হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) পবিত্র কুরআনই যার ধ্যান-জ্ঞান

মাওলানা জাফর আহমদ

হযরত মৌলভী আলহাজ্জ হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) সেই সৌভাগ্যশালী ব্যক্তি ছিলেন যিনি এ যুগের প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হযরত মির্যা গোলাম আহমদ তথা ইমাম মাহদী (আঃ)-এর হাতে সর্ব প্রথম বয়আত গ্রহণ করেন। হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) তাঁকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন ও সবচেয়ে সত্যবাদী বন্ধু হিসেবে আখ্যা দেন। তাঁর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি (আঃ) বলেন, ভালবাসা ও আনুগত্যের দিক দিয়ে তিনি আমার অনুসারীদের মাঝে সবচেয়ে বেশী অগ্রগণ্য।

হযরত মাওলানা হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) মূলত বর্তমান পাকিস্তানের সারগোদা জেলার ভেরার অধিবাসী। তিনি ১৮৪১ সালের দিকে ভেরায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাফেয গোলাম রসূল ও মাতার নাম নূর বাখত ছিল। এই মহান ব্যক্তির বংশ হযরত উমর (রাঃ) থেকে এসেছে বলে তার পূর্ব পুরুষগণ বলে থাকেন। তাঁর পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই জ্ঞান চর্চা ও কুরআন তেলাওয়াতের বহুল প্রচলন ছিল। হুযূর (রাঃ)-এর নয় ভাই বোন ছিলেন আর তিনি সর্বকনিষ্ঠ। সকল ভাই বোনই কুরআন করীম খুব ভালভাবে পড়তে পারতেন। তাদের পরিবারের এটি নিয়ম রীতি ছিল যে তারা নিজেরা কুরআন পড়তেন ও অন্যদের শেখাতেন। হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর মা মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই গ্রামের লোকদের কুরআন পড়া শিখাতেন। হযরত রসূলে করীম (সাঃ)-এর সেই হাদীস, “তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন নিজে শিখে এবং অপরকে শিখায়।” এর বাস্তব রূপ হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর পরিবারের মাঝে দেখা যায়। হুযূর (রাঃ)-এর বড় বোনের বিবাহের সময় তখনকার দিনে তাঁর পিতা এক ব্যক্তিকে দিয়ে সমস্ত কুরআন ভাল কাগজে লিখান ও মেয়ের জেহেয স্বরূপ কুরআন মজীদ উপহার দেন। মানুষ সাধারণত মেয়ের বিয়েতে টাকা পয়সা সোনা দানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে থাকেন কিন্তু তার পিতা সবচেয়ে বড় মেয়ে, আদরের সন্তানের বিয়েতে কুরআন করীম উপহার দেয়াকে সর্বোত্তম পুরস্কার মনে করেছেন। হুযূর (রাঃ) বলেন, আমার মা কুরআন শিখানোর ব্যাপারে বেশ উৎসাহী ছিলেন। তিনি কুরআন করীমের অদ্ভুত অদ্ভুত অর্থ ও ব্যাখ্যা আমাকে বলেন। হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলেন, আমি আমার মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় কুরআন শুনেছি এবং ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার কোলে কুরআন শুনেছি। হুযূর (রাঃ) বলেন, আমার মা যতক্ষণ শিশু সন্তানকে দুধ খাওয়াতেন দরূদ শরীফ ও কুরআন করীমের অংশ বিশেষ তেলাওয়াত করতে থাকতেন।

হুযূর (রাঃ) বলেন,

“আমি রাওয়ালপিন্ডি থাকা কালে আমাদের বাড়ীর পাশেই একজন ইংরেজ আলেকজান্ডারের ঘর ছিল। এক ব্যক্তি আমাকে সেখানে নিয়ে যায় তিনি ‘মিযানুল হক’ ও ‘তারিকুল হায়াত নামক’ দু’টি বই দেন যা আমি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে বার বার পড়েছি। আমি তখনো ছোটই ছিলাম কিন্তু কুরআন করীমের প্রতি আমার সেই সময়ও খুব ভালবাসা ছিল। আমি সেই সময় রুহুল কুদ্দুস সম্পর্কে জানতাম না কিন্তু দেখেছি খোদা তাআলার কাছে দোয়া করলে কেউ কখনো মোবাহাসায় পরাজিত হয় না।”

