আপত্তি: মির্যা সাহেব কেন বইপুস্তক লিখলেন, কোন নবী তো বই–পুস্তক লিখেননি।


আপত্তিঃ মির্যা সাহেব কেন বইপুস্তক লিখলেনকোন নবী তো বইপুস্তক লিখেননি।

জবাবঃ এই অভিযোগের উত্তরে প্রথমে বলতে চাচ্ছি, একজন নবীর সত্যতার মাপকাঠি পরিমাপ করার জন্য কখনোই এটি যুক্তিযুক্ত ও মানসম্মত দাবী হতে পারে না যে, কোন নবী কোন বইপুস্তক লিখতে পারবে না। এরূপ কথার বা সত্যতা যাচাইয়ের দাড়িপাল্লা না পবিত্র কুরআন মজীদের কোন আয়াতে এসেছে না হযরত রাসূল করিম (সা.) কর্তৃক কোন নবীর সত্যতার নিরূপনের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। কুরআন-হাদীসের কোথাও এমন কোন কথা লেখা নেই একজন নবী দাবীকারক বই পুস্তক লিখতে পারবে না। আমরা এমন কোন কথা বা বর্ণনা কোথাও দেখতে পাই নি। এখন অভিযোগকারীরা যদি এটিকে নবীর সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে তুলে ধরতে চান, তাহলে আপনাদের এখন দায়িত্ব আপনাদের যুক্তির স্বপক্ষে দলীল তুলে ধরা। এই অভিযোগের ব্যাপারে এককথায় আমাদের উত্তর হচ্ছে- এটি এমন এক দাবী যার কোন ভিত্তি নাই।

আল্লাহ নিজেই তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদের জন্য সেসব যুগের মানুষের কথা চিন্তা ও বিবেচনা করে সেই নবীর সত্যতার প্রমাণস্বরূপ নিদর্শন নির্ধারণ করে দেন। হযরত নূহ (আ.)-এর দিকে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তা’লা হযরত নূহ (আ.)-কে তাঁর সময়ে নৌকা তৈরীর নির্দেশ দিয়েছিলেন যা ছিল তাঁর নবুওয়তের সত্যতার প্রমাণ এবং তাঁর যুগের মানুষের জন্য মহা নিদর্শন। এখন যদি অআহমদী বন্ধুদের অভিযোগটিকে আমরা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে বলি যে, নূহ (আ.) আল্লাহর নবী নন কারণ আর কোন নবী নৌকা বানান নি বিষয়টা কেমন হাস্যকর হবে আমরা কি ভেবে দেখেছি। মূলত নবীগণ বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শন করেন আর এ বিষয়ে তারা নিজেরা আল্লাহ থেকে আদেশ প্রাপ্ত হন। তাই দেখা যায় এক নবী এমন কিছু করার জন্য আদিষ্ট হয়েছেন যা ভিন্ন কোন নবী করার জন্য আদিষ্ট হন নি। যেমন হযরত ইব্রাহীম (আ.) কর্তৃক পুত্র সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানী বা জবাই করার কথা। এটা কেবল মাত্র তাঁর জন্যই ছিল। এটি নবীদের ক্ষেত্র ও অবস্থা বিবেচনা করে আল্লাহ তা’লা নির্ধারণ করে দেন। এতে কিন্তু কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, এমন সব নবী যারা পৃথক পৃথক নিদর্শন প্রদর্শন করেছিল এদের একজনের সাথে যেহেতু অন্যজনের নিদর্শনের মিল নেই তাই প্রত্যেক নবীই নাউযুবিল্লাহ মিথ্যাবাদী!

