আপত্তি: মুহাম্মদ (সা.)-এর তেজোদ্দীপ্ত কিরণ প্রকাশের সময় নেই


আপত্তি: তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শোন, এখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামের তেজোদ্দীপ্ত কিরণ প্রকাশের সময় নেই। অর্থাৎ তার দাপুটে রং-এর কোন খেদমত বাকী নাই। সে তার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দাপট প্রকাশ করেছে। এখন আর সূর্যের কিরণ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বীন) সহ্য হচ্ছে না। এখন (সূর্য ডুবার পর এবং) পূর্ণিমার রাতের শীতল ও কোমল আলোর প্রয়োজন। যা আহমদের রং (কাদিয়ানী ধর্মমতের রং-এ) আমার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। (রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪৫)

উত্তর : এখানে আল্লামা আব্দুল মজিদ বিকৃতভাবে একটি খণ্ডিত উদ্ধৃতি তুলে আপত্তি করেছেন। এ ক্ষেত্রে পাঠক মূল উদ্ধৃতি পড়লেই বুঝতে পারবেন মির্যা সাহেব মোটেও আপত্তিকর কোন কথা বলেননি। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ(আ.) বলেন,

“তোমরা শুনেছ আমাদের নবী(সা.)-এর দু’টি নাম রয়েছে। একটি হলো মুহাম্মদ(স.)। আর এ নাম তওরাতে লেখা রয়েছে। এটা এক প্রতাপ বিকাশী শরীয়ত -যেমনটি এই আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়।

مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ…ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰٮۃِ

দ্বিতীয় নাম আহমদ(সা.)। আর এ নাম ইঞ্জিলে রয়েছে, যা আতিক সৌন্দর্য বিকাশী এক ঐশী শিক্ষা। যেমনটি এই আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়।

وَ مُبَشِّرًۢا بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِی اسۡمُہٗۤ اَحۡمَدُ

আর আমাদের নবী(স.) জালাল (প্রতাপ) ও জামাল ( স্নিগ্ধতা/ঐশী সৌন্দর্য বিকাশী) দু’টিরই সমন্বিত রূপ ছিলেন। মক্কার জীবন স্নিগ্ধতার রঙে ছিল। আর মদিনার জীবন ছিল প্রতাপ বিকাশী। পরবর্তীতে এই দুই গুণাবলী উন্মতের জন্য এভাবে বণ্টন করা হয় যে, সাহাবায়ে কেরামদের(রা.) প্রতাপ বিকাশী জীবন দান করা হয়। আর আত্মিক সৌন্দর্য বিকাশী জীবনের জন্য মসীহ মাওউদকে মহানবী(স.)-এর বিকাশস্থল আখ্যায়িত করা হয়। এ কারণেই তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে ইযাউল হারব অর্থাৎ তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ করবেন না। আর এটা পবিত্র কুরআনে খোদা তা’লার অঙ্গীকার ছিল -এই অংশের পূর্ণতার জন্য মসীহ মাওউদ ও তার জামা’তের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হবে। যেমনটি ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকুবিহিম“- আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে আর তাযাআল হারবু আওযারাহা আয়াতেও এই ইঙ্গিতই রয়েছে। অতএব মন দিয়ে শোন! তেরশ’ বছর পর জামালী অর্থাৎ ঐশী সৌন্দর্য বিকাশী দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা খোদার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা স্বরূপ যেন তিনি তোমাদের যাচাই করে দেখেন তোমরা উপরোক্ত দৃষ্টান্ত প্রদর্শনে কেমন। তোমাদের পূর্বে সাহাবায়ে কেরাম(রা.) প্রতাপ বিকাশী জীবনের দৃষ্টান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে প্রদর্শন করেছেন। কেননা, তা এমনই এক যুগ ছিল যখন প্রতিমার সম্মান প্রদর্শনার্থে এবং সৃষ্টি-পূজার সমর্থনে বিশ্বাসী মু’মেন বান্দাদেরকে গরু-ছাগলের মত জবাই করা হতো। আর পাথর, তারকারাজি, উপলক্ষ্য ও উপকরণ এবং অন্যান্য সৃষ্টিকে খোদার আসন দেয়া হয়েছিল। অতএব এটা নিঃসন্দেহে জিহাদের যুগ ছিল। যারা অত্যাচার-নির্যাতনের উদ্দেশ্য তরবারি ধারণ করতো তাদেরকে যেন তরবারির মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তাই সাহাবা(রা.) তরবারি ধারণকারীদের তরবারি দ্বারাই নিবৃত্ত করেছিলেন। আর “মুহাম্মদ” নামের মাঝে যে প্রতাপ এবং প্রেমাষ্পদের মহিমা বিকাশী বৈশিষ্ট্য সাহায্যের জন্য নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। এর পরবর্তীকালে সেই মহা মিথ্যাবাদীদের জন্ম হয় যারা মুহাম্মদ নামের প্রতাপ বিকাশী ছিল না। বরং যাদের বেশির ভাগ চোর, ডাকাতের মত ছিল। যারা আমার পূর্বে গত হয়েছে। তারা মিছেমিছি “মুহাম্মদী’ নামে আখ্যায়িত হতো। আর সাধারণ মানুষ তাদের স্বার্থপর বলেই মনে করতো।

বর্তমানেও সীমান্ত প্রদেশের কিছু সংখ্যক অজ্ঞ এই একই ধরনের মৌলভী প্রদত্ত শিক্ষায় প্রতারিত হয়ে ‘মুহাম্মদী’ প্রতাপ বিকাশের নামে লুট-পাট করাকে নিজেদের পেশা বানিয়ে রেখেছে। আর প্রতিদিন তারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটায়। কিন্তু তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শোন! এখন মুহাম্মদ নামের প্রতাপ প্রকাশের যুগ নয় অর্থাৎ এখন প্রতাপ বিকাশী কোন সেবা প্রদানের সুযোগ নেই। কেননা সেই প্রতাপ যথোপযুক্তভাবে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে গেছে। এখন প্রতাপদীপ্ত সূর্য কিরণ সহনীয় নয়। এখন প্রয়োজন চাঁদের স্নিগ্ধ জ্যোতির। আর আহমদ(.)-এর রঙে রঙিন হয়ে আমি সেই জ্যোতি। আর এখন সেই আহমদ(.)-এর রঙ প্রকাশের যুগ। অর্থাৎ স্নিগ্ধতা বিকাশী ধর্মীয় সেবা প্রদানের সময়। আর এটি চারিত্রিক উৎকর্ষ প্রদানের যুগ।”

হযরত মির্যা সাহেবএখানে রসূলুল্লাহ(সা.)-এরই চলমান স্থায়ী কল্যাণ বিকাশের কথা বলেছেন। কেবল ধর্মসেবার ধরন ভিন্ন। একটি ছিল দ্ব্যদীপ্যমান ন্যায় সেবা প্রদানের যুগ।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর বিরুদ্ধে এই উদ্ধৃতিকে দাড় করানোর জন্য এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েকটি ব্রেকেটে নিজের মনগড়া বক্তব্য সংযোজন করেছেন। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি এ ধরনের কোন ব্রেকেট লেখক হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(.) তাঁর লেখায় ব্যবহার করেন নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই অপব্যাখ্যা ও বিকৃতির দুরভিসন্ধি কী এটা আল্লামা আব্দুল মজিদই বলতে পারবেন। তবে আর যাই হোক উদ্দেশ্য যে অসৎ আশা করি পাঠকদের এটা বুঝতে অসুবিধা হবে না।

অন্যান্য উত্তর