আপত্তি: আব্দুল হাকীম সাহেবের তফসীর সম্পর্কে তিন ধরণের কথা


আপত্তিঃ আব্দুল হাকীম সাহেবের তফসীর সম্পর্কে তিন ধরণের কথা পরস্পর বিরোধী। মির্যা সাহেব ডাক্তার আব্দুল হাকিম সাহেবের তফসীর সম্পর্কে প্রথম দিকে বলেছেন, অত্যন্ত উত্তমসুমধুর বর্ণনাএবং এতে কুরআন করিমের তত্ত্বজ্ঞানসমূহ বর্ণনা করা হয়েছেহৃদয় নিংড়ানো বর্ণনা এবং হৃদয়ের উপর প্রভাব বিস্তারকারী তফসীর তিনি লিখেছেন।” পরের দিকে, বদর পত্রিকা ৭ জুন, ১৯০৬ সালের সংখ্যায় মির্যা সাহেব লিখেছেন, ডাক্তার আব্দুল হাকিম খানের মধ্যে যদি তাকওয়া থাকতো তাহলে তিনি কখনো তফসির লিখতেন না এবং লেখার নামও নিতেন না। কেননা তিনি তফসির লেখার যোগ্য নন। তার তফসিরে আধ্যাত্মিকতার লেশমাত্র নেই এবং না তার এই বিষয়ে বাহ্যিক কোন জ্ঞান রয়েছে। মির্যা সাহেব এটাও লিখেছেন যে, আমি তার তফসির কখনো পড়িনি। প্রশ্ন হল, যদি তিনি তার তফসির কখনো নাই পড়ে থাকেন তা হলে তিনি কিভাবে আব্দুল হাকিমের তফসির সম্পর্কে উপরোক্ত দুটি রায় দিলেন?

জবাবঃ নিঃসন্দেহে তিনি (আ). এই তফসির পড়েননি এবং তা মুদ্রণের পর আর দেখেনও নি। হুযুর (আ.) এই তফসির শুনেছিলেন, অথবা কিছু কিছু অংশ শুনেছিলেন। যেভাবে, উপরে বর্ণিত ডাক্তার, হযরত মওলানা নূরুদ্দীন সাহেব, খলিফাতুল মসীহ আল আউয়াল (রা.)-কে তার একটি চিঠিতে লিখেন,

আপনারও এ কথা মনে থাকবে যেসমস্ত তফসিরের কোন এক স্থানেও মির্যা সাহেব না কোন সংশোধন করেছিলেন এবং না কোন সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞানের কথা বলেছেন। তিনি অর্থাৎ মির্যা সাহেব নিঃসন্দেহে কিছু কিছু ভুল সংশোধন করেছিলেন এবং কিছু নতুন নতুন সূক্ষ্ম বিষয়ও বলেছিলেন।” (যিকরুল হাকীম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩)

অতএব স্পষ্ট যে, হুযুর (আ.) এই তফসির শুনেছিলেন, সুতরাং তিনি রায় দিতেই পারেন। এখন বাকি থাকে এটা যে, এই বিষয়ে রায় দুটি ভিন্ন কেন? এটার উত্তর এই যে, “অতি উত্তম” এবং “সুমিষ্ট বর্ণনা” এই শব্দদ্বয় যে তিনি ব্যবহার করেছেন এরূপ কোন উদ্ধৃতি কোথাও পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার আব্দুল হাকিম খান মুরতাদ হওয়ার পর তার নিজের পত্রিকা “যিকরুল হাকিম” খন্ড ৪ পৃ ৫৩-তে নিজের পক্ষ থেকেই এই শব্দ সংযুক্ত করেছিলেন আর কোন সনদ, উদ্ধৃতি বা কোন বর্ণনা এর স্বপক্ষে বলা যায় না।

দ্বিতীয় বিষয় এই যে, ঈমান আনার পর মুরতাদ হওয়ার কারণে তার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল। যেরূপ, কোন ব্যক্তি আজ মুমিন আছে, তার সম্পর্কে আমাদের ধারণাও তেমনই থাকবে, কাল সে যখন কাফের হয়ে যায় তখন তার পরিবর্তনের ফলে আমাদের ধারণাও পরিবর্তন হয়ে যায়। যেভাবে, বাল’আম এর উপর এক সময় ঐশী ইলহাম নাযিল হত, কিন্তু সে যখন মুসা (আ.) এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তখন তাকে আল্লাহ তা’লার দরবার থেকে বিতাড়িত করা হয়।

যখন হযরত মসীহ মওউদ (আ.) তার তফসিরের প্রশংসা করেন, এর পরের দুটি রায় সম্পর্কে ডা. হাকিম নিজের ভাষায় বর্ণনা করেন, প্রথম অবস্থা: আমি হুজুরের স্বপক্ষে যে কাজটি করেছি সেটা হলআমি প্রায় ছয় হাজার রুপি ব্যয় করে কুরআনের তফসির উর্দু এবং ইংরেজীতে প্রকাশ করি যেটাতে “মসীহ মওউদ” সম্পর্কিত সকল সমর্থনমূলক বিষয় যা বিভিন্ন বইয়ে প্রকাশিত হয়েছিলপ্রয়োজন এবং সুযোগ মত সংযুক্ত করা হয়েছে। আমার মতে ইসলামের খেদমত করার এটাই উত্তম পন্থা যেকুরআন মজীদের সাথে সাথে সুবিধানুযায়ী তা উপস্থাপন করা হোক। মানুষ আমাকে এটাও নসিহত করেছে যে এবং অসংখ্য পরিমাণ চিঠিও এসেছে যেযদি এটা থেকে মির্জা সাহেবের স্বপক্ষে যে বিষয়াবলী রয়েছে তা বাদ দিয়ে দেয়া হয় তা হলে এই তফসিরের প্রকাশনা হাজার সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। বরং কিছু কিছু মুসলমান আলেম এই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য জীবন উৎসর্গ করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সেই সমস্ত কথা উপেক্ষা করি এবং বেঈমানিমূলক কোন কথা বলিনি।” (যিকরুল হাকীম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৩)

দ্বিতীয় অবস্থা: আমি এই তারিখ থেকে আমার বয়াত ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমার তফসির এবং তাযকেরাতুল কুরআন‘ পুস্তকে যে বিষয় মির্যা সাহেবের সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে সন্দেহযুক্ত জ্ঞান করি। যদি মির্যা সাহেব তার বর্তমান বাড়াবাড়ির সংশোধন না করেন এবং তওবা না করেন তা হলে ভবিষ্যতে আমি সেই সমস্ত বিষয়াবলী যা আমি মির্যা সাহেবের স্বপক্ষে লিখেছিলাম তা আমার তফসির থেকে বাদ দিয়ে দিব। (যিকরুল হাকীম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৯)

দেখুন, এক সময় আব্দুল হাকিম হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এর সাথে তার সম্পর্ককে তফসিরে অন্তর্ভুক্ত করে সেটাকে “ইসলামের খেদমত” আখ্যায়িত করেছেন। এরপর নিজেই সেটাকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। অতএব এটাকে বিরোধপূর্ণ বর্ণনা এবং বিরোধী বলা প্রকাশ্য ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়।

অন্যান্য উত্তর