও প্রচার মাধ্যম যথেষ্ট উৎকন্ঠিত। চাপের মুখে এখানকার মুসলিম সংগঠনগুলো এর প্রতি নিন্দা জানালেও তাদের হঠকারিতা কমেনি। এমনকি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বলেছে, আর যাই হোক না কেন এরা মুসলমান নয়। কিন্তু আল্লাহ্র অপার কৃপায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে এখানকার প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় ব্যাপকভাবে জামাতের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে যা হয়তো আমাদের দ্বারা এত অল্প সময়ে সম্ভবই হতো না। কাজেই আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিটি বিরোধিতাই জামাতের উন্নতিকে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। তাই আগেও এনিয়ে আমাদের কোন চিন্তা ছিল না আর এখনও থাকা উচিত নয়।

হুযূর আরো বলেন, এখানেও নামধারী এসব আলেম-ওলামা মানুয়ের মনে আহমদীয়াত সম্পর্কে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের এই হীন কর্মকান্ডের প্রভার ছোট বাচ্চাদের ওপরও পরছে। যারা এখন কলেমাও জানে খতমে নবুয়ত তো দূরের কথা তারাও স্কুলের আহমদী সহপাঠিদের বলছে যে, তোমরা মুসলমান নও। এভাবেই তারা ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের মন-মস্তিষ্কে আহমদীয়াত বিদ্বেষী করে তুলছে।

আহমদী ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে এ প্রসঙ্গে আমি চিঠি-পত্র পেয়েছি। আমি আদের বলেছি, আমরা মুসলমান এবং খতমে নবুয়তে বিশ্বাস রাখি। আমরা শুধু মৌখিকভাবেই তাঁকে খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস করি না বরং ব্যবহারিক জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করি।

হুযূর বলেন, আপনারা অর্থাৎ আহমদী ছেলে-মেয়েরা আরো বেশি করে ইসলামী শিক্ষামালা জানার এবং এর ওপর আমল করার চেষ্টা করুন। আমরা মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তাঁর নিবেদিত প্রাণ দাসকে মেনেছি। তিনি মহানবীর দাস এবং অনুসারী নবী। স্বাধীন নবুয়াতের ধারা মহানবীর মাধ্যমে বন্ধ হয়ে গেছে আর পবিত্র কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-মহানবীর মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং বিশ্বময় কুরআনের বাণী প্রচারের লক্ষ্যে আবির্ভুত হয়েছেন।

এরপর হুযূর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে তাঁরই রচনাসমগ্র হতে বিভিন্ন অংশ পাঠ করেন।

তিনি আ.) বলেন, আমরা আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্য হলো, হাজার বছরের অন্ধকার ও অমানিশার ফলে ইসলামে যেসব বিদাত ও নতুন বিষয় প্রবেশ করেছে সেগুলো দূর করা এবং মানুষের বিশ্বাসের সংশোধন করা।

হযরত মসীহ মওউদ (আ.) বলেন, নিশ্চিতভাবে স্মরণ রেখ! কোন মানুষ মুসলমান হতে পারবে না এবং মহানবীর সত্যিকার অনুসারীও হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মহানবী (সা.)-কে খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস না করে। যতক্ষণ সব ধরনের নতুন কথা ও বিভিন্ন প্রকার বিদা’ত মুক্ত না হবে এবং নিজ কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রত্যেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে খাতামান নবীঈন মনে না করে ততক্ষণ সবই অর্থহীন। শেখ সাদী কত সুন্দর কথা বলেছেন, চেষ্টা-সাধনা এবং পবিত্রতা-খোদাভীরুতা লাভের জন্য অবশ্যই চেষ্টা কর কিন্তু মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) প্রদর্শিত পথ থেকে সরে যেও না।

আরেক স্থানে তিনি বলেন, খোদার মহান ও চির-জীবন্ত নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এরা অজ্ঞতার ফলে মৃত আখ্যা দেয় আর অপরদিকে ঈসা নবীকে আকাশে জীবিত বলে বিশ্বাস করে। একথা শুনে আমার হৃদয় কেঁপে উঠে। মুসলমানদের এই ভুল বিশ্বাস সংশোধনের উদ্দেশ্যে এবং মহানবী (সা.)-এর প্রকৃত শান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ্ আমাকে প্রেরণ করেছেন।

তিনি (আ.) একস্থানে বলেন, পৃথিবীতে একজন সতর্ককারী এসেছেন কিন্তু পৃথিবীবাসী তাঁকে গ্রহণ করেনি কিন্তু মহাপরাক্রমশালী খোদা জোরালো আক্রমন সমূহ দ্বারা তাঁর সত্যতা প্রকাশ করবেন।

এরপর হুযূর দোয়া গৃহীত হওয়া সম্পর্কে এবং খোদার সাথে কাউকে শরীক না করা এবং বিরুদ্ধবাদীদের জন্য দোয়া করার গুরুত্ব সম্পর্কেও মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি (আ.) মহানবী (সা.) এবং কুরআনের শিক্ষামালা নিজ জীবনে অবলম্বন এবং বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। তিনি শুধুমাত্র মৌখিকভাবেই খতমে নবুয়তের ধ্বনি উচ্চকিত করেন নি বরং কথা ও কাজ ছিল স্বীয় মনিব এবং নেতার অনুসরণে। মহানবীর এই শিক্ষা ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্যই তাঁর আকুল বাসনা ছিল। যাতে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে, মহানবী (সা.) কর্তৃক আনীত এই অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষাই মানুষের জন্য সত্যিকার মুক্তির পথ। এছাড়া তিনি (আ.) তাঁর অনুসারীদেরও একথা মানার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জামাতভুক্ত হওয়ার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দিন। আর মহানবী (সা.)-এর প্রকৃত শান ও মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের সত্যিকার জ্ঞান লাভের তৌফিক দিন যাতে আমরা ইসলামের সত্যিকার চিত্র বিশ্ববাসীকে দেখাতে সমর্থ হই, আমীন।