আপত্তি: ফাতিমার বংশ থেকে কোন মাহদী আসবে না


আপত্তিসত্য কথা হলফাতিমার বংশ থেকে কোন মাহদী আসবে না। এ সকল হাদীস জাল ভিত্তিহীনবানানো। যা আব্বাসীয়দের শাসনামলে বানানো হয়েছে (রূহানী খাযায়েন ১8/১৯৩)

উত্তর: হযরত মির্যা সাহেব কখনই ইসলামের মূল উৎসগুলোকে অস্বীকার করেন নি বরং আমাদেরকে মূল উৎসগুলোর অনুসরণ করে পথনির্দেশনা লাভ করার শিক্ষা দিয়েছেন।

বিশেষ করে হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেছেন হাদীস কুরআন সুন্নতের সেবক তবে যদি সেগুলো কুরআন ও সুন্নত বিরোধী হয় তাহলে সাধ্যমত তাত্বীক’ তথা সামঞ্জস্য উদঘাটন করে তা গ্রহণের শিক্ষা দিয়েছেন। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেও যদি তা গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে কুরআন ও রসূলের সুন্নতকে প্রাধান্য দিয়ে এমন হাদীসকে পরিত্যাগ করতে বলেছেন। এসব বিষয়ে বিরোধ নিরসনের মানদণ্ড হল আল-কুরআন।

ফাতেমার বংশধর থেকে ইমাম মাহদীর আগমনের বিষয়টি কুরআন দ্বারাও সাব্যস্ত হয় না। বরং এর উল্টো সাব্যস্ত হয়। বলা হয়েছে আগমনকারী মহাপুরুষ আরবদের বাইরে অন্য আরেক জাতির মাঝে ঈমানশূন্য যুগে আগমন করবেন। সূরা জুমুআয় আল্লাহ্ তা’লা বলেন,ওয়া আখারিনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকুবিহিম ওয়া হুয়াল আযিযুল হাকিম

বুখারী শরীফ কিতাবুত তাফসীরে উল্লেখ আছে মহানবী(সা.) হযরত সালমান ফারসী(রা.)-এর ওপর হাত রেখে বলেছেন, ঈমান যদি সুরাইয়া নক্ষত্রেও চলে যায় এদের অর্থাৎ পারস্য বংশের এক বা একাধিক ব্যক্তি সেই ঈমানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবেন। এই হাদীস থেকে জানা যায়, শেষ যুগে মুসলমানদের সংশোধনের জন্য পারশ্য বংশীয় মহাপুরুষ আবির্ভূত হবেন।

আলোচ্য হাদীসে যেখানে বলা হয়েছে মাহদী ফাতেমার বংশ থেকে হবেন। এই হাদীসটি কেন গ্রহণযোগ্য নয় তার কারণ নিচে দেয়া হল।

কারণ, রসূল(সা.)-এর তিরোধানের পর তার নিকটতম যুগে হাদীসের যে সংকলন করা হয়েছে তা হল, সাহীফা হাম্মাম বিন মুনাব্বাহ। নিকটতম যুগে সংকলিত এ হাদীস সংকলনে মাহদী ফাতেমার বংশ থেকে আসবেন বলে কোন উল্লেখ পর্যন্ত নাই।

কারণ, এর পর সবচেয়ে নিকটবর্তী যুগে যে হাদীস সংকলন একত্রিত হয় তা হল, মুয়াত্তা ইমাম মালেক। এর মাঝেও উক্ত হাদীসের কোন নাম গন্ধ নাই।

কারণ, সিহাহ সিত্তার ছয়টি হাদীসের সংকলনের মাঝে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাদীস গ্রন্থের নাম বুখারী শরীফ। বুখারী শরীফের মত প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মাঝেও ফাতেমার বংশ থেকে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে এমন কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং মাহদী সংক্রান্ত কোন হাদীসই এতে সংকলিত নেই।

কারণ, সিহাহ সিত্তার মাঝে দ্বিতীয় গ্রহণযোগ্য হাদীসগ্রন্থের নাম ‘মুসলিম শরীফ’। এতেও মাহদী(আ.) ফাতেমার বংশধর হবেন এরও কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না ।

মুকাদ্দামা ইবনে খালদুনে লেখা আছে, ইমাম মাহদী(.) সংক্রান্ত যাবতীয় বর্ণনা “কুল্লুহা ওয়াহিয়াতুন‘ সবগুলোই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য। হ্যাব্যতিক্রম ধর্মী খুবই কম সংখ্যক এর মাঝ থেকে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়

