প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ:)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৫-মার্চ, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ২৫শে মার্চ, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ:)”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, দু’দিন পূর্বে ছিল ২৩শে মার্চ। এটি আহমদীয়া জামাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আল্লাহ্ তা’লা উম্মতে মুহাম্মদীয়া এবং মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে যে ওয়াদা করেছিলেন এদিনে তা পূর্ণ হয়েছে। আর এভাবেই ইসলামের পুনর্জাগরণের ধারা সূচিত হয়। আল্লাহ্ তা’লা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে এদিন প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী হওয়ার ঘোষণা প্রদানের নির্দেশ দেন। যেখানে খোদার একত্ববাদ ও মহিমা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর ওপর দলীল-প্রমাণ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল সেখানে ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব সব ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্বও তাঁর স্কন্ধে অর্পিত হয়। এছাড়া আল্লাহ্‌র শেষ নবী মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসায় মানুষের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করাও ছিল তাঁর অন্যমত কাজ।

অতএব আজ আমরা যারা মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জামাতভুক্ত তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। ২৩শে মার্চ উপলক্ষে বিশ্ব জামাতে আহমদীয়া বিভিন্ন জলসার আয়োজন করেছে আর এতে মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বর্ণনা করার পাশপাশি জামাতের সদস্যদের আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ হয়েছে।

হুযূর বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে মানতে পেরে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশই যথেষ্ট নয় বরং আমাদের দায়-দায়িত্বের প্রতিও দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। কাজেই আমাদেরকে সেসব দায়িত্ব কি তা চিহ্নিত করে তা পালনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

হুযূর বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যা সম্পাদনের জন্য হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবেই আমরা তাদের দলভুক্ত হতে পারবো যারা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে মেনে নতুন আকাশ ও নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অতএব এই দায়িত্ব বুঝার জন্য আমাদেরকে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর প্রতি দেখতে হবে যে, তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য কি ছিল! আমরা তা কতটুকু বুঝেছি এবং নিজ জীবনে অবলম্বন করেছি এবং তা প্রচারে নিজে কি ভূমিকা রেখেছি?

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-একস্থানে বলেন, যে কাজের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ আমাকে প্রেরণ করেছেন তাহলো খোদা এবং তাঁর সৃষ্টির মাঝে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করে ভালোবাসা ও নিষ্ঠার সম্পর্ককে পুনরায় গড়ে তুলি। দ্বিতীয় কথা হলো, সত্য প্রকাশের মাধ্যমে ধর্মীয় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সন্ধির ভিত রচনা করি। এরপর ধর্মীয় সত্যতা যা বিশ্ববাসীর দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেছে তা প্রকাশ করি। চতুর্থ কথা হলো, আধ্যাত্মিকতা যা প্রবৃত্তির অন্ধকারের নিচে চাঁপা পড়েছিল তার উন্নত আদর্শ প্রদর্শন করি। এরপর খোদার শক্তিমত্তা মানুষের মাঝে প্রবেশ করে যা মনোযোগ ও দোয়ার মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় তা শুধু কথার দ্বারাই নয় বরং ব্যবহারিক ভাবেও প্রকাশ করি। আর সবচেয়ে বড় কথা সেই বিশুদ্ধ ও দীপ্তিমান তৌহিদের চিরস্থায়ী চারা রোপন করি। আর এসব কিছু আমার নিজ শক্তিতে নয় বরং সেই খোদার শক্তিতে হবে যিনি আকাশ ও পৃথিবীর খোদা।

অতএব এই উদ্ধৃতিতে সাতটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণিত হয়েছে যার এখন খুবই প্রয়োজন রয়েছে।

এরপর হুযূর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ভাষায় তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিভিন্ন উদ্ধৃতি পাঠ করেন। তিনি বলেন, যুগ মসীহ্‌র আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্য হলো, ধর্মের সংস্কার ও পূনর্জাগরণ। ইসলাম এ যুগে সকল প্রকার অবক্ষয়ের শিকার, মানুষ একজন সংস্কারকের মুখাপেক্ষী ছিল। মানবের সংশোধনের উদ্দেশ্যেই তিনি প্রেরিত হয়েছেন। কুরআনের হিফাযত এবং এর শিক্ষামালা প্রচারের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তাঁকে পাঠিয়েছেন। ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষা এবং এর জ্যোতি প্রচারের জন্য আল্লাহ্ তাঁকে প্রেরণ করেছেন।

তিনি (আ.) আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন। প্রথমতঃ মুসলমানদের ভেতর প্রকৃত ত্বাকওয়া ও পবিত্রতা সৃষ্টি করা আর দ্বিতীয়তঃ ক্রুশভঙ্গ করে খ্রিষ্টধর্মের অসারতা প্রমাণ করা। যাতে তারা ক্রুশীয় মতবাদ পরিহার করে এক খোদার ইবাদতকারীতে পরিণত হয়।

তিনি (আ.) একস্থানে বলেন, এ জামাত খোদার পক্ষ থেকে হলে তিনি একে সাহায্য করবেন এবং এর বৃদ্ধি ঘটাবেন। তোমাদের মধ্য হতে একজনও যদি আমার সাথে না থাকে তাতেও আমার কিছু যায় আসে না, তিনি আমাকে ক্রমান্বয়ে উন্নতি দিবেন আর নিজ ফিরিশ্তা দিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন, তাই আমি কোন বিরোধিতার ভয় করি না।

হুযূর বলেন, মসীহ্ মওউদ (আ.) খোদার এক পাহলোয়ান ছিলেন। তিনি খোদার কাছ থেকে জেনে অদৃশ্যের সংবাদ দিয়েছেন যা আজ ১২৭ বছর পরও আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হতে দেখছি। এখন আমাদের দায়িত্ব নিজেদের মাঝে পবিত্র পরিবর্তন সৃষ্টি করা আর তিনি (আ.) যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন তার প্রচার ও প্রসার ঘটানো।

এরপর হুযূর ধর্মীয় যুদ্ধ রহিত করার কারণ এবং এর পরিবর্তে কলমের যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করেন।

হুযূর বলেন, আজ যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে জিহাদের নামে নিরিহ মানুষদের হত্যা করছে তারা অন্যায় করছে এবং ইসলামের দুর্ণাম করছে। সম্প্রতি বেলজিয়ামে আত্মঘাতি বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে নিরিহ লোকদের হত্যার নেপথ্যে যারা আছেন তারা আর যাই করুক না কেন ইসলামের সাথে এর দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। সরকার বা বিশেষ গোষ্ঠী যারাই এই ন্যাক্কারজনক কাজে জড়িত আল্লাহ্ তাদের বিবেক-বুদ্ধি দিন, যেন তারা এই অপকর্ম থেকে বিরত হয়।

খুতবার শেষদিকে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে আল্লাহ্ তা’লা চার ধরনের যে নিদর্শন দিয়েছেন হুযূর তার উল্লেখ করেন এবং আহমদীদের দায়িত্ব বোধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মিশনকে পূর্ণ করার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।