মুসলমানদের ঈমান কি তাসের ঘর যে ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে?

মাওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী

সম্প্রতি প্রকাশিত ও প্রচারিত একটি আহ্‌মদীয়া-বিরোধী লিফলেট বেলজিয়ামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মাঝে ছড়ানো হয়েছে। প্রকাশক বা প্রচারকের নামবিহীন এই লিফলেটে সেই সব অভিযোগ-অনুযোগের চর্বিতচর্বনই যে সব উত্তর আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের পক্ষ থেকে আগেও বার বার প্রদান করা হয়েছে। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংক্ষিপ্তাকারে আবারও এক এক করে অভিযোগগুলোর উত্তর প্রদান করা হলো।

সম্প্রতি প্রকাশিত ও প্রচারিত একটি আহ্‌মদীয়া-বিরোধী লিফলেট বেলজিয়ামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মাঝে ছড়ানো হয়েছে। প্রকাশক বা প্রচারকের নামবিহীন এই লিফলেটে সেই সব অভিযোগ-অনুযোগের চর্বিতচর্বনই যে সব উত্তর আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের পক্ষ থেকে আগেও বার বার প্রদান করা হয়েছে। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংক্ষিপ্তাকারে আবারও এক এক করে অভিযোগগুলোর উত্তর প্রদান করা হলো।

প্রথম অভিযোগ হলো, আহ্‌মদীরা ইংরেজ শাসকদের চর। তাদের বানানো এজেন্ট। ইংরেজদের সমর্থনে ও ছত্রছায়ায় হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ কাদিয়ানী (আ.) প্রথমে মাহ্‌দী পরে মসীহ্ অর্থাৎ ঈসা (আ.) এবং আরও পরে সর্বশেষ নবী বলে দাবী করেছেন।

এই অভিযোগের সোজা সহজ উত্তর হলো, ‘লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন’-মিথ্যাবাদীদের প্রতি আল্লাহ্‌র অভিশাপ। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) প্রতিশ্রুত ইমাম মাহ্‌দী ও মসীহ্ হবার দাবী করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি কখনও নিজেকে সর্বশেষ নবী হিসাবে দাবী করেন নি। বরং তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন, শরীয়তের দিক থেকে এবং পরম আধ্যাত্নিক উৎকর্ষ লাভের দিক থেকে সর্বশেষ নবী হলেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। বৃটিশ রাজ উপমহাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর একটি অনেক বড় অংশ প্রায় দু’শ বছর ধরে শাসন করেছে। তাদের এই দীর্ঘ শাসন বৃটিশদের অসাধারণ রাজনৈতিক মেধা ও তীক্ষ্ণ প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। এই বৃটিশদের কি এতটুকু কান্ডজ্ঞান নেই – তারা এমন একজন এজেন্ট বা চর নিয়োগ করলো যার প্রথম দাবীই হলো – খৃষ্টানদের স্বাভবিক-সাধারণ মৃত্যুবরণ করেছেন? তিনি ইশ্বরও ছিলেন না আবার ইশ্বরপুত্রও ছিলেন না! ইংরেজরা কি নিজ ধর্ম ‘ত্রিত্ববাদের’ গোঁড়া কাটানোর জন্য কাউকে নিজের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে? আর যাই হোক বৃটিশদেরকে এত বোকা মনে করার কোন কারণ নেই।

লিফলেটে ঘোষণা করা হয়েছে, আহ্‌মদীরা যে অমুসলিম ও কাফের এ বিষয়ে সমগ্র বিশ্বের আলেম-উলামারা একমত।

এ বিষয়টা যাচাই করার দাবী রাখে। মুসলমানের সংজ্ঞা পবিত্র কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে দেয়া আছে। আল কুরআনে বলা আছে,

যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ্‌র কাছে পূর্ণাঙ্গীনভাবে সমর্পন করে আর একই সাথে সেই নেক ও উত্তম কাজে অভ্যস্ত তার পুরস্কার তার প্রভূ-প্রতিপালকের কাছে নির্ধারিত। এমন মানুষদের জন্য কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না। (আল বাকারা:১১৩ আয়াত)

