অভিযোগ: মুহাম্মদী বেগম সাথে বিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর অপূর্ণতার অভিযোগ


‘মুফতী’ নূরানী তার আলোচ্য পুস্তিকার ১২ পৃষ্ঠায় মির্যা সাহেবের একটি ভবিষ্যদ্বাণীর অপূর্ণতার অভিযোগ দিয়েছেন। একজন আত্মীয়ার সাথে বিয়ের বিষয়ে তিনি যে সতর্কবাণীমূলক ও শর্তযুক্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা ব্যর্থ হয়েছে বলে যে কথা মুফতী নূরানী উল্লেখ করেছেন তা-ও সম্পূর্ণ অমূলক। বিষয়টি জনৈক আত্মীয়ার সাথে বিয়ের লোভে উদ্ভূত নয়, বরং ইসলাম বিদ্বেষী ও ধর্ম বিষয়ে ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী আত্মীয়দেরকে জীবন্ত খোদার অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়াই ছিল সেই ভবিষ্যদ্বাণীর মূল উদ্দেশ্য।
হযরত মির্যা সাহেবের এক আত্মীয় মির্যা আহমদ বেগ ও তার পরিবারবর্গ মহান আল্লাহ, তাঁর রসূল (সা:) ও ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষার বিষয়ে বিদ্রুপাত্মক কথা বলে বেড়াতো আর এ নিয়ে তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ করতো। তাদের সংশোধনের যথাসাধ্য চেষ্টার পাশাপাশি হযরত মির্যা সাহেব দোয়ার ফলশ্রুতিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে এক সতর্কমূলক ভবিষ্যদ্বাণী শোনান। সেই ভবিষ্যদ্বাণী ও সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী পর্যায়ক্রমে তিনি ১৮৮৬ থেকে ১৮৮৮ সনের মাঝে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও লেখার মাধ্যমে
প্রকাশ করেন।

সেই ভবিষ্যদ্বাণীর মূল কথা ছিল, মির্যা আহমদ বেগ ও তার গোটা পরিবার যেন খোদা-বিরোধিতা থেকে তওবা করেন। তিনি যদি তাঁর মেয়েকে মির্যা সাহেবের সাথে বিয়ে দেন তাহলে এটা তাদের গোটা পরিবারের জন্য রহমতের কারণ হবে। অন্যথায় খোদার জীবন্ত অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ার তিন বছরের মধ্যে মেয়ের পিতা মারা যাবে। তওবা না করলে মেয়ের স্বামীও মারা যাবে এবং পালাক্রমে এই
পরিবারের অনেক পুরুষের মৃত্যু ঘটবে।

এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা কেবল হযরত মির্যা সাহেবের প্রতিষ্ঠিত জামাতই প্রত্যক্ষ করে নি বরং মির্যা আহমদ বেগের পরিবার, তার জামাতা মির্যা সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মদী বেগম সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখানে কেবল এতটুকু বলাই যথেষ্ট হবে, মেয়েকে অন্যস্থানে বিয়ে দেয়ার পর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মুহাম্মদী বেগমের পিতা মির্যা আহমদ বেগ ছয় মাস অতিবাহিত হবার আগেই
মৃত্যুমুখে পতিত হন। ভবিষ্যদ্বাণীর মূল অংশ পূর্ণ হবার সাথে সাথে মুহাম্মদী বেগমের স্বামী মির্যা সুলতান মুহাম্মদ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খোদার ভয়ে ভীত হয়ে তওবা করেন এবং অনুতপ্ত হন। এর ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী তারা রক্ষা পান। কেননা ভবিষ্যদ্বাণীর মূল কথাই ছিল-তারা অনুতপ্ত না হলে ধাপে ধাপে শাস্তি নেমে আসবে। এই পরিবার মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ লাভ করে কেবল যে তওবা করেছেন তাই নয় বরং পরবর্তীকালে এদের অনেকে হযরত মির্যা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ:)-এর প্রতিষ্ঠিত জামাতের একনিষ্ঠ সদস্য
হবারও সৌভাগ্য লাভ করেন।

‘মুফতী নূরানী লিখেছেন, এই পরিবার বর্তমানে খাটি মুসলমান হিসেবে গুরুদাসপুরে বসবাস করছে (পৃ: ১২)। গুরুদাসপুরে বসবাস করছে কি না তা মুফতী নূরানী না জানলেও বাকী কথা তিনি কিন্তু ঠিকই বলেছেন। তারা বর্তমানে আহমদী হিসেবে তথা খাটি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করছেন। ভেবে দেখুন, এই ভবিষ্যদ্বাণীটি যদি মির্যা সাহেবের প্রবৃত্তির তাড়নায় করা হয়ে থাকতো তাহলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যবর্গ তাকে আল্লাহ্ তা’লার ওলী ও প্রেরিত সত্য মাহদী বলে মানলেন কেন?
তারা তাকে মান্য করেছেন কেবল সত্য খোদার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়ে। আর এটাই ভবিষ্যদ্বাণীর মূল উদ্দেশ্য ছিল।

মোদ্দা কথা হলো, ভবিষ্যদ্বাণীটি একটি সতর্কবাণী ছিল যা ঐশী বিধান অনুযায়ী তওবাও অনুতাপের মাধ্যমে টলানো সম্ভব যেমনটি ঘটেছিল হযরত ইউনুসের (আ:) জাতির বেলায়। হযরত ইউনুসের জাতি তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে স্পষ্ট সতর্কবাণী সত্ত্বেও যেমন নিশ্চিত ধ্বংসের মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছিল তেমনি মির্যা সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রীও তাদের তওবা ও অনুতাপের কারণে রক্ষা পেয়েছিলেন। আর অনুতাপের শর্ত স্পষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বাণীতে দেয়া ছিল। অতএব এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

অন্যান্য উত্তর