মজার ব্যাপার হল, যেখান থেকে ‘আল্লামা’ মজিদ সাহেব আপত্তি তুলে ধরেছেন তার মাঝেই ইমাম মাহদী(আ.) বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন আর এমনভাবে স্পষ্ট করেছেন যাতে আপত্তির কোন কারণ থাকে না। সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠার প্রতিলিপি ও এর অনুবাদ দেয়া হল।

একথাটি বিশেষভাবে মনে রাখা উচিতপুরনো পুরনো মুসলিম ফিরকাগুলো এমন এক মাহদীর অপেক্ষা করছে যিনি হুসাইন(রা.)-র মা হযরত ফাতেমা(রা.)-র বংশধর হবেন। তারা এমন এক মসীহর জন্যও অপেক্ষায় আছে যিনি এই মাহ্দীর সাথে যোগ দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ করবেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছিএসব ধ্যান ধারণা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা আর এমন ধারণা পোষণকারীরা চরম ভ্রান্তিতে নিপতিত। এমন মাহদীর অস্তিত্ব কেবল এক কল্পিত সত্তা যা অজ্ঞতাবশত মুসলমানদের মনমস্তিস্কে স্থান করে নিয়েছে। প্রকৃত সত্য হলফাতেমার সন্তাদের মধ্য থেকে কোন মাহ্দী আসবে না আর এমনসব হাদীস মওযু এবং ভিত্তিহীন ও বানোয়াট এগুলো সম্ভবত আব্বাসীয় শাসনামলে লেখা হয়েছে। আর সঠিক তথ্য হলএক ব্যক্তি ঈসা(.)-এর নামে আগমন করবেন যিনি যুদ্ধও করবেন না আর রক্তপাতও ঘটাবেন না। তিনি বিনয়নম্রতাসহিষ্ণুতা এবং অকাট্য দলিলপ্রমাণাদির মাধ্যমে মানুষের মনকে সত্য ধর্ম মূখী করবেন। তাই খোদা তালা স্পষ্ট নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছেনসেই ব্যক্তি তুমিই এবং তিনি আমার সত্যায়নে ঐশী নিদর্শনাবলী অবতীর্ণ করেছেন। আর ভবিতব্য বিষয়াদি অজানা রহস্য আমার কাছে উন্মোচন করেছেন। আর এমনসব তত্ত্বজ্ঞান আমাকে তিনি দান করেছেন যা বিশ্ববাসীর অজানা। কোন খুনি মাহদী আসবে না– আমার এ বিশ্বাস অপরাপর সকল মুসলমানের বিশ্বাস থেকে ভিন্ন।” (হাকীকাতুল মাহদী পুস্তক)

পাঠকবৃন্দ, এখানে মির্যা সাহেব কেবল সেই কল্পিত মাহ্দীর বিশ্বাসকে অস্বীকার করেছেন যিনি রক্তপাত ঘটাবেন আর সশস্ত্র যুদ্ধ করবেন। কিন্তু যে মাহদীর সংবাদ মহানবী(সা.) দিয়েছেন তার কথা তিনি কখনও অস্বীকার করেন নি বরং তিনি নিজে সেই প্রতিশ্রুত মাহদী হবার দাবি করেছেন।

অতএব স্পষ্ট, হযরত মির্যা সাহেব সঠিক হাদীসের বিরুদ্ধে নন, পরবর্তীতে মহানবী(সা.)-এর প্রতি বানিয়ে যে কথা আরোপ করা হয়েছে তার সমালোচনা তিনি করেছেন এসব লেখায়। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী তাদের কল্পনাপ্রসূত রক্তচোষা মাহদীর অপেক্ষায় রত মুসলমানদের। প্রকৃত মাহদীই হলেন প্রতিশ্রুত মসীহ(আ.) যিনি শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা নিয়ে আসবেন। আর সেই মহাপুরুষ এসে গেছেন।

এই পরিচ্ছদের শেষাংশে আল্লামা আব্দুল মজিদ আপত্তি করে বলেছেন, হযরত মির্যা সাহেব নাকি বলেছেন, যারা ইমাম মাহদীর অপেক্ষায় আছেন তারা মস্তবড় ভুলের মাঝে আছেন। উপরে তার লেখা পুরো উদ্ধৃতিটির অনুবাদ তুলে ধরা হয়েছে এবং প্রতিলিপিও দেয়া হয়েছে পাঠক বুঝতে পারছেন, মির্যা সাহেব প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীর আগমন অস্বীকার করেন নি বলেছেন কল্পিত খুনি মাহদীর কথা যিনি এসে রক্তপাত ঘটাবেন। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের প্রতারণা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

অন্যান্য উত্তর