আপত্তি: অন্য হাদীসকে ডাষ্টবিনের ময়লার মত নিক্ষেপ করি


আপত্তি: সমর্থনের জন্য আমরা ঐ সকল হাদীসও উল্লেখ করি যা কুরআন মুতাবিক হয় এবং আমার ওহীর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এছাড়া অন্য হাদীসকে ডাষ্টবিনের ময়লার মত নিক্ষেপ করি। (রূহানী খাযায়েন ১৯/১৪০)

উত্তর: মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কৃত ওহী কোন মানুষের প্রতি অবতীর্ণ হোক কিংবা কুরআনের আয়াত আকারে সংরক্ষিত হোক এ দু’য়ের মাঝে বিশুদ্ধতার দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। কেননা উভয় একই উৎস থেকে উৎসারিত। মহানবী(সা.)-এর প্রতি আরোপিত হাদীস শত শত বছর পর সংকলিত হয়। ন্যূনতম কয়েক দশক পর এগুলো জড় করা হয়েছিল। এগুলোর বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের একমাত্র পদ্ধতি হল, কুরআনের মানদণ্ডে এসব যাচাই করা। মা ইয়ানতিকু আনিল হাওয়া ইন হুওয়া ইল্লা ওয়াহইউন ইউহা অর্থাৎ রসূল(সা.)-এর কথা তা-ই হবে যা কুরআনের সাথে সংগতিপূর্ণ। এ দু’য়ের মাঝে কোন স্ববিরোধ থাকতে পারে না। হযরত মির্যা সাহেব ঐশী ন্যায়বিচারক ও মীমাংসাকারী যাচাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’লার বাণী সব ধরনের সন্দেহ ও মিশ্রণের কলুষমুক্ত। ‘আল্লামা’ নিশ্চয় আল্লাহকে মানুষের চেয়ে বেশী জ্ঞানের অধিকারী বলে মনে করেন । যদি তা-ই হয় সেক্ষেত্রে ওহী ও ইলহামপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির উপরোক্ত কথাটি তার না বোঝার কথা নয়।

আরেকভাবে বিষয়টি চিন্তা করে দেখা যায়। মুসলমানদের মাঝে যেসব ফিরকা বিদ্যমান তারা বেশিরভাগই হাদীসের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে পৃথক হয়েছে। এতে বোঝা যায় গোড়া থেকেই হাদীসের বিষয়ে দ্বিমত আছে। কিন্তু আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। আহমদীয়া জামাতের বক্তব্য এ বিষয়ে একেবারে স্পষ্ট। আল্লাহর পবিত্র বাণী আল কুরআন ধর্মজগতের সর্বোচ্চ আদালত। তদনুযায়ী হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপন করতে হবে। মির্যা সাহেব হাদীস গ্রহণের বিষয়ে বলেন,

হাদীস ইসলামের ঐতিহাসিকনৈতিক এবং ফেকাহ্ সম্বন্ধীয় বহু বিষয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। এছাড়া হাদীসের বড় উপকারিতা হলএটি কুরআন ও সুন্নতের সেবক। পবিত্র কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্ তালার বাণী এবং সুন্নত হল রসূলুল্লাহ(সা.)-এর কার্যপদ্ধতিআর হাদীস হচ্ছে সুন্নতের সমর্থক সাক্ষী। হাদীসকে কুরআনের বিচারক মনে করা ভুল। কুরআনের বিচারক কুরআন নিজেই। … তোমরা নবী করীম(সা.)-এর হাদীস এমনভাবে অবলম্বন কর যাতে তোমাদের গতিস্থিতিকর্মসম্পাদন বা কর্মবিরতি কিছুই যেন হাদীসের সমর্থন ব্যতিরেকে না হয়। কিন্তু কোন হাদীস যদি পবিত্র কুরআন বর্ণিত বিষয়ের স্পষ্ট বিরোধী হয় তবে তার সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা কর। হয়ত এরূপ অসংগতি‘ তোমাদেরই বোঝার ভুলে সৃষ্ট। কোনভাবেই এই অসংগতি যদি দূরীভূত না হয় তাহলে এরূপ হাদীস বর্জন করকারণ তা রসূলুল্লাহ(সা.)-এর পক্ষ থেকে নয়। পক্ষান্তরে যদি কোন হাদীস যয়ীফ‘ তথা দুর্বল হয় অথচ কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে সেই হাদীসকে গ্রহণ করকারণ কুরআন এর সত্যায় করছে (কিশতিয়ে নূহ, রুহানী খাযায়েন ১৯শ খণ্ড, পৃ. ৬২, ৬৩)।

এখানে হাদীসের বিশুদ্ধতা নিরূপণ করার পন্থা হযরত মির্যা সাহেব আমাদের বলে দিয়েছেন। আর তা হল, পবিত্র কুরআনের সাথে তা সংগতিপূর্ণ হতে হবে। অথবা আল্লাহ্ তা’লা নিজে যদি কোন হাদীসকে সত্য বলে সাব্যস্ত করেন সেই হাদীস সত্য বলে বিবেচিত হবে। সামঞ্জস্য বের করার চেষ্টা সত্ত্বেও যে হাদীস আল্লাহ্ তা’লার ওহী বা কুরআন প্রদত্ত আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে থাকবে সেটা যে বর্জনীয় একজন মুসলমান তা কীভাবে অস্বীকার করতে পারে!

‘আল্লামা’! আপনি জানেন, ‘রাফা ইয়াদাইন’-এর হাদীস পড়া সত্ত্বেও দেওবন্দী আলেমরা তা আমলে নেন না, অথচ “আহলে হাদীস সম্প্রদায়’ সেই হাদীসকে আমলযোগ্য বলে গ্রহণ করছে। অর্থাৎ হাদীস যাচাই-বাছাই, গ্রহণ-বর্জন করার অধিকার আপনাদের সবার আছে। আশ্চর্যের বিষয়, আলেম-উলামা হাদীস যাচাই বাছাই করার অধিকার রাখে অথচ আল্লাহর প্রেরিত ইমাম মাহদী ও মসীহর হাদীস যাচাই-বাছাই করার অধিকার নাই! আ লাইসা ফীকুম রাজুলুন রাশীদ?

অন্যান্য উত্তর