কুরআন কুরীমের তরজমা শিক্ষার প্রতি মনোযোগঃ

যে যুগের কথা বলা হচ্ছে সেই যুগে কুরআন করীমের অনুবাদ খুব অল্প সংখ্যক লোক জানতেন। কারণ পুরনো আলেমগণ হয়ত এই ব্যাপারে জোর দিত যে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন ব্যক্তি আরবী গ্রামার, যুক্তি বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদিতে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন না করে নেয় তারপর সিহাহ সিত্তাহ সম্পূর্ণ না পড়ে নেয় তার কুরআন করীমের অনুবাদ পড়া উচিত নয়। যার ফলে এমন হয়েছে যে আলেমদের মধ্য থেকেও অনেক কম সংখ্যক আলেম কুরআনের অনুবাদ জানত, এমন অবস্থাতেও আমাদের প্রিয় খলীফা হযরত নূরুদ্দীন (রাঃ) কুরআন করীমের অনুবাদ শিখেন ও পড়েন।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলেন,

কুরআন আমার আহার আর আমার আত্মার প্রশান্তির উপকরণ। আমি কুরআন করীমকে দিনে অনেকবার পড়ি কিন্তু আমার আত্মা তবু পরিতৃপ্ত হয় না। মনে হয় আরো চাই এটা যেন চাহিদার তুলনায় কম হয়ে গেছে। এটির শিক্ষা আরোগ্য দাতা খোদার রহমত, নূর ও হেদায়াত। একদা কেউ একজন প্রশ্ন করেন কুরআন করীম কিভাবে আয়ত্ব করা যায়? তো তিনি (রাঃ) উত্তরে বলেন; কুরআন করীম থেকে সহজ সরল আর কোন গ্রন্থ নাই। কিন্তু তার জন্য সর্বপ্রথম ও আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে (কুরআন করীম পাঠের জন্য) তাক্‌ওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ্‌ তাআলার ওয়াদা যে তিনি মুত্তাকীকে কুরআন শিখিয়ে দিবেন। শিক্ষার্থীকে দুনিয়াবী কামনা বাসনা থেকে বিমুক্ত হতে হবে। তাক্‌ওয়া অবলম্বন করার ফলে তার জন্য এমন স্থান থেকে রিয্‌ক পৌঁছাবে যে কেউ জানবেও না। আল্লাহ্‌ তাআলা স্বয়ং তার অভিভাবক হয়ে যান।

তারপর কুরআন করীম পড়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে সাধনা। এই সাধনা খোদার উপর ভরসা করে করা উচিত। ফলে কাঠিন্য দূর হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্‌র ওয়াদা রয়েছে।

অতঃপর কুরআন করীমকে পড়ার নিয়ম হচ্ছে এরূপ একবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজে পড় এবং এক একটি আয়াত তোমার জন্যই নাযেল হয়েছে বলে মনে কর। আদম ও ইবলীসের কথা আসলে নিজের হৃদয়কে প্রশ্ন কর আমি আদম না শয়তান।

এভাবে কুরআন করীম পড়ার সময় যে সকল কঠিন আয়াত পাও তা নোট করে যাও। অতঃপর কুরআন শরীফ একবার শেষ হয়ে গেলে নিজেদের স্ত্রী পরিবারের সদস্যদের দরসে শামিল কর ও তাদের শুনাও। পূর্বে যে কঠিন আয়াত ছিল তার একটি বড় অংশের সমাধান হয়ে যাবে। আর যা অবশিষ্ট থাকবে তা পুনরায় নোট কর।

আর তৃতীয়বার নিজের বন্ধুদের যোগদান করাও আর চতুর্থবার অন্যদের সামনে পড়। এতে ইনশাআল্লাহ্‌ সকল কাঠিনত্ব দূর হয়ে যাবে। আর কঠিন আয়াতসমূহের সমাধানের জন্য দোয়া দ্বারা কাজ নাও।

হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর যুগে কুরআনের দরস প্রদানঃ

হযরত হাজী গোলাম আহমদ সাহেব জলন্ধার জেলার অধিবাসী। তাঁর বর্ণনা হচ্ছে,

“জানুয়ারী শেষ বা ফেব্রুয়ারী ১৯০৩ সনে আমি এবং বাশারত আলী পোষ্ট মাষ্টার কাদিয়ান দারুল আমানের দিকে রওনা দেই। যখন বাটালা থেকে এক্কা গাড়ীতে উঠি তো তৃতীয় ব্যক্তিটি কাদিয়ানের ছিল আর হিন্দু ছিল। আমি তার কাছে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর অবস্থা জানতে চাই। সে বলে মির্যা সাহেব বড়ই নেক মানুষ ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর থেকে তাঁর উপর কিছু মিথ্যা অপবাদ লা���ানো হচ্ছে। ঘোড়ার গাড়ী আমাদের মেহমান খানার দরজায় দাঁড়ায়। যে ব্যক্তির সাথে আমাদের প্রথম দেখা হয় তিনি জিনিস পত্র নামিয়ে আমাদের বলেন নামায শুরু হচ্ছে। আমরা মসজ��দে আকসায় চলে যাই। ইতিমধ্যে আসরের নামায হয়ে গেছে। কুরআন করীমের দরস আরম্ভ হচ্ছে। আমরা আসরের নামায আদায় করি আর দরসে শামিল হই। হযরত মৌলভী নূরুদ্দীন সাহেব মিম্বরের দিকে পিঠ ফিরে বসেন। তাঁর সামনে আহ্‌মদী সদস্যরা কুরআন করীম হাতে নিয়ে বসলেন। কুরআন করীমের তৃতীয় পারার কিছু অংশ তেলাওয়াত করেন যাতে তালাকের ব্যাপার বর্ণিত হয়েছে। শ্রবণকারীদের উপর এ তেলাওয়াত বিশেষ প্রভাব বিস্তার করছিল। অতঃপর কুরআনের তত্ত্বজ্ঞান ও ব্যাখ্যা বর্ণনা করতে লাগলেন। আমরা তার ব্যাখ্যা শুনছিলাম। আমাদের হৃদয় আবর্তিত হচ্ছিল। আমার নিকটবর্তী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করি, ইনিই কি মসীহ্‌ মাওউদ? সে বলে, ইনি মৌলভী নূরুদ্দীন সাহেব এতে আমি আরো বেশী আনন্দিত হই যে, যে সমাজের মৌলভী এমন জ্ঞানী তাহলে তিনি (আঃ) নিজে কেমন অতুলনীয় হবেন। আমি জিজ্ঞাসা করি এখন মসীহ্‌ মাওউদকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? তিনি বললেন মাগরিবের নামাযের জন্য মসজিদে মোবারকে গেলে দেখা হবে।”

হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (রাঃ)কে বলতেন মিয়া বশির উদ্দীন মৌলভী সাহেবকে দরসে কুরআনে বসাও কেননা এটা আসমানী অর্থাৎ ঐশী দরস। হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর কুরআনের প্রতি যেমন ভালবাসা ছিল তেমনই তিনি এক একটি আয়াতের অভিনব সব অর্থ ও ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতেন। তাঁর জীবনী থেকে জানা যায় তিনি যেখানেই যেতেন সেখানে কুরআনের দরস দেওয়া আরম্ভ করতেন। কুরআনের প্রতি তাঁর এতো গভীর ভালবাসা ছিল যে যখন কাশ্মীরের মহারাজা হুযূর (রাঃ)-কে দরস দিতে নিষেধ করলেন তো হুযূর মহারাজার চাকুরী ছেড়ে চলে আসেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, যেখানে আমি স্বাধীনভাবে আমার কুরআন চর্চা করতে পারব না সেখানে থাকার কোন অর্থ হয় না।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর কুরআনের দরসের ব্যাপারে বদর পত্রিকার সম্পাদক সাহেবের বক্তব্যঃ

হযরত মৌলভী সাহেবের দরসের ব্যাপারে পূর্বেও কিছু উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু নীচে বদর পত্রিকার সম্পাদকের কথা উপস্থাপন করা হল যা তিনি ২ এপ্রিল ১৯০৮ সালে পত্রিকায় লিখেন। তা হচ্ছে,

এ সব কিছু হচ্ছে মৌলভী নূরুদ্দীন সাহেবের কুরআনের দরসের বরকত ও ফযল যে আমি এত কিছু লিখতে পারছি। আমার প্রতি আল্লাহ্‌ তাআলার ফযলের কারণে আমি এই কাজে হাত দেয়ার দুঃসাহস করছি। দরসে কুরআন শরীফ যা মৌলভী সাহেব প্রত্যহ মসজিদে আকসায় দিতেন, তার শুরু কাদিয়ানে হয়নি বরং অনেক আগে থেকে হযরত মৌলভী সাহেব কুরআন শরীফের এই সেবায় লেগে রয়েছেন। আমি ছোট ছিলাম যখন এই দরস জম্মু ও কাশ্মীরে শুনেছি। আর এই সেই দরস যা আমাকে মুসলমান বানিয়েছে। আমি এই দরসকে বরকতময় পাই, এত দীর্ঘ সময় শুনার পরও আমি এটাকে নিজের জন্য নতুন বরকতের উপকরণ হিসেবে খুঁজে পাই। হযরত মৌলভী সাহেবের দরসেই সেই বৈশিষ্ট্য দেখেছি যে, শিশুরাও এ থেকে কল্যাণ লাভ করতে পারে আবার যুবকরাও এবং বৃদ্ধরাও। মূর্খ মানুষও কিছু না কিছু কল্যাণ সংগ্রহ করে নেয় আর আলেমও নিজের জ্ঞানের উন্নতি করে। কাদিয়ানে বসবাসের ফলে যে নেয়ামতসমূহ আমি পেয়েছি দরসে কুরআন তাদের মাঝে একটি। আল্লাহ্‌ তাআলা সর্বদা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন যেন আমাদের উপর বরকত ও রহমতসমূহ তার মাধ্যমে অবতীর্ণ হতে থাকে। আমীন, সুম্মা আমীন।

