গালি এবং কাফের আখ্যাদানকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আহ্বান
হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী (আ.) বলেছেন,
“অশুভ পরিণতির পথ বেছে নিও না”
“হে মুসলমানগণ! অশুভ পরিণতির পথ বেছে নিও না। হে পুণ্যবানদের উত্তরসূরীগণ! তোমরা ইবলীসের হাতের ক্রীড়নক সেজো না। তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কেন পবিত্রতা অবলম্বন করছো না? দেখ, খোদা বিভিন্ন ভাবে বান্দার নিকটে আসেন আর তাঁর অনুগ্রহ বহুমুখী। তাঁর সবচেয়ে মহান নৈকট্যের সময় যখন আসে তখন মানুষ জাগ্রত হয়। অবাধ্যরা ছাড়া বাকী সবাই তাঁর আবির্ভাবের সময় সচেতন হয়ে যায়। তত্ত্বজ্ঞানীরা ভালভাবে জানেন, খোদার প্রত্যেক অবতরণের একটি উদ্দেশ্য ও একটি উপলক্ষ্য থাকে। খোদার সবচেয়ে মহান বিকাশ বিদ্রোহীদের ছড়ানো অগ্নি নির্বাপণের লক্ষ্যে মানুষের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা সহকারে ঘটে থাকে। কিন্তু যারা মূর্তি পূজায় রত তারা তাঁকে অস্বীকার করে, গালি দেয় এবং কাফের আখ্যায়িত করে। এ যে এক স্বগীয় কল্যাণধারা তারা তা জানে না। যারা ভ্রষ্ট, অজ্ঞ ও সন্দেহবাদীদের কথাকে ঘৃণা করে তাদের জন্য তা নিশ্চিত নিরাময়ের কারণ। অতএব আল্লাহ্ তাআলা যুগের রোগ-ব্যাধির নিরিখে তাদেরকে জ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেক প্রদান করেন, যার মাধ্যমে তারা প্রশান্তি লাভ করেন। সে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি যেন একান্ত মোলায়েম ও সতেজ ফল এবং বহমান ঝর্ণা যা থেকে তাঁরা আহার ও পান করেন।
সারকথা হলো, মাহদী হলেন পাপের বন্যার মুখে সংশোধনকারী সংস্কারক আর সর্বশক্তি ও নিষ্ঠা উজার করা মানবকূল প্রভুর শিক্ষার প্রচারক। তাকে প্রতিশ্রুত মাহদী, যুগ ইমাম এবং বিশ্ব জগতের প্রভু আল্লাহর ‘খলীফা’ নাম দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকাশ্য রহস্য যা আল্লাহ্ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন তা হলো, শেষ যুগে ইসলামের ওপর নানা বিপদাপদ নেমে আসবে এবং এক নৈরাজ্যবাদী জাতির উদ্ভব হবে যারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ধেয়ে আসবে। তিনি তাঁর উক্তি প্রত্যেক উঁচু স্থান দ্বারা এ কথার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তারা সব উর্বর ও পতিত ভূমির অধিপতি হবে এবং সব দেশ ও শহরকে পরিবেষ্টন করবে। তারা পুণ্যবান এবং পাপীদের সব গোত্রের মাঝে সর্বত্র এক সর্বগ্রাসী কদাচার ছড়াবে। মানুষকে এরা বিভিন্ন ছল-চাতুরী এবং ধ্বংসাত্মক প্রতারণার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করবে। বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা রটনা এবং অপবাদ আরোপের মাধ্যমে ইসলামের চেহারায় কলঙ্ক লেপন করবে । সব দিক থেকে উপর্যুপরি অন্ধকার প্রকাশ পাবে। এর ফলশ্রুতিতে ইসলাম ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হবে। ভ্রষ্টতা, মিথ্যা এবং প্রতারণা বৃদ্ধি পাবে, ঈমান হারিয়ে যাবে, শুধু বড় বড় দাবী এবং বাহ্যিক চাকচিক্য বাকী রয়ে যাবে। এক পর্যায়ে সোজা রাস্তা দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যাবে আর সনাতন রাজপথ অজানা অচেনা লাগবে। তারা সঠিক পথ অবলম্বন করবে না, তাদের পা পিছলে যাবে এবং কু-প্রবৃত্তি তাদের ওপর রাজত্ব করবে। মুসলমানদের মাঝে অনেক মতভেদ ও শত্রুতা বিরাজ করবে এবং এরা পঙ্গপালের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। এদের মাঝে ঈমানের কোন জ্যোতি ও তত্ত্বজ্ঞানের কোন লক্ষণ অবশিষ্ট থাকবে না বরং এদের অধিকাংশ পশুবৎ বা নেকড়ে ও সাপের মত হয়ে যাবে যারা ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন। এ সবকিছু ইয়া’জুজ মা’জুজের প্রভাবে হবে। মানুষ পক্ষাঘাত কবলিত অঙ্গের মত বরং একেবারে মরার মত হয়ে যাবে।
অধুনা, মৃত্যু ও ভ্রষ্টতার সমুদ্র যখন উত্তাল, মানুষ উন্মাদের ন্যায় যখন তুচ্ছ পৃথিবীর পিছনে ছুটছে এবং মহা প্রতাপের অধিকারী প্রভুর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, এহেন পরিস্থিতিতে কোন বাহ্যিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তাঁর পরম শক্তিমত্তা ও রবুবিয়তের (অর্থাৎ লালন পালনের বৈশিষ্ট্য) গুণে আদম সৃষ্টির আদলে এক অনুগত দাস সৃষ্টি করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর নাম রেখেছেন আদম। অতএব আল্লাহ্ তাআলা আদম সৃষ্টি করে তাঁকে ঐশী বৈশিষ্ট্যাবলীর জ্ঞান দিয়েছেন এবং তাঁর প্রতি অনেক বড় অনুগ্রহ করেছেন। তাঁকে মাহদী নিযুক্ত করেছেন এবং তাকে ভালমন্দের প্রখর বিচারশক্তি দান করেছেন। (সিররুল খিলাফাহ, পৃঃ ৫৮-৫৯ থেকে উদ্ধৃত)
অন্যান্য উত্তর
- কাফের আখ্যা দেয়ার ফেতনা এবং আহমদীদের হত্যা করার ফতওয়া
- গালি দেয়া এবং কটু ভাষা প্রয়োগকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর জবাব
- ধ্বংস কামনাকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর সাবধানবাণী
- ভন্ড ও প্রতারক আখ্যাদানকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর জবাব
- আহমদীরা কি কাফের?
- গালি এবং কাফের আখ্যাদানকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আহ্বান
- অমুসলিম আখ্যাদানকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর জবাব
- কাফের আখ্যাদানকারীদের প্রতি হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর জবাব