হযরত ঈসা (আ.)-এর অবমাননা সম্পর্কিত আপত্তির উত্তর
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বিরুদ্ধে প্রকাশিত প্রায় সব ক’টি পুস্তকে অপবাদ দেয়া হয়েছে যে, হযরত মির্যা সাহেব হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবমাননা করেছেন এবং তাঁর দাদী ও নানীদেরকে ব্যভিচারিণী বলেছেন। এ অপবাদ প্রমাণের জন্য হযরত মির্যা সাহেবের বিভিন্ন পুস্তক হতে অনেকগুলি উদ্ধৃতি কাটছাট করে, জালিয়াতির মাধ্যমে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তরঃ এই অপবাদটি সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। এই অপবাদটি শুধুমাত্র খৃষ্টান জগতকে খুশী করার জন্য বানানো হয়েছে। হযরত মির্যা সাহেব স্বয়ং বলেন,
হযরত মসীহ্ (আঃ)-এর জন্য কোন অবমাননাকর শব্দ আমার মুখ হতে বের হয় নি। এ সবকিছু বিরুদ্ধবাদীদের জালিয়াতি। হ্যা, যেহেতু এমন কোন ইয়াসূ মসীহর আবির্ভাব হয় নি, যে খোদা হবার দাবী করেছে অথবা তার পরে আগমনকারী খাতামুল আম্বিয়া (সঃ)-কে মিথ্যাবাদী বলেছে অথবা হযরত মূসা (আঃ)-কে ডাকাত আখ্যা দিয়েছে। সেহেতু এমন মসীহ্ যার কালাম এরূপ হয়ে থাকে তার সম্বন্ধে আমি বলেছি যে, সে সত্যবাদী নয়। কিন্তু আমাদের মসীহ্ ইবনে মরিয়ম, যিনি নিজেকে মানুষ এবং রসূল বলেন এবং খাতামুল আম্বিয়া (সঃ)-এর সত্যায়নকারী, তাঁর উপর আমরা ঈমান আনয়ন করি (তরইয়াকুল কুলুব, ৭৭ পৃষ্ঠা)।
হযরত মির্যা সাহেব আরও লিখেনঃ
পাদরীদের ইয়াসূ এবং তার চাল-চলনের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা বিনা কারণে আমাদের নবী (সঃ)-কে গালমন্দ দিয়ে বাধ্য করেছে আমি যেন তাদের (কল্পিত) ইয়াসূর কিছু বর্ণনা তাদের জন্য প্রকাশ করি। ………, মুসলমানদের নিকট যেন ইহা প্রকাশ থাকে যে, (পাদ্রীদের কল্পিত) ইয়াসূর কথা পরিত্র কুরআনে কোথাও উল্লেখ নেই। পাদ্রীরা বিশ্বাস করে যে, ইয়াসূ ঐ ব্যক্তি ছিল যে খোদা হবার দাবী করেছিল (যমীমা আঞ্জামে আথম, ৮ পৃষ্ঠা)।
হযরত মির্যা সাহেবের উপরোক্ত উদ্ধৃতি দ্বারা প্রকাশ পায় যে, তিনি হযরত ঈসা (আঃ), যিনি আল্লাহর নেক বান্দা ও রসূল ছিলেন তাঁর অবমাননা করেন নি। তিনি পাদ্রীদের প্রতি উত্তরে তাদের পেশ করা ইয়াসূর বর্ণনা তাদেরই কিতাব বাইবেল হতে
তাদের উপর ছুড়ে মেরে তাদেরকে পরাস্ত করেছেন। এইরূপ উত্তরকে ধর্মীয় বিতর্কে “ইলযামী জবাব” বলা হয়। এইরূপ “ইলযামী জবাবে” হযরত মির্যা সাহেব পাদ্রীদের কল্পিত ইয়াসূর কথা তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বর্ণনা করে তাদের ইসলাম বিরোধী
দুর্মুখটাকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সুতরাং ত্রিত্ববাদের বিশ্বাসকে মিটাবার জন্য ও ভ্রান্ত সাব্যস্ত করার জন্য উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বহু বুযর্গ, [যেমন হযরত আলী হাসান সাহেব তাঁর পুস্তক “ইস্তেফসার” হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয দেহ্অলভী তাঁর পুস্তক “রূদে কাওসার”, হযরত মৌলানা মুহাম্মদ কাশেম নানুতবী (দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা) তাঁর পুস্তক “হাদীয়াতুশ্শিয়া” এবং হযরত হাফেয ওয়ালীউল্লাহ্ সাহেব লাহোরী তাঁর পুস্তক “মুবাহাসা দীনি মাআ তাকমেলা”তে খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে এইরূপ ইল্যামী জবাব (প্রতি উত্তর) দিয়েছেন।
বর্তমান যুগের বহু আলেমও হযরত মির্যা সাহেবের মতন এরূপ প্রতি উত্তর দিয়েছেন। যেমন মাওলানা আবুল আলা মওদূদী সাহেব লিখেন, “সত্য কথা এই যে, লোকগণ (খৃষ্টানগণ) ঐ ঐতিহাসিক মসীহ্ (আঃ)-এর উপর বিশ্বাসী নয়, যিনি এই দুনিয়াতে এসেছিলেন। বরং তারা নিজেদের কল্পনা অনুযায়ী এক কল্পিত মসীহ্ গড়ে তাকে খোদা বানিয়ে দিয়েছে “(তাফহীমূল কুরআন, প্রথম খন্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা)। সুতরাং প্রমাণিত হলো হযরত মির্যা সাহেব খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে কলমের জেহাদে তার লেখাতে প্রতিউত্তর দ্বারা পাদ্রীদের জব্দ করেছেন, এইরূপ প্রতি উত্তর দেয়া দোষনীয় নয় বরং ধর্মীয় বিতর্কে এভাবে প্রতি উত্তর দেয়ার প্রচলন ছিল ও আছে।
অন্যান্য উত্তর
- মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নোত্তরের কলামের উত্তর – ইমাম মাহদীর আগমন ও নিদর্শন স্বরূপ চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ
- মাসিক মদীনার মিথ্যাচারের উত্তর – পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ ছেটে ফেলা এবং ঈসা (আঃ)-কে শূলীবিদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে
- ইসলামী প্রতীকসমূহের ব্যবহার আহ্মাদী ফিরকার জন্য আইনতঃ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি?
- মাসিক মদীনায় প্রকাশিত “আহমদী সম্প্রদায় : আমার বক্তব্য” – আপত্তির উত্তর
- ঈসা (আ.) কি আসবেন? – মাসিক মদিনায় প্রকাশিত প্রশ্নের উত্তর
- মাসিক মদীনা পত্রিকায় “কাদিয়ানী মতবাদ একটি ফেৎনা” শীর্ষক প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত উত্তর
- হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?
- হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুতে বিখ্যাত মনীষীরা কি বলেছিলেন?
- মৌলবী সানাউল্লাহ অমৃতসরীর পরিণাম কি হয়েছিল?
- মির্যা সাহেবের মৃত্যু সম্পর্কিত অপবাদ খণ্ডন