আপত্তি : কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী ধর্মযুদ্ধ হারাম


আপত্তি : কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী ধর্মযুদ্ধ হারাম। (রূহানী খাযায়েন ১৯/৭৫) অথচ কুরআন বলছে, “তোমাদের ওপর লড়াই ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা বাকারা ২১৬)

উত্তর: ‘আল্লামা’-র চমৎকার যুক্তি। স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করেই চোখ বন্ধ করে ‘জেহাদ-জেহাদ’ বলে মানুষের মগজধোলাই করতে থাকাই কি মহানবীর ইসলাম? খোদাভীরু মুসলমানরা অনেক গভীরে গিয়ে ইসলাম পালন ও কুরআন হাদীস চর্চা করে থাকেন।

‘আল্লামা’-র উপস্থাপিত যুক্তির আলোকেই প্রশ্ন করছি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে (সূরা বাকারা: ১৮৪)। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসাবে আল্লাহ্ তা’লা অসুস্থ এবং মুসাফিরদের উল্লেখ করেছেন। ‘আল্লামা’! বলুন, অসুস্থ ও মুসাফির অবস্থায় কেউ কি রমজানে রোযা রাখতে পারে? আবার শর্ত হল, রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। আমরা কি সেই ফরয কাজটি রজব মাসে করতে পারি? প্রত্যেকটি ইবাদতের কিছু শর্ত রয়েছে। পবিত্র কুরআন থেকে কর্তিত দু’ চারটি শব্দ তুলে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষণিকের জন্য উস্কে দেয়া যায় কিন্তু প্রকৃত সত্যকে লুকানো যায় না। দেখুন, যাকাত আবশ্যক করা হয়েছে, আমরা কি নিঃস্ব, সর্বহারা অভাবীদেরকে যাকাত প্রদানে বাধ্য করতে পারি? যাকাত আদায় না করলে আমরা কি তাদের দোষারোপ করতে পারি? আবার দেখুন, নামাযকে ফরয করা হয়েছে। তাই বলে কি আমরা নিষিদ্ধ সময়ে সেই নামায আদায় করতে পারি? এ সবের উত্তর হল, না। যে জিনিষ যে শর্তে ফরয বা আবশ্যক করা হয়েছে সে শর্তেই সেই ফরয কাজ সম্পাদন করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ফরযের ঘোষণা আছে এবং থাকবে। কিন্তু আল্লাহ্ প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী এসব ইবাদতের বাস্তবায়ন নির্ধারণ করতে হবে।

ঠিক এ নীতি অনুসারে মির্যা সাহেব সশস্ত্র যুদ্ধ করার জন্য পবিত্র কুরআনে যেসব শর্ত রাখা আছে তার আলোকে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেহেতু পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শর্ত পূর্ণ হয় না, তাই এ যুগে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নিষেধ। যারা রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে পবিত্র কুরআন বর্ণিত জিহাদ আখ্যা দিচ্ছে তারা চরম ভুল করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ যুগে সশস্ত্র জিহাদ বৈধ নয়।

মির্যা সাহেব কেবল এদিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আত্মরক্ষামূলক সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য যেসব শর্ত রাখা আছে সেগুলো- এ যুগে এবং এই সরকারের ক্ষেত্রে পূর্ণ হয় না। তাই এ যুগে সশস্ত্র ধর্মযুদ্ধ নিষিদ্ধ। বিষয়টি কেবল এতটুকু। শর্ত প্রযোজ্য না হওয়ার কারণে শেষ যুগের মসীহ্ ও ইমাম মাহদী(আ.) যে যুদ্ধ রহিত করবেন তার ইঙ্গিত নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও জানা যায়। মহানবী(সা.) বলেছেন,

হযরত আবু হুরায়রা(রা.) বর্ণিত হাদীস: মহানবী(সা.) বলেছেন, “তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা ঈসা ইবনে মরিয়মকে ন্যায়-মিমাংসাকারী ইমাম মাহদীরূপে দেখবে। তিনি ক্রুশ (মতবাদ) ভঙ্গ করবেন, শূকর বধ করবেন এবং ধর্মযুদ্ধ রহিত করবেন।” (মুসনদ আহমদ)

মুসনাদ আহমদের উপরোক্ত হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, শেষ যুগে আগমনকারী প্রতিশ্রুত মসীহ যুদ্ধ স্থগিত করবেন। কিন্তু আত্মশুদ্ধির জিহাদ, জিহাদ অব্যাহত আছে ও থাকবে। এতে চালাকি করে কেবল অস্ত্র-যুদ্ধ যে হারাম তা উদ্ধৃত করা হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে যে স্পষ্ট একটি ভবিষ্যদ্বাণী আছে তা ‘আল্লামা’ যেন বেমালুম ভুলে গেলেন!

অন্যান্য উত্তর