হযরত মির্যা নাসের আহমদ – খলীফাতুল মসীহ্‌ সালেস (রাহে.)

খিলাফত কালঃ ৮ই নভেম্বর ১৯৬৫ইং – ৯ই জুন ১৯৮২ইং

তালমুদে একটি শ্লোক রয়েছে যে, প্রতিশ্রুত মসীহের ইন্তেকালের পর তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার তাঁর পুত্র এবং পৌত্রের নিকট প্রবাহিত হবে। অন্যত্র, প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ) তাঁর ‘হাকীকাতুল ওহী’তে আল্লাহ্তা’লা তাঁকে, তাঁর চার পুত্র এবং এক পৌত্রের জন্মের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেই বহু কাংক্ষিত ভবিতব্য পূর্ণতা লাভ করে যখন হযরত মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ আহমদকে ১৬ই নভেম্বর ১৯০৯ এক পুত্র প্রদান করা হয়। তাঁর নাম রাখা হয় নাসের আহমদ। ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখিত পৌত্র হযরত হাফিয মির্যা নাসের আহমদ ব্যতিরেকে আর কেউ নন। হযরত উম্মুল মোমেনীন (প্রতিশ্রুত মসীহের বেগম সাহেবা) নাসের আহমদকে বলতেন, ‘আমার মোবারক এবং আমার ইয়াহিয়া’। তিনি এক স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, “মোবারক ফিরে এসেছেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, মা, আমি এখন আর দূরে চলে যাবো না।”

হযরত নওয়াব মোবারাকা বেগম সাহেবাও এই বিষয়ে একটি স্বপ্ন দেখেন। তদুপরি, ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯০৯ সালে, মির্যা নাসের আহমদের জন্মের পূর্বে তাঁর পিতা হযরত মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ আহমদ, খলিফাতুল মসীহ্ সানী (রাঃ), তাঁর এক বন্ধুকে লিখেন যে, আল্লাহতা’লা আমাকে জানিয়াছেন যে, তিনি আমাকে এমন একজন পুত্র দান করবেন যে ইসলামের কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

প্রপৌত্র সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী যাতে ‘ইয়াহিয়া’র ব্যাপারে বলা হয়েছে, সেই প্রসংগে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বলেন যে, মোবারকের বিপরীতে (যে খুব অল্প বয়সেই মারা যায়) তাকে দীর্ঘ জীবন প্রদান করা হবে।

পবিত্র কুরআন হতে আমরা জানতে পারি যে হযরত ইয়াহিয়াকে অল্প বয়সেই আল্লাহতা’লার বাণী শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। সাদৃশ্যস্বরূপ হযরত সাহেবজাদা মির্যা নাসের আহমদও খুব অল্প বয়সে পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেন।

হযরত হাফিয মির্যা নাসের আহমদ (রহঃ) ১৯৬৫ সালে তৃতীয় খলীফার মসনদে সমাসীন হন এবং তখন থেকে এই জামাতের মিশনারী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে।

তিনি ১৯৬৭ সালে বলেন,

“আমি সারা বিশ্বের আহ্‌মদীদের বলতে চাই যে, পরবর্তী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লব পৃথিবীর ভিত্তিমূলে নাড়া দিবে।

আমি বলতে পারবো না কোন সেই জাতি সেরূপ সৌভাগ্যশালী হবে যে আহ্‌মদীয়াতের সত্যতাকে ব্যাপক ভাবে গ্রহণ করবে এবং সেসব জাতি আফ্রিকার হবে কিংবা ইংরেজ বা অন্যরা। কিন্তু আমি আপনাদের প্রত্যয়ের সাথে বলতে চাই যে, সে দিন বেশি দূরে নয় যখন কতিপয় দেশ বা তাদের অংশবিশেষ আহ্‌মদীয়াত গ্রহণ করবে এবং তাদের সরকার আহ্‌মদীদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এই বিষয়ে প্রতিশ্রুত মসিহ্ (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং দিব্যদর্শন অত্যন্ত পরিস্কার।

