মন ও হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতা

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২২-এপ্রিল, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২২শে এপ্রিল, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “মন ও হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতা”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর আনোয়ার (আই.) হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)-এর বরাতে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জীবন চরিতের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেন।

হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) একবার এ বিষয়টি বর্ণনা করেন যে, মানুষের জন্য দু’টি ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা আবশ্যক। এরমধ্যে একটি হচ্ছে, চিন্তা-চেতনা আর অপরটি হচ্ছে, সূক্ষ্ম আবেগ-অনুভূতি অর্থাৎ সৎকাজের বা নেকী করার বাসনা।

হুযূর বলেন, স্থায়ী নেকী বা সৎকাজের বাসনা তখনই সৃষ্টি হয় যখন মানুষের মন পরিস্কার হয়। অতএব পুণ্যকাজের জন্য সঠিক সংকল্প এবং হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতা একান্ত আবশ্যক। আর অনবরত চেষ্টা ছাড়া মানুষ কোনভাবেই এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারে না।

মহানবী (সা.)-এর হাদীস উদ্ধৃত করে হুযূর বলেন, ‘মানুষের সব কাজের ফলাফল নির্ভর করে তার নিয়্যত বা সংকল্পের ওপর।’ কাজেই মানুষের যে কোন কাজের সময় নিয়্যত বা সংকল্প স্বচ্ছ হওয়া চাই।

হুযূর বলেন, সাধারণত মানুষ মনে করে যে, তাকওয়া বা নেকী একই জিনিষ। কিন্তু আসলে তা নয়। নেকীর চিন্তা-ভাবনা মানুষের মস্তিক থেকে উদ্ভূত হয় এবং মানুষ তখন সেই নেককর্ম করে। আর তাকওয়ার সম্পর্ক মানুষের হৃদয়ের সাথে। মানুষের হৃদয়ে খোদাভীতি সঞ্চারিত হয়।

এরপর হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, অনেক সময় মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর কাছে ফিকাহ্ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন করা হলে তিনি তাদেরকে জামাতের আলেমদের কাছে প্রেরণ করতেন যে, ওনাদের কাছ থেকে উত্তর জেনে নিন। কিন্তু খোদার মা’মুর হিসেবে যখন তিনি মনে করতেন যে, এ সম্পর্কে তাঁরই দিক-নির্দেশনা দেওয়া উচিত তখন সেসব প্রশ্ন যত সাধারণই হোক না কেন হুযূর (আ.) স্বয়ং তার উত্তর দিতেন। অনেক সময় মসীহ্ মওউদ (আ.) সাধারণ বিষয়েও জামাতের আলেম-উলামাদের দৃষ্টি-ভঙ্গির সংশোধন করতেন।

উদাহরণ স্বরূপ, সফরে কসর নামায পড়া। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, সফরের উদ্দেশ্যে মানুষ যখন বের হয় তখন তার দূরত্ব যত কমই হোক না কেন তা সফর বলে গণ্য হবে আর সেক্ষেত্রে নবীর আদর্শ অনুসারে নামায কসর পড়বে। কিন্তু সাধারণত যারা ব্যাবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোন কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দূর-দূরান্তে যায় তাদের এই ভ্রমন সফর বলেন গণ্য হবে না।

এরপর জুমুআর নামাযের সাথে আসরের নামায জমা করে পড়লে সুন্নত পড়তে হবে না বলে অনেক মতামত ব্যক্ত করেন। হুযূর বলেন, একথা ঠিক যে, নামায জমা পড়লে সুন্নত মাফ হয়ে যায় কিন্তু হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, জুমুআর নামাযের ক্ষেত্রে আমি মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে জুমুআর আগের দু’রাকাত সুন্নত পড়তে দেখেছি। আর আমি মনে করি, জুমুআর সম্মানার্থে এই সুন্নত পড়া উচিত।

এখানে জুমুআর নামায সম্পর্কে হুযূর আরো একটি বিষয় বর্ণনা করেন আর তাহলো, সফরের সময় জুমুআর নামায পড়া আবশ্যক নয় কিন্তু জুমুআর পরিবর্তে যোহরের নামায অবশ্যই পড়তে হবে। আর এটি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আচরিত জীবন থেকে সাব্যস্ত।

হুযূর (আই.) আরো বলেন, আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে অনেকে বাড়াবাড়ি করেন। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আদর্শ হলো, যদি ইসলামী শিক্ষা ও দেশীয় আইন পরিপন্থী না হয় তাহলে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করা বারণ নয়। তাঁর যুগে রানী ভিক্টোরিয়ার জুবলী উপলক্ষে জামাত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছিল। হুযূর (আ.) কখনো কখনো বাচ্চাদের আতশবাজি পুড়িয়ে আনন্দ করতে নিষেধ করেন নি কিন্তু জামাতের পক্ষ থেকে এমনটি করার অনুমতি দেন নি।

এরপর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর যুগে তাঁর বিরোধিতা সেযব মৌলভীরা করেছে তাদের বিভিন্ন ঘটনা হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বর্ণনা করেন। মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন বাটালভী এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা সাধারণ মানুষকে কাদিয়ান যেতে বাধা প্রদান করতো। অনেকে মৌলভীর কথার ফাঁদে পড়ে কাদিয়ান যাওয়া হতে বিরত থাকে আবার অনেকেই তাদের প্রতারণা উপেক্ষা করে কাদিয়ান পৌঁছে এবং খোদার মনোনীত পুরুষকে মেনে ধন্য হয়।

হুযূল বলেন, এসব মৌলভীরা মসীহ্ মওউদ (আ.) -র ঘোর বিরোধিতা করে এবং তাঁকে রসূল অবমাননাকারী আখ্যা দেয়ার অপচেষ্টা করে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তিনিই ছিলেন রসূলের নিষ্ঠাবান প্রেমিক। সব ধর্মের অনুসারীদের তিনি (আ.) চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন, ইসলাম ও ইসলামের নবীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য। কিন্তু কেউই হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ধৃষ্টতা দেখায় নি।