অর্থাৎ মুসলমান হবার জন্য মহান আল্লাহ্‌র কাছে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পন করা আর নেক কাজ করা প্রধান শর্ত। হাদীস শরীফে মুসলমানের সংজ্ঞা পরিস্কারভাবে দেয়া আছে। মুসলিম শরীফের কিতাবুল ঈমানে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণিত আছে। হযরত জিবরাইল (আ.) ইসলাম ধর্মের সংজ্ঞা জানতে চাইলে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বললেন,

‘ইসলাম হলো, একথার সাক্ষ্য দেয়াঃ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন উপাস্য নেই আর হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা এবং রসূল আর নামায প্রতিষ্ঠা করা আর রমজানের রোজা রাখ’ আর যাকাত প্রদান করা আর সাধ্য ও সামর্থ থাকলে বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ করা।’ হযরত জিবরাইল (আ.) এই উত্তরের সত্যায়ন করে বললেন: ‘আপনি সঠিক বলেছেন।’

এই হলো স্বয়ং মহানবী (সা.) প্রদত্ত এবং ফিরিশতাদের নেতা হযরত জিবরাইল (আ.) কর্তৃক সত্যায়িত ইসলামের সংজ্ঞা। কলেমা, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জ হচ্ছে ইসলামের শর্ত। এই ইসলাম যারা পালন করবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা স্বয়ং মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করার নামান্তর।

বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাত-এ মহানবী (সা.) মুসলমানেরও সংজ্ঞা বর্ণনা করে বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে আর আমাদের ক্বিবলামুখী হয় আর আমাদের জবাই করা মাংস খায় সে মুসলমান। সে এমন মুসলমান যার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল (সা.) গ্রহণ করেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহ্‌র দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করো না।”

আমাদের প্রিয় প্রবাসী বাঙ্গালীদের বলবো, আল্লাহ্‌ ও তাঁর প্রিয়তম রসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রদত্ত মুসলমানের সংজ্ঞা জানার পর কোন মোল্লা-মৌলভীর অপ-প্রচারে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না। সমস্ত জগতের ‘ধর্মান্ধ উলামারা’ সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালালেও আল্লাহ্‌ ও রসূল প্রদত্ত মুসলমানের সংজ্ঞাকে পরিবর্তন করতে পারবেনা। আপনারা নির্দ্বিধায় আমাদেরকে অর্থাৎ আহ্‌মদীদেরকে কাছ থেকে যাচাই করে দেখুন আমরা এসব শর্ত মান্য করি কি না। যাচাই করে যদি আপনারা আমাদেরকে ইসলামের এসব শর্ত মান্য করি কি করি না দেখতে পান তখন আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন। কিন্তু তা না করে কলেমায় বিশ্বাসী কোন মানুষকে অন্ধভাবে কাফের ঘোষণা দেয়া মহাপাপ এবং কিয়ামত দিবসে এর জন্য মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে।

আহ্‌মদীয়া জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) বলেছেন,

“আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের সারাংশ ও সারমর্ম হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ্‌’। এই পার্থিব জীবনে আমরা যা বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার কৃপায় ও তাঁরই প্রদত্ত তৌফিক যা নিয়ে আমরা এই নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করবো তা হলো, আমাদের স্মানিত নেতা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) হলেন ‘খাতামান্‌ নবীঈন’‘খাইরুল মুরসালিন’ যাঁর মাধ্যমে ধর্ম পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে এবং যে নেয়ামত দ্বারা সত্যপথ অবলম্বন করে মানুষ আল্লাহ্‌তা’লা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস রাখি যে, কোরআন শরীফ শেষ ঐশী-গ্রন্থ এবং এর শিক্ষা, বিধান, আদেশ ও নিষেধের মাঝে এক বিন্দু বা কণা পরিমাণ সংশোধন বা রহিত কিম্বা কোন একটি আদেশকেও পরিবর্তন করতে পারে। যদি কেউ এমন মনে করে তবে আমাদের মতে সে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের জামা’ত বহির্ভূত, ধর্মত্যাগী ও কাফের। আর আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, সিরাতে মুস্তাকীমের উচ্চমার্গে উপনীত হওয়া তো দূরের কথা, কোন মানুষ আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ছাড়া এর সামান্য পরিমাণও অর্জন করতে পারে না। আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর সত্যিকার ও পূর্ণ অনুসরণ ছাড়া কোন ধরণের আধ্যাত্নিক সম্মান ও উৎকর্ষ কিম্বা মর্যাদা ও নৈকট্য লাভ করতে পারি না।” (ইযালায়ে আওহাম, প্রথম খন্ড, পৃ: ১৩৭-১৩৮)

