দাজ্জাল ও তাহার গাধা এবং ইয়া’জূজ ও মা’জূজ
মৌলভী মোহাম্মদ | জামা'তের বিভিন্ন বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গের লিখিত পুস্তকাবলী
মহানবী (সা. ) আখেরী যামানায় উম্মতের সংশোধনের উদ্দেশ্যে একজন মসীহ্ ও মাহদী আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আর সেই মাহদী আবির্ভাবের অনেকগুলো লক্ষণও তিনি (সা. ) বর্ণনা করেন। এগুলোর মধ্যে ‘দাজ্জালের প্রকাশ ঘটবে’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। দাজ্জাল সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মাঝে নানান কল্পকাহিনীর প্রচলন রয়েছে। তারা দাজ্জাল বলতে এক অদ্ভুত ধরনের অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন বোঝা বয়ে বেড়ানো
প্রাণীকে বুঝায় । কিন্তু আসল কথা হল, দাজ্জাল সংক্রান্ত মহানবী (সা.)-এর সকল ভবিষ্যদ্বাণী দিব্যদর্শন কিংবা স্বপ্নের আকারে বর্ণিত হয়েছে। আর এ বিষয়ে নীতি হল, রুইয়া, কাশফ কিংবা ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ ব্যাখ্যাসাপেক্ষ হয়ে থাকে । সঠিক ব্যাখ্যা নাকরার কারণেই এ উম্মতে দাজ্জাল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কল্পকাহিনী প্রচলিত হয়ে পড়েছে। হযরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্নে এগারটি নক্ষত্র, চাঁদ এবং সূর্যকে নিজের সামনে সিজদা করতে
দেখেছিলেন। অথচ বাস্তবে এমনটি হয় নি বরং তার পিতা-মাতা ও ভ্রাতৃগোষ্ঠি যখন তাঁর কাছে বিনত হয়েছিলেন তখন সেই স্বপ্নের প্রকৃত তাৎপর্য ও ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল।
অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফেরকিতাবুল ফিতনে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) মদীনার ইবনে সাইয়্যাদ নামক এক ইহুদী ব্যক্তিকে দাজ্জাল বলে সন্দেহ করেছিলেন যে পরবর্তীতে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। যার সম্পর্কে হযরত উমর (রা. ) পর্যন্ত কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, এই ব্যক্তিই দাজ্জাল এবং মহানবী (সা.) সে কথাকে খণ্ডনও করেন নি। অথচ বাহ্যত তার মধ্যে দাজ্জালের অধিকাংশ লক্ষণ অনুপস্থিত ছিল। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়,
মহানবী (সা.) স্বয়ং দাজ্জাল সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীসমূহকে রূপক হিসেবে গণ্য করতেন এবং সমস্ত লক্ষণ হুবহু বাহ্যিকভাবে মিলে যাওয়াকে আবশ্যক বলে জ্ঞান করতেন না। অতএব কুরআন করীম, হাদীস এবং দাজ্জালের আভিধানিক অর্থ পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় , দাজ্জাল কোন অদ্ভুত ধরনের বাহ্যিক দানব নয় বরং বর্তমান যুগের পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত খ্রিস্টান জাতির ধর্মীয় নেতারাই দাজ্জাল। দাজ্জাল বধকারী এ যুগের প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ.) এ সম্পর্কে বলেন,
“দাজ্জাল সংক্রান্ত হাদীসের বিষয়বস্তুকে রূপক অর্থে গ্রহণ না করলে এই দুই হাদীসের মাঝে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া ভার। অতএব আমরা বলবো, দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসের অর্থ হল, শেষযুগেখ্রিস্টানদের মধ্য থেকেমিথ্যাবাদীদের একটিদলের প্রাদুর্ভাব হবে। হাদীসে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে, তারা তাদের ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিভিন্ন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে নিজেদের পূর্বপুরুষের সাথে এমন সাদৃশ্য রাখবে যেন এরাই তারা । পার্থক্য হল, তাদের পিতা-পিতামহ শিকল ও বেড়িতে আবদ্ধ ছিল কিন্তু এরা সেই কারারুদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হবে, আল্লাহ্ তাদের বেড়ি অপসারণ করবেন আরতারা উত্তর-দক্ষিণে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে । পৃথিবীবাসীদের জন্য তাদের প্রাদুর্ভাব অনেক বড় একটি বিপদ হবে।” [হামামাতুল বুশরা, পৃ: ২৭, ২য় বাংলা সংস্করণ-২০২২]