আপত্তি: মির্যা সাহেব কলেরায় টয়লেটে পড়ে মারা গেছেন


আপত্তি: মির্যা সাহেব কলেরায় টয়লেটে পড়ে মারা গেছেন।

জবাবঃ এর জবাবেও সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ কথা হল, লানাতুল্লাহি আলাল কাযিবিন। মিথ্যাবাদিদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। তারপরও সত্য সন্ধানীদের জন্য প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করছি-

হযরত মসীহ মওউদ (আ.) তার জীবনের শেষ পুস্তক পয়গামে সুলেহ যখন লিখছিলেন তখন তার উপর ইলহাম হল, আর রাহীলু সুম্মার রাহীলু ওয়াল মাউতু কারীব। অর্থাৎ, সফরের সময় হয়ে গেছে এবং মৃত্যু সন্নিকট। তখন মসীহ মওউদ (আ.) লাহোরে ছিলেন। এই ইলহাম শুনে হযরত আম্মাজান মসীহ মওউদ (আ.) এর সহধর্মীনী বলেন, এখন কাদিয়ানে যাওয়া উচিত। যা হোক ২৫মে ১৯০৮ তারিখে তিনি (আ.) পয়গামে সুলেহ লিখা পরিপূর্ণ করে কাতেবের কাছে দিলেন। এই প্রবন্ধ লিখতে দিন রাত পরিশ্রম করা, বহু মানুষের সাথে মুলাকাত করা এবং কতিপয় জলসায় বক্তৃতা প্রদানের ফলে তিনি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুশয্যাশায়ী ব্যক্তির ন্যায় হয়ে গেলেন। রাত ১১টায় পায়খানায় যাওয়ার প্রয়োজন হল। তিনি প্রকৃতির ডাকে পায়খানায় গেলেন। দুর্বল হয়ে পড়লেন। এরপর আরেকবার পায়খানায় গেলেন। এবার যখন তিনি পায়খানা থেকে ফিরলেন এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি বিছানায় শুতে গিয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলেন না এবং প্রায় নিঃশক্তি হয়ে বিছানায় পড়ে গেলেন। ডাক্তার ডাকা হয়েছে। কিন্তু এরপর আরেকবার পাতলা পায়খানা হয়েছে যারপর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়লেন যেন তার নার্ভ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন সময় তার মুখ থেকে একটিই বাক্য শুনা যাচ্ছিল, আল্লাহ মেরে পিয়ারে আল্লাহ।”

২৬ মে ফজরের সময় বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন, নামাযের সময় কি হয়ে গেছে? তিনি বিছানায় দুই হাত তায়াম্মুমের ন্যায় ছুয়ে শুয়ে শুয়ে নামাযের নিয়্যত বাধলেন। তখন পুনরায় বেহুশ হয়ে গেলেন। যখন হুশ ফিরে পেলেন আবার জিজ্ঞেস করলেন, নামাযের সময় কি হয়ে গেছে? বলা হল, জি হুযুর, হয়ে গেছে। পুনরায় দ্বিতীয়বার নিয়্যত বাধলেন এবং শুয়ে শুয়ে ফজর নামায আদায় করলেন। নামাযের পর যখনই হুশ ছিল তিনি “আল্লাহ মেরে পেয়ারে আল্লাহ” বাক্যটি বলতে লাগলেন। ঠিক যেমনটি মহানবী (সা.) মৃত্যু শয্যাশায়ী অবস্থায় বলেছিলেন, আল্লাহুম্মা বির রাফিকীল আলা। (বুখারী)

পরের দিন ২৬মে সকাল ১০ টার কাছাকাছি সময় শ্বাসকষ্ট হতে লাগল। পরিশেষে সাড়ে ১০টার দিকে “আল্লাহ মেরে পেয়ারে আল্লাহ” বাক্য উচ্চারণ করতে করতে তিনি তার মাওলার দরবারে উপস্থিত হলেন। (সিলসিলায়ে আহমদীয়া, হযরত মির্যা বশির আহমদ সাহেব, পৃষ্ঠা ১৮২-১৮৩)

তার মৃত্যুর পর মোল্লারা নোংরা মিথ্যাচার ছড়িয়েছে, মিছিল করেছে। এছাড়া রেলওয়ে অফিসারকে এই মিথ্যা সংবাদ পৌছিয়েছে যে, তাঁর মৃত্যু কলেরায় হয়েছে তাই তার লাশকে লাহোর থেকে কাদিয়ানে নিয়ে যেতে যেন না দেয়া হয়। যখন আহমদীরা এ খবর পেল মোকাররম শেখ রহমতুল্লাহ সাহেব ডাক্তার মেজর সদরল্যান্ড প্রিন্সিপাল মেডিকেল কলেজ লাহোরের কাছে গেলেন যাকে কর্মকান্ড অবহিত করে তিনি তার কাছে যে কারণে হযরত সাহেবের মৃত্যু হয়েছে তার সার্টিফিকেট চাইলেন। তিনি নিম্নোক্ত ভাষায় সার্টিফিকেট লিখেন, তার মৃত্যু আদৌ কলেরায় হয়নিবরং স্নায়ু দুর্বলতার আধিক্যের কারণে হয়েছে। (হায়াতে তাইয়েবা)

এরপর রেলওয়ে কর্মকর্তাকে এই সার্টিফিকেট দেখানো হয়েছে যার ফলে তিনি তার লাশ মোবারককে কাদিয়ানে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। যদি কলেরায় মারা যেত তাহলে কখনও রেলওয়ে কর্মকর্তা তার লাশ মোবারক নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতেন না। এ থেকেই প্রমাণ হয়, তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেননি।

অন্যান্য উত্তর