আপত্তি : হাদীসে আছে আগত মাসীহ্ জুলকারনাইন হবে


উত্তর: পবিত্র কুরআন এবং হাদীস থেকে জানা যায়, শেষযুগে অর্থাৎ প্রতিশ্রুত মসীহর যুগে একদিকে যেমন রূপকভাবে বা প্রতিচ্ছায়া স্বরূপ মুসলমানরা ইহুদী ও খ্রিস্টান হয়ে যাবে তেমনি রূপকভাবে বা প্রতিচ্ছায়া স্বরূপ কিছু পুণ্যবান লোকেরও আবির্ভাব হবে। আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেন, “যে জনপদকে আমরা একবার ধ্বংস করে দেই তাদের পুনরায় ফিরে আসা অসম্ভব, যতদিন পর্যন্ত ইয়াজুজ মাজুজকে অবমুক্ত করা না হবে এবং তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ধেয়ে আসবে।” (সূরা আম্বিয়া: ৯৬-৯৭)

এ আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ইয়াজুজ মাজুজের উন্নতির যুগে অর্থাৎ প্রতিশ্রুত মসীহর যুগে পূর্ববর্তী মৃতদেরকে পুনরায় নিয়ে আসা হবে।

অর্থাৎ রূপক অর্থে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে (যেহেতু দৈহিকভাবে এ পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার পথ পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা রুদ্ধ)। মৃত পুণ্যবান ও ওহীপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাঝে যুলকারনাইনও অন্যতম। এ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষযুগে অর্থাৎ ইয়াজুজ মাজুজের উন্নতির যুগে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে যিনি রূপকভাবে প্রতিচ্ছায়াস্বরূপ যুলকারনাইন হবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীর দিকেই ইঙ্গিত করে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) বলেন, যে ব্যক্তির রূপকভাবে ও প্রতিচ্ছায়ারূপে যুলকারনাইন হয়ে আগমনের কথা আল্লাহ তা’লা বলেছেন, আমিই সেই যুলকারনাইন।

তিনি বলেন, “কতিপয় হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে, আগমনকারী মসীহর একটি লক্ষণ হল, তিনি যুলকারনাইন হবেন। মোটকথা, ঐশী ওহীর ভিত্তিতে আমিই যুলকারনাইন।” (রূহানী খাযায়েন, ২১ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৮) অপর এক স্থানে বলেন, “কতিপয় হাদীসে মসীহ্ মাওউদের নাম যুলকারনাইন বর্ণিত হয়েছে।” (রূহানী খাযায়েন, ২০শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯ পাদটিকা)

মহানবী(সা.) প্রতিশ্রুত মাহদীকে যুলকারনাইনের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হযরত জাবের(রা.) থেকে বর্ণিত হাদীস: হযরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, “আমি মহানবী(সা.)-এর পবিত্র মুখ থেকে শুনেছি, তিনি (সা.) বলেছেন, যুলকারনাইন একজন পুণ্যবান বান্দা ছিলেন…যিনি পূর্ব-পশ্চিমে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। আল্লাহ তা’লা তার এই সুন্নত পুনরায় আমার সন্তান মাহ্দীর মাধ্যমে জারী করে দিবেন যে তার বাণীকে পূর্ব-পশ্চিমে পৌঁছে দিবে।” [কামালুদ্দীন ও তামামুন নি’মাহ, মুহাম্মদ বিন আলী আলকুম্মী (মৃত্যু: ৩৮১ হি.) রচিত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪২৪; আল্লামা মজলিসী রচিত বিহারুল আনওয়ার, বয়রুত থেকে প্রকাশিত ১২শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫; সৈয়দ হাশেম হুসাইনী (মৃত্যু ১১০৭হি.) রচিত আল-বুরহান ফী তাফসীরিল কুরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৭২; মাওলানা আব্দুল গফুর রচিত আন নাজমুস সাকিব ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৪০, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৩, ১৩০৭ সনে পাটনা থেকে প্রকাশিত]

অতএব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ভিত্তিহীন মনগড়া কোন কথা বলেন নি। যা হাদীসের বিভিন্ন সংকলনে বর্ণিত আছে তার বরাতেই কথা বলেছেন। ‘আল্লামা আব্দুল মজিদের এ বিষয়গুলো অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু সব জেনেও তিনি কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেটা সুধী পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন।

অন্যান্য উত্তর