আহমদীরা মীর্যা গোলাম আহমদকে হযরত মোহাম্মাদ (দঃ)-এর পরিবর্তে শেষ নবী বলে মনে করেন – ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন


ইদানিং এক সাংবাদিক একটি সংবাদ পরিবেশন  করিতে গিয়া গত ১৩৮০ বাং এর ১৮ই বৈশােখ তারিখের দৈনিক পূর্ব-দেশ পত্রিকায় আহমদীয়া জামাতের আকিদা সম্বন্ধে নিম্নলিখিতরূপ মন্তব্য করিয়াছেন। “উল্লেখ্য, আহমাদীয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা ১৮৩৫ সালে পূর্ব পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মীর্যা গোলাম আহমদকে হযরত মোহাম্মাদ (দঃ)-এর পরিবর্তে শেষ নবী বলে মনে করেন”

হযরত মীর্যা গোলাম আহমদ (আঃ) স্বয়ং শেষ নবী হইবার দাবী করেন নাই এবং আহমাদীয়া জামাতের কেহও তাহাকে শেষ নবী বলিয়া মনে করেন না। হযরত আহমদ (আঃ) হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে খাতামান্নবীবান বলিয়া মানিতেন এবং নিজেকে মুসলমান এবং তাহারই উম্মত বলিয়া স্বীকার, বিশ্বাস ও আমল করিয়া গিয়াছেন।

হযরত আহমদ (সাঃ) সেই ইমাম মাহদী (আঃ), যাহার অপেক্ষায় আহমদী ছাড়া বাকি সব মুসলমান আজও বসিয়া আছেন । তিনি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)-কে ও তাহার শিক্ষাকে বাতিল করিতে আসেন নাই । তিনি তাহাকে ও তাঁহার শিক্ষাকেই সাব্যস্ত করিতে আসিয়াছিলেন । গত শতাব্দীর শেষ দিকে যখন মুসলমানগণের সকল ফেরকা একে অপরের উপর কুফরের ফতওয়া দিয়া সকল মুসলমানকে অমুসলমান ঘোষণা করিয়া ইসলামের ঘর শূণ্ঠ করিয়া ফেলিল, সেই সময়ে তাহাদের মধ্যে পুনঃ ঈমান সঞ্চারের জন্ম আল্লাহতায়ালা হযরত আহমদ (আঃ)-কে প্রেরণ করেন।

তিনি আসিয়া অমুসলমান ঘোষিত মুসলমান দিগকে পুণঃ মুসলমান করিয়া জামাতে আহমাদীয়ার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁহার উপর হলহাম হয় –

مسلمان را مسلمان باز کردند

ফার্সী ইলহাম – মুসলমানরা মুসলমান বায কারদান্দ

অর্থাৎ “মুসলমানদিগকে তিনি পূনঃ মুসলমান করিলেন।”

দুঃখের বিষয় এ যুগের মুসলমান উলেমার এমন অবস্থা যে তাহারা মুসলমান কাহাকে বলে তাহার সঠিক সংজ্ঞা জানেন না । গত ১৯৫৩ ইং সনের পাঞ্জাবে কা দয়ানী বিরোধী দাঙ্গার ইনকোয়ারীর জন্ত যে বিচার আদালত বসিয়াছিল উহার বিচারক গণ তাহাদের রায়ে লিখিয়াছেন-

“উলেমা ( মুসলমানের ) যে সংজ্ঞা দিয়াছেন, তাহা সম্মুখে রাখিলে কি ইহা ব্যতিরেকে অস্ত্র কোন মন্তব্য সম্ভব য এই মৌলিক বিষয়ে যে কোন দুই আলেম একমত নহেন । প্রত্যেক আলেমের মত আমরাও যদি কোন সংজ্ঞা দিবার প্রয়াস পাই এবং উহ। অপরাপর আলেমগণের মতের সহিত গরমিল হয়, তাহা হইলে, সর্বসম্মতিক্রমে আমরাও ইসলামের গণ্ডির বাহিরে চলিয়া যাইব। পক্ষান্তরে আমাদের সংজ্ঞা যদি কোন এক আলেমের মতের সহিত মিলিয়া যায়, তাহা হইলে উক্ত আলেমের মতে আমরা মুসলমান থাকব, কিন্তু বাকি সকলের মতে আমরা কাফের হইয়া যাইব।”

[মুনীর কমীশনের ইংনাজী রিপোর্ট ২১৮ পৃঃ দ্রষ্টব্য]
আরো দেখুন: ১৯৫৩ সালের পাঞ্জাবের গোলযোগ সম্পর্কিত তদন্ত আদালতের রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার 

বস্তুতঃ হযরত আহমদ (আঃ) ইসলামের সহি স্বপক্ষে জগতের সমক্ষে পেশ ও পুনঃ প্রতিষ্টিত করিয়া গিয়াছেন। হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)-সম্বন্ধে তিনি যে আকিদা রাখিতেন আহমদীয়া জামাতের লোকেরাও সেই আকিদাই রাখেন। জনগনের অবগতির জন্ম আমি তাঁহার আকিদা সম্বন্ধে তাহার নিজ বাণী হইতে বাংলাভাষায় নিয়ে কতকগুলি উদ্ধৃতি দিলাম।

