ওয়াকফে জাদীদ-এর ৫৯তম বর্ষের ঘোষণা

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৮-জানুয়ারি, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ৮ই জানুয়ারী, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “ওয়াকফে জাদীদ-এর ৫৯তম বর্ষের ঘোষণা”- দিয়ে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, একবার হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর প্রতি ইলহাম হয় যে, “লা ইলাহা ইল্লা আনা ফাত্তাখিযনী ওকীলা” অর্থাৎ, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই তাই তুমি আমাকেই তোমার কার্যনির্বাহক বানাও। এই ইলহামের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে প্রবোধ দিয়েছেন যে, অন্য কারো প্রতি তোমার তাকানোর প্রয়োজন নেই, তোমার সব কাজের দায়িত্ব আমার। আমি যখন তোমাকে ইসলাম প্রচারের জন্য দন্ডায়মান করেছি তাই কোনরূপ উৎকন্ঠার প্রয়োজন নেই। কেননা, খোদার নির্দেশেই সব কাজ পরিচালিত হয় আর তিনিই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। আর এসব কাজের জন্য উপকরণও আমিই সরবরাহ করবো। এসব কাজ সম্পাদনে অন্যদের কোনই হাত নেই।

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, এই ইলহামের পর আমার ভয় হয় এবং আমার হৃদয় কেঁপে উঠে এই কারণে যে, আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে সম্ভবত আমার জামাত এতটাই অযোগ্য যে, খোদা এর নাম নেওয়াও পছন্দ করেন না। তিনি (আ.) জামাতের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই ইলহাম এমন যে, জামাতের সব সদস্যকে স্মরণ রাখা উচিত, আল্লাহ্ তা’লা তোমাদের খিদমতের মুখাপেক্ষী নন। তোমাদের সাহায্যের প্রত্যাশী নন। আর তোমাদের কুরবানীরও মুখাপেক্ষী নন। তিনি যখন এই জামাত প্রতিষ্ঠা করেছেন তখন একে পরিচালনা করার ব্যবস্থাও তিনিই করবেন। সেবার যে সুযোগ তোমরা পাও একে খোদার আশিস মনে করো।

হুযূর বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এই কথা জামাত অনুধাবন করেছে এবং তাঁর মিশনকে সফল করার জন্য সব ধরনের কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকারে ব্রত হয়েছে। তাঁর জীবদ্দশায়ও এমনটি হয়েছে আর তাঁর তিরোধানের পর আজ পর্যন্ত জামাতের নিষ্ঠাবান সমস্যরা নিঃস্বার্থভাবে এমনটি করে যাচ্ছে।

এরপর হুযূর জামাতের রীতি অনুসারে ওয়াকফে জাদীদ এর ৫৯তম বর্ষের ঘোষণা দেন এবং ৫৮তম বছরে জামাত কীভাবে এখাতে আর্থিক কুরবানী করেছে তার বিবরণ দেন। এবছর আল্লাহ্‌র ফযলে বিশ্ব জামাতে আহমদীয়া ওয়াকফে জাদীদ খাতে সর্বমোট ৬৮লক্ষ ৯১হাজার পাউন্ড আর্থিক কুরবানীর সৌভাগ্য লাভ করেছে।

এরপর হুযূর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দূর-দূরান্তের অঞ্চলে বসবাসকারী নিষ্ঠাবান নবাগত ও পুরনো আহমদীদের এখাতে চাঁদা প্রদান এবং এরফলে তারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কীরূপ প্রতিদান লাভ করেছেন তার উল্লেখ করেন। আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এমনকি বিশ্বের সকল প্রান্তে বসবাসকারী আহমদীরা কীভাবে আল্লাহ্‌র রাস্তায় কুরবানীর ফলে ঈমান ও আমলে সমৃদ্ধ হয়েছেন সে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঈমান উদ্দীপক ঘটনা হুযূর বর্ণনা করেন।

হুযূর বলেন, ২০১০ সাথে ওয়াকফে জাদীদ খাতে চাঁদা প্রদানকারীর সংখ্যা ছিল ৬লক্ষ কিন্তু এবছর তা ১২লক্ষ ৩৫ হাজারে উপনীত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্। তবে এক্ষেত্রে আরো উন্নতির অবকাশ রয়েছে।

এরপর হুযূর গত বছর এখাতে জামাতের আর্থিক কুরবানীর বিবরণ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বরাবরের মতো পাকিস্তান এবারও প্রথম স্থান ধরে রেখেছে। এছাড়া বহির্বিশ্বে যথাক্রমে শীর্ষ দশটি দেশ হলো, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, কানাডা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশীয়া, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ, বেলজিয়াম এবং দশম স্থানে ঘানা। এছাড়া স্থানীয় মুদ্রায় চাঁদা প্রদানের দিক থেকে প্রথম স্থানে আছে ঘানা এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

হুযূর সব আর্থিক কুরবানীকারীর ধন-সম্পদ ও জনবলে প্রভূত বরকত সৃষ্টির জন্য দোয়া করেন। আর আগামী বছর আরো বেশি সংখ্যক আহমদী এ খাতে কুরবানী করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

জুমুআর নামাযের পর হুযূর দু’টি গায়েবানা জানাযা পড়ান। এরমধ্যে একটি হচ্ছে, পাকিস্তানে হুযূরের প্রাইভেট সেক্রেটারী জনাব মুহাম্মদ আসলাম শাদ মঙ্গলা সাহেবের, যিনি গত ৩১ জানুয়ারী ৭১বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। আর দ্বিতীয় জানাযা পড়ান জামাতের মুরব্বী ওসামা জোইয়া সাহেবের পিতা জনাব আহমদ শের জোইয়া সাহেবের, যিনি বেলজিয়াম নিবাসী ছিলেন। হুযূর মরহুমদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।