মোহতারাম ডাক্তার উবায়দুল্লাহ্‌ খাঁ সাহেব বাটালভী যিনি ইসলাম ও আহ্‌মদীয়াতের জন্য বড়ই নিষ্ঠাবান অন্তঃপ্রাণ বুযুর্গ, তিনি বলেন,

“হযরত মাওলানা হেকীম সাহেবের কুরআন করীমের প্রতি এমন ভালবাসা ছিল যে, তিনি (রাঃ) বলতেন যদি কোথাও থেকে যাকাতের টাকা পাই তাহলে আমি তা নিয়েও সঠিক ও খুব সুন্দর কুরআন মজিদ ছেপে হকদারদের মধ্যে ভাগ করে দিব।”

নিজের খিলাফতকালীন সময়ের শেষের দিকে তার এটা প্রতিদিনের সাধারণ নিয়ম ছিল যে আব্দুল হাই সাহেব এর কাছে দুই পারা কুরআন তেলাওয়াত শুনতেন।

তিনি নিজে জান্নাতের নেয়ামত সমূহের ব্যাপারে বলতেন, যদি খোদা তাআলা নূরুদ্দীনকে প্রশ্ন করে যে তোমার কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশী পছন্দ তাহলে তো আমি এটাই বলব যে আমাকে কুরআন মজীদ দেওয়া হোক।

মোহতারাম জহুর হোসাইন সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে,

“হযরত হাফেজ রওশন আলী (রাঃ) যিনি হযরত মৌলভী সাহেবের বিশেষ শিষ্য ছিলেন। তিনি বলেন যখন আমি উযিয়ারাবাদে আমার মামা হযরত হাফেজ গোলাম রসূল সাহেব উযিয়ারাবাদী (রাঃ)-এর কাছে কুরআন করীম হিফজ করতাম তো আমি এক রাতে স্বপ্নে দেখি একজন বুযুর্গ সাদা দাঁড়ি ওয়ালা ব্যক্তি দুধ ভর্তি একটি পেয়ালা আমাকে দেন আর বলেন পান কর। আমি পান করি। কিন্তু কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়। তিনি বলেন আরো পান কর সুতরাং আমি পুনরায় আরো পান করি। হাফেজ সাহেব বলেন সেই সময় তো এই স্বপ্নের মানে বুঝি নি কিন্তু যখন কাদিয়ান পৌঁছেছি তখন বুঝলাম যে সেই বুযুর্গ হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) ছিলেন, কেননা কখনো কখনো আমি তাঁর কাছে সারারাত ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করতে থাকি কিন্তু তিনি ক্লান্ত হতেন না।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ লাহোর পৌঁছেও জ্ঞানের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলেন। এক দিকে মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) নিজের পবিত্রকরণ শক্তি দ্বারা লোকদের আধ্যাত্মিক রোগ দূর করতে থাকেন আর অন্যদিকে নিজের ওয়াজ ও নসিহতের মজলিসের মাধ্যমে লোকদের কু-প্রবৃত্তিকে দূর করে হযরত আকদাসের সত্যতাকে মানার পথ পরিস্কার করতেন।

হুযূর (রাঃ)-এর খিলাফতকালীন সময়ে তিনি মৌলভী মোহাম্মদ এম. এ. যিনি প্রাইভেট সেক্রেটারী ছিলেন তাকে কুরআন করীমের ইংরেজী অনুবাদের দায়িত্ব দেন। হুযূর (রাঃ) নিজে সেই অনুবাদ শুনতেন এবং ভুল সংশোধন করে দিতেন।

খোদা ও তাঁর রসূল (সাঃ)-এর ভালবাসা ছাড়াও কুরআন করীমের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা ছিল। অসুস্থ্য বা সুস্থ সকল অবস্থায় কুরআন শরীফের স্মরণ ও কুরআনের দরস তার আত্মার খোরাক ছিল। মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কুরআন করীমকে ভালবেসে তার উপর আমল করে গেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জান্নাতের উচ্চতম স্থানে অধিষ্ঠিত করুন।

পাক্ষিক আহ্‌মদী - ৩১শে মে, ২০০৮ইং