আপত্তি: দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে নবুওয়তের দরজা খোলা


আপত্তি : দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে নবুওয়তের দরজা খোলা। (হকীকাতুন নবুওয়াহ, পৃ. ২২৮)

উত্তর: পবিত্র কুরআন এক ধরনের নবুওতের পথ রুদ্ধ ঘোষণা করেছে আবার আরেক ধরনের নবুওতের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। যে নবুওতের পথ রুদ্ধ সেটি হচ্ছে স্বয়ং স্বনির্ভর শরীয়তবাহী নবুওত। যেমন আল্লাহ তা’লা সূরা মায়েদার একেবারে প্রারম্ভেই ৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। আর আমি ইসলামকে তোমাদের জন্য ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।…” (সূরা মায়েদা: ০৪)

এদ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর মাধ্যমে শরীয়তবাহী স্বয়ং-সম্পূর্ণ নবুওতের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু একইসাথে পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তির পথ এবং তার পক্ষ থেকে এক ধরনের নবী বা রসূল আগমনের পথ খোলা আছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, র যে আল্লাহ্ ও এ রসূলের আনুগত্য করবে এরাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেযাদের আল্লাহ্ পুরস্কার দান করেছেন (অর্থাৎ এরানবীসিদ্দীকশহীদ ও সালেহদের (অন্তর্ভুক্ত হবে)। আর এরাই সঙ্গী হিসাবে উত্তম।” (সূরা নিসাঃ ৭০)

আরও দেখুন সূরা আরাফ ৩৬ নম্বর আয়াত যেখানে আল্লাহ তা’লা আদম সন্তানদের মাঝে তার পক্ষ থেকে রসূল আসতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা নিসার আয়াতটিতে কড়া শর্ত আরোপ করে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ ও তার রসূল হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর আনুগত্য করবে কেবল তারাই আধ্যাত্মিকতায় পরমত্ব ও চরমত্ব লাভ করবে। বোঝা গেল, এখন আর নিজ যোগ্যতায় কেউ নবী হতে পারবে না বরং খাতামান নবীঈন এর পূর্ণ আনুগত্যে মুসলমানরা তা লাভ করতে পারবে। একেই আনুগত্যকারী বা উম্মতী নবুওত বলা হয়। ‘আল্লামা’ মজিদ এবং তার শিক্ষকরাও একথা মানেন, খাতামান নবীঈন(সা.)-এর পর ঈসা নবীউল্লাহ জগতে আসবেন (মুসলিম শরীফকিতাবুল ফিতান ও ইবনে মাজা শরীফের ফিতনা অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। একথাই হকীকাতুন নবুওতে বলা হয়েছে।

সুধী পাঠক! আমরা হকীকাতুন নবুওত পুস্তক থেকে সংশ্লিষ্ট অংশটি তুলে ধরলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। হযরত মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ(রা.) বলেছেন: রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর দুই ধরনের নবুয়্যতের দ্বার রুদ্ধ। অর্থাৎ শরীয়তবাহী নবুয়্যত এবং স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নবুয়্যত। মহানবী(সা.)-এর কল্যাণে কল্যাণমণ্ডিত হয়ে নবুয়্যত লাভ হতে পারে। …কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীয়ায় নবুয়্যত কীভাবে লাভ হতে পারে এটি জানা জরুরী। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) বলেন,

কেউ যদি এই খাতামান্নাবীঈন(সা.)-এর সত্তায় এমনভাবে বিলন হয়ে একাকার হয়ে যায় এবং এই সত্তা ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে যায় তাহলে এর ফলে তারই নাম সে লাভ করে ফেলে। আর স্বচ্ছ দর্পনের ন্যায় মুহাম্মদী রূপের পূর্ণ প্রতিবিম্ব তার মাঝে পড়লে খতমে নবুয়্যতের মহর ভঙ্গ না করেও নবী নামে আখ্যায়িত হবে। (এক গালাতী কা ইযালা, রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৯)

তিনি (রা.) হকীকাতুন নবুওত পুস্তকে আরো বলেন, প্রতিশ্রুত মসীহ নবুয়্যত প্রতিবিম্বস্বরূপ কেননা সে মহানবী(সা.)-এর পূর্ণ বুরুয বা প্রতিচ্ছায়া হবার কারণে নবুয়্যতের মূল উৎস থেকে কল্যাণমণ্ডিত হয়ে নবী নামে আখ্যায়িত হবার যোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যায়। অতএব, রসূল(সা.)-এর পর একধরনের নবী আসায় কোন আপত্তি হতে পারে না। আর এদিকেই উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা(রা.), মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী এবং সাম্প্রতিক কালের মওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানতবী সাহেব ইঙ্গিত করেছেন।

অন্যান্য উত্তর