হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও আহলে বয়াতের অবমাননা সম্পর্কিত আপত্তির উত্তর


হযরত মির্যা সাহেবের উপর হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং হযরত ইমাম হাসান ও
হুসায়েনের অবমাননার অপবাদ দেয়া হয়। এই বিষয়ে যে উদ্ধৃতি দেয়া হয় তা হলো হযরত মির্যা সাহেব এক গলতি কা ইযালায় লিখেছেন “আমি কাশফের (দিব্য-দর্শন) অবস্থায় দেখি হযরত ফাতেমা (রাঃ) তাঁর রানের উপর আমার মাথা রেখেছেন এবং আমাকে দেখিয়েছেন আমি তাঁর থেকেই অর্থাৎ ফাতেমী বংশের”। হযরত মির্যা সাহেব আরও লিখেন:

অর্থাৎ আমি প্রত্যেক মুহূর্তে কারবালা ভ্রমণ করি। শত হুসেন আমার বুকে রয়েছে।” ইহা ছাড়াও আরও কতগুলো উদ্ধৃতি এবং মনগড়া অপবাদ দেয়া হয়েছে।

উত্তর: কাশফ বা দিব্য-দর্শনে দেখা বিষয়াদিতে আপত্তির কিছু থাকতে পারে, তা ভাবাই যায় না। কাশফ এর তা’বীর হয়ে থাকে। হযরত মির্যা সাহেব নিজেই তা’বীর করেছেন যে, “এর অর্থ আমি ফাতেমী বংশীয়” । সুধী পাঠকবৃন্দ! এতে অপবাদ বা আপত্তির কী আছে ? এসব আপত্তি যে উদ্দেশ্যমূলক তা স্পষ্ট নয় কি ? হযরত মির্যা সাহেবের কাশফটি যদি আপত্তিকর হয় তাহলে হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ)-এর নিম্নলিখিত কাশফের তা’বীর কী করবেন?

অর্থাৎ হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ) বলেন, “আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, …
আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কোলে এবং আমি তার ডান দিকের স্তনের দুধ পান করছি। তারপর আমি বামদিকের স্তন বের করলাম এবং তা চুষতে লাগলাম। তখন হযরত রসূল করীম (সঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন।
(কালায়েদুল যাওয়াহের ফি মানাকেবে আশেক হযরত আব্দুল কাদের জীলানী, ৫৭ পৃঃ)।

উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি হযরত আয়েশা (রাঃ)-র অবমাননা করে না, বরং হযরত
আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ)-এর সৈয়্যদ বংশ ও উচ্চ আধ্যাত্মিক মাকাম নির্দেশ করে। বুযর্গ ও কামেল ব্যক্তিগণের কাশফ ও রূইয়াকে অপবাদের ভিত্তি বানানো অতিশয় নিন্দনীয় কাজ। এতে বড় গুনাহ হয়। এথেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মু’মিনের কর্তব্য। বিরোধিতার বশবর্তী হয়ে, অন্ধের ন্যায় আপত্তি করা কোন মুসলমানের বিশেষ করে আলেম লেখকের পক্ষে মোটেই শোভা পায় না। হযরত মির্যা সাহেব ফাসী কবিতার পংক্তিতে হযরত হুসেন (রাঃ) সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন, তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। মূল বস্তুটি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হযরত মির্যা সাহেব এখানে রূপকভাবে নিজের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। পংক্তিটির ব্যাখ্যা হলো, আমি সর্বদা কারবালা ও হযরত হুসেনের ঘটনাকে স্মরণ করি। আমার হৃদয়ে শত হুসেনের জন্য জায়গা আছে। এর ব্যাখ্যা এই যে, আমি কঠিন বিরোধিতার সম্মুখীন । আমার মনে হযরত হুসেন (রাঃ)-এর দুঃখের ঘটনার মত, শত ঘটনার শোক জমা রয়েছে, শত শত মুসলিম মহা মনীষীর নির্যাতনের শোক আমার
হৃদয়ে বিদ্যমান। আহলে বায়তের প্রতি হযরত মির্যা সাহেবের ভালোবাসার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর কন্যা হযরত নবাব মুবারেকা বেগম সাহেবা বলেন, একবার মহররমের মাসে আমার পিতা সন্তানদের ডাকলেন এবং বললেন, আসো তোমাদের মহররম ঘটনা শুনাই। তিনি ঘটনা শুনাচ্ছিলেন। হযরত হুসেন (রাঃ)-এর শাহাদতের ঘটনা শুনাতে গিয়ে তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল এবং চোখের পানি পড়তে লাগলো।
হযরত মির্যা সাহেবের পংক্তিটি যদি হযরত ইমাম হুসেনের (রাঃ) অবমাননার কারণ হয়, তাহলে গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ)-এর নিম্নের উক্তিটি কোন পর্যায়ে পড়বে? তিনি বলেন

র্থাৎ আমার পিরহানে (লম্বা পোষাকে) আল্লাহ্ ব্যতিরেকে আর কেউ নেই (মকতুবাতে ইমাম রব্বানী,মুজাদ্দেদ আলফেসানী, প্রথম খণ্ড, ৩৩৩৪ পৃঃ)। ভাবুন তাঁর পিরহানে আল্লাহ্। সুতরাং উপরের বিশ্লেষণ ও উদাহরণ ইহাই প্রমাণ করে যে, হযরত মির্যা সাহেব আহলে বায়তের অবমাননা করেন নি। বরং তাদের প্রতি গভীর ভালবাসাই তাঁর অন্তরে জাগরুক ছিল।

আহলে বায়তের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসা সম্বন্ধে একটি উদ্ধৃতি দিয়ে এই অধ্যায়কে শেষ করছি। হযরত মির্যা সাহেব “সীররূল খুলাফা” নামক পুস্তকের ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন ঃ

অর্থাৎ আমি হযরত আলী ও তাঁর দুই পুত্রকে ভালোবাসি এবং যারা তাঁদে সাথের
শত্রুতা করে আমি তাদের শত্রু (সীরুল খুলাফা, ৩৫ পৃঃ)।

অন্যান্য উত্তর