আপত্তি: যে ব্যক্তি পিতার পেনশনের অর্থ চুরি করে খরচ করে সে কীভাবে ইমাম মাহদী হয়?


মূল উদ্ধৃতি:

৪৯) হযরত মির্যা বশির আহমদ এম. এ. (রা.) বলেন, হযরত আম্মাজান আমার কাছে বর্ণনা করেন, যুবক বয়সে হযরত মসীহ মাওউদ (আ.) তোমার দাদার পেনশন তুলতে যান। পেছন পেছন মির্যা ইমামুদ্দীনও যায়। তিনি (আ.) যখন পেনশন তুললেন তখন সে তাঁকে (আ.) ফুসলিয়ে এবং ধোঁকা দিয়ে কাদিয়ান ফেরার পরিবর্তে অন্য কোথাও নিয়ে যায় এবং এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করতে থাকে। এরপর সে যখন সমস্ত অর্থ ব্যয় করে ফেলে তখন তাঁকে (আ.) ফেলে অন্য কোথাও চম্পট দেয়।

আপত্তির জবাব: উক্ত ঘটনা ভালো করে পড়লে দেখা যায়, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) নিজ থেকে অর্থ নিয়ে চলে যান নি বরং অন্যের দ্বারা ধোঁকায় পড়েছেন। নিজে অর্থ ব্যয় করেন নি বরং মির্যা ইমামুদ্দীন ব্যয় করেছে। হযরত মসীহে মাওউদ (আ.) এই ঘটনায় খুব বিব্রত ছিলেন। ফলে তিনি অনুতপ্ত হন এবং চাকুরি করে দিনাতিপাত করা সমীচিন মনে করলেন। তবে মনে রাখতে হবে, অনুতাপকারী আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়তার মর্যাদা লাভ করে।

প্রশ্ন হল, পূর্বের কোন নবী কি এমন ধোঁকায় পড়েছেন? উত্তর হল, হ্যাঁ। বরং পূর্বের এক মহান নবীকে এক ব্যক্তি আরো ভয়ানকভাবে প্ররোচিত করে তাঁর দ্বারা এমন কাজ করানো হয়েছে, যার ফলে তাঁকে দেশান্তরিত হতে হয়েছে। পালিয়ে থাকতে হয়েছে বহু বছর। হ্যাঁ আপনারা ঠিক ধরেছেন, আমি হযরত মূসা (আ.) এর কথা বলছি।

চলুন সূরা কাসাসের সেই ঘটনা শুনি:

তিনি (তথা মূসা) শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মূসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী। তিনি (তথা মূসা) বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা কাসাস: ১৫-১৬)

আল্লাহ্ তা’লা হযরত মূসা (আ.)-কে ক্ষমা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে নবুয়্যতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন।

হে আপত্তিকারীগণ! এখন কি আপনারা মূসা (আ.)-এর বিরুদ্ধেও আপত্তি করা শুরু করবেন?

আপনাদেরকে আরো একটি উপমা দিচ্ছি। হযরত আদম (আ.)-এর বিষয়ে পবিত্র কুরআনে কী লেখা আছে।

চলুন সূরা আরাফের সেই ঘটনা দেখে আসি। আল্লাহ্ বললেন:

‘হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী এই বাগানে বসবাস করো, আর যেখান থেকে তোমরা চাও আহার করো, কিন্তু এই বৃক্ষের ধারেকাছেও যেও না, তাহলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ তারপর শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিলে যেন সে তাদের কাছে প্রকাশ করতে পারে তাদের লজ্জার বিষয়ের যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাই সে বললে — ”তোমাদের প্রভু এই গাছের থেকে তোমাদের নিষেধ করেন নি এই জন্য ছাড়া যে তোমরা ফিরিশ্‌তা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা হবে চিরজীবীদের অন্তর্ভুক্ত।’’ আর সে তাদের কাছে কসম খেলো — ”নিঃসন্দেহ আমি তো তোমাদের জন্য সদুপদেশদাতাদের মধ্যেকার।’’ এভাবে সে তাদের বিপথে চালালো প্রতারণার দ্বারা, অতঃপর তারা যখন বৃক্ষের আস্বাদ গ্রহণ করলো, তখন তাদের লজ্জা তাদের কাছে প্রকাশ পেলো, আর তারা তাদের আবৃত করতে লাগলো সেই বাগানের পাতা দিয়ে। আর তাদের প্রভু তাদের ডেকে বললেন — ”আমি কি তোমাদের নিষেধ করি নি ঐ বৃক্ষ সন্বন্ধে, আর তোমাদের তো আমি বলেইছি যে শয়তান তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু?’’ ( (সূরা আরাফ: ১৯-২২)

হে আপত্তিকারীগণ! আপনারা কি আদম (আ.)-এর বিরুদ্ধেও আপত্তি করেন?

আশা করি সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে।

অন্যান্য উত্তর