এখন আমরা যদি পবিত্র কুরআনে প্রতিশ্রুত মসীহ (আ.)-এর জন্য নির্ধারিত নিদর্শনের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে আমরা সূরা তাকভীরের আয়াত নং ১১ তে দেখতে পাই, আল্লাহ তা’লা বলছেন- وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ অর্থ: যখন পুস্তক-পত্রিকার প্রসারতা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করবে। (সূরা তাকভীর: ১১)

এটি একটি মিরাক্কেল বা আলৌকিক ব্যাপার যে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর অসাধারণ জ্ঞান ও বুৎপত্তি যা তাঁর লেখনীর মাঝে প্রস্ফুটিত এর অধিকাংশ তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে খৃষ্টান, আর্য সমাজী এবং নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আরোপিত সকল অভিযোগের উত্তরেই লিখেছেন এবং এছাড়াও তিনি পবিত্র কুরআনের অসাধারণ অনন্য তত্ত্বজ্ঞান ও তাফসীর তিনি পৃথিবীবাসীর সামনে তাঁর কলমের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। মির্যা সাহেবের সময় তৎকালীন ভারত উপমহাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে আল্লাহ, ইসলাম, কুরআন ও খাতামান্নাবীঈন হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে যে অভিযোগ, আপত্তি আর অপবাদের পাহাড় খাড়া হচ্ছিল মির্যা সাহেব বুক চিতিয়ে এই সমস্ত কিছুর মোকাবেলা করে সকল বিরুদ্ধবাদীর মুখ তাঁর আল্লাহ প্রদত্ত অসাধারণ কলমী শক্তির মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এখন দেখুন, যেভাবে ঠিক বর্তমানে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) -এর অস্বীকারকারীরা তাঁকে এই বলে অস্বীকার করছে, তিনি আবার কেমন রাসূল, কেমন নবী যে দোয়াত, কলম দিয়ে কিতাব লিখে ঠিকই একই কায়দায়, একই ভাষায়, একই চয়নে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সময়কালীন বিরুদ্ধবাদীরাও তাঁর (সা.)-কে নিয়ে এমনই আপত্তি করেছে যে, “এ আবার কেমন রাসূল যে খাবার খায়, হাট বাজারে চলা ফেরা করে। আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনে তাদের এই দাবীকে এভাবেই বর্ণনা করছেন, وَقَالُوا مَالِ هَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ ۙ لَوْلَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا অর্থ: তারা বলে, এ আবার কেমন রসূল যে, খাদ্য আহার করে এবং হাটে বাজারে করে? তাঁর কাছে কেন কোন ফেরেশতা নাযিল করা হল না যে, তাঁর সাথে সতর্ককারী হয়ে থাকত? (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ০৮)

একজন নবীর অস্বীকারকারীরা তাঁকে অস্বীকার করছে কেন সে বইপুস্তক লিখেছে এই কারণে আবার ঠিক সেই অস্বীকারকারীরাই নবী মোহাম্মদ (সা.) কেও অস্বীকার করছে, কারণ সে এমন এক রাসূল যে হাটে বাজারে চলাফেরা করে এবং খাবার খায়!! এটি সত্য ও বাস্তব যে, হযরত মোহাম্মদ (সা.) অশিক্ষিত ছিলেন কিন্তু এটি কেবলইমাত্র হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র শান ও মর্যাদার জন্যই অনন্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হিসেবে নির্ধারিত ছিল। এই গুণাবলী অন্য কোন নবীর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। অন্যান্য এমন অনেক নবী রয়েছেন যাদের সম্পকে জানতে পারা যায় যে, তারা লেখাপড়া জানতেন। অআহমদী অসংখ্য পবিত্র কুরআন মজীদের তাফসীরকারকরা তাদের প্রদত্ত তাফসীরে এটি লিখে গিয়েছেন যে, হযরত দাউদ (আ.), হযরত সুলায়মান (আ.), হযরত মূসা (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত লেখাপড়া জানতেন এবং লিখতে পারতেন। এসব পড়াশুনা জানা শিক্ষিত নবীদের ক্ষেত্রে এসব অআহমদী আপত্তিকারকরা কি অভিযোগ ও আপত্তি জানাবে এটা তারাই ভাল জানে।

অন্যান্য উত্তর