এটা জানা নেই যে, পৃথিবিব্যাপী সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য আপনাদের কোন অগ্নিকুণ্ডের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে, কিন্তু সেই পরিপূর্ণতার দিনের পূর্বে আপনাদেরকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষার মধ্যে ফেলা হবে।

সুতরাং, সেই অতি গুরুত্ববহ ঘটনার জন্যে আপনাদেরকে অবশ্যই প্রস্ততি নিতে হবে, যা দুনিয়ার বুকে আল্লাহতা’লার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্‌ঘোষক, যার স্বরূপ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) এবং তাঁর সুযোগ্য প্রতিনিধি প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন”।

১৯৬৭ সালে ঐতিহাসিক ইউরোপ সফরে হযরত খলিফাতুল মসীহ্‌ সালেস (রাহেঃ) ইউরোপকে
সতর্ক করেনঃ

“প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের, যা দ্বিতীয়টি থেকেও ভয়াবহ হবে, সংঘটিত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। দুই বিরোধী শিবির এমনই অকস্মাৎ সংঘাতে জড়িয়ে পরবে যে, সকলেই তাজ্জ্বব বনে যাবে। আকাশ থেকে মৃত্যু এবং ধ্বংসের বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং প্রচণ্ড অগ্নিকুণ্ড পৃথিবীকে গ্রাস করবে। আধুনিক সভ্যতার অতিকায় সৌধসমূহ ধূলিস্যাত হবে। এই ধ্বংসলীলায় কমিউনিস্ট এবং তাদের বিরূদ্ধবাদীরা বিনাশ হবে। একদিকে রাশিয়া ও তার অনুসারীরা এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তাদের শক্তিমত্তা লোপ পাবে, তাদের সভ্যতা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে এবং তাদের ব্যবস্থাপনা চূর্ণবিচূর্ণ হবে। যারা বেঁচে যাবে তারা ভীতিবিহ্‌বল এবং বিস্ময়াভিভূত হয়ে সেই বিয়োগান্তক নাটকের দৃশ্য অবলোকন করবে……।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যবনিকাপাত হওয়ার পর ইসলামের বিজয় সূচিত হবে। লোকজন দলে দলে ইসলামের সত্যতা গ্রহণ করবে এবং উপলব্ধি করতে পারবে যে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম এবং মানুষের মুক্তি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণীকে গ্রহণের মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব………।

কিন্তু হে ভদ্র-সমাজ। যেন ভুলে না যান যে এ ভবিষ্যদ্বাণী, সকল ভবিষ্যদ্বাণীর মতো, একটি সতর্কবাণী এবং এর পরিপূর্ণ হওয়া বিলম্বিত হতে পারে এমনকি রহিতও হতে পারে; শর্ত এই যে মানুষ তার প্রভূ- প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসে, অনুতাপ করে এবং নিজ সংশোধন করে। মানুষ সম্পদের, ক্ষমতার এবং মিথ্যা সম্মানের পূজা করা বন্ধ করে এবং তার প্রভুর অকৃত্রিম সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে, সকল প্রকার সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থেকে, মানুষ ও খোদাতালার প্রতি তার দায়িত্বাবলী পালনের মাধ্যমে এবং সত্যিকার ভাবে মানবিক কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে ঐশী ক্রোধ এড়াতে পারে”।

১৯৭০ সালে তাঁর ঐতিহাসিক পশ্চিম আফ্রিকার ছয়টি দেশ সফরকালে তিনি ঘোষণা করেনঃ

“সকল মানুষ সমান, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। যদি পৃথিবী এই বিষয়টি বুঝতে পারে তাহলে এখানে অনেক অল্প সমস্যা থেকে যাবে”।