“খোদার পরে মোহাম্মদ (সাঃ)-এর পেমে বিভোর। ইহা যদি কুফর হয়, খোদার কসম আমি শক্ত কাফের।” [ফরাসী দুররে সমীন]

প্রকৃত মুক্তিপ্রাপ্ত কে? সেই যে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ সত্য এবং মোহাম্মদ (সাঃ) তাহার এবং তাহার স্বষ্ট জীবের মধ্যে যাজক স্থানীয় এবং আকাশের নিম্নে তাহার সমমর্যাদা বিশিষ্ট আর কোন রসুল নাই এবং কুরআনের সমতুল্য আর কোন গ্রন্থ নাই। অন্ত কোন মানবকেই খোদাতায়ালা চিরকাল জীবিত রাখিতে ইচ্ছা করেন নাই। কিন্তু তাঁহার এই মনোনীত নবীকে তিনি চিরকাল জীবিত রাখিয়াছেন। [কিশতিয়ে নুহ]

মানবজাতির জন্ম জগতে আজ কুরআন ব্যতিরেকে আর কোন ধর্মগ্রন্থ নাই এবং আদম-সন্তানের জন্ম বর্তমানে মোহাম্মাদ (সাঃ) ভিন্ন কোনই রসুল এবং শাফী (যোজক) নাই । অবএব তোমরা সেই মহা গৌরবসম্পন্ন নবীর সহিত প্রেমসুত্রে আবদ্ধ হইতে চেষ্টা কর এবং অস্ত্র কাহাকেও তাহার উপর কোন প্রকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করিও না, যেন আকাশে তোমরা মুক্তিপ্রাপ্ত বলিয়া পরিগণিত হইতে পার। [ কিশতিয়ে নুহ ]

ইহা কি সত্য নহে যে, অল্প সময়ের মধ্যে এই হিন্দুস্থান উপমহাদেশে প্রায় এক লক্ষ লোক খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করিয়াছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ছয় কোটির অধিক পুস্তক রচিত হইয়াছে এবং বড় বড় শরীফ খান্দানের লোক স্বীয় পবিত্র ধর্ম ছাড়িয়া দিয়াছে। এমন কি যাহারা নিজদিগকে রসুল (সাঃ) এর বংশধর বলিয়া পরিচয় দিত এবং পরে খ্রীষ্টধর্মের পোষাক পরিয়া রসুল (সাঃ)-এর শত্রু হইয়া গিয়াছে তাহারা এত অধিক পরিমাণ কটুকথা ও মিথ্যা দুর্নামপূর্ণ পুস্তক হযরত রসুল করীম (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে ছাপাইয়াছে এবং বিলি করিয়াছে যে, উহা শুনিলে শরীর কাঁপিয়া যায় একং আমার হৃদয় কাঁদিয়া কাঁদিয়া দোয়া করিতে থাকে যে, তাহারা রসূল করীম (সাঃ)-এর নামে নানা প্রকার গালি ও মিথ্যা দুর্ণাম দেওয়ায় আমার মনে যে দুঃখ হইয়াছে, তাহার পরিবর্তে যদি এই সকল ব্যক্তি আমার সন্তান-সন্ততিদিগকে আমার চক্ষের সম্মুখে হত্যা করিয়া ফেলিত এবং আমার নিকট হইতে নিকটতর এই পৃথিবীর আত্মীয় ও প্রিয়জনকে টুকরা টুকরা করিয়া কাটিয়া ফেলিত এবং স্বরং আমাকে একান্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননার সহিত মারিয়া ফেলিত এবং আমার সমস্ত সম্পত্তি জবর-দখল করিয়া লইত, তাহা হইলে আল্লাহর কসম, ইহাতে আমার কোনই মনঃকষ্ট হইত না। [আইনাতে কামালাতে ইসলাম]

ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধে খোদাতায়ালা তোমাদের নিকট ইহাই চাহেন যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, আল্লাহ্ এক এবং মোহাম্মাদ (সাঃ) তাঁহার নবী এবং খাতা মাল আম্বিয়া (নবীদিগের মোহর)। তিনি সকল নবী হইতে শ্রেষ্ট তাহার পরে তাহার গুণে গুণান্বিত হইয়া তাহার প্রতিচ্ছায়া রূপে যিনি আসেন, তিনিব্যতিরেকে অন্ত কোন নবী আসিবেন না । কারন দাস আপন প্রভু হইতে এবং শাখা আপন কাণ্ড হইতে কখনও পৃথক নহে। [ কিশতিয়ে নুহ ]

কলরব ধ্বনি উঠবে যবে, গোর হতে সবার, রোজ হাশরে। তব প্রশংসা মুখর সরব গোরখানি পরিচয় দিবে মোর, সবার মাঝারে । [আরবী দুররে সমীন]

সূত্র: ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন – মৌলবী মোহাম্মদ, আমীর আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ

পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ২৭ বর্ষ | ১ম সংখ্যা | ১৫ই মে, ১৯৭৩ইং

অন্যান্য উত্তর