আপত্তি : ভারতে একজন কাল রংয়ের নবী এসেছিলেন তার নাম কাহেন


একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অন্য দেশের নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সব দেশেই নবী আগমন করেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতে একজন কাল রংয়ের নবী এসেছিলেন তার নাম কাহেন। [রুহানী খাজায়েন- ২৩/৩৮২]

উত্তর: এই উদ্ধৃতি উপস্থাপন করে তিনি আপত্তি করেছেন কোনো হাদীস গ্রন্থে এই বাক্যের কোন হাদীস নাই। পাঠকবৃন্দ, রেফারেন্স দেয়ার পূর্বে এ উদ্ধৃতির প্রেক্ষাপট জানা দরকার। হযরত মির্যা সাহেব এ স্থলে ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের সামনে ইসলামের একটি বিশেষ সৌন্দর্য্য তুলে ধরেছেন।

হযরত মির্যা সাহেব বলেন, অন্য ধর্মগুলোর অবস্থা হল, তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো পড়, তাদের অনুসারীদের মতবাদ শুনো, তারা বলে, আল্লাহ কেবল আমাদের জাতিতেই, আমাদের দেশেই হেদায়াত দেওয়ার ধারা অব্যাহত রেখেছেন। আর অন্য কোনো জাতিকে হেদায়াত দান করেন নি। অন্য কোন জাতিতে আল্লাহ পথপ্রদর্শক পাঠান নি। বিষয়টি এমন যেন, রাব্বল আলামীন আল্লাহ সমস্ত বিশ্বকে বাদ দিয়ে কেবল একক একটি জাতির খোদা হয়ে দাড়িয়েছেন। আর এমন বিশ্বাস আল্লাহর পবিত্র অস্তিত্বের মর্যাদা পরিপন্থী। অথচ আল্লাহ্ তা’লা সূরা ফাতেহায় বলেন, “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি সকল বিশ্ব-জগতসমূহের প্রতিপালক। তাই বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক উভয়ক্ষেত্রে আল্লাহ সারা বিশ্বজগতের প্রতিপালক। যেভাবে তিনি সব জাতির বাহ্যিক চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা করেছেন তেমনইভাবে তিনি প্রত্যেক জাতির আত্মিক চাহিদা নিবারণের ব্যবস্থাও করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ্ তা’লা আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতিতেই আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে সতর্ককারী এসেছেন’ (সূরা ফাতের: ২৫)। এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, ওয়ালি কুল্লি কাওমিন হাদ (সূরা হাজ্জ: ৩৫) প্রত্যেক জাতিতে পথপ্রদর্শক এসেছেন। এরপর আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, আমি প্রত্যেক জাতিতে রসূল পাঠিয়েছি। আর এই শিক্ষা দিতে তাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং শয়তানকে পরিহার করে চলবে। (সূরা নহল: ৩৭) পরবর্তীকালে সেই ঐশী শিক্ষায় বিকৃতি হয়েছে। অনেক শিক্ষা বিলুপ্ত হয়েছে এবং অনেক শিক্ষা নিজেদের পক্ষ থেকে বানানো হয়েছে। তাদের প্রতি অনেক অনৈতিক কথা আরোপ করা হয়েছে। হযরত মির্যা সাহেব বলেন:

পবিত্র কুরআনের বিশেষ সৌন্দর্য হল, আল্লাহ নিজেকে কোনো বিশেষ জাতিতে সীমাবদ্ধ করেন নি। প্রত্যেক জাতিতে পথপ্রদর্শক এসেছে বলে কুরআন স্বীকার করে। প্রত্যেক জাতিতে আগমনকারী নবী এবং পথপ্রদর্শকদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করে। এমনকি পবিত্র কুরআন বলে, ততক্ষণ পর্যন্ত একজন মোমেন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রত্যেক জাতিতে আগত প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষকে না মানবে। এটি হল মূল বিষয়বস্তু। এটি হল সেই প্রেক্ষাপট যাতে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আর এতে আপত্তিকারীরা আপত্তি করে। এখানে মির্যা সাহেব হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন, হিন্দুস্তানে কালো রঙের এক নবী ছিল যার নাম ছিল কাহেন। এই হাদীস ‘তারীখে হামদান দায়লামী’র বাবুল কাফে রয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ যেহেতু এগুলো জানে না তাই জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই আপত্তি বার বার লিখে প্রচার করা হচ্ছে।

কালো রং-এর একজন নবী যে ছিলেন একথা হযরত আলী(রা.)-ও বর্ণনা করেছেন। হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা’লা কালো রং-এর নবী আবির্ভূত করেছিলেন (আল-কাশশাফ: ৩য় খণ্ড)। হযরত আলী(রা.) এই সংবাদ কোথায় পেলেন? নিশ্চয় তিনি মুহাম্মদ(সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছেন। আসমাউর রিজাল-এ লেখা আছে, আহলে বায়তের সদস্যরা যখন কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন এটি রসূল(সা.) বলেছেন বলে তারা উল্লেখ করতেন না। বরং তাদের ক্ষেত্রে ধরেই নেয়া হত, এরা যা বর্ণনা করেন মহানবী(সা.)-এর কাছ থেকে শুনেই তা বর্ণনা করেন।

অন্যান্য উত্তর