৩রা জুলাই ১৯৭০ সাল, তিনি এ্যাবটাবাদে এক খুতবায় ঘোষণা করেনঃ

“আফ্রিকার মাটিতেই ইসলাম ও খ্রীস্টান ধর্মের শেষ আধ্যাত্মিক লড়াই অনুষ্ঠিত হবে”।

“ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা লক্ষ্য করতে পারি যে অধিকাংশ মানুষ নাস্তিকতা কিংবা সংশয়বাদের কবলে নিপতিত। দৃষ্টান্ত স্বরূপ রাশিয়া, চীন – যারা সরকারীভাবে আল্লাহতা’লাকে নির্বাসিত করেছে। কিছু ইউরোপীয় দেশে ভাবাদর্শে ঠিক তেমনি অবস্থা বিরাজ করছে, যদিও কোন এখন পর্যন্ত কোন সরকারী ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি যে সমগ্র ইউরোপ ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে খ্রীস্টান। ইংল্যান্ডকে খ্রীস্টান দেশ বলা হয় এবং তা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু অংশের জন্যও প্রযোজ্য।

আপনারা শুনে বিস্মিত হবেন যে, আমি লক্ষ্য করেছি যে লন্ডনে কিছু চার্চের গায়ে ‘বিক্রি হবে’ পোস্টার লাগানো র‌য়েছে। এসব দেশ কেবল নামমাত্র খ্রীস্টান। দেশের নাগরিকরা জানেও না খ্রীস্টান মতবাদ বলতে কি বুঝায়……।

ভালকথা, আজকের বিশ্ব মানচিত্র অনুসারে, আমরা দেখতে পাই যে, কিছু দেশ খোলাখুলি ভাবে নাস্তিকতাবাদ অথবা সংশয়বাদের অবলম্বন করেছে। দৃশ্যপটের শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার সংগ্রামক্ষেত্র, যেখানে ইসলাম এবং খ্রীস্টান শক্তি প্রাধান্য লাভের মরণপণ সংগ্রামে রত। …… যদি আমরা আফ্রিকা জয় করতে পারি তবে খ্রীস্টানদের জন্য স্পেন কিংবা দক্ষিণ আমেরিকায় পাল্টা জবাবের (আধ্যাত্মিক) জন্য পুনর্গঠিত হওয়া দূরূহ হয়ে পড়বে। তাদের সফলতা লাভ করার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আঃ) খ্রীস্টান ধর্মবিশ্বাসের বিরূদ্ধে যত বিস্তারিত এবং প্রত্যয়পূর্ণ দলিল প্রমাণাদি সুবিন্যস্ত করেছেন, তাতে যে কেউ এই কাজের বিশালতা দেখে আশ্চার্যান্বিত হবে; অত্যন্ত নিখুঁত এবং নির্ভুল ভাবে তিনি সামগ্রিক এবং সম্পুর্ণ ভাবে এই সৌধকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছেন”।

“ফযলে উমর ফাউন্ডেশন”–“নুসরত জাহান লীপ ফরোয়ার্ড স্কিম”-“জুবিলী ফান্ড” তৃতীয় খেলাফতের মহান অর্জনসমূহের মাত্র কয়েকটি উল্ল্যেখযোগ্য দিক।

কিন্তু তাঁর স্বর্ণালী কৃতি হলো জামাতের প্রতি তাঁর সেই দিকনির্দশনা যা তিনি পাকিস্তান সরকারের ধর্মপরায়ণ আহ্‌মদীদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রদান করেছিলেন। যার ফলে জামা’ত সার্বিকভাবে বিভাজনের কবল থেকে বেঁচে যায়। এতে এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় যে, খলীফা কোন কাগুজে-বাঘ নন এবং তিনি দুর্যোগ দুর্বিপাক সামলাতে পারেন। তেমনি সমভাবে ঐতিহাসিক তাঁর সেই খুতবা যাতে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন যে আমরাই প্রকৃত মুসলিম।

“আমরা বেদনাবিধূর সময় অতিক্রম করেছি এবং এখন ও আমরা সংবাদ পাচ্ছি যে যেখানেই আহ্‌মদীদরা সংখ্যায় নগণ্য এবং তারা নাজুক সেখানেই তাদের একঘরে করা হচ্ছে। তারা খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করতে পারছে না। দোকানদারদের বলা হচ্ছে যে যেন এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও আহ্‌মদীদের নিকট বিক্রি করা না হয় এবং পানি সরবরাহকারীদের বলা হচ্ছে যেন তারা আহ্‌মদীদের পানি সরবরাহ না করে। আমারা এ বিষয়ে চিন্তিত নই যে আমাদেরকে ক্ষুধায় কষ্ট দেওয়া হচ্ছে কারণ, এ ব্যাপারে আমাদের পবিত্র কুরআনে পূর্বেই সতর্ক করা হয়েছেঃ

“আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই কিছু ভয়ভীতি ও ক্ষুধা, ধন-সম্পদ,প্রাণসমূহ এবং ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব”। (২:১৫৬)

যেসব প্রতিবেদন আসছে তাতে প্রতিয়মান হয় যে ঠিক এই সময়ে আহ্‌মদীদের খাদ্য ও পানীয় থেকে বঞ্চিত রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের খবর পাওয়ার পর আমার স্মরণে আসছে এবং আমি তাদের স্মরণ করাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় নেতা, নবীগনের মোহর, মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) মক্কী জীবনে সকল মুসলমানদের সাথে আবু তালিবের সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াই থেকে তিন বছর যাবত বন্দীদশায় ছিলেন। তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পীড়া দেওয়া হয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আল্লাহতা’লা এমন ব্যবস্থা করেছিলেন যেন তারা ক্লেশহীন ভাবে জীবনধারণের উপযোগী সামগ্রী পেতে পারেন।”

হযরত মির্যা নাসের আহমদ (রহঃ)-এর দিকনির্দেশনায় আহ্‌মদীয়া জামা’ত বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মিশন কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা, মসজিদ নির্মাণ, পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করে।

পশ্চিম আফ্রিকা সফরের পর তিনি তার জুম’আর খুতবায় আপন অভিজ্ঞতার কথা এভাবে বর্ণনা করেনঃ

“আমি পশ্চিম আফ্রিকাতে গিয়েছি তাদের জন্য ইসলামের ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের বাণী নিয়ে। আমি প্রায় মাসব্যাপী আমার সফরের প্রান্তে এসে আপনাদের একথা বলতে চাই, কিভাবে সফরের প্রতিটি স্তরে আল্লাহতা’লা আমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি যা দেখেছি, যা কিছু পর্যবেক্ষণ করেছি এবং যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আমার পক্ষ থেকে আমি তাদের এবং তাদের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য জাতিকে ইসলামের সম্প্রীতির বাণীকে, যা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে ইসলাম ঘোষণা করেছে।”

আমি তাদের সাথে মমতা, সহানুভূতি এবং ভ্রাতৃত্বের প্রেরণায় কথা বলেছি এবং তাদের ইসলামের সাম্যতার সুসংবাদ পৌঁছিয়েছি। আমি বরং একধাপ এগিয়ে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনাচার থেকে,তাদের ব্যবহারিক ভাবে প্রদর্শন করেছি যে ‘হোমো সেপিয়েন্স’ হিসেবে একজন মানুষের সাথে অন্যজনের কোন স্বাতন্ত্র্য নেই। আমি হাজারো শিশুকে আদর করেছি এবং অসংখ্য মানুষের সাথে হাত মিলিয়েছি। কখনো কখনো তা করেছি যখন উষ্ণতা চরমে ছিল এবং আমি অনুভব করছিলাম যে আমি সংজ্ঞা হারাব।”

অন্য এক খুতবায় তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে খ্রীস্টান ধর্ম বিশ্বাস এবং ইসলামের মধ্যে সর্বশেষ আধ্যাত্মিক লড়াই আফ্রিকার মাটিতে সংঘটিত হবে।

তিনি আহ্‌মদীদেরকে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণতর করার উপদেশ দেন, যেন বিজয় কাংখিত সময়ের পূর্বেই আসতে পারে।