লিফলেটে আহ্‌মদীদের পক্ষ থেকে নম্রভাষায় প্রচার, অপ্যায়ন ও মানুষকে প্রলোভন দেখানোর কথা বলা হয়েছে।

সত্যাম্বেষী বাঙ্গালীকে জানাচ্ছি, পবিত্র কুরআনে ধর্মপ্রচারের জন্য নম্র ও মিষ্টভাষা ব্যবহারের আদেশ রয়েছে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে নম্রভাষী ছিলেন। ফেরাউনের মত অত্যাচারী রাজাকে সত্য প্রচার করার সময়ও মহান আল্লাহ্‌ হযরত মুসা ও হযরত হারুন (আ.) -কে নম্রভাষণ অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই নিজেদের অকাট্য যুক্তিও প্রমাণ উপস্থাপনকালে আমরা আহ্‌মদীরা নম্র ও মিষ্ট ভাষণ অবলম্বণ করার চেষ্টা করি। ভদ্রতা ও বিনয় ঈমানের পূর্বশর্ত। মেহমানকে সাধ্যনুযায়ী আপ্যায়ন করা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমরা একাজ সঠিকভাবে করতে পারি না। আমাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য সীমিত। আমাদের আন্তরীকতাকে দয়া করে খারাপ দৃষ্টিতে দেখবেন না। বলা হয়েছে, আমরা মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে দলভূক্ত করে থাকি। আমরা জাগতিক কোন প্রলোভন দেখাই না তবে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর সন্তুষ্টি লাভের প্রলোভন অবশ্যই দেই। আমাদের কাছে একটি নিয়ামতের সংবাদ আছে। আর তা হলো, সেই প্রতিশ্রুত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) এসে গেছেন যাঁর আগমনবাণী স্বয়ং মহনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদেরকে দিয়ে গেছেন। অতএব, তোমরা ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে মান্য কর যেন মহানবী (সা.) -এর শাফায়াত লাভ করতে পার। এটা আমাদের ঈমানের বিষয়। আমরা নবীজী (সা.)-এর উম্মত হিসেবে ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে মান্য করার দায়িত্ব পালন করছি। আপনাদেরকেও দাওয়াত দিচ্ছি যেন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল (সা.)-এর সন্তুষ্টি লাভ হয়। এটা দোয় হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই আমরা এই দোষে দোষী আর এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হয়ে থাকলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বিষয়টা যাচাই করে দেখা আবশ্যক।

মহানবী (সা.) বলে গেছেন:

“যখন তোমরা ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সংবাদ পাবে তখন তাঁর কাছে বয়’আত করবে, বরফের পাহাড়ের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও যাবে কেননা তিনি আল্লাহ্‌র খলীফা আল মাহ্‌দী।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: বাব কুরুজুল মাহ্‌দী)

লিফলেটে বলা হয়েছে: আহ্‌মদীরা বলে যারা মির্যা গোলাম আহমদকে মানবে না তারা কাফের। এ কারণেই নাকি আমরা মুসলমানদের মসজিদে নামায পড়তে যাইনা।

বিষয়টা মোটেও এ রকম নয়। প্রকৃতপক্ষে, আহ্‌মদীয়া জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা ও তাঁর মুসলমান অনুসারীদেরকেই প্রথমে কাফের আখ্যা দেয়া হয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে এই অবস্থান গ্রহন করতে হয়েছে। ১৮৯১ সনে ৭২ দলের ২০০ জন আলেম-উলামা হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ কাদিয়ানী ও তাঁর অনুসারীদেরকে কাফের ফতোয়া দেন। কয়েক বছর পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত মির্যা সাহেব তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি নিজ মতবাদের সপক্ষে কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলিল প্রমান উপস্থাপন করেন। এসব সত্ত্বেও ৭২ ফিরকার আলোম-উলামা তাদের কুফুরী ফতোয়া তুলে নেন নি। তখন হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) বলেন,

