আপত্তি: মির্যা সাহেবের আধ্যাত্মিক মর্যাদা এত বড় হয় কীভাবে


আপত্তি : হযরত মির্যা সাহেবের আধ্যাত্মিক মান ও মর্যাদা এত বড় হয় কীভাবেতিনি মুহাদ্দাসদের চেয়েও বড় মর্যাদার অধিকারী হন কীভাবেতিনি নবীদের ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হন কীভাবেরসূলুল্লাহর পূর্ববর্তী নবীদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হন কীভাবে?

উত্তর : সবচেয়ে বড় নবীর গোলামও অন্যান্যদের চেয়ে বড় হবেন– এতে আশ্চর্য হবার কি আছে? হযরত মির্যা সাহেবের দাবীর সারাংশ হল, তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সূর্য হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর আলোয় আলোকিত পূর্ণাঙ্গীন পূর্ণিমার চাঁদ। এই উপমাটি তিনি নিজেই ব্যবহার করেছেন। যদি এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে উপরোক্ত চারটি বক্তব্য আপত্তি নয় বরং যথার্থ মূল্যায়ন বলে সাব্যস্ত হয়। হযরত মুহাম্মদ(সা.) সার্বজনীন নবী এবং রাহমাতুল্লিল আলামীন হয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তিনি বিশ্বের সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্যই মান্যবর হয়ে এসেছেন। মহানবী (সা.)-এর পূর্বে আর কোন নবী বা রসূল এমন সার্বজনীন ছিলেন না বরং তারা সবাই নিজ নিজ সীমাবদ্ধ গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ যুগের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর আধ্যাত্মিক কল্যাণে আল্লাহ্ তা’লা তার অনুসারীদেরকেও বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, কুনতুম খায়রা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্না অর্থাৎ তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত যাদেরকে মানবকল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। মুসলিম উম্মতের মর্যাদাগত অবস্থান বিশ্বের সকল ধর্মের অনুসারীদের শীর্ষে। কেন? কেননা আমরা শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ(সা.)-এর অনুসারী!

ঠিক তেমনি, হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর শিষ্যদের মাঝে যে আধ্যাত্মিক মর্যাদা আল্লাহ্ তা’লা দান করেছেন তার মাঝে সর্বশীর্ষে রয়েছেন প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ.)। হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর পর অনেক ওলী আউলিয়া বুযুর্গ গত হয়েছেন। এসব বুযুর্গদের মাঝে সর্ব শীর্ষে অবস্থান লাভ করেছেন রসূলুল্লাহ(সা.)-এর আনুগত্যে ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। আর একথার প্রমাণ পাওয়া যায় মুহাম্মদ(সা.)-এর বক্তব্য থেকেই। তিনি (সা.) বলছেন, আবু বাকরিন খাইরুন নাসি বাদী ইল্লা আইয়াকুনা নাবিউন। অর্থাৎ ‘আমার পর কোন নবী না হলে আবু বকর(রা.) উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম’ (তাবরানী মু’জামে কাবীর, কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খন্ড পৃ. ১৩৮; দেওবন্দের শিরমনি মুফতি মুহম্মদ শফী রচিত খতমে নবুয়্যত পুস্তকের ১০৩ নম্বর হাদীস দ্রষ্টব্য। বাংলায় অনুদিত খতমে নবুয়্যত পুস্তকের ৩৩৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, এই উম্মতে আবু বকর সর্বোত্তম তবে যদি কেউ নবীর মর্যাদা লাভ করে তাহলে তিনি এই উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হবেন। তাই রসূলুল্লাহ(সা.)-এর আনুগত্যে শেষযুগে আগমনকারী মহাপুরুষ যাকে নবীজি(সা.) একদিকে আলমাহদী অন্যদিকে নবীউল্লাহ ঈসা বলেছেন— তিনিই উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী হবেন। তিনি মুসলমানদের হারানো ঈমান ও ঐক্য ফিরিয়ে দিবেন। উম্মতের মাঝে আগমনকারী প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ যাঁর হাতে বয়াত করার জন্য আমাদের প্রিয় রসূল(সা.) বরফের পাহাড় হামাগুড়ি দিয়ে হলেও পার হয়ে যেতে বলেছেন, যাঁকে সালাম পৌঁছানোর নির্দেশ স্বয়ং মহানবী(সা.) দিয়েছেন- উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মাঝে তিনিই শ্রেষ্ঠ।

উদ্ধৃত বাক্যে একথাও বলা হয়েছে, ‘কেবল নবীই নয় বরং অনেক আত্মপ্রত্যয়ী নবীর মর্যাদা থেকেও বেড়ে গেছেন।’ এ বিষয়টি বোঝার জন্য আলেম উলামাদের মর্যাদা বর্ণনায় হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর একটি হাদীস প্রথমে জেনে রাখা দরকার। আর তা হল, উলামাউ উম্মাতী কাআম্বিয়ায়ে বনী ইসরাঈল। মহানবী(সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের আলেমরা বনী ইসরাইলের নবীদের সমতুল্য হবেন। যেক্ষেত্রে সত্যিকার আলেম-উলামা বনী ইসরাঈলী জাতির নবীদের সমতুল্য, সেক্ষেত্রে যিনি এসকল আলেমদের নেতা হয়ে আসবেন তিনি স্বাভাবিকভাবেই বনী ইসরাঈলী নবীদের তুলনায় উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। আর এতে মহানবী(সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণিত হয়। শেষযুগে আগমনকারী প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হবার দাবী করলেন তখন মুসলমান আলেম-ওলামা তাকে গ্রহণ না করে অনেকে উল্টো প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাকে মানতে হবে। তখন মহানবী(সা.)-এর আনুগত্যে শেষ যুগে আগমনকারী মহাপুরুষের মান ও মর্যাদার বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেছেন। মির্যা সাহেব এক দাস বা গোলামের উচ্চ মর্যাদা অপরাপর সকল ধর্মের সামনে তুলে ধরে মূল মালিক হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এরই মর্যাদা উন্নত করেছেন। এতে আপত্তির কিছুই নেই।

অন্যান্য উত্তর