হুযূর তাঁর এক বক্তৃতায় বলেনঃ

“যখনই আল্লাহতা’লা কাউকে পৃথিবীতে সংস্কারক মনোনীত করেন, তিনি স্বয়ং তাকে সহায়তা করেন এবং তাঁর প্রেরিত ব্যক্তির সফলতার জন্য তিনি এক অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর অনুগ্রহরাজি বর্ষণ করেন। হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর আগমনের পর থেকে যত সব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, হোক তা ছোট কিংবা বড়, তা এই আন্দোলনের জন্য পরিপুরক সাব্যস্ত হয়েছে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার বিপ্লবের উদাহরণ, এটি পৃথিবীর এক বড় অংশ থেকে খ্রীস্টান ধর্মবিশ্বাসকে মুছে দেয়। খ্রীস্টান ধর্মবিশ্বাসে একজন মানুষকে ‘খোদা’ রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে, এই মূর্তি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করা হয়, কিন্তু তা লাঠির আঘাতে করা হয়নি বরং অকাট্ট যুক্তির বলে, ঐতিহাসিক প্রমাণ
এবং বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আঃ) বলেন যে, তিনি সেই ক্রুশকে ধবংস করবেন যা যীশু খ্রীস্টের পবিত্র বদনকে আহত করেছিল। বস্তুত তিনি অখণ্ডনীয় দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে যীশু ক্রুশে মারা যাননি। যীশুর ক্রুশ মুক্তির উপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন খ্রীস্টান জগতকে নাড়া দিয়েছে। খ্রীস্টান মিশনারীরা এই বিষয়ের উপর আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করার সামর্থ্য রাখেন না, তারাই সেই লোক যারা প্রতিশ্রুত মসীহের আগমনের পূর্বে এই ধারণা পোষণ করতো যে তারা ভারত, মক্কা ও মদীনা থেকে ইসলামকে মিটিয়ে দিবে। তারা ভেবেছিল যে আফ্রিকা তাদের অধিস্থান। কিন্তু ভারত, মক্কা এবং মদীনার কথা দূরে থাক; আফ্রিকা, যেখানে তারা দুধের টিন, চিনি ও কাপড় এবং স্কলারশিপ দিয়ে লোকদের হাত করেছিল, সেখানে আহ্‌মদী মিশনারীরা আল্লাহতা’লার ফযলে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।”

একটি খবরের কাগজ ‘ক্যালগ্যারী হেরাল্ড’ এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৬ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ সালেঃ

ইসলামের নেতা এখানে

“হযরত হাফিয মির্যা নাসের আহমদ, ইসলামে আহ্‌মদীয়া আন্দোলনের প্রধান, রবিবার ক্যালগারীতে তাঁর চার দিনের পরিদর্শন শুরু করবেন। অনুসারীদের নিকট খলিফাতুল মসীহ্‌ সালেস বলে পরিচিত, হযরত মির্যা গোলাম আহমদের পৌত্র এবং বিশ্বাস করা হয় তিনি প্রতিশ্রুত মসীহের তৃতীয় স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি, তাঁর র‌য়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী। আহ্‌মদীয়া আন্দোলন ইসলামের একটি মিশনারী শাখা, পৃথিবীব্যাপী এর রয়েছে ১০ মিলিয়নের অধিক সদস্য এবং তারা পবিত্র কুরআন এবং অন্যান্য ইসলামী সাহিত্য ১০০’র অধিক ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করেছে”।

১৯৭৬ সালে তিনি আমেরিকা, কানাডা, নরওয়ে, পশ্চিম জার্মানী, হল্যান্ড, সুইডেন এবং ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। সেই সফরে তিনি সুইডেনে ‘নাসের মসজিদে’র উদ্বোধন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং পশ্চিম জার্মানী সফর করেন। সেই সফরে তিনি লন্ডন কনফারেন্সে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তিনি স্পেনের পেড্রোয়াবাদে ‘বাশারত মসজিদে’র উদ্বোধন করেন।

১৬ বছরের অধিক খিলাফতের দায়িত্ব পালনের পর, অসামান্য সফলতার সাথে ইসলামের বিজয়ের ধারাকে এগিয়ে দিয়ে, তিনি ৯ই জুন ১৯৮২ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন।

বাংলা অনুবাদ: মুহাম্মদ সেলিম খান

পুস্তক