সমস্ত যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করা সত্ত্বেও যেহেতু তোমরা আমাকে এবং আমার অনুসারী মুসলমানদেরকে কাফের বলে যাচ্ছো, এখন তোমাদের বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর সিদ্বান্ত প্রযোজ্য। তিনি (সা.) সাবধান করে গেছেন: “যখন একজন মুসলমান অপর একজন মুসলমান ভাইকে কাফের আখ্যা দেয় তখন এই ‘কুফুরী’ কাফের-আখ্যাদানকারী ব্যক্তির উপরেই বর্তায়।”

তখন থেকে আমরা কাফের আখ্যাদানকারী কাউকে নিজেদের নামাযের ইমাম হিসেবে মানিনা। মোদ্দা কথা, মহানবী (সা.)-এর শিক্ষানুযায়ী, মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যাদানকারী লোককেরা মুসলমানদের ইমাম থাকতে পারে না। তবে মসজিদ নিয়ে আমাদের বিতন্ডা নেই। সব মসজিদই আল্লাহ্‌র ঘর। সব জায়গায়ই নামায হয়। তবে ইমাম নির্ধারণে আমরা সাবধানতা অবলম্বন করে থাকি।

আলোচ্য লিফলেটে বলা হয়েছে, আমরা নাকি মহনবী (সাঃ)-কে ‘শেষ নবী’ হিসেবে মানি না। মির্যা গোলাম আহমদকে আমরা নবী বলে মানি। কিন্তু একথা আমরা প্রথমে গোপন রেখে মানুষকে ব্রেইন ওয়াশ করার পর প্রকাশ করি, ইত্যাদি।

এ প্রসঙ্গে পরিস্কার কথা হলো, যারা আমাদের বিরুদ্ধে ‘সর্বশেষ নবী’ না মানার অভিযোগ তুলেছেন তারাই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহানবী (সা.)-কে সর্বশেষ নবী মানেন না; তারা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টায় রত। তাদেরকই জিজ্ঞেস করুন, ঈসা নবী (আ.) মহানবী (সা.) উম্মতে আবার আসবেন কিনা? উত্তরে তারা বলবেন অবশ্যই আসবেন। তবে তিনি পুরনো নবী, তাঁর আগমনে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ‘শেষত্ব’ ধবংস হয় না। কী অদ্ভুত যুক্তি। এক মুখে বলছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী তার পরে কোন নবী নেই, আবার, সেই একই মুখে বলছেন তাঁর পর ঈসা নবী (আ.) আসবেন! তাহলে শেষ নবী কে হলেন? আমাদের নবী (সা.) নাকি ঈসা (আ.)? এখন আহ্‌মদীদের বক্তব্য শুনুন। আমরা বলি, ইহুদী উম্মতের ঈসা (আ.) স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। যে ঈসা (আ.)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বানী ছিল, তিনি হলেন ঈসা (আ.)-এর গুনে গুনান্বিত হয়ে, তাঁর মত দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে এই উম্মতে জন্মগ্রহণকারী একজন রূপক ঈসা (আ.)। তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী হবেনা। তাঁরই আনুগত্য ও প্রেমের কারণে আল্লাহ্‌ তা’লা তাঁকে ‘আনুগত্যকারী নবুওত’ বা ‘ছায়া নবুওত’ দান করবেন। ছায়া নবুওত বা আনুগত্যকারী নবুওত বলতে কোন নতুন শরীয়ত বা বিধান বুঝায় না বরং মহানবী (সা.)-এর বরকতে এমন আধ্যাত্নিকতা বুঝায় যখন মানুষ তার প্রভূ-প্রতিপালকের সাথে অধিক পরিমানে সংলাপের সৌভাগ্য লাভ করে। এই উম্মতের মাছে মহানবী (সা.)-এর আনুগত্যের শর্তসাপেক্ষে এই নিয়ামত লাভ করার কথা কুরআন শরীফে আল্লাহ্‌ তা’লা সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে উল্ল্যেখ করেছেন। আমাদের মতে খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এত বড় নবী যে তাঁর নগণ্য সেবকও আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় আধ্যত্নিকতার শেখরে পৌছতে পারে তবে সে মহানবী (সা.)-এর অনুসারীই থাকবে, খাতামান নবীঈন (সা.)-এর আনুগত্যের বিন্দুমাত্র বাইরে যেতে পারবেনা। এ অর্থেই মহানবী (সা.) নিজেই তাঁর আগমনকারী মহান পুরুষকে ঈসা ‘নবীউল্লাহ্‌’ বলে আখ্যা দান করেছেন।

এই ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের পর পাঠক মাত্রই বিচার করতে পারবেন কারা মহানবী (সা.)-কে সঠিক অর্থে খাতামান নবীঈন মান্য করেন? যারা বাইরের উম্মত থেকে স্বাধীন ইহুদী মতবাদের নবীর আগমনে বিশ্বাসী তারা, নাকি যারা মহানবী (সা.)-এর অনুগত্য সাপেক্ষে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভে বিশ্বাসী তারা?

