হযরত উসমান গণী (রা.)

খিলাফত কাল: ৬৪৪-৬৫৬ খ্রীস্টাব্দ

হযরত উসমান গনী (রা.) কুরাইশের বিখ্যাত উমাইয়া পরিবারের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তাঁর (রা.) এবং মহানবী (সা.)-এর বংশ পাঁচ পুরূষ পুর্ব পর্যন্ত একই ছিল। দরিদ্রদের জন্য তাঁর উদারতা এতই সুবিদিত যে তিনি ‘গনী’ উপাধি লাভ করেন।

হযরত উসমান (রা.), হযরত উমর (রা.) কর্তৃক নিযুক্ত পরিষদের দ্বারা তৃতীয় খলিফা নিযুক্ত হন। মৃত্যুর পুর্বমুহূর্তে, হযরত উমর (রা.) মৃত্যুশয্যায় শায়িত থাকা অবস্থায়, পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের জন্য একটি পরিষদের নিযুক্তি দেন। পরিষদটি গঠিত হয় ছয়জন ব্যক্তির সমন্ময়ে:

হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.)

হযরত তালহা (রা.)

হযরত আলী (রা.)

হযরত উসমান গণী (রা.)

হযরত সা’দ (রা.)

হযরত যুবাইর (রা.)

হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.) খেলাফতের দায়িত্বের গুরূভার স্কন্ধে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না এবং তিনি অন্য পাঁচজনের পক্ষে খেলাফতের নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। তাই, তাঁকে পরবর্তী খলিফার জন্য সাধারণ মতামত গ্রহণের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.) পরিষদ সদস্যগণের এবং বিশিষ্ট মুসলমানদের মতামত গ্রহণ করেন। বেশির ভাগ লোকের মতামত হযরত উসমান (রা.)-এর পক্ষে যায়। তাই তিনি নির্বাচিত খলীফা হিসেবে ঘোষিত হন এবং সবাই তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহণ করেন।

হযরত উসমান (রা.) তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু হযরত আবু বকর (রা.)-এর তবলীগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তি, কিন্তু তিনি অত্যন্ত কষ্টের সম্মুখীন হন যখন তাঁর চাচা তাঁকে নির্যাতন করতে শুরু করে। তিনি দু’বার হিজরত করেন, প্রথমে আবিনিসিয়ায় এবং পরে মদীনায়।

মহানবী (সা.) হযরত উসমান (রা.) কে অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং তাঁর কন্যা হযরত রুকাইয়াকে তাঁর সাথে বিবাহ দেন এবং তার মৃত্যুতে তাঁরই দ্বিতীয় কন্যা হযরত উম্মে কুলসুমকে তাঁর সাথে বিবাহ দেন। এই জন্য হযরত উসমান (রা.) কে ‘যুন্নুরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূরের অধিকারী’ বলা হয়ে থাকে।

হযরত উসমানের (রা.) খেলাফতের সময়ও ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে, ইরানে এক বিদ্রোহের দমন করা হয়। উত্তরাঞ্চলে রোমানরা আবারও হযরত আমীর মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাস্ত হয়। রোমানরা সাগরপথে মিসর আক্রমণ করতে আসে এবং আরও একবার মুসলিম সৈন্যদের দ্বারা বিতাড়িত হয়। এসব যুদ্ধের ফলে, সমগ্র ইরান, এশিয়া মাইনর এবং মিসর মুসলিম নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তাঁর সময়েই নৌবাহিনী এবং ইসলামী নৌবহর প্রতিষ্ঠিত হয়।

তাঁর খেলাফতের সময় হযরত আবু বকর (রা.)-এর কৃত সংকলন থেকে পবিত্র কুরানের কতিপয় প্রামাণ্য নকল প্রস্তত করা হয় এবং তা রাষ্ট্রের সকল প্রদেশে প্রেরণ করা হয়। এটা অবশ্যই তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আজ আমরা যে পবিত্র কুরআন দেখতে পাই ,তা তাঁর খিলাফতকালে তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংকলিত হয়েছিল। তাঁর খেলাফতের শেষ ছয় বছর, আব্দুল্লাহ বিন সাবাহ (এক ইহুদী, যে ইসলামী রাষ্ট্রকে দুর্বল করার দূরভিসন্ধিতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল) সহ কতিপয় গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে, বিশৃংখলা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে অতিক্রান্ত হয়।

হযরত উসমান (রা.) কে তাঁর ৮২ বছর বয়সে ১৭ই জুন ৬৫৬ খ্রীস্টাব্দে, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় শহীদ করা হয়। তিনি নিশ্চিতভাবে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে খেলাফতের মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন, মহানবী (সা.) যাঁদের বেহেস্‌তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

মূল ঊর্দু: মজিদ আ. মিয়া

বাংলা অনুবাদ: মুহাম্মদ সেলিম খান

জুমুআর খুতবা