আলোচ্য লিফলেটের এক পর্যায়ে আহ্‌মদীরা অন্য মুসলমানদের সাথে আত্নীয়তা করে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাদের মৃতদের দাফন করেনা বলে উল্ল্যেখ করা হয়েছে।

এই বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশটি ডাহা মিথ্যা। আহ্‌মদীরা অহরহ তাদের মৃতদেরকে সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে কবর দিয়ে থাকে। ঢাকার আজিমপুর, বুদ্ধিজীবি, বনানী কবরস্থান ইত্যাদি অনেক কবরস্থানে আহ্‌মদীয়া জামাতের প্রাক্তন নেতাদের কবর বিদ্যমান। অতএব এই লিফলেট প্রকাশকারীরা যে মিথ্যাবাদী এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমানিত।

বাকী রইল বিয়ের প্রসঙ্গ। যে স্বামী আহ্‌মদী হন বা যে স্ত্রী আহ্‌মদীয়া মতবাদ গ্রহণ করেন তাদের আত্নীয়তার সম্পর্কে কোন তারতম্য সৃষ্টি হয় না বা আত্নীয়তা ছিন্ন হয় না। তবে সাধারণভাবে পারিবারিক অশান্তি এড়ানোর জন্য আহ্‌মদীরা এমন কোন পরিবারে বিয়ে করে না যারা তাদেরকে কাফের জ্ঞান করে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে যারা আহ্‌মদীয়াদেরকে বাংলাদেশে অমুসলমান ঘোষণার আন্দোলনে মাঠ গরম করে থাকেন তারাই কিন্তু জোর গলায় সাধারণ মুসলমানদেরকে বুঝিয়ে থাকেন, খবরদার! আপনারা আহ্‌মদীয়াদের সাথে শুধু যে আত্নীয়তা করবেন না তাই নয় বরং কোন রকম সম্পর্কই রাখবেন না। এমতাবস্থায়, আপনারাই বলুন কোনো মানুষ কি জেনেশুনে পারিবারিক জীবনটা অশান্তির বানাতে চাইবে?

লিফলেটের শেষের প্যারায় সাধারণ মুসলমানদেরকে আহ্‌মদীয়াদের সাথে মেলামেশা করার, তাদের অনুষ্ঠানে বা আমন্ত্রনে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আহ্‌মদীদের বক্তব্য ও যুক্তি শুনতেও নিষেধ করা হয়েছে।

একথা আমাদেরকে ১৪০০ বছর আগের মক্কার অস্বীকারকারী যালেমদের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী এরা মক্কার জনসাধারণকে সত্য-বিমুখ করে রাখার জন্য বলতো-“লা তাসমাউ লেহাযাল কুরআন ওয়ালগাও ফিহি।” অর্থাৎ তোমরা এই কুরআনের বাণী শোনারও চেষ্টা করো না বরং কুরআন পাঠের সময় হৈ চৈ করবে। এ যুগের উগ্র সাম্প্রদায়িক লোকেরাও মানুষকে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ দিতে ভয় পায়। পাছে তাদের নিজেদের মুখোশ খসে পড়ে। নিরীহ মুসলমানরা জানতেও পারে না তাদেরকে কত বড় আধ্যত্নিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তাদেরকে একতা ও ভ্রাতৃত্বের কত বড় নেয়ামত থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এই উগ্র-সাম্প্রদায়িক চক্রকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করতে চাই মুসলমানদের ঈমান কি এতই নাজুক একটা তাসের ঘর যে মানুষের মুখের ফুৎকারে তা উড়ে যাবে? আপনাদের শত ফতোয়া ও বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ যেমন আগেও সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে এখনও সচেতন মানুষকে আপনাদের এসব ফতোয়া ধরে রাখতে পারবে না। সাধারণ বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে কবির ভাষায় কেবল এতটুকু অনুরোধ করবো:

যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন॥